নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গার্মেন্টস নিয়ে ষড়যন্ত্র সাফল্য পেল না

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৩

তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ডাকা শিল্পাঞ্চলের ধর্মঘটে দেশের কোথাও কারো সাড়া নেই। শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডিইপিজেড এবং চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ডবলমুরিং, ফৌজদারহাট, পাহাড়তলী, হালিশহর এবং সিইপিজেডসহ সব পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা স্বাভাবিক দিনের মতোই নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেন। সেখানে কাজও চলেছে স্বাভাবিক গতিতে। খুলনার দৌলতপুরসহ দেশের কোথাও কোনো শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের সামান্যতম প্রভাব পড়ার খবরও পাওয়া যায়নি।

দেশের বিভিন্ন শিল্পশ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জানান, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের প্রেসিডেন্ট মোশরেফা মিশু কারো সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। শ্রমিক নেতাদের ভাষ্য, এতে শ্রমিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অধিকার আদায়ের কোনো ইস্যু নেই। বরং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোনো বিশেষ মহল তাদের নিজেদের ফয়দা হাসিলের ষড়যন্ত্র করছে, তার আভাস পাওয়া গেছে। সাধারণ শ্রমিকদের কাছেও বিষয়টি এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তাই কেউই এতে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলেয়া আক্তার জানান, মালিবাগ, ডিআইটি রোড, মিরপুর এবং পল্লবীসহ রাজধানীর অভ্যন্তরে যেসব গার্মেন্ট রয়েছে, সেখানে শনিবার সকাল থেকেই যথারীতি কাজ চলেছে। ধর্মঘটে অংশ নেয়া দূরে থাক, অন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেউ কোনো মিছিল বের করারও চেষ্টা করেনি। বরং অতিউৎসাহী দু-চারজন ধর্মঘটের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করলে সাধারণ শ্রমিকরাই তাদের নিবৃত্ত করেছে। এই ধর্মঘটে তাদের কোনো সমর্থন নেই বলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

এদিকে আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলেও (ডিইপিজেড) ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এসব এলাকার প্রতিটি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সামনে শনিবার ভোর থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করা হয় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ডাকা ধর্মঘটের কোনো প্রভাব সাভার-আশুলিয়ায় পড়েনি। শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেন। প্রতিটি কারখানাগুলোর মূল ফটকের সামনে ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিইপিজেডের পুরনো জোনের 'হেলিকন লিমিটেড' নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করলেও তা তাদের অভ্যন্তরীণ দাবি-দাওয়ার কারণ বলে জানা গেছে। এদিকে ধর্মঘটের সমর্থনে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে_ এ আশঙ্কায় শনিবার ভোর থেকেই চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ বাড়ানো হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কোনো পোশাক কারখানা থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলও বের হয়নি।

চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তোফায়েল আহমেদ মিঞা বলেন, 'বকেয়া নিয়ে তোবা গার্মেন্ট শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে চট্টগ্রামের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে। বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাসহ পোশাক কারখানাগুলোয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটার আলামত দেখা যায়নি। তবে এরপরও রোববার একই ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তোফায়েল আহমেদ।

চট্টগ্রাম ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তপন দত্ত শনিবার বিকালে যায়যায়দিনকে জানান, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের প্রেসিডেন্ট মোশরেফা মিশু যে দাবিতে সারাদেশের শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট ডেকেছেন, এর কোনো ভিত্তি নেই। এই দাবির সঙ্গে শ্রমিক স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা নেই। তার (মোশরেফা মিশু) এই সিদ্ধান্ত হটকারি অভিযোগ করে তপন দত্ত বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কোনো আন্দোলনের ডাক দেয়া হলে অবশ্যই শ্রমিকরা ঝাপিয়ে পড়বে। তবে কোনো বিশেষ মহলের স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য তারা রাজপথে নামবে না।

সারাদেশের শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের আহ্বান করার আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল মন্তব্য করে তপন দত্ত বলেন, এই আন্দোলনের কথা অনেকেই জানেন না। তাই এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না।

খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ'র সভাপতি শাহানা শারমীন জানান, সেখানকার কোনো শিল্প এলাকায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। সাধারণ শ্রমিকরা দূরে থাক, খুলনার অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও এই আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন শাহানা।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডবিস্নউএস) ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশের শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট ডাকার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তোবার শ্রমিকরা বেতন-বোনাস না পেলে তা আদায়ে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা হবে। তবে কোনো বিশেষ মহলের স্বার্থ আদায়ে শ্রমিকরা রাজপথে নামবে না। সাভার বা আশুলিয়ার কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান হটকারি এই ধর্মঘটে সমর্থন দেয়নি বলে দাবি করেন ইব্রাহিম।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ডাকা ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্পাঞ্চলগুলোতে। শনিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, বিসিক, কাঁচপুর, আদমজী ইপিজেড এবং রূপগঞ্জ এলাকার শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্ট ও তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিক সংগঠনগুলো কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ কিংবা ধর্মঘটের জন্য কোনো ধরনের প্রচারণা চালায়নি। তবে সকালে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোবা গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন মিছিল করেই দায়সারাভাবে কর্মসূচি পালন করে। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর বর্তমান সভাপতি সেলিম ওসমানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণেই শ্রমিক নেতারা মাঠে আগের মতো শ্রমিক অধিকারের জন্য নামছে না বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, আদমজী ইপিজেড, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ এবং ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্প নগরীতে প্রায় ১ হাজারের মতো গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। শনিবার সকাল থেকে সব খোলা ছিল এবং শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে দেখা গেছে।

গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর পরিচালক ও লেবার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএম ফারুক জানান, নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মাঝে ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি। সব রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠাই খোলা ছিল। বিকেএমইএ'র সভাপতি এমপি সেলিম ওসমান সব সময় শ্রমিকদের নিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। বিকেএমইএ-এর সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান।

তোবা গার্মেন্ট সংগ্রাম কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক অঞ্জন দাস জানান, এখন বেশিরভাগ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দেয়া হবে। এ কারণেই হয়ত অনেক কারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘটে সাড়া দেয়নি।

নারায়ণগঞ্জে ধর্মঘটের প্রভাব না পড়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ধর্মঘট আমাদের দেশব্যাপী পূর্ব ঘোষিত ছিল। যে দাবিতে ধর্মঘট ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ২ মাসের বকেয়া বেতন ইতোমধ্যেই মালিকপক্ষ পরিশোধ করে দিয়েছে। আর আটক করা সব শ্রমিক নেতাদের ছেড়ে দিয়েছে। রোববার বাকি ১ মাসের বেতন পরিশোধ করবে। তাই আমাদের ধর্মঘট জোরদার করতে যা যা প্রচারণা প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। তেমন কোনো নির্দেশনা আমাদের ছিল না। এরপরও যেসব শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছে, তারা স্বেচ্ছায় করেছে। আমরা ধর্মঘট পালন করতে কোনো প্রকার ভাংচুর, বাধা প্রদান বা কোনো কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেইনি।

শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জ-৪ এর পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর কোথাও ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি। কোথাও কোনো ধরনের কর্মসূচিও হয়নি। শুধুমাত্র শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩৫-৪০ জন প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: আর এভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের একটা মস্তবড় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গেল।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.