নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিসের সংলাপ, কার সাথে?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩১

বিএনপি চেয়ার-পারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সার নাম করে লন্ডনে তার পুত্র তারেক রহমানের সাথে দু’মাস অবস্থানের পর গত শনিবার দেশে ফিরেছেন। একই অজুহাতে তারেক রহমান প্যারোলে লন্ডনে আছেন প্রায় আট বছর। অবশ্য আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখন একজন ফেরারি আসামি। এই মুহূর্তে বিএনপি মানে বেগম জিয়া আর তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বিদেশে অবস্থানের অর্থ হচ্ছে বিএনপিও লন্ডনে অবস্থান করছিল। অবশ্য এই মন্তব্য বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতারা মানতে চাইবেন না। তারা বলবেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দীর্ঘ সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করলেও বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেমে নেই। তবে বাস্তব হচ্ছে বিএনপি’র সকল কর্মকাণ্ড নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এখন একজন ডঃ আসাদুজ্জামান রিপনের প্রতিদিনের প্রেস ব্রিফিং-এ সীমাবদ্ধ। দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকে নানা মামলা মাথায় নিয়ে হয় কারারুদ্ধ অথবা পলাতক। অনেকেই নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা শমসের মোবিন চৌধুরী দল ছেড়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিত্সা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর নাম করে গেলেও তার চিকিত্সার অগ্রগতি সম্পর্কে তেমন একটা কিছু জানা যায়নি। তবে তিনি দেশে ফেরার পূর্বে দল হতে জানানো হয়েছে দেশের রাজনৈতিক সংকটে তিনি বিচলিত হয়ে দেশকে উদ্ধারের জন্য দেশে ফিরে এসেছেন। কোনো কোনো গণমাধ্যম খবর দিয়েছিল বেগম জিয়া তারেক রহমানের বাসার পাশে একটি পৃথক বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। তেমনটি হয়ে থাকলে বাসাটা ছেড়ে দিয়েছেন কী না আছে তা জানা যায়নি। বলা হয়েছিল তিনি এই বাসায় দলের নেতা-নেত্রীদের সাথে দেখা করবেন। তবে লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি সেখানে কারো সাথে তেমন একটা দেখা করেননি। তারেক রহমান চিকিত্সার নাম করে লন্ডন গেলেও এতদিনে তার চিকিত্সা শেষ না হওয়াতে বৃটেনের চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তার দেশে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত। বেগম জিয়ার দেশে ফেরা নিয়েও একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল। এরই মধ্যে দেশে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। ঘাতকের আঘাতে নিহত হলেন দু’জন বিদেশি। আর একজন আক্রান্ত হলেন। গলায় চাকু চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হলো একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজককে। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে প্রাণ গেল দু’জন কর্তব্যপালনরত পুলিশের। দিন দুপুরে প্রকাশক দীপন হত্যা ছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা। আবার এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ নামের একটি ওয়েব সাইটে দাবি করা হয় এই হামলাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যযুগীয় জঙ্গি সংগঠন আইএস (আইএসআইএস) ঘটিয়েছে। এই ওয়েব সাইটের মালিক রিতা কাত্জ এক সময় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই-এর সাথে কাজ করেছেন।বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব খুঁজছে অনেকেই।আইএস’র ওয়েব সাইটে দাবি করা হয়েছে তারা বাংলাদেশে তাদের মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছে। আইএস এখন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠী। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দায়িত্বশীল বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন আইএস যুক্তরাষ্ট্রেরই সৃষ্টি। তালেবান আর আল কায়েদাও যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল। মধ্যপ্রাচ্য আর আফগানিস্তানে তাদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সূত্র ধরে সেই সব দেশে ট্যাংক ও যুদ্ধ বিমানের পিঠে করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স গণতন্ত্র রপ্তানি করেছিল। গণতন্ত্রের ঠেলায় বর্তমানে ইরাক তিন খণ্ডে বিভক্ত। লিবিয়া আর আফগানিস্তানে কোনো কার্যকর সরকার নেই। কিন্তু এই সব দেশ হতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট থেমে নেই। বাংলাদেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বহুদিন চেষ্টা চলছে। আইএস না থাকলেও তাদের বাংলাদেশি সংস্করণ জামায়াত, হিযবুত তাহরির, হেফাজতে ইসলাম আর জেএমবি তো আছে। তাদের অনেকের উপর ছাতা ধরে আছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। অবশ্য আইএস নাকি বলেছে তাদের আসল মিত্র হচ্ছে জেএমবি। বাংলাদেশে সিরিয়া স্টাইলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘোষণাও নাকি দিয়েছে। অবশ্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন এই সবই গুজব। তবে সতর্ক থাকা ভালো। এই সবের মধ্যে দেশে ফিরলেন বেগম জিয়া।
বেগম জিয়া দেশে ফেরার আগে লন্ডনে বসে ঘোষণা দিয়েছেন দেশের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে একটি জাতীয় সংলাপ জরুরি। দেশে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংকট দেখা দিলে জাতীয় সংলাপ হতেই পারে। অতীতে এই দেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তার বড় উদাহরণ। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে তেমন কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংকট আছে বলেতো মনে হয় না যার জন্য জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন আছে। যেহেতু দেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার চলছে সেহেতু জামায়াত সৃষ্ট কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবশ্য ঘটছে। বছর খানেক আগে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সারা দেশে প্রায় তিন মাস জামায়াত-বিএনপি’র পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস চললো। মারা গেল শ’দুয়েক নিরীহ মানুষ। ছোট শিশু হতে বয়স্ক মহিলা কেউ বাদ যায়নি। কোটি কোটি টাকার জনগণের সম্পদের ক্ষতি হলো। বেগম জিয়া সন্ত্রাসের এই নব সংস্করণ পরিচালনা করার জন্য তিন মাস যাবত্ তার গুলশানস্থ কার্যালয়ে কমান্ড পোস্ট খুলে সেখানে অবস্থান নিলেন। সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বেগম জিয়া দেশের বিরুদ্ধে তার সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিন মাস পর ঘরে ফিরে গেলেন। তিনি এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। যদিও তিনি কাগজে-কলমে বিশ দলীয় জোটের নেত্রী কিন্তু সাথে ছিল শুধু জামায়াত। অবশ্য অন্য দলগুলোর প্রায় সবগুলোই লেঙ্গ্যুট পার্টি। তো বেগম জিয়া কেন হঠাত্ এই তথাকথিত জাতীয় সংলাপের ডাক দিলেন। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তার পেট্রোল বোমা কৌশল আর কাজে আসবে না। মানুষ আগের চেয়ে আরো বেশি সচেতন। ইতোমধ্যে তার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের তাদের একাত্তর সালের মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসি হয়েছে। অবশ্য এই ফাঁসির হুকুম তিনি বিদেশে থাকতেই হয়েছিল। আগামী বছর নাগাদ জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জামায়াত ছাড়া বিএনপি অনেকটা অচল। জামায়াতের এক ধরনের ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন আছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক শক্তি বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক। দলের সিনিয়র নেতাদের তেমন একটা প্রকাশ্যে দেখা যায় না। তারা হয়তো বুঝে গেছেন বর্তমান অবস্থায় বিএনপি’র ক্ষমতায় ফেরা দুরূহ। প্রকাশ্যে না বললেও তারেক রহমান দলের জন্য এক বিরাট বোঝা। সেটা হয়তো বেগম জিয়া তেমন একটা বুঝেন না, যেমন বুঝেননি সাকা চৌধুরী বিএনপি’র জন্য এক বড় মাপের বোঝা ছিলেন। বুঝতে পারলে সাকাকে দলের মুখপাত্র ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন একজন সত্ এবং পরিষ্কার রাজনীতিবিদের সনদ দিতেন না। আর সরকারি দল এমন কোনো গর্তে পড়েনি যে বেগম জিয়া বা বিএনপি’র কথিত জাতীয় সংলাপে সাড়া দিবে।
ভবিষ্যতে সংলাপ হয়তো হতে পারে তবে তা হবে সংবিধানের আওতায় ২০১৯ সালে কী ভাবে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে তা নিয়ে। সেই সংলাপ ও নির্বাচনে সকল অংশগ্রহণকারী দল হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধী বলে কেউ থাকবে না। অন্য কোনো দেশে তেমনটি নেই। নিজ দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না আবার এদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে তা তো হতে পারে না। এই মুহূর্তে বেগম জিয়ার সংলাপ হওয়া উচিত নিজের দলের নেতানেত্রীদের সাথে এটি বুঝার জন্য তাদের অতীত ভুল ভ্রান্তি কোথায় ছিল এবং তা দূর করে কীভাবে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসা যায়। দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বজায় থাকার স্বার্থে একাধিক সুস্থ ধারার রাজনৈতিক দল থাকাটা জরুরি। বিএনপি এমন একটা দল হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই মুহূর্তে জাতীয় সংলাপের তেমন একটা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
লেখক: প্রফেসর আব্দুল মান্নান, দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত কলাম হতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.