![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আধুনিক বিশ্বায়নের এ যুগে দেশে-দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে নিরন্তর। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকেও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অপর দিকে দেশকে অস্থিতিশীল করার সুগভীর চক্রান্তে দেশি-বিদেশি জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা একজোট হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এর মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এর জন্য সরকারের সদিচ্ছা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতার পাশাপাশি জনসচেতনতা ও গণমানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো জরুরি। তারা আরো বলছেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিকে পুঁজি করে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ধরণের জঙ্গি-সন্ত্রাসী চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গি-সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম টার্গেটস্থলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ভূখ-টিতে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে টার্গেট করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি-সন্ত্রাসী গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পক্ষ থেকে অডিও বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়েছে উক্ত সংগঠনটি। এতে করে নড়েচড়ে বসছেন এদেশের সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহসহ রাজনীতিকরা। বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের তীর ছুড়ছেন পরস্পর পরস্পরের দিকে। অভিযোগের তীর মূলত বিএনপি, জামায়াত-শিবিরসহ সংশ্লিষ্ট ১৯ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে। আর এদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইসহ এদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে খালেদা জিয়া’র নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট ঘরানার হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনের বিরুদ্ধেও।
বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে যত জঙ্গি সংগঠনের নেতা আছে তার মূল উৎপত্তিস্থল জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৪২টি জঙ্গি সংগঠন আছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয়। আল কায়েদা সরাসরি বাংলাদেশে কাজ না করলেও তাদের অনুসারী জঙ্গি সংগঠনও বাংলাদেশে রয়েছে। শীর্ষ আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির আহ্বানে তারা যে উজ্জীবিত হবে তা আর বলারই অপেক্ষা রাখে না। কথাগুলো বলছিলেন নিরাপত্তা ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.)। ইসলামপন্থি ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠনগুলো জাওয়াহিরির জিহাদের ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, আল কায়েদা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও অপমান করেছে। তবে স্বাধীনতাবিরোধীরা তাদের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আর স্বাধীনতাবিরোধীরাই যে এসব জঙ্গির মদদদাতা তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।
‘দাওয়াত’ নামের মাসিক ইসলামী পত্রিকায় নিজেই এক সময় আফগানিস্তানে আল কায়েদা, তালেবানদের সঙ্গে কাজ করার কথা লিখেছিলেন আজকের বিএনপি-জামায়াত জোট ও হেফাজত নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম। ১৯৯৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যায় ইজহারের লেখা তালেবান আফগানিস্তানের জান্নাত দেখে এলাম শীর্ষক প্রবন্ধে
আফগানিস্তানে সফরকালীন ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে বৈঠকের তথ্য নিজেই দিয়েছেন। একই বছর বাংলাদেশের সক্রিয় আল কায়েদার সংগঠন হরকাতুল জিহাদের হয়ে আফগানিস্তান গিয়েছিলেন আরেক জঙ্গি নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে বুলবুলি মোল্লা। সেখানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে ফিরে বাংলাদেশে তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন। সিলেটে তখন ইসলামী বিপ্লব নামে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে আল কায়েদা, তালেবানের পথ ধরে জিহাদের কথা তুলে ধরেছিলেন আজকের আলোচিত বুলবুলি হুজুর। এ দুই জঙ্গি নেতাই দেশে জামায়াত-হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সক্রিয় আছেন বাংলাদেশকে উগ্র তালেবানী রাষ্ট্র কায়েমে।
তবে কেবল এ দুজনই নয়, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও তালেবানের হয়ে কাজ করার তথ্য-প্রমাণ আছে অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে। যারা প্রত্যেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, বাংলাদেশে সক্রিয় জঙ্গিদের বিভিন্ন সময় দেওয়া জবানবন্দি ও সাক্ষাতকার এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের পর আল কায়েদার টার্গেট এখন বাংলাদেশ। আল কায়েদা পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি এবং হুজিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে সক্রিয়। বাংলাদেশের সক্রিয় সকল জঙ্গি সংগঠনেরই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে জামায়াত। তবে এক্ষেত্রে বিএনপি বিশেষত তারেক রহমানের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সরাসরি সম্পর্ক থাকার খবর আছে দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আল কায়েদার দায়িত্ব পান আয়মান আল জাওয়াহিরি। বিগত বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আমলে বাংলাদেশে এ আল কায়েদা নেতা নিরাপদেই একাধিকবার সফর করেছেন বলে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, টাইম ম্যাগাজিনের মতো প্রভাবশালী একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এসব তথ্য। আল কায়েদা নেতা সফরকালে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আশীর্বাদ নিয়েই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বৈঠক ছাড়াও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী আর তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা যায়। এসব বিষয় নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠলেও আজ পর্যন্ত জামায়াত ও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়নি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসা দুই নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলাভাই) এবং শায়খ আবদুর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করে জঙ্গিবাদী তৎপরতা শুরু করে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় আফগান-ফেরত শতশত জঙ্গি। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় তারা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করে, বিভিন্ন সময় যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই দুই জঙ্গি নেতাই মৃত্যুদ-ের আগে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন তাদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পৃক্ততার কথা। আরেক জঙ্গি নেতা মুফতি শহীদুল ইসলাম; যিনি এখন হেফাজত-জামায়াতের সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ব্যস্ত, তিনিও একই কথা বলেছেন।
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও লস্কর-ই-তৈয়বার সক্রিয় নেতা ও সদস্যরা বাংলাদেশে ধরা পড়ছে। তারা তাদের জঙ্গি নেটওয়ার্কের কথা স্বীকার করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা স্পষ্ট করেই বলছেন, আল কায়েদার টার্গেট এখন বাংলাদেশ। আল কায়েদা পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি এবং হুজির সহায়তায় বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়েছে। জামায়াত- শিবিরের সহায়তায় জেএমবি ও হুজির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আল কায়েদার বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভৌগোলিক কারণ ও প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশে আত্মঘাতী এবং জঙ্গি হামলার জন্য আল কায়েদা নিরাপদ ও সুবিধাজনক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে।
লাদেন মোল্লা ওমর জাওয়াহিরির সঙ্গী বাংলাদেশের ১০ জঙ্গি নেতা
ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর ও আইমান আল জাওয়াহিরির সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে এসেছিল আফগানিস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ১০ জঙ্গি নেতা। আফগানিস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৪০ জনের এক জঙ্গি গ্র“প পাকিস্তান হয়ে তখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আফগান যুদ্ধে ফেরত জঙ্গিরা বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন জঙ্গি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে ক্ষমতার লোভের টোপে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বোমাবাজি ও গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। দেশের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা বহু আগেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের একটি জঙ্গি প্রতিনিধি দল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সফর করে। এই সফরকারী দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) নেতা শেখ ফরিদ, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মাওলানা আবদুস সালাম, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজির একাংশের প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আফগানিস্তান সফরকালে এই প্রতিনিধি দলটির নেতাদের সঙ্গে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা হয় এবং বাংলাদেশের আল কায়েদার অনুকরণে জঙ্গি গ্র“প প্রতিষ্ঠার আলোচনা হয়। মিয়ানমারের আরাকানের হুজি নেতা মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ বার্মি, বাংলাদেশের মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুল হাই আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও আফগান মুজাহিদদের সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যাপারে কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকা পালন করেন।
২০১১ সালে মাওলানা শেখ ফরিদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮৮ সালে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়। সে বছরের ২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩টায় আফগানিস্তানে পৌঁছান তাঁরা। আফগানিস্তানে যাওয়া ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নোয়াখালীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মেজবা, ঢাকার শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মোহাম্মদপুরের মুফতি নসরুল হক, মাওলানা আজিমউদ্দিন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রামের মাওলানা সুলতান, মাওলানা মনসুর, কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতাউর রহমান খান, ফরিদপুরের মাওলানা আবদুল মান্নান, সিলেটের মাওলানা হাবিবুর রহমান খান। আফগান ফেরত ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের কয়েকজন ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন, কয়েকজন মারা গেছেন ও আত্মগোপনে চলে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির ইউটিউবে ছাড়া কথিত একটি অডিওবার্তায় বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের প্রতিরোধের যে আহ্বান জানিয়েছেনÑতার সঙ্গে বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোটের ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচাল ও রায় ঘোষণার প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে বিদেশে তাদের লবিস্ট যে নিয়োগ করা আছে, তারা যেভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে, তার সঙ্গে আয়মান আল জাওয়াহিরির বার্তায় বাংলাদেশকে বিরাট এক জেলখানা, ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র নানাভাবে আখ্যায়িত করার ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য দেখা যায়।
অডিওবার্তা প্রচারের মূল হোতা গ্রেপ্তার
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত অডিও বক্তব্যটি ইন্টারনেটে সর্বপ্রথম প্রচারের মূল হোতা মো. রাসেল খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাকে টাঙ্গাইলের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০ বছরের রাসেল টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। সে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবেও কাজ করেন। রাসেল ছাত্রশিবিরের ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লার অন্যতম নিয়ন্ত্রক (অ্যাডমিন)। সে আল কায়েদার অনুসারী এবং ছাত্রশিবিরের কর্মী বলে প্রাথমিকভাবে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, গত ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে সে এই অডিওবার্তাটি বাঁশের কেল্লাসহ আরও বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করে। তবে এ বার্তাটি গত ১৫ ফেব্র“য়ারি অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেলে প্রচার করে। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি অধিকাংশ পত্র-পত্রিকায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তবে বার্তাটি আল কায়েদাপ্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কি-না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সন্দেহ, এটি আল কায়েদা প্রধানের।
র্যাব বলছে ‘dawahilallah. wordpress.com’ নামক ওয়েবসাইটে গত বছরের ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় সর্বপ্রথম আল কায়েদার অডিওবার্তাটি আপলোড করা হয়। এতে বাংলাদেশে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান রয়েছে। এই সাইটটি জঙ্গিবাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত
পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন বালাকোট মিডিয়ার দ্বারা পরিচালিত। ‘dawahilallah. wordpress.com’ থেকে ৩০ নভেম্বর রাসেলের ব্যক্তিগত ই-মেইলে ([email protected]) অডিওবার্তাটি এসেছিল। পরে গত ১৪ জানুয়ারি jihadology.net-এ আবারও প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ চলতি মাসে ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বার্তাটি ছড়িয়ে পড়ে। রাসেল নিজে ওয়েব পেইজ তৈরি করে আল কায়েদার এই অডিওবার্তা ছড়িয়ে দেন বলে স্বীকার করেছেন।
রাসেলের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রাসেলের ই-মেইল আইডি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গত বছর ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লেখা ও ছবি ইরানের প্রেসিডেন্টকে ই-মেইল করে পাঠিয়েছে। ঘটনার দু’দিন পর ৭ মে রাসেল এই ই-মেইল পাঠায়। এসব কর্মকা- বিবেচনায় গোয়েন্দাদের ধারণা, আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রাসেলের যোগসূত্র থাকতে পারে। র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তবে ওই বার্তা আসলেই আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির কণ্ঠের কি-না তা খতিয়ে দেখছে র্যাব।
১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে আটক রাসেলকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আনা হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, আল কায়েদার কথিত ওই বার্তাটি ইন্টারনেটে প্রচারের পর থেকেই র্যাব অনুসন্ধান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে রাসেলকে শনাক্ত করা হয়। রাসেল একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বাঁশের কেল্লা ছাড়াও রাসেল আমার দেশ ও আমার ভাবনা নামে আরও কয়েকটি ব্লগ পরিচালনা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তার একাধিক আইডি রয়েছে। এসব আইডি ও ব্লগের মাধ্যমে রাসেল জাওয়াহিরির অডিওবার্তাটি ইন্টারনেটে প্রচার করেন।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান আরো বলেন, রাসেলের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ছাড়াও তিনটি মোবাইল ফোন ও অনেক জিহাদি বই পাওয়া গেছে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘dawahilallah. wordpress.com’ কর্তৃপক্ষের রাসেলের ব্যক্তিগত ই-মেইল আইডি জানা বিস্ময়কর। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেÑএমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাসেল ইরানের প্রেসিডেন্টকে ই-মেইল পাঠিয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে।
এর আগে বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, অডিওবার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা থেকে পরিচালিত জিহাদোলজি ডটকম নামের ওয়েবসাইটে প্রথম প্রকাশ করা হয়। তবে
র্যাব বলছে, ‘dawahilallah. wordpress.com’ নামক পেজে গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রথম অডিওবার্তাটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাসেলকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে সুযোগ দেয় র্যাব। এ সময় রাসেল জাওয়াহিরির ‘বক্তব্য সম্বলিত’ অডিওটি প্রচারের জন্য নিজে দায়ী বলে স্বীকার করে। রাসেল জানায়, বিভিন্ন ইসলামিক সাইটের প্রতি তার অতি আগ্রহ রয়েছে। এই আগ্রহ থেকেই সে ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ নামে একটি সাইটের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এরপর ওই সাইট থেকে আল জাওয়াহিরির অডিওটি তার ই-মেইলে আসে। পরে সেটি রাসেল নিজের বিভিন্ন সাইট ও ব্লগে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি ইন্টারনেটে আল কায়েদাপ্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশ ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স’ নামে একটি অডিও ক্লিপ বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটির মূল কণ্ঠ আরবিতে হলেও নিচে ইংরেজিতে ডাবিং দেখানো হয়। অডিও ক্লিপটির উৎস খুঁজে দেখা যায়, এটি ‘dawahilallah. wordpress.com’ নামক পেজে গত বছরের ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় সর্বপ্রথম আপলোড করা হয়।
র্যাব জানায়, পেজটি মূলত বালাকোট মিডিয়া থেকে পরিচালিত হয়। বালাকোট মিডিয়া পাকিস্তানভিত্তিক একটি সংগঠন। ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ বালাকোট মিডিয়ার পরিবেশনায় প্রায় নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে জিহাদের ডাক দিয়ে আসছে। এই পেজ থেকে জাওয়াহিরি ছাড়াও ওস্তাদ আহমেদ ফারুক, ওস্তাদ তামিম আদনানিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আধ্যাতিক নেতার বাণী প্রচার করা হয়। আল কায়েদার ওই অডিও ক্লিপটি পরবর্তীকালে গত ১৪ জানুয়ারি jihadology.net-এ আবারও প্রকাশ করা হয় এবং সর্বশেষ চলতি মাসে তা ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিও ক্লিপটি প্রচারণায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে গিয়েই রাসেলকে আটক করা হয়।
র্যাবের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, আটক রাসেলের ইয়াহু আইডিতে ([email protected]) আল কায়েদার জিহাদি ক্লিপ যেদিন আসে সে দিনই আপলোড করা হয়। পরে তার নিজের তৈরি করা পেজগুলোর মধ্যে ‘আমার দেশ ভাবনা’ নামে ব্লগপোস্ট ও ‘ইসলামের আলো’ নামে ওয়ার্ল্ড প্রেস পেজে ওই অডিও ক্লিপটি গত ৮ ফেব্র“য়ারি silent genocide in Bangladesh নামে আপলোড করা হয়। রাসেল ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ বা বালাকোট মিডিয়ার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এ অডিও ক্লিপটি অনলাইনে প্রচার করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
রাসেল তার তৈরি করা ফেসবুক পেজের মধ্যে ‘আমার দেশ ভাবনা’, ‘বাঁশের কেল্লা ভার্সন-২’ ‘দৃষ্টিভঙ্গি’, ‘গণতন্ত্র নিপাত যাক’, ‘ব্লগার রাসেল’ নামে ব্লগে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক নানা প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও ছবি আপলোড করেছে। এ ছাড়াও পেট্রলবোমা তৈরির টিপস ও বিভিন্ন জিহাদি স্লোগানের মাধ্যমে দেশে অরাজকতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। ‘Mass killing on protesters in Dhaka at night by armed joint force at least killed thousands’ নামে বানোয়াট তথ্য ও ছবি ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠায় যা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, রাসেলের যাবতীয় কর্মকা- পর্যালোচনা করে ধারণা করা যায়, রাসেল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এবং এসব জঙ্গি সংগঠনের এজেন্ট হিসেবে দেশে বিভিন্ন প্রচারণায় সাহায্য করে আসছে।
‘জিহাদোলোজি’ নিশ্চিত বার্তাটি আল কায়দারই
‘জিহাদোলোজি’ ওয়েবসাইট থেকে
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির কথিত অডিওবার্তাটি প্রচার পেয়েছে। প্রায় এক মাস আগে ১৪ জানুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় এই অডিওবার্তাটি ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান সম্বলিত আল কায়েদা প্রধানের বক্তব্যের এই বার্তাটি সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের নানা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী, আমাদের রাজনীতিকরা দোষারোপের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এসবের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.) সাংবাদিকদের জানান, ‘ওই বার্তা কোথা থেকে ট্রান্সমিট হয়েছে তা পাওয়া গেছে। কিন্তু কে ট্রান্সমিট করেছে তা পাওয়া যায়নি।’ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে এই অডিওটি প্রচার করা হয়েছে। বিটিআরসি আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টার বরাত দিয়ে ঢাকার সব মিডিয়াই জানিয়েছে, আল কায়েদার অডিওটির উৎস সরকার চিহ্নিত করতে পেরেছে।
বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়ে আল কায়েদা প্রধানের বার্তাটি যে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি পরিচালনা করেন আমেরিকান গবেষক আরন জেলিন। ওয়েবসাইটে এই তথ্যটি পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করা আছে। আরন জেলিন জানান, ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ নামের ওয়েবসাইটটি নিতান্তই একাডেমিক কাজে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং গবেষকরা এর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে থাকেন। ওয়েবসাইটটি ঘাঁটলে দেখা যায় পুরো ওয়েবসাইটের কনটেন্টই আল কায়েদা, পশ্চিমা দেশের ইসলাম এবং মুসলিম দেশগুলোর বিরোধ, সহিংসতা ইত্যাদি নিয়ে অসংখ্য নিউজ, ভিডিও, অডিওর লিঙ্ক। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই ওয়েবসাইটটি এর আগে ‘আল মক্তব’ নামে পরিচিত ছিল।
‘জিহাদোলোজি ডট নেট’-এর এক পাশে ছোট করে লেখা রয়েছে, এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে ‘দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি’র কোনো সম্পর্ক নেই। আরন জেলিন এই থিঙ্কট্যাঙ্ক সংগঠনটির একজন রিসার্চ ফেলো। ‘আল কায়েদার আদর্শের বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্ভব’ নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। পিএইচডিও করছেন আল কায়েদা নিয়েই। ‘জিহাদোলোজি ডট নেট’ অনেকটা তার ব্যক্তিগত ব্লগের মতোই।
প্রায় এক মাস আগে আপলোড হওয়া বাংলাদেশ নিয়ে আল কায়েদা প্রধানের বার্তাটি এখন আর ওয়েবসাইটের হোমপেজে নেই। ‘বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ দিলে বাংলাদেশ সম্পর্কিত তিনটি লিঙ্ক পাওয়া যায়। তার মানে ‘জিহাদোলোজি’তে বাংলাদেশ নিয়ে আল কায়েদার বক্তব্য প্রচার এটিই প্রথম নয়। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে প্রচারিত প্রথম বার্তাটি ছিল আফগানিস্তানের তালেবানদের পক্ষ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশি সৈন্য চেয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিল। তারই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সেই বার্তাটি প্রচার করা হয়েছিল আফগান তালেবানদের পক্ষ থেকে। তাতে আফগানিস্তানে বাংলাদেশি সৈন্য পাঠানোর যে কোনো উদ্যোগ প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেই বার্তাটি ‘জিহাদোলোজি’ কোনো ধরনের সম্পাদনাবিহীন এই ওয়েবসাইটে আপলোড করে। এর দীর্ঘদিন পর গত বছরের ২ এপ্রিল একটি অডিওবার্তা আপলোড করা হয় এই ওয়েবসাইটটিতে। আল কায়েদার ওস্তাদ আহমাদ ফারুকের বার্তা হিসেবে সেটি প্রচার করা হয়। আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক ‘Rebellion against Allah in the Land of Haji Shariatullah…? A Message from Ustadh Ahmad Farooq’ শিরোনামে প্রচারিত ওই বার্তায় বাংলাদেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। গত ১৪ জানুয়ারি প্রচারিত হয় তৃতীয় বার্তা, সেটি নিয়েই সরগরম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জিহাদোলোজিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচার হওয়া তিনটি বার্তার মধ্যে দুটি প্রচার করেছে আল কায়েদার মিডিয়া প্রোডাকশন হাউস ‘আস সাহাব’। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এরা অডিও বিবৃতি তৈরি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিতরণ করার কৌশলে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে সংস্থাটি ভিডিওর পাশাপাশি অডিও এবং অন্যান্য ইন্টারনেট ম্যাটারিয়েল তৈরি করে সেগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। আরবির পাশাপাশি ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষায়ও সাবটাইটেল দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত সাম্প্রতিক অডিওবার্তাটিতে বাংলা সাবটাইটেল জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
‘জিহাদোলোজি’ আল কায়েদার এই ভিডিও কোথায় পেল? আরন জানায়, আল কায়েদার একটা অনলাইন ফোরাম আছে। আল ফিদা নামের এই ফোরামে আল কায়েদা তাদের সবধরনের বার্তা প্রথম প্রকাশ করে। https://alfidaa.info/vb এই ওয়েব লিঙ্কে তাদের সবধরনের তৎপরতা, আলোচনা, বিতর্ক তারা প্রকাশ করে। আরন জানান, আল ফিদা আল কায়েদার অনলাইন ফোরাম। আল কায়েদার ফোরাম আল ফিদা থেকেই তিনি অডিওটি পেয়েছেন এবং অন্যান্য কনটেন্টের মতোই এটি তিনি তার সাইটে আপলোড করেছেন। তিনি আরও জানান, তিনি যেহেতু বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করেন না, সে কারণে তিনি অডিও দেখেননি। তিনি এর কনটেন্ট সম্পর্কেও অবগত নন। সব জিহাদি কনটেন্টই তিনি তার সাইটে আপলোড করেন। এটা তিনি করেন যাতে অন্য গবেষকদের তথ্য পেতে সহায়তা হয়। আল কায়েদা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের অনেকেই তার ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করেন। এটি নিতান্তই একাডেমিক একটি ব্লগ।
‘দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি’র রিসার্চ ফেলো আরন বলেন, ‘শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি, এটা আল কায়েদার বার্তা। আমি আগেও বলেছি, প্রাইমারি সোর্স থেকে আমি এই অডিওবার্তাটি পেয়েছি। এটি যে আল কায়েদারই বার্তা সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’
আল কায়েদার এই অডিও বার্তাটির ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী, রাজনীতিকদের অবস্থান কী, তার কোনোটাই পরিষ্কার নয়। অথচ খোদ মার্কিন একজন গবেষক এই অডিওবার্তাটিকে আল কায়েদার বলে নিশ্চিত করছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আল কায়েদা প্রধানের জিহাদের ডাক যে কাদের প্ররোচণায় তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে অবশ্য এতোদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন সরকার এ বিষয়ে কি ভূমিকা গ্রহণ করে তা-ই দেখবে দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ। তবে এদেশের অধিকাংশ মানুষই যে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তা নিয়ে কোনোরূপ সংশয় নেই। তাই সরকারের উচিত শান্তিপ্রিয় এ দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: গতকাল যাহা ঘটিয়া গেল তাহাতে এখনই কঠর পদক্ষেপ গ্রহন না করলে ভবিষ্যতে বিশার অংকের মাসুল গুনতে হবে। অতএব সাধু সাবধান।