![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অক্টোবর (২০১৩) মাসের কয়েকটি কর্মদিবসে বিএনপি-জামাতের হরতাল ও নাশকতার পর নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টার হরতাল প্রমাণ করছে বিরোধী দলের সংকট তাদের নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। পক্ষান্তরে আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ আপামর দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে মহাজোট সরকার গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। তবে প্রধান বিরোধীদের দাবির প্রতি আন্তরিক। কিন্তু অনেক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও বিএনপি-জামাতের অপতৎপরতা থেমে নেই। সরকার বাধ্য হয়েছে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তার মধ্যে নাশকতার উস্কানিদাতা কিছু নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হচ্ছে সারা বিশ্বজুড়ে। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে অর্জিত সকল সফল কর্মকা-ের প্রশংসা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। গত ৮ নভেম্বর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ‘বাংলাদেশ: মিউটিনি অ্যান্ড রিভেঞ্জ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে কিংবা রাজপথে সহিংসতা দেখা গেলে সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভূমিকাকে মেনে নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিডিআর সদস্যদের ফাঁসির আদেশ শেখ হাসিনার জন্য উপযুক্ত সময়েই হয়েছে। এতে তার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সমর্থন মিলবে। রায়টি এমন সময় এলো যখন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের তুলনায় বিরোধী বিএনপি বহু ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।’ দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে লিখিত ‘আওয়ামী লীগের তুলনায় বিরোধী বিএনপি বহু ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে’- এই জরিপ অবশ্য সঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমর্থন এখন নৌকার দিকেই। মাঠে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণায় জোয়ার এসেছে। এর আগে থেকেই শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বিবৃতি এবং উদ্যোগ আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে সকলের কাছে মান্যতা অর্জন করেছে।
১৮ অক্টোবর (২০১৩) জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘আমরা সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫,৭৭৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। কোনো নির্বাচনেই সরকার হস্তক্ষেপ করে নাই। অনেক নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাল্লাহ।
…সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সংবিধানের ৭২-এর ১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে; ‘সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকিবে না’। এখানে আরও উল্লেখ আছে যে, ‘তবে শর্ত থাকে যে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার ক উপধারায় উল্লেখিত ৯০ দিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে’।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় উল্লেখ আছে। ৩-এর (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের হিসাব শুরু হবে। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধানমন্ত্রীর দেয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। ৯০ দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য আমি সব দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেব। এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।…
আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারও কোনো সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দেবেন।
তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। সকল ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’
এই ভাষণে শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐকান্তিক প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। আর আগামী প্রজন্মকে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখানোর কথা বলা হয়েছে। স্বপ্ন দেখানো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে যে দেশে, সেখানে শেখ হাসিনার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এই দৃঢ় অঙ্গীকার তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করবে এটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা সংবিধান অনুসরণ করেই তাঁর উদ্যোগের কথা বলেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। তাই তিনি ২৭ অক্টোবর বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করে তাঁর বাসভবনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ থেকে হরতাল প্রত্যাহারের বারংবার অনুরোধ পরদিন সারা দেশবাসী শুনেছে। কিন্তু হরতাল ছাড়া বিরোধী দল কোনো ফলাফল দিতে পারেনি বরং দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের সমাবেশে জামাত-শিবিরের ভয়ঙ্কর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ।
আসলে শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বই স্মরণ করিয়ে দেয় আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হবে যেমনটি বর্তমান প্রজন্ম হাল ধরেছে এই সংগঠনটির। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয়ে জানিয়েছেন, ‘দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বোই’। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে উপস্থিত নিউইয়র্কের প্রথম দিনটি অর্জন দিয়েই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড। স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে সাউথ সাউথ নিউজ-এর প্রধান কার্যালয়ে এই অ্যাওয়ার্ড হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি আমার নয়, দেশবাসীর অর্জন। ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫১ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দেশবাসীর সার্বিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বের এটি একমাত্র স্বীকৃতি নয়। তিনি বর্তমান বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে মর্যাদাকর সনদে ভূষিত হয়েছেন। নিজের নিঃস্বার্থ, নির্লোভী মানসিকতার জন্য পৃথিবীর খ্যাতনামা শাসকদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর(২০১৩) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘নেতৃত্বদানকারীদের সংলাপ : শীর্ষপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম-দূরদর্শিতার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণকালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের মাধ্যমে বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখতে ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ২০২০ সালের পরেও একটি আইনি কাঠামোর বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই দূরদর্র্শিতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আমাদের এই বিশ্বের স্থায়িত্বের জন্য সাধারণ লক্ষ্যসমূহ অর্জনে অবশ্যই এই দুটি বিষয়ের স্বীকৃতি এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদর্শন ও আন্তরিক অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা নিজের দেশকে নিয়ে যেমন স্বপ্ন দেখেন তেমনি বিশ্ববাসীকে সঙ্গে নিয়ে সুখী জনজীবনের প্রত্যাশায় বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মিলেমিশে কাজ করতেও চান। মূলত দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে বর্তমান মহাজোট সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উপরন্তু বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো প্রণিধানযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা খাত এই সবকটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রামের ফলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারই আমরা দেখতে পাই। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নেতৃত্বের এটি অন্যতম দিক। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন বলেই আমরা এই অর্জন নিশ্চিত করতে পেরেছি।’ মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপকভাবে কাজ করে আসছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বাড়ানো ও মান উন্নত করাসহ বিভিন্নভাবে কাজ করা হয়েছে। আর তার ফলেই আজ বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিটি অঙ্গীকার পূর্ণ হয়েছে বর্তমান শাসনামলেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং অকার্যকর রাষ্ট্রের কলঙ্কমোচন করে বাংলাদেশকে আবার বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের অন্যতম এখন বাংলাদেশ। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে সুখী দেশের তালিকায়। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এখন নিয়ন্ত্রণে। চালসহ খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে এবং স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্বমন্দা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের সমাধান, রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বিশাল সাফল্য এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির ফলে প্রকৃতই বদলে গেছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব ব্যবহারের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলেরই মনে থাকার কথা যে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র ৪৯ দিনের মধ্যে সংঘটিত হয় ঢাকাস্থ পিলখানার বিডিআর কর্তৃক সেনা কর্মকর্তাদের রক্তাক্ত হত্যাকা-। মহলবিশেষ এই সুযোগে দেশে এক সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের মারাত্মক উস্কানি দিয়েছিল। চরম ধৈর্য্য, বিচক্ষণতা, অসীম সাহস এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেন এবং সেনাবাহিনীতে আস্থা ফিরিয়ে আনেন। দেশ এক চরম অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পায়। ৫ নভেম্বর (২০১৩) সেই নির্মম ঘটনার বিচারের রায় ঘোষিত হলো। ১৫২ জন অপরাধীকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোসহ অন্যান্য সাজার রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।
বর্মমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং অনেকেরই সাজার রায় ঘোষিত হয়েছে; আর সেসব অপরাধীদের রায় কার্যকর করার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ দুর্নীতিহীন প্রশাসন। এজন্য স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতির তদন্ত, অনুসন্ধান, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদক প্রয়োজনে মন্ত্রী, আমলাসহ যে কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সার্চ কমিটির সুপারিশে শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ক্ষমতা ও লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা তথা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে চলেছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৬ সহস্রাধিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের শূন্য আসনসমূহের নির্বাচন।
বিদেশি মিডিয়াতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বক্তব্যগুলোও দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়কের স্পষ্ট উচ্চারণ হিসেবে অনন্য। ২৮ জুলাই (২০১৩) কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নয়, রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা মিয়ানমার সরকারেরই দায়িত্ব।’ জুন মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল। ইতোমধ্যে সেখানে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।’ এর আগে ১৯ মে কানাডার সিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ষড়যন্ত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তারপর কমিশন তদন্ত শুরু করে।…
বিশ্বব্যাংকের অন্য প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে চলছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিংবা আমার মন্ত্রীরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। আমরা টাকা কামাতে ক্ষমতায় আসিনি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণের ভাগ্য বদলাতে, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বিবিসিকে জানান হেফাজতে ইসলামীর দাবির মুখে দেশে ব্লাসফেমি আইন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে বলে যে বিতর্ক চলছে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে। অপরাধী অপরাধীই। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। এটি জনগণের প্রতি আমাদের
অঙ্গীকার।’
এভাবে অজস্র বিদেশি মিডিয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার তুলে ধরে আমরা প্রমাণ করতে পারি এই জননেত্রীর বিচক্ষণতা এবং দেশের প্রতি তাঁর অপরিসীম মমত্বের দৃষ্টান্ত। বিশ্ববাসী তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় আস্থাবান বলেই ১৮ অক্টোবর দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গঠনমূলক-ইতিবাচক’। তিনি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বিরোধীদলের সদস্যদের নাম চেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধীদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি। ‘হানাহানি ও সন্ত্রাসের পথ’ পরিহার করে বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আলোচনার দরজা সব সময় খোলা।’ আমরা সাধারণ জনগণের অংশ হিসেবে বলতে চাই বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হবেন। কারণ জঙ্গিবাদ মুক্ত রাষ্ট্রের একটি সুশাসনভিত্তিক সমাজ নির্মাণে শেখ হাসিনার প্রত্যয় এখন সকলের কাছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সকল প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সফল হবে -এ বিশ্বাস আমাদের।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
বিজন শররমা বলেছেন: দালালের লেখা দেখলেই চেনা যায় ।