নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নাই

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

সমাজে নন্দলালের সংখ্যা এখন অনেক। সেই যে, কিশোর বয়সে ডি. এল. রায়ের কবিতায় পড়েছিলাম এক নন্দলালের কথা যে কিনা স্বদেশের জন্য জীবন উত্সর্গের পণ করেছিল। দেশের জন্য জীবন দেবে অথচ নন্দলাল ঘরের বাইরে রাস্তায় বার হতো না গাড়ি চাপা পড়ে মারা যাবার ভয়ে। অসুস্থ মানুষের সেবা করতে যেত না, যদি সে নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ইত্যাদি আরো অনেক হাস্যকর ব্যাপার ছিল কৈশোরে পড়া নন্দলালের চরিত্রে। সমাজে নন্দলালরা সব সময় ছিল। এখনও আছে এবং সংখ্যায় বেড়েছে। তাদের চরিত্রেরও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। জীবনের ভয়ে তারা এখন আর শুধু ঘরে বসে থাকে না, তারা খায় দায় গান গায়, তাইরে নাইরে না এবং সামাজিক আড্ডায় মুখে তুবড়ি ফুটিয়ে দেশোদ্ধার করে। তারা সকল সমস্যার দায় দেশের রাজনীতির ঘাড়ে চাপায়। সকল সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনীতিকে দায়ী করে। যেখানে সরকার ও সরকার প্রধানও বাদ যায় না। বর্তমান কালের নন্দলালরা ডি. এল. রায়ের নন্দলালের মতো শুধু নিজের মৃত্যুভয়ে ভীত থাকে না, তারা অন্যদের ভেতর মৃত্যুভয় ছড়ায়। সমাজে আতঙ্ক ছড়ানোর ব্যাপারে তারা রীতিমতো মাস্টার। যদি ফোটে পটকা তবে তারা বলে কামানের শব্দ। যদি দেখে বিড়াল তবে বলে বাঘ। এইসব গুণধর নন্দলালদের গুণের অন্ত নাই। আষাঢ়ে গল্প ফাঁদার ব্যাপারে তাদের জুড়ি মেলা ভার। আর সে সব গল্প আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য, মানুষের মনে অভয় দেবার জন্য নয়। কোনো ভালো কাজে এদের কখনো পাওয়া যায়নি, পাওয়া যায় না। ডি. এল. রায়ের নন্দলাল ছিল কমেডি চরিত্রের, বর্তমানকালের নন্দলালরা এক কথায় ভিলেন। এদের সম্পর্কে না হয় অন্য সময়, অন্য কোনো লেখায় বিশদভাবে বলা যাবে। তবে এদের সম্পর্কে কিছু বলে সময় নষ্ট করার দরকারই বা কি! এই সমস্ত নন্দলাল, মোহনলাল, জগেশঠ, মীরজাফর ও উমিচাঁদের দল দেশের কারণে, দেশের মানুষের স্বার্থে, শেখ হাসিনার আহ্বানে সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধে কখনই এগিয়ে আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সমাজ জাগরণের কথা বলছেন। কারণ, তিনি বাঙালির ইতিহাস ভালো করে জানেন। কারণ, তিনি বাঙালির অন্তরে সদা দীপ্যমান যে অগ্নস্ফুিলিঙ্গ সেই অগ্নস্ফুিলিঙ্গকে শ্রদ্ধা করেন। সম্মিলিত অগ্নস্ফুিলিঙ্গের প্রজ্বলিত শিখায় কী করে পুড়ে ছারখার হয় অত্যাচারীর দুর্গ—তাও তিনি ভালো করেই জানেন। সম্মিলিত আন্দোলনে বাঙালি যে অসাধ্য সাধন করতে পারে তার দৃষ্টান্ত অনেক আছে। নৃশংসতার বিরুদ্ধে, নাশকতার বিরুদ্ধে, বর্বরতা ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা বাঙালি চরিত্রের সহজাত প্রবৃত্তি। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সুযোগ্য কন্যা বাঙালি চরিত্রের এই অমোঘ শক্তিতে প্রবল বিশ্বাসী। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা যাদের ঠিকানা, বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে বেড়ে ওঠা যে হাজার বছরী জনপদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দানবকুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ী বাঙালির সম্মিলিত শক্তি যে রুখে দিতে পারে অসুরের আন্দোলন, তা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা। আর তিনি তাই নিঃশঙ্কচিত্তে আহ্বান জানাতে পারেন সম্মিলিত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ও সর্বাত্মক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে শত্রুকে নির্মূল করার কোনো বিকল্প নাই, বাংলাদেশে একথা কেউ অস্বীকার করবে না। যদি করে তবে তারা ইতিহাসকে অস্বীকার করবে। একাত্তরে দানব পাকিবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসরদের মুক্তিকামী বাঙালি সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ ও পরাজিত করেছিল। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত উচ্চতর সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত পাকিদের বিরুদ্ধে বাঙালির মহান বিজয়ের পেছনে ছিল দেশপ্রেম, মহান নেতার আহ্বানে জীবনোত্সর্গ করার সাহস এবং সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। সম্প্রতি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফাালনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার যে অপচেষ্টা চলছে, তা রুখে দিতে মহান একাত্তরের চেতনাই হচ্ছে মোক্ষম দাওয়াই। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি যদি একাত্তরে ভয়ঙ্কর দানবসদৃশ পাকি-সেনা এবং রাজাকারদের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে পারে, তবে আজও সেই বাঙালি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সম্মিলিত শক্তিতে কেবল প্রতিহতই নয়, সমূলে নিশ্চিহ্ন করবে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কুিসত আস্ফাালন।
শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা দৃঢ়ভাবে বলেছেন। সন্ত্রাসের সঙ্গে আপস নয়, অবিরাম আঘাতও হানা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা জীবন বাজি রেখে অবিরাম কাজ করছেন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। সম্প্রতি দেশে বেশ ক’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে বোঝা যায় এগুলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকারীরা ধরাও পড়ছে। বিভিন্ন উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সদস্য তারা। সংগঠনগুলো জামায়াত শিবিরের বংশোদ্ভূত। ধৃত অপরাধীদের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, একাত্তরের পরাজিতরা দেশটাকে তাদের কব্জায় নিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চায়। বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনার পুণ্যভূমিতে কোদাল চালিয়ে ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ করতে চায়।
সম্প্রতি ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে, এটা সত্য। জ্ঞানপাপীরা বলছে দেশজুড়ে আতঙ্কের কথা। আতঙ্কের কথা বলে তারা বরং দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা সমাজের একশ্রেণির সুবিধাভোগীদের মগজে বাসা বেঁধেছে। তারা বুঝতে পারছে না যে, মধ্যযুগীয় কূপমণ্ডুকতায় দেশ ও সমাজ পশ্চাত্মুখী হয়ে পড়লে তাদের জন্য সেটা মোটেই সুখকর হবে না। তাদের জং-ধরা মগজ সাফ হোক, তারা বুঝতে শিখুক যে ধর্মচর্চা ও ধর্মান্ধতা এক নয়—এটাই কামনা করি। সম্প্রতি দেশে চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে কয়েকবার। হতাহত হয়েছে নিরীহ মানুষ। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আগেই বলেছি যে, আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি। উদ্বিগ্ন হয়েছি কিন্তু ভীত হইনি। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির গর্বিত উত্তরাধিকারী আমরা। আমরা জানি, ইতিহাস শিখিয়েছে কীভাবে সম্মিলিত শক্তিতে শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়। সম্মিলিত সামাজিক শক্তির উপর আমাদের আস্থা পরীক্ষিত। এটাও ভালো করে জানি যে, আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও বাঙালি চিরায়ত সংস্কৃতির উপর আস্থাধারী মানুষের সংখ্যা দেশে অজস্র। তবে আর ভয় কি!
স্বাধীনতার পর থেকে দেশ ও জাতির উপর আঘাত এসেছে বহুবার, নানাভাবে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর আঘাত হানার মাত্রা বেড়েছে এবং তা হয়েছে পরিকল্পিত ও নির্লজ্জভাবে। সাম্প্রতিক উপদ্রবটি একটু ভিন্ন ধরনের। তবে উদ্দেশ্য একই—বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো। সেইসাথে সমাজকে ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িকতার আঁস্তাকুড়ে ঠেলে দিয়ে প্রগতি ও উন্নয়নের ঈর্ষণীয় অগ্রগতিকে রুদ্ধ করা। মুক্তচিন্তার শুভ চর্চাকে গলা টিপে হত্যা করা। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অবারিত আগলকে বন্ধ করে সমাজকে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ঠেলে দেয়া। এজন্য নব্য-দুর্বৃত্তরা বেছে নিয়েছে ঘৃণ্য জঙ্গিবাদ ও পৈশাচিক সন্ত্রাসের পথ। শুধু পুলিশ, র্যাব, মিলিটারি দিয়ে এসব বর্বর দুর্বৃত্তকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সর্বস্তরের সামাজিক প্রতিরোধের সম্মিলিত উদ্যোগ। সকল পেশার শুভবাদী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এই সময় খুবই দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তাই সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলছেন। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের পাশাপাশি প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি, যুবশক্তি, ছাত্রশক্তি, সাংস্কৃতিক শক্তি, সামাজিক শক্তিকে সম্মিলিতভাবে অথবা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমন্বিত উদ্যোগে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সময় নষ্ট করার সময় নাই। ইতিহাস শিখিয়েছে, সম্মিলিত ও সমন্বিত সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নাই। হোক না শত্রু ভয়ঙ্কর। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা হতে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮

তাশফিয়া নওরিন বলেছেন: স্বাধীনতার পর থেকে দেশ ও জাতির উপর আঘাত এসেছে বহুবার tai ইতিহাস শিখিয়েছে, সম্মিলিত ও সমন্বিত সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.