নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেশের সব নাগরিকের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তার সরকার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য প্রদানকে মেনে নেবে না। এর থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এটাই বাস্তবতা এবং আমরা বাংলাদেশে এটাই চাই। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আরো এক ধাপ অগ্রসর হলো বাংলাদেশ ৭ সেপ্টেম্বর অষ্টম পে স্কেল অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা পাওয়ার ঘোষণার মধ্যে। জাতিসত্তাভিত্তিক উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়ে মূল বেতনের ২০ শতাংশ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে। এই উৎসব ভাতার সঙ্গে সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের মানুষ নববর্ষে অর্থাৎ একই সময়ে ভাতা পাওয়ার বিষয় প্রকৃত অর্থেই ঐতিহাসিক। কারণ বৈশাখী ভাতা চালু হওয়ায় বাংলা সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক হবে, এটা বাংলা সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন। এ ছাড়া বর্ষবরণের উৎসব বাংলাদেশে সর্বজনীন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশিত ধর্মীয় পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যয় ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বাস্তব কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ এ দেশকে বিশ্বের কাছে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর এই চেতনা সৃজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের প্রভাব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। ২০০৩ সালে প্রকাশিত 'সহে না মানবতার অবমাননা' গ্রন্থটি শেখ হাসিনার মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য দলিল। তিনি এই গ্রন্থে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বীভৎস হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাটের অনুপুঙ্খ তথ্য সংকলন করেছেন। নির্মম ও বর্বর তাণ্ডবের সেই বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো বিস্তৃত পরিসরে উপস্থাপন করেছেন। উপরন্তু হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কথা লিখে তাদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালীন সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ হচ্ছে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। এ জন্য প্রতিটি নির্বাচনের আগে দলের ইশতেহারে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রতি 'বৈষম্যমূলক আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসানে'র প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ২৮ ডিসেম্বর (২০১৩) দশম সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে (২০১৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে। ইশতেহারে স্পষ্টত লিপিবদ্ধ আছে-'নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, তাদের কাজের ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বৃক্ষ নিধনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার করা হবে। সব নাগরিকের স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ধর্ম, বর্ণ, নৃ-পরিচয়, লিঙ্গ ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে রাষ্ট্রের চোখে সব নাগরিকের সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।' যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার কথা বারবার উচ্চারিত হলেও বর্তমান সরকারের আমলের কিছু ঘটনা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। শেখ হাসিনা ঠিকই বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে এ ভূখণ্ডে সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ়। অথচ আমরা দেখছি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষা করতে বারবার সরকারি প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ৫ জানুয়ারির (২০১৪) সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের নানা স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংবাদপত্রগুলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সহিংসতার কবলে নির্মম অত্যাচারের শিকার অমুসলিম জনগোষ্ঠী নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটি পত্রিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা দিয়ে দেখানো হয়েছে কিভাবে তারা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। অন্যান্য পত্রিকায় পাবনা, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে জামায়াত-শিবিরের হামলা ও হামলা-পরবর্তী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটানো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা ছাপানো হয়েছে। ওই বছর ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর সাতক্ষীরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়ংকর নিপীড়নের কথা সবারই জানা। এ ছাড়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হলে তখন থেকে সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।
১৯৫১ সালে এ দেশে মোট জনসংখ্যার ২৩.১ শতাংশ ছিল হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ; আর বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশের নিচে। ২০০১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংস নিপীড়নের ঘটনা সংঘটিত হয়, তাতে কেবল সংখ্যালঘু নয় একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিষ্ঠুরতার আগুনে দগ্ধ হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর ১৫০০ দিনে (অর্থাৎ ২০০৩ পর্যন্ত) দুই হাজার ৭৮৬টি ঘটনায় দেশজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন' নামক তিন খণ্ডের শ্বেতপত্রে। সেসব ঘটনার নিষ্ঠুরতা ও নির্মম তাণ্ডবের কথা স্মরণ করে ২০১৩ সালে যখন একজন মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপের সুরে বলেন, 'একাত্তরে যাদের পরাজিত করেছিলাম, আজ তাদের ভয়ে পালিয়ে থাকতে হয়। হিন্দু বলে আতঙ্কের মধ্যে থাকি'-তখন আমরা উপলব্ধি করি পরিস্থিতি পাল্টায়নি একটুও। কিন্তু এর দায়দায়িত্ব কার? সরকার ও বিরোধী দলসহ দেশের সচেতন মানুষকেই তার দায় নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। তবে আশার কথা দেশের অধিকাংশ মিডিয়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্দয় আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনার পর পরই অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সরকার বরদাশত করবে না বলেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও প্রচার নিষিদ্ধ এবং একটি বিজ্ঞানমনস্ক উদার মানবিক সমাজ গড়তে পারলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। কারণ দেশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। ফলে নির্বাচনের সময় হিন্দু জনগোষ্ঠী বারবার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। মূলত জামায়াত-শিবির ও দেশের ভেতরে গোপনে তৎপর কিছু জঙ্গিগোষ্ঠী ধর্মীয় মৌলবাদ লালন করে থাকে। তাদের প্ররোচণায় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়। রাষ্ট্র ও তার জনপ্রশাসনকে ধর্মভিত্তিক ও মৌলবাদী হলে চলবে না। ধর্মনিরপেক্ষ আচরণ কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা সম্ভব। সম্প্রীতি রক্ষার জন্য মৌলবাদীদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ককে ভেঙে ফেলাও দরকার। এ জন্য শেখ হাসিনার উদ্যোগের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের মানবাধিকারকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ন সম্পন্ন করার জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, যারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। সুস্থধারার রাজনীতির ধারক-বাহক বলেই সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি অনুসরণ করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের নিরলস প্রয়াস রয়েছে আওয়ামী লীগনেত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা কঠিন কাজ হলেও যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ-জাতি ও সব ধর্মের শত্রু। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ সাম্প্রদায়িক যত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে তার সব কটির সঙ্গেই ধর্ম নয়, রাজনীতি জড়িত। তবু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। কেবল রাজনৈতিক কারণে জঙ্গি রাষ্ট্র বলা হয়েছিল একে। যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা ধর্ম সম্পর্কে কম জানে, তারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক। আর এটা বহাল রাখতে হলে আমাদের সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, জানতে হবে। সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করা দরকার।

মিল্টন বিশ্বাস লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.