![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক শক্তি শান্তির পক্ষে? সম্প্রতি বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০১৫ (গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-২০১৫) -এ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক শান্তি সূচক বিষয়ক গবেষণার উদ্ভাবক হচ্ছেন অস্ট্রিয়ান প্রযুক্তি এন্ট্রেপ্রেনিয়ার এবং সমন্বিত গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কিল্লিলিয়া। তিনটি বিস্তৃত বিষয়বস্তু ব্যবহার করে বৈশ্বিক শান্তি সূচক রচিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে (১) সমাজে নিরাপত্তার স্তর, (২) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাতের ব্যাপকতা এবং (৩) সামরিকীকরণের মাত্রা। এসব বিষয়ের ভিত্তিতে উদ্ভূত উপাদানগুলো ভেতরের বা অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের উভয়ই হতে পারে। অভ্যন্তরীণ উপাদান হচ্ছে দেশের মধ্যে সহিংসতা ও অপরাধ। অপরদিকে বাইরের উপাদান হচ্ছে সামরিক ব্যয় ও যুদ্ধ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি বলতে যেসব রাজনৈতিক দল বা জোট এ যাবৎ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে তাদেরই বোঝানো হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর থেকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার পূর্ববর্তী বছরগুলো যদিও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বজায় ছিল কিন্তু সঙ্গত কারণে এ সময়গুলোকে আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি না। আবার শোকার্ত ১৫ আগস্টের পর সূচিত সামরিক শাসন তো ছিল অশান্তি সৃষ্টির মূল ঘটনা। অতএব সেটিকেও বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। উভয় ক্ষেত্রে আপাতত একটি বিষয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করছি, আর তাহলো ‘বৈশ্বিক শান্তি সূচক’ পরিমাপের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। তাই এর আগের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বর্তমান আলোচনার মধ্যেই আলোচনা সীমিত রাখা হচ্ছে। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে তুলনামূলক বিশ্লেষণের স্বার্থে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের ঘটনাবলীও উল্লেখ করা হচ্ছে।
আমরা জানি পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট থেকে ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত মূলত অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসন চলমান ছিল। নব্বইয়ের আন্দোলনের সফল পরিণতির পর থেকে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এই দলটির নেতৃত্বে মহাজোট সরকার বর্তমানে ক্ষমতাসীন আছে। আবার পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসারীদের ভিন্নতা অনুযায়ী ‘শান্তির পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি’ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর আলাদা আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে বাস্তব প্রমাণ উপস্থাপিত করে প্রশ্নটির উত্তর অনুসন্ধান করার কাজে মনোনিবেশ করা হলে প্রশ্নটির একটি উত্তর পাওয়া সম্ভব। যদিও এরপরেও নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে কেউ কেউ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ‘সত্য’কে এড়িয়ে যেতে চাইবে। কারণ ‘সত্য’ বড় কঠিন। কঠিন কখনো বঞ্চনা করে না। কিন্তু কঠিনেরে ভালোবাসার মতো মানসিক দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব আমাদের সমাজে বিরল। বলাবাহুল্য, সত্যের সঙ্গে যে কাঠিন্য জড়িয়ে থাকে, তা সব সময় সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে। তাই দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির পক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে এই বাস্তব সত্য, ‘অশান্তি’ সৃষ্টিকারী শক্তির পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়।
রাজনীতির নামে সাধারণ মানুষের জান-মালের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশব্যাপী অশান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টির দুঃসংবাদের মধ্যে একটি সুখবর হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিক্স এন্ড পিস (আইইপি) গত ১৭ জুন গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-২০১৫ ঘোষণা করেছে। আইইপির অফিস আছে সিডনি, নিউইয়র্ক এবং মেক্সিকো সিটিতে।
আইইপি কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত বিশ্বের মোট ১৬২টি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভুটানের অবস্থান ১৮, নেপালের অবস্থান ৬২, বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১১৪, ভারতের অবস্থান ১৪৩, পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৪ এবং আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬০। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-২০১৫-এর প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘এই উন্নতি চলমান সংঘাত ও সামরিকীকরণের পরিপ্রেক্ষিত, অভ্যন্তরীণ সংঘাত হতে উদ্ভূত মৃত্যু, …এবং সন্ত্রাসবাদ সূচকের প্রভাবে অব্যাহতভাবে খারাপ হতে থাকা পরিস্থিতির দ্বারা পাল্টা-ভারসাম্যকৃত।’ সন্ত্রাস ও জঙ্গি আক্রমণের ভয়ে সমগ্র মানব জাতি এখন আতঙ্কগ্রস্ত। এই তো মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনার চার্লসটনের গির্জায় ‘খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এক শ্বেতাঙ্গ যুবকের গুলিতে’ সাতজন নিহত হলেন। তিউনিসিয়ার পর্যটন কেন্দ্র সমুদ্র সৈকতে বন্দুকধারী আইএস জঙ্গির গুলিতে ৩৯ জন নিহত হন, কুয়েতের শিয়া মসজিদে হামলায় ২৫ জন নিহত হন। আর সর্বশেষ আফগান পার্লামেন্টে হামলা চালাতে গিয়ে রক্ষীদের গুলিতে ৬ ইসলামি জঙ্গি নিহত হয়। বস্তুতপক্ষে, সমগ্র বিশ্ব এখন অশান্তির কালো মেঘে ঢাকা।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০১৫ অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ১০টি দেশ হচ্ছে ১. আইসল্যান্ড, ২. ডেনমার্ক, ৩. অস্ট্রিয়া, ৪. নিউজিল্যান্ড, ৫. সুইজারল্যান্ড, ৬. ফিনল্যান্ড, ৭. কানাডা, ৮. জাপান, ৯. অস্ট্রেলিয়া, ১০. চেক প্রজাতন্ত্র। ১৬২টি দেশের মধ্যে শান্তির দিক থেকে এই দেশগুলোর অবস্থান ওপরের দিকে। এর বিপরীতে ১৬২টি দেশের মধ্যে নিচের দিকের দশটি দেশ হচ্ছে ১. সিরিয়া (১৬২তম), ২. ইরাক (১৬১তম), ৩. আফগানিস্তান (১৬০তম), ৪. দক্ষিণ সুদান (১৫৯তম), ৫. সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (১৫৮তম), ৬. সোমালিয়া (১৫৭তম), ৭. সুদান (১৫৬তম), ৮. কঙ্গো (১৫৫তম), ৯. পাকিস্তান (১৫৪তম), এবং ১০. উত্তর কোরিয়া (১৫৩তম)। বৈশ্বিক শান্তি সূচকের একেবারে নিচের দিকের এই দশটি দেশকে অশান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গণ্য করতে পারি। দেখা যাচ্ছে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দশটি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ না থাকলেও, সবচেয়ে অশান্তির ১০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ অবস্থান করে নিয়েছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। মূলত পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ আফগাস্তিানে রপ্তানি হয়েছে। এখন এ দুটি দেশই জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক মহলও সহযোগিতা করছে। অপর পক্ষে ধর্মীয় ঔপনিবেশিক শক্তি পাকিস্তান মনে হচ্ছে জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিতে পারলে তাদের জন্মগত অঙ্গীকার অপূর্ণ থেকে যায়। তাই তারা বিশ্বের যে কোনো দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ তথা হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। উগ্রবাদী ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির’ মিশ্রণ যে কত ক্ষতিকর বৈশ্বিক শান্তি সূচকে সর্বনিম্ন দশ দেশে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্থান পাওয়া তাই প্রমাণ করে।
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ শাসন সমাপ্তির পর পাকিস্তান নামের ধর্মীয় উপনিবেশের জন্ম হয়। আমরা (পূর্ব) বাঙালিরা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হই। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন এই ধর্মীয় উপনিবেশের স্থপতি। জিন্নাহ নিজে ধর্ম পালন করতেন না। নিজে ধর্ম পালন না করতে জানলেও তিনি ছিলেন ধর্মীয় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। অপরপক্ষে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ধর্মপরায়ণ। তিনি প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তাকে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে পাকিস্তান কন্সটিটিউয়েন্ট এসেম্বলিতে প্রদত্ত তাঁর প্রথম ভাষণে জিন্নাহ পাকিস্তানকে একটি আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। তারিক আলী তার ‘ক্যান পাকিস্তান সার্ভাইভ’ গ্রন্থে বলছেন, ‘জিন্নাহ পাকিস্তান মুসলিম লীগের নাম পাল্টিয়ে ‘পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগ’ করতে চেয়েছিলেন। জিন্নাহর সে ইচ্ছাও কোনোদিন পূরণ হয়নি।’
পাকিস্তানের ‘২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার ইতিহাস’। সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বন্ধের জন্য ১৯৪৬ সালে মহাত্মা গান্ধীর নোয়াখালী মিশন কিছুটা সফল হলেও পরবর্তীকালে পাকিস্তান সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির কারণে তা থমকে যায়। এই সঙ্গে লক্ষ করা যায় হিন্দুদের দেশত্যাগ, ফলে এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। ১৯৪১ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ ভাগ ছিল হিন্দু। ১৯৭৪ সালে তা দাঁড়ায় শতকরা মাত্র ১৪.৬ ভাগে। আশা করা হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে হিন্দুদের এই চলে যাওয়া হ্রাস পাবে। কিন্তু তা হয়নি। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যে অনাকাক্সিক্ষত ও বিয়োগান্তক রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল তার ফলে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাওে চলে যাওয়াও অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী ২০১১ সালে মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা কমে শতকরা মাত্র ৮.৫ ভাগে পৌঁছায়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পালাক্রমে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষমতার সময়কাল হচ্ছে ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময়কাল। কিন্তু যেহেতু ২০০৭ সাল থেকে ‘গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’ করা হচ্ছে সেহেতু ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদটিও আমাদের হিসাবের বাইরে রাখতে হচ্ছে। তবে অতি সম্প্রতি কুয়েতের মসজিদে, তিউনিশিয়ায় পর্যটন কেন্দ্রে ও ফ্রান্সের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী আক্রমণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক শক্তিগুলোর’ মধ্য থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে তা অনুসন্ধান করা যেতে পারে। এসব হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বের সভ্য, গণতান্ত্রিক এবং সেক্যুলার জনগণ সন্ত্রাসের অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখব; বর্ণ, গোষ্ঠী ও ধর্ম নির্বিশেষে যারা অবশ্যই শুধু সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত।’
কুয়েতের একটি মসজিদে আক্রমণের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল সাবাহ্র কাছে প্রেরিত বার্তায় বলেন, It is extremely shocking that the bomber stuck into the Imam Al-Sadiq Mosque near Kuwait’s famous Al-Sawaber district in Sharq at the end of the busy Jumma Prayers during the holy month of Ramadan, when a suicide bomber blew himself up inside the mosque. অপরদিকে ফ্রান্সের লিয়ন শহরের কাছে একটি গ্যাস কারখানায় সন্ত্রাসী হামলা হওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং বিশ্বে শান্তি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একত্রে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আক্রমণে সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এভাবে সরাসরি বিবৃতি দিলেও, দেশের আর কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক এ ধরনের বিবৃতি লক্ষ করা যায়নি।
পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী জঙ্গিবাদী তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচনী সহিংসতার নিষ্ঠুর শিকার হয়ে অনেক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, জমির ফসল, মন্দির প্রভৃতি আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। অনেককে আহত করা হয়েছে, অনেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। এর কিছুদিন আগে রামুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। যে রাজনৈতিক শক্তি এসব ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছিল তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে তার কোনোটারই বিচারও হয়নি, শাস্তিও হয়নি। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে বাংলাদেশব্যাপী বোমা হামলা, রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে হামলা, যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলা, কমিউনিস্ট পার্টির জনসভায় হামলা হয়েছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীরা জড়িত ছিলেন।
ধর্মীয় জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একশরও বেশি সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের নাম জানা যায়। এসব জঙ্গি সংগঠনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তি। তাদের মধ্যে জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হিযবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সংগঠনগুলোর কার্যপদ্ধতি, প্রচারপত্র ও বুলেটিন এবং তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত আদর্শগত বইপুস্তক ইত্যাদি থেকে এটা বোঝা যায়, তারা বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নামে ও নেতৃত্বের অধীনে একই লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। আর বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর লক্ষ্য এবং আলকায়েদার ও ইসলামি স্টেটের (আইএস) লক্ষ্য যে অভিন্ন তাও ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে প্রসিদ্ধ গবেষকদের প্রবন্ধ ও বইপুস্তকের মাধ্যমে।
দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার এসব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-২০১৫এর প্রতিবেদনে প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থান প্রকৃতপক্ষে শান্তি স্থাপনে দেশের বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের সফলতার একটি স্বীকৃতি। শান্তিপূর্ণতা সংজ্ঞায়িত করতে আইইপি নতুন ধারণাগত কাঠামো তৈরি করেছে, শান্তি পরিমাপের ম্যাট্রিক্স উদ্ভাবন করেছে এবং বাণিজ্য, শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যকার সম্পর্ক উন্মোচন করেছে। একই সঙ্গে এর দ্বারা যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উপাদান শান্তি সৃষ্টি করে, সেগুলো সম্পর্কে অধিকতর উত্তম সমঝোতারও বিকাশ ঘটছে গ্লোবাল পিস ইনডেক্সের মাধ্যমে।
মাত্র কিছুদিন আগে যেভাবে পেট্রলবোমা মেরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছিল, তা দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও অশান্তির দেশে পরিণত হচ্ছে। আর এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছিল হরতাল ও অবরোধের নামে। কিন্তু তা হয়নি। সরকারের যথোচিত পদক্ষেপ দ্বারা সেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, পুরোপুরি না হলেও অন্তত আংশিক সফলতার সঙ্গেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। এর দ্বারা অন্তত একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে বর্তমান সরকার প্রকৃতিপক্ষেই শন্তির পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি। তবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপগুলো পুরোপুরি সফল হতে হলে আরো অনেক করণীয় আছে। ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
©somewhere in net ltd.