নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ; প্রসঙ্গ যুদ্ধাপরাধীর বিচার

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪২

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ বিচার প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের মনে যুদ্ধাপাধীদের বিষয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা মুছে দিতে এ বিচারের সফল সমাপ্তি বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে।’ এ জন্য তাঁর সরকার অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমাদের জাতি, ধর্ম, অসাম্প্রদায়িক কাঠামো ধ্বংস করতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে সক্রিয় ছিল, তা থেকে তারা পিছু হটেনি। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে তাদের এই ধ্বংসাত্মক তৎপরতার শুরু হয়। এই তৎপরতা এখনো চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যা-পরবর্তী ২১ বছর দেশের ইতিহাস পেছন দিকে ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অসাম্পদায়িক শক্তির দৃঢ় প্রতিরোধের কারণে অপতৎপরতা সত্ত্বে¡ও তারা ব্যর্থ হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সঙ্গে কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াত একজোট হয়ে এক সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলে। তারা সারাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি বিচারকরাও। এ চক্র আমাকেও বার বার হত্যার চেষ্টা করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত এবং পাঁচ শতাধিক আহত হন। এ হামলায় অলৌকিকভাবে আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের সিনিয়র ও নিবেদিত নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ অনেক নিরাপরাধ মানুষ ও অসাম্প্রদায়িক নেতা নিহত হন। এসব ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জঙ্গিবাদ ও অর্থপাচার বিরোধী আইন প্রণয়ন করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে ’৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী তাদের এ-দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখেরও অধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছে এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। তখন থেকে দালালদের বিচারের আওতায় আনতে জাতি গভীর আশা ও আকাক্সক্ষা নিয়ে অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য তার সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আওতায় দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এ বিচারকাজ পরিচালনায় সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি গ্লানিমুক্ত হবে এবং দেশে শান্তি ও অগ্রগতি চিরস্থায়ী রূপ নেবে। তিনি এ উদ্যোগে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫-পরবর্তী এজেন্ডা প্রণয়ন জাতিসংঘের প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও টেকসই বিশ্ব গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সবার আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। কোনো ব্যক্তি বা জাতি পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও উদার ১৬ কোটি মানুষ সামনে থেকে এসব প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবে’।

প্রধানমন্ত্রী ৩৯ বছর আগে ১৯৭৪ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেদিন এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেখানে শান্তি, ন্যায়বিচার ও বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থাকবে, যার মাধ্যমে বিশ্ব ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও যুদ্ধমুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেই লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখতে পেরে তাঁর কন্যা হিসেবে আমি গর্বিত।’

আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত লক্ষ্য এবং এগুলো অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদের পরিমাণসহ বাংলাদেশ ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা জাতিসংঘে উপস্থাপনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমডিজির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যেও কাজ চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এমডিজি-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ পূরণ করেছে বা কোনো লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে এবং দেশে দারিদ্র্য হার ১৯৯১ সালের ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, গত সাড়ে চার বছরে বাংলাদেশের গড় জিডিপি’র প্রবৃত্তি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। ‘রপ্তানি আয় ২০০৬ সালের ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৭ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রেমিট্যান্স ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৬ সালের ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ৯ হাজার ৫৯ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে এখন ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ এবং ‘দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড এবং এফএও ফুড অ্যাওয়ার্ড-২০১৩ লাভ করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে আমার উত্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’Ñএ বর্ণিত নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে এ গৌরব অর্জন সম্ভব হয়েছে।

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত পৌনে পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ৫ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৯৯৫জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কোথাও কোনো অভিযোগ উঠেনি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.