নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে ভালো, কে মন্দ?

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন একেবারেই শান্ত। বলতে পারি পরিস্থিতি অনেকটা হেমন্তের প্রকৃতির মতো। বর্ষা মৌসুম শেষ আগেই। শরৎ ঋতুও শেষ। গরম নেই। শীতের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সব বয়সের মানুষের কাছেই এমন প্রকৃতি পছন্দ। সামনে আমন ধান কাটার মৌসুম। এবারেও ভালো ফলন আশা করছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হলেই তারা ভালো লাভ রেখে ধান বিক্রি করতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। কারণ বাজার তারা নিয়ন্ত্রণ করেন না। এখানে বড় ব্যবসায়ীদের কর্তৃত্ব সীমাহীন। শীত না এলেও বাজারে শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বহুকাল শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত ছিল। বলা হতো শীতের হাওয়া না লাগলে ঠিক স্বাদ আসে না। এখন সম্ভবত সবজিও মানিয়ে চলছে মানুষের চাহিদার সঙ্গে। কিন্তু রাজনীতিকরা কি যুগের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছেন?
আশির দশক থেকে দেখছি, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রতিদিন সংবাদপত্রে নিজেদের দেখতে পছন্দ করেন। সে সময়ে একটি মাত্র টিভি চ্যানেল ছিল_ বিটিভি। বেতারও একটি_ 'রেডিও বাংলাদেশ'। দৈনিক বাংলা ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা। ইত্তেফাক, সংবাদ, বাংলাদেশ অবজারভারসহ অন্য কয়েকটি সংবাদপত্র বিরোধী দলের রাজনীতির খবর দিত। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল চালুর সুযোগ করে দেন। প্রথমে একুশে টিভি এবং তারপর একে একে এটিএন ও চ্যানেল আইসহ কত বেসরকারি চ্যানেল। তারা সরকারি ও বিরোধী দল, সবার খবর দিচ্ছে। এ সুযোগ লুফে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোও। অনেক নেতা মনে করেন, তাদের প্রতিদিন টিভির খবরে থাকা উচিত। বিরোধী দলগুলোর কাছে টেলিভিশন প্রচার এক মস্ত সুযোগ। এক সময় বড় জনসভা করে সংবাদপত্রে যে প্রচার পাওয়া যেত না, এখন ঘরের ভেতর ছোট সমাবেশ করেও তার চেয়ে বেশি প্রচার মেলে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাস বিএনপি এবং তাদের মিত্র কয়েকটি দল শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার জন্য মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল। সংবাদপত্র ও টিভিগুলোতে তাদের প্রচুর খবর ছিল এ সময়ে। প্রকৃতপক্ষে এ জন্য তাদের তেমন কষ্ট করতে হয়নি। পত্রিকা কিংবা টিভি অফিসে দ্রুত খবর পেঁৗছে দিতে আধুনিক প্রযুক্তি তাদের সহায়তা করেছে। অতীতে রাজনৈতিক দল কিংবা ছাত্র সংগঠনগুলো পত্রিকা অফিসে প্রেস রিলিজ পেঁৗছে দিত। এখন কত সুবিধা! হরতাল ডাকা হবে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা এটা একবার উচ্চারণ করলেই হলো_ বাকি কাজ করে দেবেন টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্র কর্মীরা। কিন্তু মানুষের কাছে খবর পেঁৗছালেই যে তাতে সাড়া মিলবে, এমন কথা নেই। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে হরতাল-অবরোধের খবর দ্রুততার সঙ্গে পেঁৗছেছে ঘরে ঘরে, কিন্তু সাড়া দিয়েছে কত জন? মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশেও অবরোধ ও হরতাল ডাকা হয়েছে। তবে এক বছরে দু'বার সরকারকে রাজপথের শক্তিতে অপসারণ করার চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। এ উদ্যোগে বিএনপি এবং তার মিত্ররা গণমাধ্যমের পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছিল। তারা যখন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাই পেঁৗছে দিয়েছে। এমনকি অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রেরিত কর্মসূচিও ছাপা হয়েছে কিংবা টিভি-বেতারে প্রচার হয়েছে। আশির দশকে এইচএম এরশাদ সাহেব সামরিক ফরমান জারি করে বলেছিলেন_ হরতাল, অবরোধ এবং এ ধরনের আরও কিছু 'উস্কানিমূলক' শব্দ সংবাদপত্রে লেখা যাবে না। সংবাদ, ইত্তেফাক ইত্যাদি পত্রিকা তখন লিখতে শুরু করল_ 'কর্মসূচি'। এভাবে পত্রিকার হেডলাইন থাকত_ আজ তিন জোটের 'সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি'। সংশ্লিষ্টরা বুঝে নিত_ আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপির সরকার উৎখাতের চেষ্টার খবর টিভি ও পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। কিন্তু তাতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। আর দুই মাস পর শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্ণ হবে। এ দিবসকে সামনে রেখে কি বিএনপি এবং তার মিত্র জামায়াতে ইসলামী আবারও সরকার উৎখাতের চেষ্টা করবে? তারা কি আবারও টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করবে? নাকি বিকল্প কিছু ভাববে? রাজনীতিকরা প্রায়শই বলেন_ রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বিএনপি এবং তার মিত্র দলগুলোর জোট ২০ দলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। তবে বেশিরভাগ পাবলিকের কাছে এ জোট পরিচিত 'বিএনপি-জামায়াত' জোট হিসেবে। বিএনপির অনেক নেতা অবশ্য এভাবে ব্রাকেটবন্দি হতে অস্বস্তিবোধ করেন। কিন্তু সেটা কি চাইলেই কাটাতে পারবেন? এক সময় বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকেই বলা হয়েছিল_ দুই দলের মৈত্রী কেবল কৌশলগত নয় বরং আদর্শগত। আর জোট যদি আদর্শগত হয় তাহলে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখীন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের পাশে দাঁড়াতে হয় বিএনপিকে। তবে সেটাতেও সমস্যা_ জনমত। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, এটা চায়নি জামায়াতে ইসলামী। তাদের কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছিল 'দুষ্কৃতকারী'। এটাই ছিল তাদের আদর্শগত অবস্থান। এ অবস্থান যে ভুল ছিল, সেটা কখনও তারা স্বীকার করে না। যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিচালিত গণহত্যাকে ভুল বলে মনে করে না পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি কি এই 'আদর্শগত ব্রাকেট' থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারবে?
দেশের মানুষ ভালো আছে_ এটা মহাজোটের নেতারা বলেন। কেউ তা বলেন জোর গলায়_ যতটা ভালো আছে মানুষ, চার চেয়ে একটু বেশিই হয়তো বলেন। পরপর দুই বছর বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তারা বলেছেন_ যখন সুখে আছে তখন ভূতের কিল খাবে কেন মানুষ? বাজারে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। গরিব লোকের সংখ্যা কমছে। খাবার কিনে খাওয়ার মতো আয় করছে গরিব লোকরাও। তাদের মজুরি বাড়ছে। শেখ হাসিনার সরকার দেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করছে। সাড়ে চার কোটি স্কুল ছাত্রছাত্রী বছরের পর বছর বিনামূল্যে পাঠ্যবই পাচ্ছে। বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে। খালেদা জিয়া দুই বছরেই শীতকালে আন্দোলন শুরু করেছেন। তখন আমন ধান ওঠায় বাজারে চালের দাম কম থাকে। বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যায়। ফলে লোডশেডিং কম থাকে। শীতের সবজি বাজারে আসে এবং দাম কম থাকে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এ সময়ে বিনামূল্যে বই পায়। তাহলে কেন তারা সরকার উৎখাতের জন্য পথে রাজপথে নামবে? তিনি সময় নির্বাচনে ভুল করেছেন। তাছাড়া বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট যে বাংলাদেশের জন্য আওয়ামী লীগের তুলনায় একটি দক্ষ ও যোগ্য সরকার উপহার দেবে, তারই বা নিশ্চয়তা কি? এ জোটের নেতাদের মুখগুলোও যে বড্ড চেনা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.