নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনই জামায়াত ছাড়ছে না বিএনপি !

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৩৭

পরিকল্পিত ও নির্ধারিত 'কারণ' না পেলে জোটবন্ধু-ভোটসঙ্গী জামায়াতকে ত্যাগ করবে না বিএনপি। এই নির্ধারিত 'কারণগুলো'র সবই কয়েকটি 'যদি'র ওপর নির্ভর করছে। আর ‘যদি’ ও ‘কারণগুলো’ হচ্ছে, হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে স্থগিত জামায়াতের নিবন্ধন যদি স্থায়ী হয়, যদি জামায়াত নিষিদ্ধ হয়, যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় এবং বিএনপির মধ্যে জামায়াতবিরোধী অংশটি আরও শক্তিশালী হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটটির শরিক দলগুলোর বেশিরভাগই মনে করে, এই মুহূর্তে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এদিকে কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি খুব দ্রুত বিএনপিতে একীভূত হওয়া খবর শোনা গেলেও তা দুটি কারণে বিলম্বিত হবে।

যদি'র ফলাফল জেনে জামায়াত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি

জানা গেছে, বিএনপি হঠাৎ করেই সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়া জামায়াতকে ছাড়তে চাইছে না। বিগত ২০০১ সালের পর থেকে দেশি-বিদেশি বহুরৈখিক চাপ-সমালোচনা ও নিন্দা সত্ত্বেও দল দুটির জোট অক্ষত আছে। এমনকী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতকে মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই দিয়েছিল বিএনপি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোনও কারণ ছাড়াই জামায়াতসঙ্গ ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপিতে। তবে জামায়াতকে বের করে দেওয়ার সরাসরি প্রতিবাদ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া তার দুই বিশ্বস্তভাজন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে জামায়াত-বিষয়ে ভাবার নির্দেশ দেন। যদিও বিষয়টি এ দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এমনকী খালেদা জিয়া বিএনপির কোনও নেতার সঙ্গেও খোলাখুলি আলাপ করেননি।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন মনে করেন, জামায়াতকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে দলটির পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়েছে। সরকার নিজে থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। নিষিদ্ধ করার কথা বললেও তাদের কার্যক্রম সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না। সরকার বিষয়টি নিয়ে কূটরাজনীতি করতে চাইছে। তারা চাইছে, বিএনপিকে এটি নিয়ে কথা শোনাতে। তবে হ্যাঁ, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তো জোটে থাকবে না। তারা যদি রেজিস্ট্রেশন হারায়, তাহলে তো না থাকার সিদ্ধান্তই আসবে।

তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর ভাষ্য, জামায়াতের সঙ্গে তো কোনও বন্ধন নেই, তাহলে ছাড়ার প্রসঙ্গ কেন আসবে। বিএনপিসহ ২০ টি দলের একটি নির্বাচনি এলায়েন্স আছে। এটিতে জামায়াত একটি শরিক। স্বামী-স্ত্রী বা সম্পর্কিত বন্ধন হলে ছাড়ার প্রসঙ্গ আসে। এটি বলা যেতে পারে, তাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা কমে গেছে। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন না হলে সম্পৃক্ততা আরও কমবে। কিন্তু এখানে ছাড়াছাড়ির কোনও বিষয় নেই।

প্রাইভেটাইজেশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে কোনও চুক্তি নেই। কে কাকে ছাড়বে? তাদের গুরুত্ব কম না কি বেশি? সেটি তো আন্দোলনকালেবোঝা যাবে। তাদের সঙ্গে তো বিএনপির আদর্শিক সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত জীবন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নেত্রী আমাদের বলেছেন, মামলা, গ্রেফতার, হয়রানির বিষয়ে লক্ষ করতে। দ্রুত নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে। জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি।

নিজের পায়ে কুড়াল মারবে না বিএনপি

জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেওয়ার সরাসরি বিরোধিতা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, হ্যাঁ, জামায়াত যদি বলে, ভাই মাফ করে দাও। যাই। তাহলে যাক। ওরা তাহলে সরকারের চাপেও পড়বে না। আমাদেরও কিছু বলার থাকবে না।

খালেদা জিয়া দুজন ব্যক্তিকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের সমালোচনা করে বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, বলা হবে না। কোনও দিনও বলা হবে না, জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কারণ খুঁজতে হবে। বিএনপি কেন নিজের পায়ে কুড়াল মারবে। ওরা তো ভোট পায়। এটি তো অস্বীকার করা যাবে না।

তবে জমির উদ্দিন কৌতুক করেন, তবে মাঝে-মাঝে তারা বলে, ওদের ১শ আসন দিতে। তখন বলি, বুঝলো না, ৭১ এ বুঝলো না। এখনও বোঝে না।

বিএনপি ছাড়বে না : জামায়াতের দাবি

জানা গেছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করে। কিন্তু ওই রায়ের আলোকে কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে।এখন পর্যন্ত জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত না হওয়ায় বিএনপি জামায়াতসঙ্গ ত্যাগে এখনই আগ্রহী নয়।

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপি তাদের রাখবে কি ছাড়বে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও আলোচনা তাদের কাছে পৌঁছুয়নি। দলটির দাবি, জামায়াত এ নিয়ে চিন্তাও করছে না।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মোবারক হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমত, এ নিয়ে আমরা একেবারেই ভাবছি না। আপনাদের মাধ্যমে (পত্রিকার মাধ্যমে) জানি, বিএনপি আমাদের ছাড়বে। কিন্তু এখনও তো কিছু বলেনি। অনেস্টলি, বলছি, এটি নিয়ে একেবারেই চিন্তা করছি না। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোয় তো বিএনপি ভাঙলেন, জোটও ভাঙলেন? তাহলে বলেন কী বলব? এক প্রশ্নের উত্তরে মোবারক হোসাইন বলেন, আমি মনে করি না বিএনপি আমাদের ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে জামায়াতের আরেক কর্মপরিষদ সদস্য না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাড়বে বলেই কি খালেদা জিয়া আমাদের ডাকে ইফতারে এসেছিলেন? এছাড়া ২০ দলীয় জোট তো আন্দোলনমুখী দল। আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি আছে, তাদের আছে। জোটের কারণে তো এসব কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না।

চাপের বিষয়ে এই জামায়াত নেতার দাবি, চাপ তো সরকার বানায়। কারণ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ঐক্য ছিল। তাদের সরকারে যেতেও আমাদের সহযোগিতা ছিল এক সময়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলের একজন সহচর বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, ছাড়ার সিদ্ধান্ত বিএনপি নেবে না। আর নিবন্ধন বিষয়ে অপেক্ষা করছি, নিষিদ্ধ করার। জামায়াত নিষিদ্ধ হলেই পরদিন নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করবে জামায়াত। তখন তো জোটে থাকবে।

হাইকোর্টের রায়ে স্থগিত রায়ের বিষয়টি জামায়াতের পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মোবারক হোসাইন। তিনি জানান, বিষয়টি লক্ষ করছি। দেখি সরকার কী করে। সরকারের ওপরই আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম নির্ভর করছে বলে দাবি করেন তিনি।

সম্মানপূর্বক আহ্বান এলেই এলডিপি যুক্ত হবে বিএনপিতে

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, খুব দ্রুত এলডিপি একীভূত হবে বিএনপিতে। তবে তিনি এও জানান, যে প্রাথমিকভাবে সব কথা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন দুই নেতা খালেদা জিয়া ও কর্নেল অলি আহমদ চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।

এ প্রসঙ্গে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অতি দ্রুত কিছু বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। বিএনপির তৃণমূল চায় যে কর্নেল অলি আহমদসহ আমরা জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনীতিকরা বিএনপিতে একীভূত হই। এতে কোনও দ্বিমত নেই আমাদের। তবে এখন পর্যন্ত সম্মানপূর্বক কোনও আহ্বান আসেনি। প্রাথমিকভাবে আলোচনা চলছে।

বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনও শর্ত আরোপ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, না। আমরা তো ২০ দলীয় জোটে এখনও আছি। জোটে তো জামায়াতও আছে। এমন শর্ত কেন দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও। তিনিও বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যে এলডিপির বিএনপিতে যুক্ত হওয়ার পেছনে জামায়াত-সঙ্গ ত্যাগের কোনও শর্ত আসেনি।

জামায়াতকে বাদ দিতে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের অনাগ্রহ

২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার কথা উচ্চারিত হলেও আদতে সে রকম কোনও ইচ্ছে খালেদা জিয়ার নেই। কারণ হিসেবে জোটের শরিকদের যুক্তি, খালেদা জিয়া জানেন, জামায়াতকে ছাড়া মানেই হচ্ছে নির্বাচনে বিএনপিকে হারানোর সরকারি কৌশল।

সূত্রের দাবি, বিগত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত সরাসরি প্রার্থী দিয়ে ৩৪টি চেয়ারম্যান এবং শতাধিক ভাইস-চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেছে। এতে সরকারও জানে, জামায়াতকে সরাতে পারলে বিএনপির ভোটও কিছুটা কমবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, আমার ধারণা এগুলো গুজব। জামায়াত-ত্যাগের বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি। দলেও হয়নি।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জামায়াত-ত্যাগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি। আর হঠাৎ করে এ প্রসঙ্গ কেন আসবে।

বিগত দিনে বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সরকার জোট ভাঙার চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগ করেছেন ন্যাপ ভাসানী মহাসচিব গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। হঠাৎ করে বিএনপি কেন জামায়াতকে ছাড়তে চাইবে। হতে পারে এটি সরকারের নতুন কোনও ষড়যন্ত্র।

এমন কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান জোটশরিক খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ মুনতাসির আলী।

এদিকে, এসব আলোচনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। http://www.banglatribune.com/news/show/106932/

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.