নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতি কোন পথে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭

নানাভাবে রাজনীতি এখন বেশ উত্তপ্ত। সরকারও সে রকম উত্তাপ নিয়ে এখন বেশ সতর্ক অবস্থানে। এমনিতেই মাঠের রাজনীতির দৃশ্যমান তেমন কিছু পরিলক্ষিত না হলেও সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা নিয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে—বিশেষ করে দুই নেত্রীর বক্তব্য জনমনে কিছু আলোচনার প্রবাহ তৈরি করেছে। সে সূত্রে কিছু প্রশ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গিও আমাদের চোখে পড়ছে। এখন প্রশ্ন, এই দৃষ্টিভঙ্গিটি কী? উদ্ধৃত করা যেতে পারে : ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় গুপ্তহত্যায় নেমেছেন খালেদা জিয়া’, একই দিনের কাগজে পাশাপাশি ছাপা হয়েছে ‘এ অবস্থার জন্য হাসিনাই দায়ী’—প্রথমটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর, যা গত ২ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বলেছেন, পরেরটি লন্ডনে এক নাগরিক সভায় খালেদা জিয়ার উক্তি। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামনে কিছু প্রশ্ন ঝুলছে। রাজনীতি বা জনমনে শঙ্কা কিংবা অস্থিরতা নিয়েও জিজ্ঞাসা উঁকি দিচ্ছে। রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র, জন-নিরাপত্তা প্রভৃতি তো রাজনীতিরই অংশ। রাজনীতি ছাড়া, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া দেশে জনগুরুত্ব উপেক্ষিত। কিন্তু রাজনীতি মানে তো এটাও নয়—শুধু ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা কিংবা অতীতের মতো স্বাধীনতা-বিরোধী পেছনমুখি শক্তিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষণা দেয়া। সাম্প্রতিক কিছু হত্যাকাণ্ড সে কারণেই আমাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ, গুপ্তহত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটছে, কারা এর পেছনে আছে, কোন্ ধরনের শক্তি কাজ করছে কিংবা তার পৃষ্ঠপোষণা কে দিচ্ছে ইত্যাদি বিষয় সার্বিক পরিস্থিতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, ‘তাদের লিংক কোথায়, মুরুব্বি কে, তা বের করে শাস্তি দেব, শুধু দেশের মানুষের সহায়তা চাই।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তদন্তে গতি দিতে পারে, এক ধরনের সবুজ সংকেতও তৈরি করতে পারে। কিন্তু প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, বিদেশে গিয়ে যদি কেউ দেশের সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপ্রবণ মন্তব্য করে, রাজনৈতিক বিষোদ্গার করে, দেশের সমস্যা নিয়ে নালিশসুলভ উক্তি করে—সেটি কতোটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে! আর জনগণই তা কীভাবে গ্রহণ করবে! একপ্রকার এটাও কি প্রমাণ হয় না যে, এটি আসলে ক্ষমতায় না-থাকার উষ্মা কিংবা যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার হীন আকাঙ্ক্ষা— যেটি তার অস্থিরতায় প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ গুপ্তহত্যার বিচার চায়, কীভাবে তার নিরসন হবে, কীভাবে পেছনের শক্তি ধরা পড়বে, আসল সত্য উদ্ঘাটন হবে—সেটি মূল লক্ষ্য কিন্তু এ নিয়ে বিদেশে বসে অপ-রাজনীতি বা উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা কেন—আর তা করলে দেশ-রাষ্ট্র বা এদেশের গণতন্ত্রের জন্য তা কতোটা সুখকর হবে!
বাংলাদেশ একটি আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র। যে আদর্শের ভিত্তিটি গড়ে একাত্তর সালে রাষ্ট্রের জন্মের ভেতর দিয়ে। এটি খুব সহজ এবং নির্মম সত্য। এর বাইরে গিয়ে যদি কেউ রাজনীতি করে তা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কখনো মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় সে দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ পেয়েছে। সে কারণেই পেছনের ইতিহাস তিনি বলছেন। কীভাবে এদেশে খুন-হত্যার রাজনীতির সূত্রপাত হয়েছে—এবং তা আজ গুপ্তহত্যার পর্যায়ে চলে গেছে—কার্যত এসব পেছনগামী অন্ধকার ইতিহাস হয়তো অনেকেরই জানা। এদেশ ও অঞ্চলের মানুষের মূল সংস্কৃতি যে সহজাত অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা—এবং সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের শক্তিই এই শেকড়-চেতনা—তা অস্বীকার করার জো নেই। এই সাংস্কৃতিক শক্তিই তো সবকিছুর মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। উগ্রতা বা অন্ধতার বিরুদ্ধে সকলকে এক করেছে, ঐক্যও খুঁজেছে। এই ঐক্যে যখনই বাধা এসেছে তখনই সৃষ্টি হয়েছে প্রতিরোধ। এই প্রতিরোধ সম্মিলিত শক্তির প্রতিরোধ। এবং বৃহত্ শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় ক্ষুদ্র শক্তি পরাস্ত হয়েছে। তাই এটিরও নিরসন হবে—ওই মূল চেতনায় ফিরে গিয়ে। এজন্য জনগণ ও জনসংস্কৃতিই প্রধান শক্তি। পরস্পর দোষারোপের প্রশ্নটি এখানে গৌণ কিন্তু ইতিহাসটি জানা আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অতীত ইতিহাসের ধারাবাহিক প্রকাশ ঘটেছে, সত্যটিও আছে—এবং এ সত্যের ভেতর দিয়ে খুনি কারা, কীভাবে তাদের লিংক বা মুরুব্বী-ব্যবস্থাপনা যুক্ত, তার নির্ণয়যোগ্য স্বরূপ বিদ্যমান, হয়তো তার রূপ-রঙ এবং বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, প্রযুক্তির প্রসার ঘটায় খুনিদের কর্মকাণ্ডের নতুন অভিসন্ধি যুক্ত হয়েছে—তাদের কর্মপদ্ধতিও আলাদা, ঘটনা সম্পাদনের কায়দাও ভিন্ন। তবে এক সময় এই খুনিরাই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণা পেয়েছে, ধারাবাহিক মদদে তাদের বিস্তৃতিও ঘটে গেছে অনেকদূর পর্যন্ত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারকেই তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করাতে হবে। দেশের মানুষ রাজনৈতিক গোঁয়ার্তুমি পছন্দ করে না, কার বক্তব্যের দৃষ্টিভঙ্গি কী সকলেই বুঝতে পারে—অবশ্যই তারা সত্যটুকু প্রত্যাশা করে। রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে নেয়া নয়, সামনের দিকে এবং উন্নয়নের কাঠামোতে দৃশ্যমান দেখতে চায়। একই সঙ্গে, গণতন্ত্রেরও শক্ত ভিত্তিও প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। কারণ, দেশি-বিদেশি প্রভু নয় দেশের মাটির শক্তিতে রাজনীতিকে জনগণ প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী সর্বদা জনগণকে সবকিছুর চালিকাশক্তি মনে করেন, বিদেশের চাপিয়ে দেয়া অনেক নীতি ও শর্ত তিনি বাতিল করে দিয়েছেন। সেটি রাষ্ট্রনেতার বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য সর্বপর্যায়ে ছড়িয়ে যাক এবং দেশের সকল নাগরিক তার ফল ভোগ করুক—এটিই সবার প্রত্যাশা। বিএনপি নেত্রী বলেছেন, ‘আপনারা জানেন দেশের কী অবস্থা। সেজন্য আমাকে যেতেই হবে।’ কথাটি কী নিজের গুরুত্বকে প্রকাশ করে না জনগণের শক্তির প্রতি আস্থা প্রদর্শন করে? আস্থাজ্ঞাপক উক্তি কাম্য হয়ে উঠলে জনগণই ঠিক করে নিতে পারে নেতার দৃষ্টিভঙ্গি। আর তিনি যে দল ধ্বংস, রাজনীতি ধ্বংসের কথা বলেছেন—সেটি কতোটা যুক্তিপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল! সে আশঙ্কাটি কী সঠিক? কারণ, দল তো জনসমর্থন এবং গণতন্ত্রের উত্সমুখ। দল ভাঙা বা তৈরি করা কারো উদ্দেশ্য বা অপ-উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে না। কেউ তা করতেও পারে না। কার্যত, আপনার আচরি ধর্মই পরকে শেখান প্রয়োজন। ব্যক্তি, দল ও দেশ যখন আদর্শভিত্তিক হয় তখনই তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। সর্বমান্যতা পায়। বিএনপি নেত্রী যদি মনে করেন, সরকারপ্রধান ‘লেডী হিটলারে’ পরিণত হয়েছেন, সে সিদ্ধান্তটি তো দেশবাসীর ওপর ছেড়ে দিন। সেরকম অবস্থা হলে বা জনআস্থা না থাকলে সরকার বা সরকারপ্রধান রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন কী করে? এমন ‘ব্যক্তি’ আক্রমণ দেশকে পর্যুদস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে; কারণ নিজের দম্ভ ও অহংকারের ছায়া প্রধানমন্ত্রীর পদটির ওপর পড়েছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এমন উগ্র বক্তব্য সচেতন দেশবাসী কামনা করে না। রাজতন্ত্র ধারণা বা পারিষদবর্গ নিয়ে বিএনপিপ্রধান যে মন্তব্য করেছেন তা একমুখি এবং দায়িত্বশীল বলেও মনে হয় না। কারণ, তাঁর শাসনামলের সংবাদ বোধ করি তিনি যেমন ভোলেননি তেমনি দেশবাসীও ভোলেনি। সে কারণে এখনও তাঁর বক্তব্যে বার বার সুশাসন কায়েম, প্রতিশোধপ্রবণ না হওয়া, অপরাধীদের বিচার করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা—প্রভৃতি প্রতিশ্রুতির কথা আসে। কিন্তু জনগণ তাঁর কথায় বিশেষ আস্থা আনতে পারছে কই!
দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে ভস্মে ঘি ঢালার মতো উক্তি কারো কাছেই কাম্য নয়। বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ একটি রাষ্ট্রে বাস করতে পারে, মত ও পথের ভিন্নতা থাকবে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল আচরণ সকলেই প্রত্যাশা করে। বাংলদেশ হুমকির মুখে পড়লে, ক্রমশ অস্থিরতার দিকে গেলে বা অকার্যকর হয়ে পড়লে কার লাভ? স্বাধীনতাবিরোধীরা কী তাতে উত্সাহিত হয় না! বিএনপি-প্রধান স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষ হোন—সেটি দেশের মানুষ আশা করে না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে দল ক্ষমতায় যেতে পারে। এজন্য দলে গণতন্ত্রও প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দলীয় নেতৃত্ব বা কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। আর দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে— বিদেশের মানুষকে নিজের দল ভাঙার নালিশ করা কিছুতেই শোভন বলে মনে হয় না। তিনি দলের পুনর্গঠনের কথা বলছেন। সেটিও কারো আদেশ বা নির্দেশের প্রেসক্রিপশনে হলে চলবে কী? বিএনপি জনসমর্থিত দল বলে তার ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্র নিয়ে কথা ওঠে। ফলে সেটি ভাঙার বা নিশ্চিহ্ন করার আতঙ্ক দলীয় প্রধানদের মধ্যে না থাকাই শ্রেয়। তাতে দেউলিয়াত্ব বাড়ে। দেশের মানুষ ধর্মভীরু ও ধর্মপ্রাণ। সর্বধর্মের মানুষ আছে এই বাংলাদেশে। তারা ধর্মীয় উগ্রতা নয়, সহনশীলতাকেই আদর্শ মনে করে। তাই অবশ্যই সেটি দলের কর্মপদ্ধতির ভেতরে থাকা চাই। নির্বাচনে সমর্থন বা মত পেতে গেলে দলের ভেতরে নবায়নও দরকার এবং মৌলিক আদর্শের বীজও তাতে রোপণ করতে হয়। সেটি শুধু বিএনপি নয়, সব দলের জন্যই প্রয়োজন। আর দলগুলো জনগণের কণ্ঠস্বর বুঝতে পারলে তার সমর্থন নিয়ে চেঁচামেচি করারও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কাজটি দেশের ভেতরে থেকেই করতে হবে, বিদেশে গিয়ে নয়। আর এমনটা তো সত্যিই, আদর্শ হলো তর্কাতীত ব্যক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা। যে রাজতন্ত্রের কথা বিএনপি নেত্রী তুলেছেন তিনি কী রাজতন্ত্রের ধারণার ঊর্ধ্বে কেউ! চিন্তাটা ভালো কিন্তু সে চিন্তার প্রয়োগ তার মধ্যে আছে কী? লন্ডনের এ সভাটির মঞ্চে ছেলে বা ছেলের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে করলে কেমন হতো?
আমরা গণতন্ত্র বলি, প্রযুক্তিমুখিনতা বলি, সুশাসন বলি, আইনের শাসন বলি—সবকিছুর লক্ষ্য সভ্যতানির্ভর একটি সমাজ সৃষ্টি। সেটির জন্য সরকার কাজ করছে—কিন্তু সৃষ্টি ও নিরাপত্তার পরিবেশটি নতুন প্রজন্মকে নিশ্চিত করতে হবে। উত্পাদনমুখি বিদ্যমান ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হলে এই মুহূর্তে এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক সময় চলে গেছে, বৃহত্ জনসংখ্যার একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অঞ্চল—দল-মত নির্বিশেষে যে যে পন্থিই হোক—আমরা যেন সে সত্যটি এই প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে বাস করে ভুলে না যাই। কারণ, দেশ না দাঁড়ালে আমরা কেউই দাঁড়াতে পারবো না। সেই লক্ষ্যে সবার রাজনীতি তৈরি হোক।
শহীদ ইকবাল এর লেখা থেকে, দৈনিক ইত্তেফাক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.