![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেদারল্যান্ড সফর শেষে গত ৭ নভেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। যে কোনো ধর্ম নিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়ার বিপক্ষে তার অভিমত। তিনি নিজেও তাতে দুঃখ পেয়ে থাকেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের উন্নয়নে রাত-দিন সচেষ্ট। তার এই চেতনার প্রকাশ ঘটেছে রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘সহে না মানবতার অবমাননা’ গ্রন্থটি শেখ হাসিনার মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য দলিল। তিনি এই গ্রন্থে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বীভত্স হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাটের অনুপুঙ্খ তথ্য সংকলন করেছেন। নির্মম ও বর্বর তাণ্ডবের সেই বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো বিস্তৃত পরিসরে উপস্থাপন করেছেন। উপরন্তু হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কথা লিখে তাদের নিরাপত্তার জন্য তত্কালীন সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ হচ্ছে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। এজন্য প্রতিটি নির্বাচনের আগে দলের ইশতেহারে সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অর্থাত্ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রতি ‘বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসানে’র প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ২৮ ডিসেম্বর (২০১৩) দশম সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে (২০১৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে। ইশতেহারে স্পষ্টত লিপিবদ্ধ আছে— ‘নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, তাদের কাজের ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বৃক্ষ নিধনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার করা হবে। সকল নাগরিকের স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ধর্ম, বর্ণ, নৃ-পরিচয়, লিঙ্গ এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে, রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।’ যে কোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার কথা বার বার উচ্চারিত হলেও ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ঘটনাসমূহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। ঐতিহ্যগতভাবে এ ভূখণ্ডে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ়। অথচ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষা করতে বার বার সরকারি প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এখন প্রতিটি নাগরিকের মানসিকতায় অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতাবোধ ধারণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রক্ষিত হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। শেখ হাসিনার প্রবন্ধ ও ইন্টারনেট এবং পত্রপত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও মতামত অনুসারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় যে সকল মৌলিক নিয়ামককে বিবেচনায় আনতে হবে সেগুলো হল- ১) মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাসের প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সঠিক স্বরূপ আপামর জনসাধারণকে জানাতে হবে। ইতোমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ শীর্ষক একটি কোর্স পড়ান হচ্ছে। ২) রাষ্ট্রের সংবিধানের আলোকে আঞ্চলিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিচালনায় নাগরিকের অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সকল শ্রেণি পেশার নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা প্রদান। ৩) আন্তর্জাতিক মানের পেশাগত দক্ষতায় জাতির বিবেক হিসেবে মিডিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো দানের মাধ্যমে সুশাসন ও সৃজনশীল নৈতিক সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা। ৪) তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তিকে কলুষিত ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি এবং স্বাধীন বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার পরিবেশ দান করে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ সুগম করা। ৫) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মরত সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যুগোপযোগী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
সাম্প্রদায়িক যত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে কোনোটির সাথেই ধর্ম নয় রাজনীতি জড়িত। তবু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। কেবল রাজনৈতিক কারণে জঙ্গি রাষ্ট্র বলা হয়েছিল একে। যারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা ধর্ম সম্পর্কে কম জানেন তারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেন। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক। আর এটা বহাল রাখতে হলে আমাদেরকে সকল ধর্মের মানুষের সাথে মিশতে হবে, জানতে হবে। সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করা দরকার। ধর্ম প্রসঙ্গে সহিষ্ণু আচরণের এসব প্রসঙ্গই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে বার বার উচ্চারিত হচ্ছে।
মিল্টন বিশ্বাসের লেখা থেকে।
©somewhere in net ltd.