![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারিখে তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এক জনসভায় মারাত্মক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যেই যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে সে সত্য প্রায় উদ্ঘাটিত হতে চলেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেই হামলায় আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর জন্য নেতা-কর্মীরা এমনভাবে মানবঢাল তৈরি করেছিলেন যে, নিজেদের জীবন উত্সর্গ করে শেখ হাসিনার জীবনকে তাঁরা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ২১ আগস্টের মারাত্মক গ্রেনেড হামলায় আহত আইভি রহমান ২৪ আগস্ট তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইভি রহমান এবং অন্য শহীদদের স্মরণে ২৪ আগস্ট তারিখে রাজশাহী লক্ষ্মীপুর মোড়ে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মর্জিনা পারভিন। অনুষ্ঠানে আমি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম। স্মরণ সভায় বিপুল সংখ্যক মহিলার উপস্থিতি প্রমাণ করে আইভি রহমানের প্রতি তাঁদের রয়েছে অপরিসীম সহমর্মিতা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় যখন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। জনসভায় সন্ত্রাসী কোনো চক্র গ্রেনেড হামলা চালাতেই পারে, তাতে খালেদা জিয়াকে দায়ী করা যায় না, কিন্তু ঘটনা তদন্তে যে সমস্ত তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে, তাতে খালেদা জিয়ার সরকার যে উক্ত গ্রেনেড হামলার সাথে যুক্ত ছিল, এমন প্রমাণ মিলেছে। তত্কালীন খালেদা জিয়া সরকারের কাছে গ্রেনেড হামলার বিচার দাবি করলে খালেদা জিয়া এবং তাঁর সহযোগীরা কোরাসের সুরে বলেছিলেন—গ্রেনেড হামলার জন্য ভারত ও আওয়ামী লীগ দায়ী। এটি প্রমাণের জন্য তখন ভারত ফেরত একজন ছাত্র পার্থ সাহা এবং আওয়ামী লীগের এক অখ্যাত কর্মী জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে রাজসাক্ষী বানানোর ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবিরের একটি প্রামাণ্য চিত্র থেকে জানা যায়— ‘মুফতি হান্নান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের অন্য শীর্ষ নেতারা হাওয়া ভবনে বসে জামায়াত, ফ্রিডম পার্টি, হরকাতুল জিহাদ ও আল মারকাজুল ইসলামের প্রধান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। হামলাকারীদের অর্থ ও রসদের যোগান দেয়া হয়েছিল হাওয়া ভবন থেকে। উক্ত বৈঠকে উপস্থিত সবাই এই মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছিল যে, শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখে বাংলাদেশে তাদের শাসনকে স্থায়ী এবং নিরাপদ করা যাবে না।’
শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নয়, বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য একুশবার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে কথায় আছে ‘রাখে আল্লা মারে কে?’ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্যই হয়তো পরম করুণাময় আল্লাহ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে জীবিত রেখেছেন। গ্রেনেড হামলার মত এত সব জঘন্য কাজ করবার পরেও বেগম খালেদা জিয়া যখন দাবি করেন বিএনপির শাসনকালে দেশে গণতন্ত্র ছিল, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই, বিএনপির আমলে দেশে উন্নয়ন ছিল, এখন দেশে কোনো রকম উন্নয়ন নেই, বিএনপির আমলে দেশের মানুষ শান্তিতে ছিল, এখন দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। বেগম খালেদা জিয়ার এ দাবিগুলো শুধু অবান্তর নয়, হাস্যকরও বটে। বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য যে কত সংগতিহীন কিছু উদাহরণ তুলে ধরলেই তা স্পষ্ট হবে।
বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর দল বিএনপি গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছেন, এটি ভাল, তবে তাদের কথার সাথে কাজের কোনো মিল আছে কি-না, সেদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক। ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাস ধরে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ঘটিয়েছে, পেট্রোল বোমা মেরে বাসের মধ্যে নিরীহ মানুষদেরকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে, শত শত যানবাহনসহ সরকার ও সাধারণ মানুষের সম্পদ ও সঞ্চয় পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে, ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে ট্রেনকে লাইনচ্যুত করে যাত্রীদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, এতসব জঘন্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পর বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার মুখে গণতন্ত্রের দাবি মানায় কি? ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল, শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা নয়, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ.এস.এম. কিবরিয়া, আহসানউল্লা মাস্টার, নাটোরে মমতাজ উদ্দীন, খুলনায় এড. মঞ্জুর ইমামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের অত্যন্ত বড় মাপের নেতা। বিএনপির এই মাপের কোনো বড় নেতা শেখ হাসিনার শাসনকালে খুন হয়েছেন, এমন দাবি কেউ করতে পারবে না। এখানেই বিএনপি শাসনের সাথে আওয়ামী শাসনের বড় রকমের পার্থক্য। বিচ্ছিন্ন মারামারি, খুনোখুনি দেশে হচ্ছে না, এমন কথা বলা যাবে না, কিন্তু এসব খুনের সাথে রাষ্ট্রের কোনো মদদ পরিলক্ষিত হয় নি, কিন্তু বিএনপির শাসনকালে যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসমূহ সংঘটিত হয়েছে, সে হত্যাকাণ্ডের সাথে হাওয়া ভবন এবং তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা বার বার উচ্চারিত হয়েছে।
‘৭৫ থেকে ৮১—কেমন ছিল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি তথ্যবহুল লেখা সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। রচয়িতা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। তাঁর লেখা থেকে জানা যায় জেনারেল জিয়ার শাসনকালে বেশ ক’বার সামরিক অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া ১১৪৩ জনকে ফাঁসি এবং কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করেন। বিএনপির জন্ম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ঘটে নি। জেনারেল জিয়া সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। এই ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়া শুরু হয় নির্বাচিত সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে। এটি ভয়ানক অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনী প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন—প্রথমে জাগপা এবং পরবর্তীতে বিএনপি। বিএনপির গঠন প্রণালীতে গণতন্ত্রের ‘গ’ও স্থান পায় নি। ১৯৭৮ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে জেনারেল জিয়ার সরকার বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এক অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীরা এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা আলবদর-রাজাকারদেরকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে গোলাম আযমের মতো একজন যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। শাহ আজিজের মতো একজন রাজাকারকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
রাজনৈতিক দলসমূহের দাবির মুখে জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার ১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল তারিখে এক ঘোষণার মাধ্যমে ৩ জুন ১৯৭৮ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। স্বল্প সময়ের প্রচারণার সুযোগ রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা সরকারের এক ধরনের চাতুরী ছাড়া আর কিছু নয়—জনগণ এটি বুঝে নেয়। ২২ এপ্রিল অপর এক ঘোষণায় বলা হয় ১ মে থেকেই রাজনৈতিক তত্পরতা চালানো যাবে। ২৮ এপ্রিল জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার ইতোপূর্বে জারিকৃত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অধ্যাদেশ সংশোধন করে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একমাত্র সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার এ ধরনের নজির সারা বিশ্বে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৯৭৮ সালের ১ মে তারিখে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। এই ফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদটিও দখল করেন জেনারেল জিয়া। এ সব ঘটনাই প্রমাণ করে জেনারেল জিয়া কখনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন না। জেনারেল জিয়ার অগণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার উত্তরাধিকারী হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁদের পুত্র তারেক জিয়াকে। দিন যত যাচ্ছে, মানুষ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জাতীয় চারনেতাকে হত্যার মাধ্যমে দীর্ঘ একুশ বছর এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল দুইজন সামরিক ব্যক্তি, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ। তাঁরা হ্যাঁ এবং না ভোট নিয়ে নির্বাচনের প্রহসন করেছেন। মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়েছেন। জাতীয় চরিত্র যদি একবার নষ্ট হয়ে যায়, তাকে ফিরিয়ে আনা খুব সহজ নয়। জামায়াত-বিএনপির শাসনকালে দেশে যে জঙ্গি মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে, সেটি দমন করতেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আশার কথা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জঙ্গিদেরকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে খালেদা জিয়ার হাতে এদেশের মানুষ নিরাপদ নয়, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। সে কারণেই বিএনপি আজ জনবিচ্ছিন্ন দলে রূপান্তরিত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া মাঝে মাঝেই আন্দোলনের ডাক দেন কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় না। বেগম খালেদা জিয়া আজ এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন। সমগ্র বিশ্ব যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে, তখন খালেদা জিয়া বলছেন—দেশে কোনো উন্নয়ন নেই। একথাগুলো অনেকটা প্রলাপের মতো শোনায়। গোলাপী এখন ট্রেনে সিনেমায় একটি সংলাপ ছিল—হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ। চোখ অন্ধ হয়ে গেলে প্রলয় কিন্তু বন্ধ থাকে না। সিনেমায় গোলাপীর পরিণতি আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক অঙ্গনের গোলাপী এখন ট্রেনে অবস্থান করছেন। পথ খুব দুর্গম।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২২
মামু১৩ বলেছেন: রাজনীতিতে পক্ষ বিপক্ষ থাকবেই। গ্রেনেড হামলা প্রমাণ করে, বিএনপি জামাত অতি নিম্ন মানের রাজনীতিক।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায়, এখনো বিচার হলো না; উনি মরে গেলেও বিচার হতো না।