নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদের বিস্তার, শঙ্কা এবং প্রতিরোধ

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭

বাংলাদেশে একের পর এক হামলা, হত্যা ও হুমকির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা ও ভীতির পরিমাণও দিনে দিনে বাড়ছে। গত ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজরত মুসলি¬দের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং ইমামসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার এক মাস হতে না হতেই শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর আবার এমন হামলার ঘটনা পুরো দেশবাসীকে হতবাক করেছে। সিরিয়া, পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী হামলা আমাদের দেশে শিয়া মতাদর্শীদের ওপর হওয়া খুবই ন্যক্কারজনক। এ হামলা থেকে আশঙ্কা করলে ভুল হবে না যে হিন্দু-মুসলমান, শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে একটি মহল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে চায়। একটি স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ দেশে মসজিদে মুসলি¬দের নামাজ আদায়ে বাধা, লেখক-শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা, বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় বাধা প্রভৃতি নিঃসন্দেহে একটি জাতির জন্য সতর্কসংকেত বহন করছে। সব মিলিয়ে একটি ভীতিকর ও শঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভাবতে কষ্ট হয়। বলা যায়, আমরা সবাই নিরাপত্তার সংকটে।
কিছুদিন ধরেই জঙ্গিবাদের বিস্তার, নাগরিকদের শঙ্কা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের ইস্যুতে গণমাধ্যমে নানাবিধ প্রতিবেদন এবং সংবাদ দেখতে ও শুনতে পাচ্ছি। অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের সাম্প্রতিক নানাবিধ উদ্যোগও প্রশংসার দাবি রাখে। তা সত্তে¡ও প্রতিনিয়ত গুপ্ত হামলা, হত্যা ও হুমকি আমাদের অধিকভাবে শঙ্কিত করে তুলেছে। আর এই শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার ইস্যুটি এখন সবার মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে জঙ্গি হামলায় কয়েকজন লেখক ও বিদেশি নাগরিক খুনের ধারাবাহিকতায় একজন প্রকাশক খুনের ঘটনায় গোটা জাতি হতবিহবল হয়েছে। এসব ঘটনার কোনোটিই যে বিচ্ছিন্ন নয়, সেটি বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা থেকেই এগুলো হতে পারে। আমরা জানি, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ নিয়ে দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়েছিল অনেক আগেই। বেশ কিছুদিন জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা শিথিল থাকলেও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়েছে নতুনভাবে। অনেক হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের সূত্র ধরে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত হত্যা, হামলা ও দায় স্বীকারের ইস্যুগুলোও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। পাশাপাশি এসবের গোড়া উদ্ঘাটনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে। আইএসের অস্তিত্ব নেইএটি এক দিকে যেমন বিশ্বাসযোগ্য, অন্যদিকে আইএস যে আদর্শে বিশ্বাস করে এমন জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশে আছে। কাজেই আইএসের প্রত্যক্ষ অস্তিত্ব নেই যেমন সত্য, তেমনি আইএসের পরোক্ষ অস্তিত্ব আছে এমন তথ্যকেও সত্য বলা যায়। জঙ্গি নির্মূলে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থাকার পরও তাদের কেন নির্মূল করা যাচ্ছে না সেটি এখন সবার প্রশ্ন।
পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলা ও আশুলিয়ায় তল¬াশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য (২৭ নভেম্বর, সম্পাদকীয়, কালের কণ্ঠ)। কাজেই বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে নামাজরত মুসলি¬দের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার বিষয়টিকে পরিষ্কার হিসেবেই ধরা যায়।
বাংলাদেশ নামক ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থার রাষ্ট্রে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তার ঘটানোর প্রচেষ্টা বহুদিন থেকেই। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশে জেএমবি নামক জঙ্গি সংগঠনের আÍপ্রকাশ ঘটে। বাংলা ভাই নামক জঙ্গিরা প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা শুরু করে। এর পরই হরকাতুল জিহাদসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন মাঠে নামে। ১৭ ও ২১ আগস্টের মতো ভয়াবহ অবস্থারও সৃষ্টি হয় জঙ্গিদের দ্বারা। বর্তমানে জঙ্গিবাদের তৎপরতায় এখন এসেছে ভিন্নতা। লেখক, বুদ্ধিজীবী ও বিদেশি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘৃণ্য পদক্ষেপ অহরহ গ্রহণ করছে তারা। বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো বিদেশি নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করা হয়নি। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তাঁর ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। এর পর থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পরও নাগরিকদের মনে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। কারণ জঙ্গিরা তাদের হামলার কৌশল পরিবর্তন করছে প্রতিনিয়ত।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের ঘটনায় দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বেড়েছে। এমনকি মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্যের ঘটনায় জঙ্গিবাদ বিস্তারের আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাংলাদেশকে যেকোনোভাবে অনিরাপদ প্রমাণ করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি কুচক্রী মহল। বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছেএ ধরনের একটি পরিবেশকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার প্রয়াসই হয়তো ওই কুচক্রী মহলের লক্ষ্য। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধ বন্ধে এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের ধরতে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে নিরাপত্তার শঙ্কা এখন সবার মনে।
অনেক দিন থেকেই দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা এবং দোষারোপের সংস্কৃতি বিদ্যমান। প্রতিনিয়ত যেকোনো ঘটনার ইস্যুতেই এক দল আরেক দলকে দোষারোপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যতম নিরাপত্তাবেষ্টনী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় নিরাপত্তার শঙ্কা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে প্রতিনিয়ত সরকারকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়ে থাকে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তাতে যদি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নও হয় তাতে তাদের মাথাব্যথা থাকে না। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতাই অধিকভাবে লক্ষ করা যায়। ফলে জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে বিরোধী দলের ভ‚মিকা আশা করা অলীক কল্পনামাত্র। বিরোধী দলগুলোর নীরবতা জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়।
কাজেই হানাহানি ও বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলের এখনই সময়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দ্ব›দ্ব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ ভুলে সবাইকে দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এখনই আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারলে এর বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শুধু সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা কোনোভাইে সম্ভব নয়। মূলত জঙ্গি নির্মূলে সামাজিকভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনসচেতনতার ভিত্তিতে গণমানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে গণপ্রতিরোধ গড়ার কোনো বিকল্প নেই। ড. সুলতান মাহমুদ রানা লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২২

েমাঃ মিন বলেছেন: দেশে যতটা না জঙ্গী আছে , তার থেকে বেশি আছে সরকারের ফায়দা লাভের প্রচারনায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.