![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিএনপির কোন স্তরের নেতাকর্মীরাই এখন আর আন্দোলনে যেতে রাজি হচ্ছে না। তাই সরকারবিরোধী আন্দোলন করার মতো অবস্থা বিএনপির নেই। তবে উপজেলা নির্বাচনের পর দল গুছিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে চায় বিএনপি। এ জন্য বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বে সারাদেশে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের একমাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে পালিয়ে যেতে শুরু করায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে যান। তার পরও কিছু কিছু এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বিভিন্নভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। আবার নতুন উদ্যমে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সরকার কৌশলে তাদের থামিয়ে দেয়। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে বিএনপি আপাতত আন্দোলনের কথা বাদ দিয়ে সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জোরেশোরে প্রচারে নামে। এতে বিএনপির আন্দোলনের গতি থেমে যায়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন বিএনপির আন্দোলন স্তিমিত করার জন্যই সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দিয়েছে। তার মতে দলের অন্য নেতাকর্মীরা তা মনে করলেও এখন উপজেলা নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের প্রসঙ্গে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সবার মতামত চাইলে অধিকাংশ নেতাই এই মুহূর্তে তা করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন। তবে কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে খুশি করার জন্য আন্দোলনের কথা বললেও কিভাবে তা সম্ভব সে ব্যাপারে সঠিক প্রস্তাব দিতে পারেননি। এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালেও পরবর্তী আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়। কিন্তু নেতারা আগের আন্দোলনের ব্যর্থতার জবাবই খালেদা জিয়াকে সঠিকভাবে দিতে পারেননি। আর পরবর্তী আন্দোলনের কথা কেউ কেউ বললেও তার আগে সংগঠন গুছানোর কথা বলেছেন তাঁরা। কিন্তু খালেদা জিয়ার আশ্বাসের পরও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হচ্ছে না। আর এসব কমিটি পুনর্গঠনের জন্য সিনিয়র নেতারাও কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। তাই আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা রেখে বিএনপি কি করে পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে তা নিয়ে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই চলছে ব্যাপক আলোচনা।
নির্বাচনের আগে পালিয়ে থাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে নিয়ে দলের মধ্যে এখন নানামুখী আলোচনা চলছে। তাই তাকে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে দল আন্দোলনে গেলে সে আন্দোলন কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও চলছে নানামুখী হিসেব-নিকেশ। দলের সিনিয়র নেতাদের একাংশ অবিলম্বে একজন যোগ্য নেতাকে মহাসচিব করে তার মাধ্যমে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে আন্দোলনমুখী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ডকে। এ ব্যাপারে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব পেশ করেছেন বলে জানা গেছে। তারেক রহমানও তার ঘনিষ্ঠদলীয় নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে কি করা যায় পরামর্শ চেয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ম্যানেজ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভারমুক্ত মহাসচিব হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটিসহ সারাদেশের সবস্তরের যত কমিটি রয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ কমিটিই এখন মেয়াদ উত্তীর্ণ। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের কমান্ড এখন সাধারণ নেতাকর্মীরাও মানতে চাচ্ছেন না। তাই যখনই এসব কমিটি আন্দোলন কর্মসূচীসহ কোন কর্মকা- পরিচালনার জন্য অন্য নেতাকর্মীদের তলব করেন তখন অনেকেই তাদের ডাকে সাড়া দিতে চান না। এ কারণে গত এক বছর ধরে বিএনপির অধিকাংশ কর্মসূচী ফ্লপ হয়। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন ভিন্ন এক পরিবেশ বিরাজ করায় আন্দোলন কর্মসূচীতে কেউই আর সায় দিতে চচ্ছেন না বলে জানা গেছে। আর বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করতে গেলেও কেউ এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নির্বাচনের আগের আন্দোলন কর্মসূচী চলাকালে পালিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব বেড়েছে। তৃণমূল নেতারা এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছে আন্দোলন চলাকালে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা পালিয়ে গেছে। এই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ দেখা যায় সম্প্রতি বিএনপি হাইকমান্ড দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ৫৬টিম গঠন করে সারাদেশের সব জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক সফর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর। এ খবর শোনার পর তৃণমূল নেতারা দলীয় হাইকমান্ডকে জানায়, আগে আন্দোলনের সময় পালিয়ে যাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে তারপর তাদের জেলা-উপজেলা সফরে পাঠাতে হবে। তা না হলে তাদের কথা কেউ শোনবে না। এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে বিএনপি হাইকমান্ড ৫৬টিমের সাংগঠনিক সফর স্থগিত করে। বিএনপিতে নতুন করে আরেক সমস্যা দেখা দিয়েছে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এ নির্বাচনে বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেন্দ্র থেতে বহিষ্কার করতে শুরু করায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। এতে কোন কোন জায়গায় ভাল ফল পাওয়া গেলেও আবার কোন কোন জায়গায় কোন্দল বেড়ে গেছে। আর এ কোন্দলে বাতাস দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। এ নিয়েও দলীয় হাইকমান্ড বিভ্রত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।
দলের এই পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনের পরও বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে না বলে দলের নেতাকর্মীরাই বলাবলি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের এখন যে অবস্থা এতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আরও অনেক সময় লাগবে। আর বিষয়টি বুঝতে পেরেই বিএনপি হাইকমান্ড এখন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের পর দলের জাতীয় কাউন্সিল ও অন্যান্য ইউনিট কমিটিগুলো করে তার পর আস্তে আস্তে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলে ছোটখাট কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। তবে এক সময় এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। আর যেহেতু একটি নির্বাচন হয়েই গেছে। তাই আন্দোলন করার আগে আমরা সরকারকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার সুযোগ দিতে চাই। আর এখন দেশব্যাপী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। এ নির্বাচন দলীয়ভাবে না হলেও দলের নেতাকর্মীরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমরাও তাদের সমর্থন দিয়েছি। উপজেলা নির্বাচনের পর দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আর জাতীয় কাউন্সিলের পর পরিস্থিতি সাপেক্ষে আন্দোলন শুরু করা হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে আন্দোলন করেই দাবি আদায় করে নিতে হবে।
©somewhere in net ltd.