নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেনাবাহিনী মোতায়েনে জনমনে স্বস্তি

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫০

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে ২৬ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছে। এদিন থেকেই সেনা সদস্যরা সারাদেশে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। যে ৫ জেলার সবকটি আসনে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলো বাদে বাকি ৫৯টি জেলায় সেনাবাহিনী তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠপর্যায়ে অবস্থান করবে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে ৯ জানুয়ারির পরও সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

প্রতি জেলায় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটিলিয়ন অর্থাৎ ৭৪০ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি জেলায় সেনাবাহিনীর ৮০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সে হিসেবে সারাদেশে সেনা মোতায়েন হয়েছে ৪৭ হাজার ২০০ জন।

প্রতি জেলায় ৮০০ হিসেবে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন করায় জনমনে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। তারা মনে করছে ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত চক্র নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল; সেনা মোতায়েনের ফলে সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এটা মানুষ মনে করছে আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে। এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী নামার আগ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, পেশীশক্তির ব্যবহার ছিল, কালোটাকার দৌরাত্ম ছিল, সংখ্যালঘুদের প্রতি হুমকি ছিল, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাপ্রদান ছিল এবং প্রার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি ছিল। কিন্তু এবারকার মতো নির্বাচনের কয়েকদিন আগে যেই না সেনাবাহিনী নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নেমেছে ওমনি সব হুমকি, অস্ত্রের ব্যবহারসহ যাবতীয় নেতিবাচক কর্মকা- ভোজভাজির মতো নির্বাচনি মাঠ থেকে উধাও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ’৯০-এর পর থেকে অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ। মানুষ নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। ’৯০-এর আগে যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যেত। নির্বাচনি দায়িত্বে সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় এখন আর এসব উপসর্গ কল্পনা করা যায় না।

মানুষ এ জন্যই স্বস্তি পাচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ভোটাররা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে হয়ে পড়েছিল শঙ্কিত। অনেকে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু ভোটাররা যখন জানতে পেরেছে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে তখনই ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ঢাকা-১৮ আসনের একজন ভোটার জসিম উদ্দিনের কথা। তিনি সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর-কে বলেছেন, তাঁর পরিবারের মোট ভোট ৫টি। ভোট প্রদান গণতান্ত্রিক অধিকার হওয়ায় তাঁর পরিবারের সিদ্ধান্ত ছিল ৫ জানুয়ারি তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। কিন্তু গত ১ মাস অরাজক পরিস্থিতি দেখে তাঁর পরিবার জীবনের নিরাপত্তার খাতিরে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছিলেন। কিন্তু যখন শুনলেন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে অন্যান্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও থাকবে তখনই তিনি ও তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন। তারা ৫ জানুয়ারি উত্তরা হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন। জসিম উদ্দিন আরো বলেন, সেনাবাহিনীর পাওয়ারই অন্যরকম। দুর্বৃত্তরা ২০০ পুলিশ দেখে যতটা না ভয় পায় ২ জন সেনা সদস্য দেখে তার চেয়ে বেশি ভয় পায়। একটা কেন্দ্রে ৫ জন সেনা সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট। সব ঠা-া। নির্বাচন হয় শান্তিপূর্ণ এবং ভোটাররা ফেলতে পারে স্বস্তির নিঃশ্বাস।

সেনাবাহিনী ২৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঠে নামলেও শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলার মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বেশ কদিন ধরেই অবস্থান গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। সেনাবাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের মধ্যেও মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে সেনা সদস্যরা পুলিশ ও র‌্যাবকে সহায়তা করেছে। শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে সেনা সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করায় নিজেদের যান চলাচলের স্বার্থেই তারা অনেক এলাকায় মহাসড়কে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। সেনা সদস্যরা ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সাইবোর্ড এলাকায় টহল দিয়েছেন। এসব এলাকায় সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৩ ডিসেম্বর সকালে ফেনীর মহিপাল বাস টার্মিনাল থেকে সেনা সদস্যদের সহায়তায় ঢাকার উদ্দেশে কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়। সেনা সদস্যদের সহায়তায় এদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চলাচলও বাড়ে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় কুমিল্লা থেকে ঢাকা ও সিলেট রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল করে। এর বাইরে অনেক পণ্যবাহী পরিবহনও চলাচল করে। ঢাকা-বগুড়া ও বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেছে। পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ও আন্তঃজেলা ট্রাকও মহাসড়কে নির্বিঘেœ চলাচল করেছে সেনা সদস্যদের সহযোগিতায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকরা সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর-কে জানিয়েছেন, সেনা সদস্যরা অফিসিয়ালি নয় বরং শীতকালীন মহড়ায় অবস্থানকালে সাধারণ মানুষের সহযোগিতার জন্য মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করেছে।

সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা মানুষের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেয়েছে। শীতকালীন মহড়ার কারণেই হোক বা দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের কারণেই হোক অবরোধের মধ্যেও সেনাবাহিনী মহাসড়কে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান চলাচলে যেভাবে সহায়তা করেছে তাতে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে গেছে পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের মাঝে। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের বাসিন্দা মাহমুদুর বাসার জানান, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে তিনি অবরোধে আটকা পড়েন। ২২ ডিসেম্বর পুলিশ-র‌্যাবের সহায়তায় তিনি সাহস করে চাঁদপুরগামী একটি বাসে উঠেন। তাঁর মনে শঙ্কা ছিল কাঁচপুরের পরে মহাসড়কে তিনি না কোন বিপদের মুখে পড়েন। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, তাকে বহন করা বাসটি নির্বিঘেœই এগিয়ে চলছে। কোথায়ও কোনো ব্যারিকেড নেই, রাস্তায় গাছ ফালানো নেইÑ সবকিছুই স্বাভাবিক। মাহমুদুর বাসার মনে করেন সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ার কারণে মাহসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সেনা সদস্যদের টহলের কারণেই সড়ক-মহাসড়ক এমন নির্বিঘœ রয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানের চলাচল নির্বিঘœ করার জন্য ডিসেম্বরের শুরু থেকেই সেনা মোতায়েন করতো তাহলে বিদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি অব্যাহত থাকতো। অর্থনীতি নাজুক হওয়ার ঝুঁকি থাকতো না।

২৬ ডিসেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী নিজ নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুরে পৃথক পৃথক নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেন। ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও মোকসেদপুরে পৃথক পৃথক জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি জনসভায় মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যায়। মানুষ নির্বিঘেœ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি জনসভায় পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। এসব জনসভায় আসা ভোটারদের চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ। প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় আসা পরিমল বিশ্বাস ‘স্বদেশ খবর’ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হলেও এই জনসভায় আসতে দুই দিন আগেও আমার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করেছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকেই নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে নামায় আমার সে অস্বস্তি কেটে গেছে।’ শুধু পরিমল বিশ্বাসই নন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসা লাখ লাখ মানুষের মধ্যেই একই ধরণের স্বস্তি কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একই জনসভায় আসা ফাহমিদা আক্তার, তনু খন্দকার, রিতা ভৌমিক, আকলিমা, সুফিয়া খাতুন চোখেমুখে পরিতৃপ্তির ছাপ নিয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী মাঠে নামায় আমাদের সব আতঙ্ক কেটে গেছে। আমরা কোনো ধরণের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই জনসভায় আসতে পেরেছি। আমাদের ওপর গত দুই দিন আগেও হুমকি-ধামকি ছিল। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নির্বাচনি মাঠে নেমে যাওয়ায় সব ভোজভাজির মতো উড়ে গেছে।’ তারা আরো জানান, সেনাবাহিনী মাঠে নামায় তাদের মনোবল ও সাহস বেড়েছে। তারা আশা করছেন ৫ জানুয়ারি নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকায় তারা নিশ্চিন্তে নির্বাচনি প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরের ভাঙ্গার জনসভায় আসা রফিকুল ইসলাম, হেদায়াত হোসেন, কবির ব্যাপারি, লিটু তালুকদার ও সাফায়াত হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এত লোক সমাগমের পেছনে মাঠে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কাজ করেছে। আমরা যেমন নির্বিঘেœ জনসভায় আসতে পেরেছি, তেমনি প্রতিটি ভোটার নিশ্চিন্তে জনসভায় এসেছে। এখন সকলেই আমরা নিঃশঙ্কচিত্তে নির্বাচনি প্রচারণায় নামতে পারব। সেনাবাহিনী যেভাবে তাদের দায়িত্বপালন শুরু করেছে, সেভাবে শেষ করতে পারলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রীর মতো ২৩ ডিসেম্বর সারাদেশে ১৪৬টি আসনের অনেক প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণার কাজ শুরু করেছেন। এতদিন এসব প্রার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছিল। অনেক প্রার্থী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনি এলাকায় যেতেন। দু’একটি ঘরোয়া বৈঠক করে আবার ঢাকায় ফিরে আসতেন। জোরেসোরে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো বলতে যা বুঝায় তা তারা করতে পারছিলেন না। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনি এলাকায় সেনাবাহিনী নামায় প্রার্থীদের আশঙ্কা ও ভয় কেটে গেছে। ২৬ ডিসেম্বরই তারা নিজেদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গেছেন, নির্বাচনি বৈঠক করেছেন, নির্বাচনি অফিসে বসেছেন।

২৬ ডিসেম্বর থেকে পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনে নির্বাচনি প্রচারণা ছিল জমজমাট। এদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদারের পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নামায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে প্রচার-প্রচারণায়। নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। চলছে মাইকিং। সর্বত্র বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। ঝুলানো হচ্ছে পোস্টার। এই আসনের তিনজন প্রার্থী জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর মেয়র জেলা স্বাচিপ নেতা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম (আনারস) ও জাসদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতা মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত (মশাল)। এই প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীরা জানান, তারা ২৬ তারিখের আগে প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, লিফলেট বিলি ও পোস্টার ঝুলানোসহ কোনো কাজই নির্বিঘœভাবে করতে পারছিলেন না বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ভয়ে। ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকেই পটুয়াখালী জেলা সদর ও ২৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলাগুলোতে সেনাবাহিনী নেমে যাওয়ায় পুরো জেলায় জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। যেহেতু সেনাবাহিনী মাঠে আছে, তাই এ জমজমাট প্রচারণা অব্যাহত থাকবে ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত। ৫ জানয়ারি ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীরা জানান, এসবই সম্ভব হচ্ছে নির্বাচনি এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে।

পটুয়াখালীর মতো ২৬ ডিসেম্বর থেকে টাঙ্গাইলেও জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুল বাতেন (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল (আনারস)। হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থী এতদিন নির্বাচনি মাঠ গরম করতে না পারলেও ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থেকেই নির্বাচনি প্রচারণায় ঝাপিয়ে পড়েছেন। তাদের সমর্থকরা ভয়-শঙ্কা কাটিয়ে এখন পুরোদমে মাইকিং, লিফলেট বিলি ও পোস্টার ঝোলানোর কাজ করছেন। এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুলের একজন সমর্থক কামাল হোসেন স্বদেশ খবর-কে জানান, শুধু নাগরপুর-দেলদুয়ারই নয়, সেনাবাহিনী নামার পর থেকে পুরো টাঙ্গাইলের নির্বাচনি মাঠের চিত্রই পাল্টে গেছে। সর্বত্রই সাজসাজ রব। প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল তা পুরোপুরি কেটে গেছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করবে ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত। কামাল হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী নামার পর থেকে তাঁর প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণা যেভাবে চলছে, তাতে আনারস প্রতীকই জয়লাভ করবে। অপরদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেনের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কেরও। তিনি জানান, নৌকার নির্বাচনি প্রচারণায় এতদিন যে আড়ষ্টতা ছিল, তা কেটে গেছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় সমর্থকদের মনোবল বেড়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আশা করি নৌকাই জয়যুক্ত হবে।

ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতেও সেনাবাহিনী নামার পর নির্বাচনের চিত্র পাল্টে গেছে। এখানকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম অপু (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী (আনারস) এতদিন নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠেই নামতে পারেননি। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। উভয় প্রার্থীই জোর নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছেন। উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। উভয়েরই বক্তব্য হলো, সেনাবাহিনী মাঠে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করলে তাদের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং তাদের জয়যুক্ত করবেন।

স্বদেশ খবর-এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম মহানগরে সেনা সদস্যরা টহল দিতে শুরু করেছেন। তারা চট্টগ্রামের কাস্টমস ট্রেনিং একাডেমি ও হালিশহরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশাল মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৬টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন সেনাবাহিনী। নির্বাচনের সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য বরিশাল বিভাগ ও জেলার মধ্যে ভোলা ও বরগুনায় নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা প্রতিনিধি জানান, ২৬ ডিসেম্বর সকালে যশোর সেনানিবাস থেকে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা গাড়ির বহর নিয়ে খুলনায় আসেন। সেনাবাহিনীর এই দলটি খুলনার শেখ আবু নাসের বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ক্যাম্প স্থাপন করে নিয়মিত টহলের কাজে নেমে পড়েছেন। সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেটের নির্বাচনি মাঠে সেনা সদস্যরা নেমে পড়েছেন। সিলেট নগরী এবং বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় ইতোমধ্যে সেনা সদস্যরা তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছিলেন। রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরে সেনাবাহিনীর ১ ব্যাটালিয়ন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা রংপুর-৩ (সদর), রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক ও যানচলাচল নির্বিঘœ রাখতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়েছে।

মোট কথা, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর অন্তত অর্ধলাখ সদস্য ইতোমধ্যে নির্বাচনি মাঠে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাদের চৌকস কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আস্থা ফিরে এসেছে। যারা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য সংশয়ে ছিলেন তাদের সংশয় কেটে গেছে। যেসব প্রার্থী ছিলেন দোদুল্যমান অবস্থায়, তারা নির্বাচনি প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী মাঠে নামায় প্রার্থী, সমর্থক, ভোটারাই শুধু নয়Ñসাধারণ মানুষ যারা এক মাস ধরে একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন, তাদের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তির সুবাতাস। তাদের অনেকেই বলেছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামায় ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট প্রদান নির্বিঘœই হবে না, স্বাভাবিক কাজকর্মেও আসবে গতি, অবসান হবে অবরুদ্ধ অবস্থার; দূর হবে জনভোগান্তির।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০০

সীমাহীন ভালবাসা বলেছেন: হা হা হা, ,, সুন্দর কথা বার্তা, তবে যে ভোটের জন্য রাজপথ আগলে রাখতে ক্ষমতার প্রভাব সৃষ্টি করা হয় সে ভোট তো আওয়ামীলীগের কাছে,, আর সব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেশ টা ভালো আছে,,, কিন্তুু সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেল গুলি খুলু দেখেন,,, BNP কিন্তুু ভোটের জন্য মাঠে লড়াই করবে না আর আওয়ামীলীগ জানে এখন প্রতিপক্ষ কেউ নাই তাই তারা ও বোমাবাজি করবে না,,, আর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বি এন পি যা পারবে তা করবে তবে এটা স্পষ্ট যে শেখ হাসিনা সংবিধানের যে পরিবর্তন করে এখন সংবিধানের গুরুত্ব দিচ্ছে তা এক সময় বি এন পি ও এমনই করবি,,বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী আওয়ামীলীগের কিছু কর্ম কান্ড,,, আর আওয়ামী জোটের কিছু নেতাদের সাম্প্রতিক কথা বার্তা মিথ্যাচার ছারা কিছুই নয়,,, বি এন পি এত জনপ্রিয়তা পেতনা যদি আওয়ামীলীগ এই ৫ বছর দেশ কে ভালো রাখতে পারত,দেশের সাধারন মানুষ রাজনৈতিক ইতিহাস বোঝে না,তারা বর্তমান বোঝে এবং ভবিষ্যৎ এর কথা ভাবে,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.