![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেম ও বীরত্বের প্রতীক। সেনা, নৌ, বিমান_ এ তিন বাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী দেশ ও জাতির অহংকার। বিশ্বে বাঙালির একমাত্র স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। সমগ্র দেশবাসী এ জন্য সশস্ত্র বাহিনীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। প্রকৃতপক্ষে সশস্ত্র বাহিনী বৃহত্তর জনগণেরই একটি অংশ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও ডকুমেন্ট থেকে জানা যায় সুপ্রাচীনকাল থেকে 'বাংলা' অঞ্চলের মানুষের ধীশক্তি ও বীরত্বের কথা। প্রাচীনকালে সিলন, সিয়াম ও মালয়ে বাঙালিরা শাসন করেছে। বাঙালি প-িত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান গৌতম বুদ্ধের অহিংস বাণী প্রচার করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই' অথবা 'নানা বরণ গাভী রে ভাই একই বরণ দুধ, জগৎ ভ্রমিয়া দেখি একই মায়ের পুত' প্রভৃতি সর্বজনীন বাণী বাঙালির শাশ্বত চেতনার পরিচয় বহন করে। অন্য অনেক মৌলিক গুণের পাশাপাশি এ চেতনা ধারণ করার কারণেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর বাঙালির বীরত্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের গৌরবোজ্জ্বল দিকও এটি। বৈশ্বিক পরিম-লে বাংলাদেশ তার মাথা উঁচু করে রাখতে পারছে কারণ বাংলাদেশের ইউনিফর্ম পরিহিত জওয়ানরা তাদের মাতৃভূমি থেকে অনেক অনেক দূরের দেশগুলো, অধিকাংশ আফ্রিকা অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষের কৃতজ্ঞতা অর্জন করছে। বিশ্বের অনেক যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে সুস্থিরতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে এবং যেসব রাষ্ট্র শুধু নিরাশা ও যুদ্ধই কেবল প্রত্যক্ষ করেছে সেসব স্থানে আশার যুগের সূচনা করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২০১০ সালের অধিবেশনে মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা জানিয়ে দেন। সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার কারণে শান্তিরক্ষী মিশনের জন্য জাতিসংঘের বোর্ডের সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তিন বাহিনীর যৌথ অভিযানের স্মরণে ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে।
বাঙালির শৌর্য-বীর্য, সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় উৎকর্ষতার উদাহরণের পাশাপাশি 'বিশ্বাসঘাতকতা' এবং 'ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে জ্ঞান ও বুদ্ধিকে' মিলিয়ে ফেলার কারণে পরাধীনতাকে বরণ করে নিতে হয়েছে। 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দেশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সদা সতর্ক। প্রাচীনকাল থেকে অব্যাহতভাবে চলে আসা 'মানবিকতা' ও 'শান্তিপ্রিয়তার' ঐতিহ্য এ দেশের সশস্ত্র বাহিনীর চলার পথ রচনা করেছে। বিশ্বের বাংলাভাষীদের একমাত্র স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। বর্তমান লেখাটির প্রধান যুক্তি হচ্ছে, 'দেশ ও জাতির গর্ব' এবং 'দেশপ্রেমের অনন্ত প্রেরণা' বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধের ধারক ও বাহক।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে সামরিক-শাসন কবলিত ধর্মীয়-উপনিবেশ পাকিস্তানের গর্ভ থেকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এ ১১ সেক্টরের ছিলেন ১১ জন কমান্ডার। এ ছাড়া ছিলেন সাব-সেক্টর ও সাব-সেক্টর কমান্ডার। প্রায় সব সেক্টর ও সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সশস্ত্র বাহনীর অফিসার ও জওয়ান। এ ছাড়া সেনাবহিনীর বিপুলসংখ্যক জওয়ান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেন। প্রায় আড়াই লাখ বাঙালি নারী সম্ভ্রম বিসর্জন দেন। এ ছাড়া ৩ হাজার ৫০০ ভারতীয় সেনা দেশের মুক্তির সোপানতলে তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা তাদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। গণতন্ত্রকে চিরতরে দেশ থেকে বিদায় করে দিয়ে পাকিস্তানের সেনাশাসকরা সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও পাকিস্তানি মানসিকতার একশ্রেণির মানুষ বিপর্যয়কর কর্মকা-ে লিপ্ত থেকেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং পরবর্তীকালে ওই বছরেরই ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির পুনরুত্থানের প্রমাণ বহন করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা অনুযায়ী দেশের সরকার পরিচালনা করছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর স্থাপন করা, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় জয়লাভের মাধ্যমে সমুদ্রের বিশাল এলাকা দেশের অন্তর্ভুক্তকরণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে অগ্রগতি প্রভৃতি তারই উদাহরণ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোনো ধরনের অভ্যুত্থান বা অনিয়মতান্ত্রিক পথে যাতে ক্ষমতা দখল করতে কেউ সাহস না পায় তার জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ বর্তমান সরকার গ্রহণ করছে। অতিসম্প্রতি মহান জাতীয় সংসদে একটি আইনের খসড়া পাস হয়েছে, যাতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী রাষ্ট্রপতিরা অবসর ভাতা পাবেন না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সম্ভাব্য সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতীয় সম্পদ ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এ বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য যা কিছু করার সব করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, 'সরকারপ্রধান হিসেবে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নের জন্য সব ধরনের সমর্থন প্রদান করছি এবং ভবিষ্যতে এ বাহিনীটির আরো আধুনিকীকরণে যা কিছু করণীয় সবই করব।' ১২ ল্যান্সার সাঁজোয়া বাহিনীকে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া এবং এ বাহিনীর পঞ্চম পুনর্মিলনী উপলক্ষে বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া বাহিনী কেন্দ্র এবং স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সাঁজোয়া বাহিনীর পঞ্চম পুনর্মিলনীতে খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে কর্মকুশলতা, কঠোর অনুশীলন, কর্তব্যপরায়ণতা এবং দেশসেবার নিদর্শন হিসেবে ১২ ল্যান্সার বাহিনীর ইউনিট অধিনায়কের হাতে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের তাদের বিচক্ষণতা, পেশাদারী দক্ষতা এবং কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী সিনিয়র নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস, পারস্পরিক আস্থা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানান। সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিবরণ দিয়ে বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৪ সালে প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি এবং বাহিনীগুলোর লক্ষ্য-২০৩০-এর আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রতিরক্ষানীতি এবং বাহিনীগুলোর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তার সরকার একটি পদাতিক ব্রিগেড, একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল কর্ম সংগঠন, তিনটি পদাতিক বাহিনী, দুটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, একটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, দুটি প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন এবং একটি সাপোর্ট ও পরিবহন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার করেছে। তিনি বলেন, এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রতিষ্ঠিত ঘউঈ, ইওচঝঙঞ, অঋগঈ, গওঝঞ এবং ঘঈঙং অপধফবসু-র মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং এর প্রশিক্ষণ মানকে যুগোপযোগী করে তুলতে সাহায্য করছে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, পদাতিক রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও এতে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সম্ভাব্য সব ধরনের বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, 'আমরা যথারীতি সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং এ ডিভিশনের অধীনে একটি পদাতিক ব্রিগেড সদর দপ্তর ও দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছি।' শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি প্রকৌশলী নির্মাণ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজারের রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর এবং এ ডিভিশনের অধীনে ব্রিগেড ও ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনীর অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। এ জন্য যথেষ্টসংখ্যক অচঈং, অজঠং, ব্যাটল ট্যাংক, ২০০০ হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতি সেনাবহিনীর জন্য যথারীতি কেনা হয়েছে।' একইভাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠতম কোর সাঁজোয়া বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুবাহিনীর উগ্রতা ধ্বংস করে দেয়া এবং এ বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে পরাভূত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের দেয়া উপহার ৩০টি টি-৫৪ ট্যাংকের মাধ্যমে সাঁজোয়া বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বলেন, সর্বাধুনিক এমবিটি-২০০০ ট্যাংক সাঁজোয়া বাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে, এ ছাড়া আরো দুটি সাঁজোয়া রেজিমেন্ট গঠন করার পরিকল্পনাও আমাদের বিবেচনাধীন আছে। অধিকন্তু তিনি বলেন, বাহিনীগুলোর পুরাতন ট্যাংকগুলো আপ-গ্রেডেশনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ।
জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মলাভ করেছে। আজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ধর্মের নামে সুদীর্ঘকাল অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসনের পর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, বাঙালির ওপর নির্বিচারে আক্রমণ করার প্রেক্ষাপটে 'ধর্মীয় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের' বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী প্রথম থেকেই অগণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় রেখেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখানোর পরিবর্তে তারা তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ী পবিত্র ধর্ম 'ইসলামকে' ব্যবহার করেছে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান বিশ্বের বুকে একটি চরমপন্থী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সাম্প্রদায়িকতার উগ্র চর্চা করার পরিণতিতে এ রাষ্ট্রটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী 'জঙ্গি' উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে; যা পুরো মানবসভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। 'জঙ্গিবাদের' অভয়ারণ্য পাকিস্তান থেকে 'জঙ্গিরা' বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব 'জঙ্গি'গোষ্ঠীর মূল বীজ প্রথম বপন করা হয়েছিল পাকিস্তানে। উপমহাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক গোষ্ঠীর তৎপরতায় এ অপশক্তি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দেশের স্বাধীনতা যেহেতু গণতন্ত্রের পথ ধরে এসেছে এবং গণতন্ত্রের পথ ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটি জঙ্গিগোষ্ঠী ও এদের পৃষ্ঠপোষকদের এটি পছন্দ নয়। বলা যায়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকুক বাংলাদেশের অভ্যন্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ও পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠী তা চায় না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মীয় ঔপনিবেশিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাই তারা বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ও বিদেশে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, দেশের আপামর জনগণসহ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী এ ব্যাপারে সদা সতর্ক ও তৎপর।
অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী:চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং পরিচালক সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-
©somewhere in net ltd.