নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালেদার মন্তব্য বিএনপির জন্য ক্ষতিকর

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯

সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় জনসভায় যে ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা যে আবার সংলাপ শুরু করবার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথমেই ধরে নেওয়া যাক নবনির্বাচিত সরকার সম্পর্কে বেগম জিয়ার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা। তিনি বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে অবহিত করেছেন। তবে অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিনি যে নিরুৎসাহিত বোধ করছেন না, বক্তব্যে তাও তিনি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তো ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হতেই পারে, বৈধ বিরোধী দলীয় সাবেক নেত্রী কেন অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন? আর সরকারই বা কেন অবৈধতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসবে? আসলে সরকার বৈধ কি অবৈধ তা নির্ণয়ের মানদ-ই বা কি? একটা নির্বাচিত সরকার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার পর সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। এখানে অবৈধতার প্রসঙ্গ আসে কি করে? বৈধ কি অবৈধ তা তো একান্তই আইনগত ব্যাপার। আর সকল আইনের মূল উৎস হচ্ছে আমাদের জাতীয় সংবিধান। সেই সংবিধানভিত্তিক আইনের শাসনের ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে সরকার গঠিত হওয়ার পর তাকে অবৈধ বলার সুযোগ আছে কি? হ্যাঁ, কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছিল কি-না, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, শত শত ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ কারা করলো, প্রায় ৫ শতাধিকেরও বেশি কেন্দ্রে ভোট পুনরায় করতে হলো কেন, সহিংসতা কি মাত্রায় হয়েছে এবং কারা করেছে, ভোটাররা ভোট দেওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কিনা, এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু তাই বলে সরকারকে অবৈধ বলার কোনো অবকাশ আছে কি? আর সরকার যদি অবৈধই হয়ে থাকে তাহলে তো বিরোধী দলকে আদালতের আশ্রয় নেওয়া উচিত। বৈধ কি অবৈধ তার মীমাংসা তো উচ্চ আদালত করতেই পারে।

আইনের কোনো আশ্রয় না নিয়ে বৈধভাবে নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলা, সমীচীন কি? দেশের অধিকাংশ সংবিধান বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে এ সরকারকে অবৈধ বলা যায় না। যেহেতু বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি; তাই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলার কোনো নৈতিক অধিকারও তাদের নেই। বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। কী করে তিনি অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন? আইনগতভাবে যাকে অবৈধ মনে করেন, সেই অবৈধ সরকারের সঙ্গে সংলাপ কেন? তিনি তো বারবার সরকার পতনের হুমকি দিয়েছিলেন। সর্বত্র সহিংসতা চালিয়ে নির্বাচন প্রতিরোধ করতে চেয়েছিলেন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেছিলেন। তারপরও নির্বাচন প্রতিহত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে সরকারকে অবৈধ বলে বেগম খালেদা জিয়া তো সংলাপের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। অবিলম্বে এরূপ বাধা অপসারণ না করলে সরকার কি আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে? এটা এখন জনগণের ভাবনার বিষয়।

সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে বেগম জিয়ার বক্তব্য ছিল দায়িত্বহীন। কী করে তিনি বলতে পারলেন, যারা সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়েছে তাদের ভেতর অনেক অচেনা লোক অংশগ্রহণ করেছিল। এই অচেনা লোক বলতে যে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে এবং একটা ফেসবুকের বরাত দিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় যা প্রকাশ করেছিল তা যে মিথ্যা, ইনকিলাব পত্রিকার মালিক তা স্বীকার করেছেন এবং সে কারণে তারা ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু বেগম জিয়া কীভাবে ওই ধরনের উক্তি করলেন। তিনি কি তার দেশকে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে এবং সেনাবাহিনীকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে মনে করেন না? তিনি যদি ক্ষমতাসীন থাকতেন এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটতো, যদি বলা হতো ভারতীয় সেনারা এই অভিযানে অংশ নিয়েছে, তাহলে তার অবস্থাটা কী হতো? ভারত বিরোধিতাকে বেগম জিয়া তো নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সেই বিরোধিতার ভিত্তি কী করে আওয়ামী লীগ সরকারকে দুর্বল করা যায় তার অপপ্রয়াস তো বারবার চালানো হয়েছে। কিন্তু এরূপ একটা সংবেদনশীল বিষয়ে যেখানে শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, কয়েক

ডজন মানুষ হত্যা করা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয় সম্পত্তি লুট করা হয়েছে, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, সাতক্ষীরায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভেতরে আর একটা মিনি পাকিস্তান বানানো হয়েছে এবং নবনির্বাচিত সরকার সেখানে একটু দেরিতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সাতক্ষীরায় উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেখানে বেগম জিয়ার বক্তব্য কার স্বার্থে করা হলো। এটা কি ধরনের উস্কানি এবং এর লক্ষ্যই বা কী? সেনাবাহিনী সম্পর্কে এ ধরণের বক্তব্য সমগ্র জাতির জন্য অবমাননাকর। ভারত বিরোধিতা যদি তার রাজনীতির লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে তাও তো প্রকাশের একটা ধরণ আছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?

নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী যখন আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন তিনি সাড়া দেননি। জোরজবরদস্তিমূলক পন্থায় সরকার পতনই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হলে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন প্রতিরোধ করার হুমকি দিলেন এবং জামায়াতকে নিয়ে সর্বাত্মক সহিংসতা চালিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন। তারপর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচন ও সরকার গঠন বন্ধ করতে তিনি অক্ষম হলেন। এখন নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলে তিনি আবার সংলাপের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বারবার করা হয়েছিল। বিভিন্নভাবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে করেও তারা সফলতার মুখ দেখতে পারলেন না। তখন আপাতত সহিংসতা থেকে ফিরে আসার কর্মসূচি দিয়েছেন বলেই মনে হয়। এটা এখন স্পষ্ট তারা যে ধরণের সহিংসতা চালিয়ে ছিলেন জনগণ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। বরং সহিংসতার কারণে অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেননি।

বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবার কারণে তাদের যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার ও সমর্থক রয়েছে তাদের অনুপস্থিতির কারণে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা কম হওয়া তো স্বাভাবিক। সহিংসতার কারণে তো আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থক ও ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই ভোট কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা কম হয়েছে এ কথা কখনো মনে করা যায় না। বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটের পরিমাণ যদি ৩৫ শতাংশ হয় তাহলে তো সাধারণ ভোটার ৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। পাশ্চাত্যের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে তো ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয় না। সুতরাং জনগণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেÑএটা বলা কখনই সমীচীন নয়। বিএনপি ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে অবিলম্বে সংলাপে বসার। কিন্তু নবগঠিত সরকারের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংলাপ না অন্য কিছু।

প্রায় তিন মাস সহিংসতা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিলে দেশে যে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে অচল করে দিয়েছে তাতে জনজীবনের সর্ব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা বিধ্বস্ত করে দেওয়ায় শিল্প ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। খেটেখাওয়া মানুষ দৈনন্দিন কাজের অভাবে অনাহার ক্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। গ্রামের কৃষক তার কৃষিপণ্য শহরে পাঠাতে পারছে না। কর্মজীবীরা তাদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত হতে পারছে না। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশকে এক চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে। দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। নবনির্বাচিত সরকারের প্রধান দায়িত্ব এসবের দিকে নজর দেওয়া। সংলাপের দাবি তো মাসের পর মাস ধরে চলছে, অতীতেও চলেছে। খুব বেশি একটা সুরাহা তো হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎকালীন বিরোধী দল এবং সরকারের সম্পর্ক প্রায় পূর্বের অবস্থানে রয়ে গেছে।

তাই নবনির্বাচিত সরকার বোধহয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথমেই জনগণের দিকে লক্ষ্য দেওয়া। সংলাপ ও সমঝোতার বিরোধী তারা নয়। কিন্তু মাত্র একটা দাবিতে অটল থেকে এক যুগ সংলাপ করেও সমাঝোতায় পৌঁছানো যাবে না। সংলাপের পূর্বেই বিএনপিকে বলতে হবে কিভাবে নির্বাচন সম্পর্কিত সংকট সমাধান করতে চায় তারা। সরকারি দল তো বলেই দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো চিরস্থায়ী সমাধান নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর একটা নির্বাচন হলেও পরবর্তী নির্বাচনে একই সংকটের সৃষ্টি হবে। তাই আলোচনা হতে হবে ওই সব বিষয় নিয়ে, যা নির্বাচন ব্যবস্থাকে চিরদিনের জন্য সংকটমুক্ত করবে। নির্বাচন এলেই সরকার ও বিরোধী দলের ভীতিকর সংঘাত দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা, জনজীবনে অশান্তি, অর্থনীতিকে থমকে দাঁড়ানো কখনো একটা উন্নয়নমুখী দেশের জন্য বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চায় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই যদি তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে একটা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত। সরকার নিশ্চয়ই তাতে সাড়া দেবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১০

বিষক্ষয় বলেছেন: "নির্বাচিত সরকার"
এরশাদ এরকম সরকার বহুবার "নির্বাচিত" করতো--------
যেমন এখনও করে জিম্বাবুয়ের রর্বাট মুগাবে সহ আর অনেক স্বৈরাচারি শাসক

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

HHH বলেছেন: ব্লগে এসে বাললীগের চামচামি করে যে খয়রাত পান, তা দিয়ে সংসার চলে তো?

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

HHH বলেছেন: ব্লগে এসে বাললীগের চামচামি করে যে খয়রাত পান, তা দিয়ে সংসার চলে তো?

৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৯

রবিউল ৮১ বলেছেন: বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বার্চিত নয় বলে জনগণের নিকট অবৈধ।

৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

ব্লাক উড বলেছেন: বৈধ-অবৈধ কিনা বুঝিনা, কিন্তু জনগনের ভোটে নির্বাচিত নয় এই সরকার। মূলত বন্দুকের জোড় আর ইন্ডিয়ার সাপোর্টেই আওয়ামী সকারের অবস্থান।

৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

জহিরুলহকবাপি বলেছেন: বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বার্চিত নয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.