![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন। সম্প্রতি ইউরোপের দুটি দেশের দুইজন, একজন প-িত এবং একজন পুরোহিত, বাংলাদেশ সফরে এসে এদেশ সম্পর্কে তাদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। এদের একজন রাশিয়ান, অন্যজন হাঙ্গেরিয়ান।
পরিচিত এক আইনজীবীর টেলিফোনের মাধ্যমে প্রথম এই হাঙ্গেরীয় ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা হয়। এই ভদ্রলোকের বাংলাদেশের 'সমাজ ও সংস্কৃতি' সম্পর্কে জানার জন্য সাক্ষাৎ করার আগ্রহ ব্যক্ত করায় আমি পরের দিন সকালে তাকে অফিসে আসতে বলি। টেলিফোনের কথা মতো পরদিন অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর যথাসময়েই তিনি আমার অফিসে এসে পেঁৗছান। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ পেরিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন বিদেশিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করছে। সে কারণে এবং বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পর্যটন, বাণিজ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাইরের জগতে বাংলাদেশ বেশ সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এক সময়ের 'ধর্ম-রাজনীতির' অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী 'জানের-জান' পাকিস্তান ক্রমান্বয়ে ভীতির দেশে পরিণত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি একটি খবরে প্রকাশ, পাকিস্তানের এক মাংস বিক্রেতা শুয়োরের মাংস বিক্রি করেছে, তাই খুব মাতামাতি হচ্ছে, এমনকি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। তবে মাংস বিক্রেতা তা অস্বীকার করে বলেছে সে গরুর মাংস বিক্রি করেছে_ যা ভুলবশত অনেকে মনে করেছে শুয়োরের মাংস। তো কেউ শুয়োরের মাংস খাবে, নাকি গরুর মাংস খাবে, নাকি ব্যাঙ খাবে, নাকি উটের মাংস খাবে, নাকি মদ খাবে_ এগুলো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, এনিয়ে রাষ্ট্রের এত মাতামাতির কি আছে ? ধর্ম মানুষের নিজস্ব ব্যাপার, কাউকে জোর করে ধর্ম পালন করানো যায় না। জোর করে ধর্ম মানতে বাধ্য করলেই কি তাঁর মন পরিবর্তন করা যায় ? জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতাসহ পাকিস্তানের হাজার হাজার সমস্যা আছে। সে সব বাদ দিয়ে 'কেন শুয়োরের মাংস বিক্রি করল' তাই নিয়ে একটি প্রদেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী ব্যক্তি সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান প্রতি মুহূর্তে এভাবে 'খাঁটি' হতে চাইছে, এটি তারই একটি সাম্প্রতিকতম ক্ষুদ্র নমুনা। পাকিস্তানে এই 'খাঁটি' হওয়ার তৎপরতার কারণে কোনো বিদেশি সেখানে নিরাপত্তার ভয়ে যান না। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা সেখানে প্রতি পদে পদে নিগৃহীত হয়ে থাকে। প্রায়ই রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে পাকিস্তানে। বাংলাদেশকেও কী এরকম ভীতির রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে কোনো কোনো কুচক্রী মহল ?
যাহোক, পাকিস্তানের বিপরীতে, বাংলাদেশ বিদেশিদের কাছে 'এখনো' আকর্ষণীয় থাকা নিঃসন্দেহে আশান্বিত হওয়ার খবর। শান্তিপূর্ণ দেশ হয়ে ওঠার পথে কিছু ভয়াবহ ও বর্বর ঘটনা না ঘটতে থাকলে, বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত হতে পারত।
রুশ প-িতের মন্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান, ড. ভিটালি নাওমকিন। ১৯৭৪ সালে যখন বঙ্গবন্ধু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন। আর একজন, অর্থাৎ যিনি হাঙ্গেরীয়, তিনি এমনকি তাঁর নিজ দেশেরও খ্যাতিমান কিছু নন। তাঁর নাম জলটান লেভেলিস হরিজন। জন্মসূত্রে 'মধ্যপ্রাচ্যের বেথেলহেমের যীশু খ্রিস্টের' অনুসারীর তক্মা ছেড়ে তিনি এখন 'ভারতের দ্বারকার শ্রীকৃষ্ণের' অনুসারী হিসেবে 'পুনর্জন্ম' লাভ করেছেন। হয়েছেন একজন হিন্দু বৈষ্ণব পুরোহিত, তবে ইস্কনের সাধু নন। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ শেষে গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এসেছেন। তিনি বর্তমান লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বাংলাদেশ সম্পর্কে তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, হাঙ্গেরীয় ভদ্রলোক তার নিজ দেশের কিছু দুঃখের কথাও এ সঙ্গে প্রকাশ করেছেন।
দেশের একটি জাতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে ড. ভিটালি নাওমকিনের একটি সাক্ষাৎকার ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে ড. নাওমকিন বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, 'বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তাতে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ, স্বাধীনতার সময় দেশটি অত্যন্ত দরিদ্র ছিল, এর সমস্যার শেষ ছিল না। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ, কিন্তু এর আয়তন সে তুলনায় খুবই কম, মাত্র ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। রাশিয়া পৃথিবীর বড় দেশ, আয়তন ১ কোটি ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার বর্গকিলোমিটার, বাংলাদেশের চেয়ে ১৬৩ গুণ বড়। সেই রাশিয়া লোকসংখ্যাও বাংলাদেশের চেয়ে কম, ১৪ কোটি মাত্র। এতটুকু একটা দেশে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর টিকে থাকাই তো কঠিন ব্যাপার, কিন্তু বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এদেশে এখন প্রায় শতভাগ ছেলেমেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। আমার মতে, বাংলাদেশের এই সাফল্য অত্যন্ত লক্ষণীয় একটি ব্যাপার।'
হাঙ্গেরীয় ভদ্রলোক এদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছেন। ৩ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এছাড়া এ উপলক্ষে দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিরোধীদলীয় নেতা দেশবাসীর উদ্দেশে শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে থাকেন। এ বছরও দিয়েছেন। সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান এভাবে বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এ কথা শুনে ভদ্রলোক অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে খানিক্ষকণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, 'দ্য জন্মাষ্টমী ইজ ফর হিন্দুস বাট দ্য হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হেড অব দ্য স্টেট আর অ্যারেঞ্জিং রিসিপসনস অন্ দিস্ অকেসন ফর দ্য হিন্দু কমিউনিটি!' আমি ভদ্রলোককে বললাম, 'ইট ইজ দ্য ট্রু স্পিরিট অব আওয়ার লিবারেশন ওয়্যার। ইন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান, হোয়েন অল বেঙ্গলিজ্, ইরেসপেক্টিভ অব রিলিজিয়ন, হ্যাড বিন ইউনাইটেড আপন দ্য কল অব আওয়ার গ্রেট লিডার, ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।' ইতোমধ্যে হাঙ্গেরি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের নজরে এসেছে।
বিশেষত শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে। সিরিয়ায় আইএসের জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে দেশের মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ ইতোমধ্যে মুসলিম উম্মাহর রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত আইএসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তুরস্কে ১.৮ মিলিয়ন, লেবাননে ১.২ মিলিয়ন, জর্ডানে ৬,২৮,৪২৭ জন, ইরাকে ২,৪৭,৮৬১ জন, মিসরে ১,৩৩,০০০ জন মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ম্যাগাজিনে 'হোয়াই আর সউদি অ্যারাবিয়া অ্যান্ড ইট্স অয়েল-রিছ নেইবারস্ ডোয়িং সো লিটল ফর সিরিয়াস রেফিউজিস?' শিরোনামে একটি সংবাদ ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের আর একটি খবর হচ্ছে, 'দ্য নাম্বার অব ক্রিমিনাল এক্টিভিটিজ ইজ গ্রোয়িং উইথ দ্য সেইম স্পিড এজ দ্য নাম্বার অব ইললিগ্যাল মাইগ্র্যান্টস্।' কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে সাগরপাড়ে মুখ থুবড়ে মরে পড়ে থাকা 'আইলান কুর্দি' নামের ছোট্ট শিশুর মৃতদেহের ছবি সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হাঙ্গেরি এসব শরণার্থীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে সে দেশ সম্পর্কে বিশ্বে এক ধরনের বিরূপ ধারণার জন্ম হয়েছে। জার্মানি এইসব শরণার্থীকে সাদরে গ্রহণ করছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত গবেষক সেজান মাহমুদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, '... ক্রন্দনরত শিশুর মুখ, বেদনার্ত মায়ের চোখের জল কোনো কিছুই আমাদের মুসলিম ভ্রাতাদের মন টলাতে পারছে না। সিরিয়ান শিশুটির মৃতদেহ যখন সাগর সৈকতে পড়ে থাকে তখনো মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠছে বিশ্বের বিলাসবহুল বিনোদন কমপ্লেক্স। সৌদি, আরব আমিরাত, কাতার এদের রেফিউজির সংখ্যা শূন্য।...'
সিরিয়ার রেফিউজিদের সাথে হাঙ্গেরীয় সরকারের আচরণে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা হাঙ্গেরীয় ভদ্রলোক মনে হলো খুবই অখুশী। ভদ্রলোক বিস্ময়াভিভূত হয়ে দুঃখের সঙ্গে তার নিজ দেশ হাঙ্গেরীতে ধর্মীয় কয়েকটি সংঘের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার কথা উল্লেখ করলেন। যদিও তিনি যে মন্দিরের পুরোহিত সেটির রেজিস্ট্রেশন ঠিকই আছে। ভদ্রলোক পূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ধর্মান্তরিত হয়ে বৈষ্ণব হয়েছেন। নিজ জন্ম স্থানেও বৈষম্য থাকার কথা আমাকে জানালেন। তবে সেগুলোর ধরন ভিন্ন। সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, নিজের শ্বেতাঙ্গ দেখিয়ে বললেন 'তার দেশে তথা ইউরোপে বৈষম্য হয় শরীরের রঙয়ের কারণে।' আর তিনি যে মন্দিরের পুরোহিত সেই মন্দির সম্পর্কে বললেন, '১৯৭৯ সালে কতিপয় যুবক, যারা হিন্দু ধর্মীয় বৈদিক শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, তাঁরা একত্রিত হয়ে হাঙ্গেরীর বালাস্টিয়ায় 'নন্দফালভা হিন্দু কমিউনিটি' গঠন করেন। প্রায় বিশ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০০০ সালে তারা এখানে মন্দির স্থাপনে সমর্থ হন।' বললেন, ইউরোপ জুড়ে আজকাল মহাত্মা গান্ধীর অহিংস চেতনা চর্চার একটি জোয়ার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে অন্যান্য বারের মতো এবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। জন্মাষ্টমী শনিবার ৫ সেপ্টেম্বর। ওইদিন দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গভবনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানটি ছিল ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা, নেতা, কর্মী, সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা যথাসময়ে গণভবনে উপস্থিত হন। এ সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের জন্মাষ্টমী উদ্যাপন কমিটির নেতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে 'নিজেদেরকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা না করে সমান অধিকার নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানান।' অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা স্মরণ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও এখানে অন্যদের মধ্যে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এমপি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রমুখ। এই সঙ্গে বক্তব্য রেখেছেন মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি; বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দেব প্রমুখ।
'অর্পিত সম্পত্তির 'খ' তফশিল' বাতিল করার কারণে বক্তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সমস্যা দেখভাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের 'সংখ্যালঘু বিষয়ক সেল' করার কথাও কেউ কেউ বললেন। তবে বর্ষীয়ান জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেলের কথা বলেননি। তিনি বললেন, সংখ্যালঘুদের 'ক্ষমতায়নের' কথা। ইতোপূর্বে 'নারীর ক্ষমতায়ন' শব্দগুলো বহুল প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন' কথাগুলো প্রয়োগ করার জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহোদয়কে ধন্যবাদ। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সেল দিয়ে 'ক্ষমতায়ন' সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার 'সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রনালয়'। এ বিষয়ে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করা যেতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দেশে আছে 'মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়', এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মাত্র কয়েক লাখ লোকের জন্য আছে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়' আর প্রায় তিন কোটি মানুষের সমস্যা দেখ-ভালের জন্য শুধু সেল যথেষ্ট নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত 'সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন' করার কথা বলার পাশাপাশি লক্ষণীয়ভাবে সেলের কথা বলেননি। তিনি বলেছেন এদেশে 'সংখ্যালঘুদের সমস্যা শেখ হাসিনার কাছে বলা 'মা'র কাছে মামা বাড়ির গল্প বলার সমান'।
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের জন্য আছে পৃথক পৃথক ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। ট্রাস্টের পরিবর্তে 'ইসলামী ফাউন্ডেশনের 'আদলে প্রতিটি ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা ফাউন্ডেশন করার আবেদন যুক্তিসঙ্গত। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আছে 'সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়'। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নেই। এজন্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এখন জরুরি প্র্রয়োজন। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সে দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি 'ইকোয়ালিটি রাইটস কমিশন' ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার, যা জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় অথবা ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অবিভাজ্য অংশ। শিশুদের অধিকার, নারীর অধিকার এবং শরণার্থীদের অধিকারের মতো সংখ্যালঘুদের অধিকার হচ্ছে একটি আইনগত কাঠামো যার দ্বারা সমাজের ভঙ্গুর, অসুবিধায় থাকা অথবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমতা অর্জন করতে পারে এবং নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। আর এজন্য অর্থাৎ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সমানুভূতিসম্পন্ন দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট সকলে কামনা করেন।
ড. অরুণ কুমার গোস্বামী:অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-
©somewhere in net ltd.