নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্যারিসে জঙ্গি হামলা ও আজকের বাংলাদেশ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হলো ১২৯ জন নিরীহ মানুষ, আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। বিশ্বের যে প্রান্তেই এ ধরনের জঙ্গি হামলা ঘটুক না কেন, প্রথম সন্দেহের তীরটা ছোড়া হয় মুসলমানদের দিকে। ফ্রান্সের এই ভয়াবহ হামলাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আর সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রাচ্যে যখন আইএসের মতো একটি ভয়াবহ জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়েছে তখন তীর ছোড়ার কাজটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ হোক অথবা প্যারিস, কোনো জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী হামলা হলেই তার দায় স্বীকার করা হয় আইএসের নামে। অন্য কেউ অথবা আইএসের নিজ নামে একটি বিবৃতি এলে সেই বিবৃতিটা আসলে আইএসের কি না তা যাচাই করার কোনো চেষ্টা কেউ কখনো করেনি। তবে প্যারিসের এই সন্ত্রাসী হামলা যারাই করুক তা নিঃসন্দেহে একটি ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত কাজ। শুক্রবার রাতে প্যারিসে কমপক্ষে ছয় জায়গায় এই হামলা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ছিল খুবই জনাকীর্ণ স্থানে। প্রথমটি একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে, যেখানে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ওলন্দ খেলা দেখছিলেন। হামলার অন্য স্থানটি ছিল একটি কনসার্ট, যেখানে দেড় হাজারের মতো দর্শক-শ্রোতা উপস্থিত ছিল। ঘটনার পর পরই রাষ্ট্রপতি ওলন্দ দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং নিজ দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ হামলায় যারা অংশ নিয়েছিল তারা আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করেছিল এবং তাদের কয়েকজন আধুনিক কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিল। একজন আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণে উড়ে গেলেও ঘটনাস্থলে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় সিরিয়ার একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। অনেকের প্রশ্ন, ঘাতক যদি আত্মঘাতী বোমায় উড়ে গিয়ে থাকে পাসপোর্ট কী করে অক্ষত থাকল? আর যে ব্যক্তি এ ধরনের একটি ভয়াবহ কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে, সে কেন পাসপোর্টের মতো একটি পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবে? বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পর ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত। প্রশ্ন, তা যদি হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে একাধিক জঙ্গি কালাশনিকভের মতো আধুনিক রাইফেল নিয়ে শহরে ঢুকে এত মানুষকে গুলি করে মারতে পারল? বাংলাদেশে এক বা দুজন মানুষ সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের হাতে নিহত হলে পশ্চিমা দুনিয়ার বড় বড় দেশ ‘গেল গেল’ রব তোলে; আর সঙ্গে সঙ্গে রেড অ্যালার্ট জারি করে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে সেসব দেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নির্ধারিত সফর থাকলে তা বাতিল করে। প্যারিসে এই ভয়াবহ ঘটনার পর কোনো দেশকে সেই দেশে বসবাসরত তাদের দেশের নাগরিকদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করতে দেখা যায়নি। নির্মোহভাবে চিন্তা করলে তো বলতে হয় বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফ্রান্স বা অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন একটা খারাপ নয়। তবে রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা ব্যক্তির ইন্ধন থাকলে বাংলাদেশেও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। প্যারিসের জঙ্গি হামলার পর সে দেশের কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে স্থানীয় জনগণ আগুন দিয়েছে। এসব আশ্রয়শিবিরে সিরিয়া, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে আগত শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিল। এসব শরণার্থী তাদের নিজ দেশ থেকে আইএস, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের বোমা হামলায় বিতাড়িত হয়ে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছে। পোল্যান্ড ঘোষণা করেছে, তারা আর কোনো শরণার্থীকে তাদের দেশে স্থান দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রেও কোনো শরণার্থী না নেওয়ার পক্ষে জনমত সৃষ্টি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদ নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্যারিসে জঙ্গি হামলার জের ধরে সোমবার পর্তুগালের একটি মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার একই ঘটনা ঘটেছে কানাডায়। অন্যদিকে শুক্রবারের ঘটনার পর ফ্রান্স সিরিয়ায় আইএস নির্মূলে অভিযানের নামে বোমাবর্ষণের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে নতুন করে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, গৃহহীন হয়েছে অনেকেই।
প্যারিসের জঙ্গি হামলাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সারা বিশ্বের মানুষ নিন্দা জানিয়েছেন। ইউনেসকো সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোমবার ফ্রান্সের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা ছিল, যা শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে এত বড় ঘটনার পরও ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, ইউরো ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য ফ্রান্স নিরাপদ। নিরাপত্তার অজুহাত তুলে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম শেষ মুহূর্তে তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিল; যদিও তখন বা এখন বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছু সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো সময় ঘটতে পারে। প্যারিসের ঘটনার পর বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীসহ বিশ্বের কয়েক লাখ মানুষ ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিকে ফ্রান্সের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার জন্য পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দিবসে এ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তাদের প্রোফাইল ছবিতে নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করতে তেমন একটা দেখা যায় না। অন্যদিকে প্যারিসের জঙ্গি হামলার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে বৈরুতে অন্য আরেক জঙ্গি হামলায় ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো ২৩৯ জন। এই হামলাকে নিন্দা জানিয়ে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান বিবৃতি দেননি বা কেউ তাদের ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে লেবাননের ছবি ব্যবহার করেনি। ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে প্রতিনিয়ত হয় জঙ্গি হামলায় অথবা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। তাদের নিয়ে কেউ তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না। মধ্যপ্রাচ্যে দেশ ধ্বংস করার এজেন্ডা বাস্তবায়নে শামিল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার রাষ্ট্র সৌদি আরব। সোমবার সৌদি বিমান হামলায় ইয়েমেনে একটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। নিহত হয়েছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। এসব ধ্বংস বা মানুষ হত্যা নিয়ে কেউ তেমন একটা নিন্দা জানায় না।



সারা বিশ্বে বর্তমানে জঙ্গিবাদের যে দামামা শোনা যাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে তার মিত্রদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা। ওবামা থেকে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন মধ্যপ্রাচ্যে যে আইএস নামক দানবের উত্থান হয়েছে তা মূলত হয়েছে ওবামার পূর্বসূরি জর্জ বুশ জুনিয়রের অপরিণামদর্শী ইরাক অভিযানের ফলে। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন বা লিবিয়ার গাদ্দাফি একনায়ক ছিলেন ঠিক, কিন্তু তাঁদের শাসনামলে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এখন সেখানে শুধু জঙ্গিবাদের উত্থানই হয়নি, দেশ হিসেবে এই দুটি দেশ বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব হারিয়েছে। ইরাক এখন কার্যত তিন টুকরো। লিবিয়ায় কার্যকর কোনো সরকারই নেই। এই দুটি দেশ ও আফগানিস্তান আর কখনো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় তাতে সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার দেশগুলোর, কারণ দেশগুলো বর্তমান অবস্থায় থাকলে তাদের পক্ষে ওই সব দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করা সহজ। অনেকের প্রশ্ন, কোথা থেকে কিভাবে হঠাৎ জন্ম হলো আইএস নামের এই ভয়াবহ জঙ্গি সংগঠনের, যারা সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে? এ নিয়ে নানা তত্ত্ব থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক বিশ্লেষক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বীকার করেছেন এই আইএস যুক্তরাষ্ট্রই সৃষ্টি করেছে। ঠিক যেমনটি তারা সৃষ্টি করেছিল আফগানিস্তানের মুজাহিদ বাহিনী, তালেবান আর আল-কায়েদা। এযাবৎ আইএস সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে মুসলমানদের। এসব জঙ্গিবাহিনীর কর্মকাণ্ডের ফলে ইসলাম এখন সারা বিশ্বে একটি জঙ্গিবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অথচ প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়া বা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বা নব্বইয়ের দশকের বলকান যুদ্ধ-কোনোটাই মুসলমানরা শুরু করেনি। আইএস বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বিত্তশালী জঙ্গি সংগঠন। তাদের তহবিলে জমা আছে কয়েক বিলিয়ন ডলার। তারা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তার প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে তৈরি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তাঁর কাছে তথ্য আছে বিশ্বের ৪০টি দেশ বা তাদের নাগরিকরা আইএসকে অর্থায়ন করে। এসব দেশের মধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশও আছে। সার্বিক বিচারে পুতিনের সঙ্গে দ্বিমত করার তেমন কোনো অবকাশ দেখি না।
প্যারিসের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষও চিন্তিত। এমন ঘটনা বাংলাদেশে কি ঘটতে পারে? বাংলাদেশে আইএসের মতো তেমন ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন হয়তো নেই, কিন্তু তাদের সমমনা জামায়াত তো আছে। জামায়াত থেকেই তো সৃষ্টি হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল ইসলাম বা হিযবুত তাহ্রীরের মতো জঙ্গি সংগঠন। আইএস সারা বিশ্বে তাদের ভাষায় ইসলামী খেলাফত কায়েম করার স্বপ্ন দেখে। হিযবুত তাহ্রীরও একই স্বপ্নে বিভোর। আর এসব তরিকত শিক্ষা দেয় বাংলাদেশের অগুনতি মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক সব দলেই আছে। জামায়াতসহ এসব জঙ্গি সংগঠনের অনেকের পৃষ্ঠপোষক আবার বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, যাদের পেছনে আছে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সবাই মিলে চেষ্টা করে বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। আইএসআইয়ের টার্গেট ভারতে উত্তর-পূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর লক্ষ্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। বাংলাদেশে এই খেলা বহু দিন ধরে চলে আসছে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশেও অদূর ভবিষ্যতে যে প্যারিসের মতো ঘটনা ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ২১ আগস্টের ঘটনা তার একটি বড় নমুনা। এর আগে লিখেছিলাম সরকারের বিরুদ্ধে কোথাও একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে হয়। তা যদি না হবে তাহলে বিএনপিপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী বা দলের কিছু নেতা কেমন করে বলেন, বাংলাদেশে আগামীতে কোনো একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে? তেমন ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য সরকারের প্রস্তুতি কতটুকু আছে তা বলা মুশকিল। তবে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে একটা শুদ্ধি অভিযান এখন সময়ের দাবি বলে অনেকের ধারণা। মূল লেখা: প্রফেসর আব্দুল মান্নান

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

প্রবালরক বলেছেন: লেখার প্রথম অংশ এবং দ্বিত্বীয় অংশের পারস্পরিক বিরোধীতা আপনার বক্তব্যকে নস্যাৎ করে দেয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.