![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজনৈতিক প্রপাগা-া আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দৃশ্যমান না হলেও ভেতরে ভেতরে পাল্টে যাচ্ছে দেশের চিত্র। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন অবকাঠামো। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইত্যাদি প্রপাগা-ায় বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে- হচ্ছে। দেশে পুঁজি বিনিয়োগে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, পানগাঁও নৌ টার্মিনাল নির্মাণ, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল, মেট্রোরেল, রাজধানীর চারপাশে সুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন সহজিকরণ করতে নেয়া আরো কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চীন, জাপান, জার্মানির মতো দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন নতুন এসব অবকাঠামো অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করবে বিনিয়োগে। বিদেশি বিনিয়োগ এলে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। এখন প্রায় মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। তখন স্বপ্ন নয়; বিশ্বদরবারে বাস্তবে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যার মাধ্যমে গতি পাবে দেশের অর্থনীতিও। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এমন সম্ভাবনার তীরে দাঁড়িয়ে থাকার পরও রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতাসহ নানা বাধায় পড়তে হচ্ছে। আর এর জন্য একটি স্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রিজার্ভ এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জিডিপি সন্তোষজনক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর এবং এসব অবকাঠামো গড়ে উঠলে দেশ হবে অপার সম্ভাবনার। পেছনে তাকানোর সময় থাকবে না। অর্থনৈতিকভাবে পাল্টে যাবে দেশ। উন্নয়নের সেই সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা এবং কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবেই। স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও ভঙ্গুর অর্থনীতির হাল ধরতে হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ শুধু দরিদ্রই ছিল না, দারিদ্র্য দূর করার যে হাতিয়ারগুলো দরকার তাও ছিল না। ছিল না অর্থ, অবকাঠামো বা দক্ষ জনশক্তি। তখন বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ, অর্ধাহার-অনাহার কবলিত, বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দেশ হিসেবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ভঙ্গুর ও নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে এর স্থায়ীত্ব সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বিদেশি সাহায্যনির্ভর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। নরওয়ের অর্থনীতিবিদ ফাল্যান্ড ও ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ পারকিন্সন বাংলাদেশকে বলেছিলেন ‘উন্নয়নের পরীক্ষাগার’। ১৯৭৬ সালে তাদের বই ‘বাংলাদেশ: স্টেট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’-এ উল্লেখ করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হলে পৃথিবীর যে কোন দেশের পক্ষেই উন্নয়ন সম্ভব। ২০০৭ সালে এরা তাদের মত থেকে সরে আসেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘তিন দশকের সীমিত ও বর্ণাঢ্য অগ্রগতির ভিত্তিতে মনে হয় বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।’ এখন বাংলাদেশকে উন্নয়ন পরীক্ষাগারের পরিবর্তে উন্নয়ন মডেল বলছেন। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। এই সেতু শুধু দেশের স্বপ্নই নয়; বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারীও এই সেতুর ওপর চোখ রাখছেন। এই সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর স্থলপথ সংযোগ স্থাপনে গতি আসবে। বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। শুধু পদ্মা সেতুই নয়; বিলম্ব হলেও এবছরের মধ্যেই শেষ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের কাজ। যা পণ্য পরিবহনসহ যোগাযোগকে সহজতর করবে। আশাতীত গতি পাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। বড় বড় চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হয়েছে। এখন কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ২০১৮ সালে ট্রেন ও যানবাহন চলবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ জুন থেকে শুরুর কথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০১৬ সালে। হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মহাখালী হয়ে তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-কুতুবখালী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের এই উড়াল সড়ক নির্মিত হবে।দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আরো কয়েকটি কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গা রক্ষা, ঢাকা শহরের চারপাশে নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথ নির্মাণ, হাইটেক পার্ক নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ট্যানারি স্থানান্তর, গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন, ওষুধ শিল্পপার্ক স্থাপন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসন ও সুন্দরবন সুরক্ষা ইত্যাদি।এছাড়া কক্সবাজারের সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ, গ্যাস সংকট নিরসনে এনএলজি টার্মিনাল নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এবং তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে সফলভাবে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন চলছে। এদিকে দেশের ৬টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য আগামী জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এতে চীন, জাপান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের ৬ জেলায় ২ হাজার ২৫৭ একর জমিতে গড়ে তোলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যুৎ এবং উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে সরকার। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উপস্থাপন করছে। যাতে সবার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে পৌঁছতে পারে।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যে কোনো সময় থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের খুব ভালো সময় যাচ্ছে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট জায়গা। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জার্মানি, চীন, জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। আরও অনেক দেশ এরই মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, চলতি মে মাস ও আগামী জুন মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকগুলো নিয়ে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে সরকারের। এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬ জুন ২ দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু ইস্যু যুক্ত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। মোদির সফরে বাণিজ্য, শিপিং, যোগাযোগ ও শিল্প ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এ ব্যাপারে চুক্তি সই হতে পারে মোদির সফরে।মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের তালিকা করা হয়েছে। এ দেশগুলোর অর্থনীতি এগিয়ে আসছে বলে এদের নাম দেয়া হয়েছে ‘নেক্সট ইলেভেন’। এই উদীয়মান ১১টি দেশের একটি বাংলাদেশ। সংস্থাটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেছে, দেশটির বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ। এদের মাধ্যমে দেশটির ভবিষ্যৎ বদলে দেয়া সম্ভব।জেপি মরগান ৫টি ফ্রন্টিয়ার অর্থনীতির নাম উল্লেখ করেছে। এর মধ্যেও বাংলাদেশ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সব ধরনের সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ নেক্সট ইলেভেন সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। লন্ডনের জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির বিচারে পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া মুডি’স ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের সন্তোষজনক অর্থনৈতিক রেটিং দিচ্ছে। তাদের পক্ষেপণও সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ইঙ্গিত করে। এসব পূর্বাভাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সামনে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা।পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১২৪ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১৪ ডলারে। যা গত বছর ছিল ১১৯০ ডলার। মাথাপিছু আয় বাড়ায় বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান এখন ৫৮তম স্থানে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতীয় আয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও ও গড় আয়ু বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, সেখানে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। কয়েক বছর আগে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই এখন ১৮৫১ ডলার, এটা অব্যাহতভাবে ২ দশমিক ১ ভাগ এবং মোট জিডিপি বছরে নিয়মিতভাবে সাড়ে তিন ভাগ হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার ৫০তম স্বাধীনতাবার্ষিকী উদযাপনকালে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসংবলিত পৃথক ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কথা বললেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্যাক্স হলিডে, কম সুদে ঋণ দেয়াসহ আকর্ষণীয় আলাদা কিছু অফারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এমন কিছু করতে হবে যেন বিনিয়োগকারীরা সহজে আকৃষ্ট হন। একই সঙ্গে দেশে যে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে তা বিশ্ববাজারে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।গত চার দশকে বাংলাদেশের অর্জনের তালিকা কম নয়। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও কিছুদিন পূর্বেও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। সত্তর দশকের প্রথম দিকে দেশে চাল উৎপাদন হতো ১ কোটি টন। জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। উৎপাদিত খাদ্যে ৬০ ভাগ চাহিদা মিটতো। বাকি খাদ্য আমদানি করতে হতো। বিদেশি মুদ্রার মজুদ ছিল সামান্য। তাই খাদ্যের জন্য বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হতো। গত চার দশকে দেশে কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে এক খাদ্যবিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্যে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বেড়েছে খাদ্য চাহিদা। একই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদনও। জমির পরিমাণ কমলেও উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত ২৭ বছরের ব্যবধানে আউশ উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমেছে ৪৩ লাখ একর, আমনের কমেছে দেড় লাখ একর। একই সময়ে আমনের উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ লাখ টন ও বোরোর বেড়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বরং ওই ঝুড়ি এখন খাদ্য ও বিদেশি মুদ্রায় পরিপূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এখন আমাদের অর্থনীতির অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির মূলে ভূমিকা রাখছে রেমিট্যান্স। স্বাধীনতার আগে গুটিকয়েক বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করতেন। এখন দেড়শতাধিক দেশে প্রায় কোটি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। রেমিট্যান্স রিজার্ভে এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। আর্থসামাজিক অগ্রগতির পথে দৃঢ়পদক্ষেপে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেট ছিল ২৮০ কোটি টাকা। আর রাজস্ব ও উন্নয়ন মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এর আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। যা প্রায় ৮শ গুণেরও বড়। স্বাধীনতার পর প্রথম দশকের তুলনায় গত দশকে টাকার গড় নমিনাল জিডিপি ২৮ গুণ বেড়েছে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর গত এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে।অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আকাক্সিক্ষত ফলাফল দারিদ্র্যবিমোচনে অবদান রেখেছে। দারিদ্র্যের হার উল্লেখজনক হারে কমেছে। চার দশক আগেও এই হার ছিল ৭০ শতাংশের ওপরে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বছরের শুরুর দিকে এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সাথে সাথে দেশে দারিদ্র্যের হার কমছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার শতকরা ২৪ দশমিক ৭ ভাগ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অন্যতম একটি লক্ষ্য এ বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। বিশ্বব্যাংক তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে আশা করেছে, বাংলাদেশ সময়ের আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ২০১৩ সালের ফল অনুযায়ী দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ১ বছর। ২০১২ সালের এটা ছিল ৬৯ দশমিক ৪ বছর, যা তার আগের বছর ছিল ৬৯ বছর। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে প্রথমইে দরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। যার প্রধান হাতিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা, কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বিনিয়োগ আসবেই। সাবেক এই গভর্নর বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশিরা দেখবে বিনিয়োগের পরিবেশ। সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই বিদেশিরা বিনিয়োগে আসবে। - See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.