নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরাপত্তা শঙ্কা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি ছিল। পরে এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তও হয়। এরপরই শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া। তখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী সেই চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানামুখী তৎপরতা চালায়। একই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া বানচাল করতে আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগ করে। তাদের মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর ধারণা ছিল, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে দিয়ে চাপ দিতে পারলে সরকার পিছু হটবে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে পেছন থেকে ব্যাপকভাবে তৎপর ছিল পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিপুল পরিমাণ অর্থও বিনিয়োগ করেছিল বলে অভিযোগ আছে।
আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি সরকার; বরং বিষয়টি সরকার কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেছে। সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নানা সমালোচনা থাকলেও এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো তাড়াহুড়া করেনি এবং কোনো ত্রুটি রাখেনি। বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার কারণেই ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ আপত্তি তুলতে পারেনি। তবে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি বসে নেই। তারা আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালছে। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। এ কাজে তারা জঙ্গিগোষ্ঠীকেও ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনও অভিযোগ আছে, কোনো কোনো জঙ্গি সংগঠনের অর্থের জোগান দিচ্ছে জামায়াত। তা ছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাস (জানুয়ারি থেকে মার্চ) দেশব্যাপী যে নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল, তার নেতৃত্বেও ছিল জামায়াত। বিএনপিকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পেছন থেকে কাজ করেছে। কিন্তু নাশকতা করে যে সরকারের পতন ঘটানো যায় না, তা ওই 'আন্দোলনে'ই প্রমাণিত হয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলনের নামে নাশকতা করে বিএনপি দুর্নাম কুড়িয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষও বিএনপির ওপর ভীষণভাবে বিরক্ত হয়। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বিএনপির সম্পৃক্ততায় গণমাধ্যমে তুখোড় সমালোচনা হয়। একপর্যায়ে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় বিএনপি। সেই সঙ্গে কঠিন সংকটে পড়ে দলটি।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর এ রকম দুঃসময় দলটির আর কখনো আসেনি। এখন দলের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দেশের কোথাও কমিটি গঠন করতে পারছে না তারা। আন্দোলনের কথা মুখে বললেও মাঠে নামার মতো শক্তি বিএনপির নেই। কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশি হয়রানির ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। অনেকে ক্ষমতাসীনদের ভাগবাটোয়ারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেশ অর্থকড়িও কামাচ্ছে। ফলে এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার মতো অবস্থায় নেই বিএনপি।
প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া সম্পর্ক এখন দলটির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপির অনেক নেতাকর্মীও জামায়াতপ্রীতি মেনে নিতে পারছে না। বিএনপির বিদেশি বন্ধুরাও রীতিমতো শর্ত দিয়ে বসে আছে। তারা বলেছে, জামায়াত ও তারেককে ছাড়তে না পারলে তারা কোনো সমর্থন দেবে না। অর্থাৎ আগাম কিংবা আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে হলে জামায়াত ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে তারেক রহমানকেও রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিএনপির জন্য খুব সহজ হবে না। তবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তো ভালো, না পারলে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়েও আসতে পারবে না।
আমরা জেনেছি, বিএনপি জামায়াত ছাড়তে রাজি। তারেকের ব্যাপারেও ছাড় দিতে রাজি। কিন্তু তারেকের মতামত ছাড়া তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাই লন্ডনে মা-ছেলের বোঝাপড়ার বৈঠক চলছে। সবার দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে। খালেদা জিয়া লন্ডনে নিজের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপির নীতিকৌশল ঠিক করার বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারেকের সম্মতি পাওয়া গেলে হয়তো নভেম্বরে দেশে ফিরেই দল গোছানোর কাজে হাত দেবেন খালেদা জিয়া। অন্যথায় আরো কঠিন সংকটের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু-একটি মামলার রায় হয়ে যাবে। তাতে তাঁরা ফেঁসে যাবেন এবং নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন- এ ধরনের কথাবার্তা সরকারি দলে শোনা যায়। বিএনপির ভেতরেও এমন আলোচনা আছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই খুব ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে চায় বিএনপি।
এদিকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিচারপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ। নভেম্বরেই তাঁদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। এটা আঁচ করতে পেরেই দেশে নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। দুই বিদেশি হত্যা, খ্রিস্টান ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা, খানকা শরিফের কর্ণধার ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা খিজির খান হত্যা এবং পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বোমা হামলার ঘটনা যেন একই সূত্রে গাঁথা। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্যই এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। আরো বেশ কিছু বড় হামলার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট অবশ্য জোর দিয়েই বলছেন, এসব ঘটনার পেছনে আইএস জঙ্গিরা জড়িত। তিনি এও বলছেন, এখানে আরো কিছু হামলার ঘটনা ঘটবে। তবে গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়, তবে আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
পশ্চিমারা যতই বলুক এখানে আইএস আছে, আসলে এসব ঘটনা ঘটানোর পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের মিত্ররা জড়িত আছে বলেই মনে হয়। গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে, সেখানেও যুদ্ধাপরাধীদের মিত্রদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তারা কোথাও আইএস জঙ্গিদের অস্তিত্ব পায়নি। যদিও দুই বিদেশি হত্যা ও শিয়াদের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটার পরপরই আইএসের দায় স্বীকার করে উদ্ভট ই-মেইল পাওয়া গেছে! আসলে আইএসের আড়ালে এখানে অন্য একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এবং সরকারের পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ ধ্বংস করে হলেও তারা নিজেরা বাঁচতে চায়। সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে তো তাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। সে জন্যই তারা নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিতে চায় পশ্চিমারা। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে সরকারের অগ্রসর হওয়া উচিত।
দেশে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে এটা স্পষ্ট বলা যায়, আইএস থাকুক আর না-ই থাকুক, পশ্চিমারা এখানে আইএসের ঘাঁটি বানিয়ে ছাড়বে। তারপর মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটেছে তা-ই হয়তো ঘটবে বাংলাদেশে। কাজেই জোয়ারে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। আমাদের কারো অসতর্কতায় দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাই, দেশের মানুষ কিন্তু গভীরভাবে চিন্তিত। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যথেষ্ট কারণও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা সত্যিই পীড়াদায়ক। যেখানেই যাই, আমরা মিডিয়ার মানুষ বলে সবাই জানতে চায়, ভাই, দেশে কী হচ্ছে? আজব-আজব ঘটনা ঘটছে! এর মানে কী? আগে তো কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি? হঠাৎ কী হলো?
এসব প্রশ্নের জবাব কী? কে দেবে এর জবাব? আমরা দেখি, দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো হয়। ফলে যারা ঘটনা ঘটায়, তারা পার পেয়ে যায়। পুলিশকেও আর কষ্ট করে দুষ্কৃতকারীদের খুঁজতে হয় না। মূল আসামিরা পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। অনেক তো 'ব্লেম গেম' হয়েছে। আর কত? এবার সবাই মিলে দেশটাকে রক্ষা করুন। আফগানিস্তান, পাকিস্তান কিংবা ইরাক-সিরিয়ার মতো বাংলাদেশের অবস্থা হলে হম্বিতম্বি কোথায় যাবে বলুন তো! মোস্তফা কামাল, দৈনিক কালের কণ্ঠ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.