নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি মুক্ত বাংলাদেশ চাই...

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৩১

বেশ কয়েকটি জনসভা এবং বৈঠকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নির্মম সত্য কথা উচ্চারণ করে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থান বিএনপি-জামায়াতের কারণে।’ বিশ্বনেতৃবৃন্দ একই কথা একটু অন্যভাবে বলেছেন। যেমন, স্থানীয় সময় শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতি থাকলে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত থাকলে- আমরা স্বস্তি পাই। কারণ সে পরিবেশে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়ে ভারত কিংবা আশপাশের দেশে নাশকতা চালানোর সুযোগ পায় না।’ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়েছে এবং বাংলাদেশের আপামর মানুষ এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বলে মত দেন মনমোহন সিং। কেবল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নন বিশ্বের অনেক শীর্ষ নেতারা একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আবহমান বাংলা সবসময়ই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। এ সেদিন পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের আগেও এদেশে জঙ্গিবাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাসন-কালোত্তর টানা ২১ বছর সামরিক শাসকদের মদদে দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতায় এলে পটভূমি পাল্টে যায়। মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিরা তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে জঙ্গিরা গা-ঢাকা দেয়। আত্মগোপনে থাকা এসব জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠন মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আবারও মাথা তোলার চেষ্টা করছে। আর সংগঠনগুলোর সবই একই নেটওয়ার্কে অর্থাৎ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি)-এর কার্যক্রম অনুসরণ করে নাশকতার বিস্তৃত কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে।

১৯৯২ সালে আফগান-ফেরত মুজাহিদদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের অনুসৃত পথে এখন শতাধিক জঙ্গি সংগঠন রয়েছে দেশে। নেতৃত্বে আছে আফগান-ফেরত মুজাহিদদের কেউ না কেউ। বরগুনা থেকে ১২ আগস্ট গ্রেফতারকৃত ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছিল হুজির সাবেক নেতা ও ফাঁসিতে মৃত্যুবরণকারী শায়খ আবদুর রহমানের আদর্শে। মূলত হুজির পূর্বসূরিদের ‘সশস্ত্র বিপ্লব’-এর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের ‘অসম্পন্ন’ কাজ সম্পন্ন করতে নেমেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায়, জঙ্গিদের কার্যক্রম প্রায় কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকারের শেষ সময়ে নাশকতার সৃষ্টি করে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে তারা। তারা হেফাজতের সঙ্গে মিশেও সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিল; ব্যর্থ হয়ে নিজেরা নাশকতার ছক তৈরি করছে দেশজুড়ে। উল্লেখ্য, আফগান-ফেরত কয়েক হাজার মুজাহিদ আলাদা আলাদা সংগঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। হুজি, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ও আনসারুল্লাহ’র নীতি ও আদর্শ একই।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসীন হয়ে গত পৌনে পাঁচ বছরে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর দিকে অগ্রসর হয়েছে। এ সময় সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং বামপন্থি সর্বহারাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। কিন্তু ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির দেশে অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। অন্যদিকে চলতি বছর হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত কিছু জঙ্গি সংগঠন। এদের সকলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। ফলে এ সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও, তাদের কারণে খানিকটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২০১২ সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকারকে ১৮টির মতো সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়েছে ৪৬ জন। ৩৫টির মতো ইসলামী দলের নাশকতা ব্যর্থ করেছে পুলিশ-র‌্যাবের যৌথবাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬১৬ জঙ্গিকে যারা হুজি, ইসলামী ছাত্রশিবির, জেএমবি, হিযবুত তাহেরির ও হিযবুত তাওহিদের সদস্য।

যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী নেতাদের মুক্ত করার জন্য দেশব্যাপী যে নাশকতার সৃষ্টি করা হয় সে পরিস্থিতিতে আরও বেশ কিছু শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এক হিসেবে, ২০১২ সাল পর্যন্ত

৭৭টি নাশকতার ঘটনায় ১২৪৪ জন ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত ইসলামী জঙ্গি গ্রেফতারে সাফল্য রয়েছে অনেক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর পুলিশ ছাত্র শিবিরের ১০৭ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। এর আগে ৬ নভেম্বর একই অভিযোগে সারাদেশ থেকে ২০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছর যেমন, তেমনি ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর র‌্যাব বরগুনা থেকে হিযবুত তাহেরির ৮ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। সে বছরের ১২ আগস্ট ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা করার জন্য মিটিংয়ে বসলে ঢাকার পান্থপথের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে হিযবুত তাওহিদের ৩৫ ক্যাডারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করার চেষ্টা করলে কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে র‌্যাব ও পুলিশ গ্রেফতার করেছে একাধিক জনকে। এদের মধ্যে কেবল হিযবুত তাওহিদ নয়, জেএমবি’র নেতারাও রয়েছে।

২০১২ সালের ৫ মার্চ র‌্যাব খুলনা ও সাভার জোনের দুই প্রধান জেএমবি নেতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এর আগে ঢাকার উত্তরা থেকে ৯ জানুয়ারি জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ এমদাদুল হক উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রশাসন। জেএমবি’র অর্থ লেনদেনের প্রধান তাহা মোহাম্মদ ফাহিমকে সঙ্গীসহ গ্রেফতার করা হয় একই মাসের ৮ তারিখে। চৌদ্দজন নেতাসহ ৩৪ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট সর্বহারাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে যেমন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- নির্মূল করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের নাশকতা ও জঙ্গিপনার জবাব দিতে হচ্ছে সরকারকে। বিশ্বব্যাপী সকলের কাছে একথা পরিষ্কার যে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে জামায়াত-শিবির দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ঘাপটি মেরে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয় দেশ-বিদেশে। গত বছর বিচারের রায় দেওয়া আরম্ভ হলে তারা আরও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। তখন ৫ নভেম্বর থেকে টানা ৯ দিন নাশকতায় লিপ্ত হয় তারা। অপরাধীদের মুক্তি দাবি করে উগ্রবাদীরা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

এ পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন যে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা হবে। যত বাধা ও হামলা আসবে তত দ্রুত নিষ্পন্ন হতে থাকবে মামলা এবং একে একে রায় ঘোষিত হবে। সে বছরই ২৫ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্টেশন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হলে এসব অপরাধীদের যে মুক্তি দেওয়া হতে পারে সে সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়। কারণ অপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষিত হলেও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকেন্দ্রিক আন্দোলনের সুযোগে জঙ্গিদের তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হলে বিএনপি দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। গত বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে সহিংসতায় মারা যায় ২ জন, ৪০ জন পুলিশসহ আহত হয় ২৯০ জন। ৭০টির মতো বোমা হামলা চালায় বিরোধী সমর্থকরা। পুলিশের ৫টিসহ গাড়ি পোড়ানো হয় ৫০টি। ভাঙচুর করা হয় আরও ১৫০টি। সরকার বিএনপির দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বারবারই বলে আসছে। কারণ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ৬ হাজার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে সক্ষম বলে তারা মনে করেন। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে জঙ্গি দমনের বিষয়ে অভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ত্রাস নির্মূলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ‘বন্দি-বিনিময় চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। উপরন্তু সীমান্তে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যতীত কাউকে গুলি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও চলতি বছর উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ঢাকা থেকে ভারতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান হয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের প্রশংসা করা হয়েছে।

‘এ দেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো কঠিন’- এ শিরোনামে সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কাজ চালানো সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস নিয়ে ৩০ মে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। ২০১২ সালের পরিস্থিতি নিয়ে ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১২’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯’ পাস করে। সে আইনকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দেয় বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ধরণ দ্রুত পাল্টানোর ফলে। এজন্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) মানদ- অনুসরণ করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর গত বছর এক দফা আইনটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু তারপরও আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনুরোধ আসে। এসব বিষয় যুক্ত করতেই সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জুন জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হয়েছে। এ বিলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ইন্টারনেটভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত ধারাসমূহের অন্তর্ভুক্তি। কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠন ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- করলে সাক্ষ্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা যাবে। অন্যদিকে, এ বিলে জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ধারা যুক্ত হয়েছে। আল কায়েদার সম্পদ বাজেয়াপ্ত, অস্ত্র বিক্রি ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়নে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নেওয়া দুটি প্রস্তাবও আইনে পরিণত করা হয়েছে।

আইন, বিচার ও নিবিড় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিরা সুবিধা করতে পারছে না। র‌্যাবের মিডিয়া উইং থেকে জানা গেছে, বোমা হামলা ও অন্যান্য ধর্মীয় উগ্রপনার কারণে মামলার বিচারে ২০১২-১৩ সালে ৫৮ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০ জনের ফাঁসির দ-াদেশ হয়েছে। মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়ার দ্রুততা জঙ্গিবাদ নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ দ্রুত বিচার আদালত-৪ জেএমবি নেতা মামুনর রশীদকে মৃত্যুদ- দেয় ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপারের অফিসে বোমা হামলার অভিযোগে। সে ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছিল। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সিআইডি ঢাকা কোর্টে বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে।

মূলত বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়মিত জঙ্গিদের কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছে। তারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। একইসঙ্গে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এদেশের। নাশকতা ও সহিংসতা গণতন্ত্রকামী মানুষকে আকৃষ্ট করে না। বরং যারা নাশকতা ও সহিংসতা করবে বা এর পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, তাদের প্রতি ক্রমাগত ঘৃণাই প্রকাশ করবে জনগণ। আর জঙ্গিমুক্ত স্বস্তিকর বাংলাদেশই জনগণের প্রত্যাশিত সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.