নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। মার্কসবাদীরা বলেন, স্ট্যাটাসকো মেইনটেইন করা কোনো কাজের কথা নয়, হয় এ পক্ষ না হয় ও পক্ষ অবলম্বন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে সেই দৃষ্টিতে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধ করতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সরকারি প্রশাসন পুলিশ-বিজিবি র্যাগবকে ফাঁকি দিয়ে জঙ্গিরা অতর্কিতে মানুষ হত্যা করে অদৃশ্য হতে সক্ষম হচ্ছে। প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়া যত সহজ, জনগণকে ফাঁকি দেয়া অত সহজ নয়।
যদি আমরা কেবলই পুলিশ-বিজিবির ওপর নির্ভর করে থাকি তাহলে মায়ের কোল শূন্য হওয়া বন্ধ হবে না। ধীরে ধীরে জঙ্গিবাদের নৃশংস, রক্তাক্ত বিস্তার ঘটবে। এ পর্যন্ত যত বুদ্ধিজীবীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর একজন বুদ্ধিজীবীও তাদের টার্গেটের বাইরে নেই। পত্রিকায় দেখলাম, আনসার আল ইসলামের নামে এবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সোমবার সকালে ডাকে পাঠানো চিঠিটি রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ‘শানশাইন’ কার্যালয়ে পৌঁছেছে।
চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও রাজশাহীর সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ মিজানুদ্দিন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, শানশাইনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইউনুস আলী, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ইকবাল বাহার, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হায়াত ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার হুমকি পেয়েছেন। (যায়যায়দিন- ১/১২/১৫)
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছি। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় এদের প্রত্যেককে হত্যা করা হবে।’
আরেকটি খবরও আমাদের চমকে দিয়েছে, ‘সোমবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এতদিন তাদের অস্তিত্বের কথা জানা গিয়েছে মূল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। এবার কট্টরপন্থী সংগঠন হিযবুত তাহরীর ভারতেও শাখা খুলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির আশঙ্কা, হিযবুত হাজির বলেই ভারতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রভাব আরো বাড়তে পারে।’
খুব একটা হালকা অভিজ্ঞতা থেকে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জনগণের সহযোগিতা কামনা করেননি। জঙ্গিদের শক্তি ক্রমবর্ধমান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জঙ্গিরা বিচ্ছিন্ন কোনো শক্তি নয়। আন্তজার্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সম্পর্ক আছে বলেই ধরে নিতে হবে। জঙ্গিরা বরাবর অর্থ বলে বলীয়ান। ওদের দেশি-বিদেশি মিত্র আছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মতো বড় শক্তি ওদের অনুক‚লে। আগাগোড়া পাকিস্তানের আইএসআই বাংলাদেশের জঙ্গিদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশ জঙ্গিদের অর্থায়ন করে থাকে। এ দেশের জঙ্গিরা বিএনপি-জামায়াতের সহানুভূতির দ্বারা সিঞ্চিত। সরকারকে বিপদগ্রস্ত করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারের মৌলবাদী প্রতিপক্ষ যথেষ্ট তৎপর। আপাতত ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কৌশলে জঙ্গিরা হত্যা চালালেও সামনে তারা আইএসআই ও বোকো হারামের মতো ঝাঁক ঝাঁক হত্যা করবে বলে জঙ্গিদের পরিকল্পনা আছে।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার মতো বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি অধ্যুষিত সাম্রাজ্যবাদ আক্রান্ত দেশে পরিণত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধ আমরা বিসর্জন দিয়েছিলাম, যে আদর্শ আমরা কবর দিয়েছিলাম, সেই অনাধুনিক বর্ণবাদী, মৌলবাদী দৃষ্টি থেকে জঙ্গিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১-এর অপশক্তি এই যুদ্ধে একটি পক্ষ আর স্বাধীনতার পক্ষের সরকার আর একটি পক্ষ।
এই যুদ্ধে শুধুই পুলিশ-বিজিবি-র্যা ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব বাদ দিয়ে কেবলই জঙ্গিদের পেছনে ছুটে বেড়ালে জঙ্গি দমনের কাজটা যুৎসই হবে না। তাই জঙ্গি দমনের বেলায় অবশ্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় নামতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, গণজাগরণের মঞ্চ বাংলাদেশের জনগণকে যদি জাগিয়ে না তুলত তাহলে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হতো না। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই মূল্যবোধকে জঙ্গিরা জখম করে যাচ্ছে অনায়াসে, সেই মূল্যবোধকে রক্ষার দায়িত্ব জনগণেরই। এটা শুধু সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়।
বারবারই আমাদের ১৯৭১ সালের উদাহরণ টানতে হয়। তখন সমগ্র জনগণকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল, কয়জনের হাতে অস্ত্র ছিল? অস্ত্র ছিল পাক হানাদারের হাতে। কিন্তু ওদের সামনে কোনো মূল্যবোধ ছিল না। ওরা ছিল আক্রমণকারী, দখলকার। তাই বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়েছিল, মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করেছিল। আজকের জঙ্গিবাদের প্রেক্ষাপটে তেমনই জাতীয় ঐক্যের দরকার জঙ্গিদের রুখে দেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে আলেম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। প্রকৃত ধর্মপ্রাণ আলেম সমাজ বলতে পারেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্দোষ মানুষ হত্যা ইসলামের নির্দেশ হতে পারে না। মসজিদে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ ইসলাম দিতে পারে, এমন কথা কল্পনাও করা যায় না। অস্ত্রবাজি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আল্লাহর রাসুলের সহিষ্ণুতার অভাব ছিল না, এ কথা অমুসলমান ঐতিহাসিকরাও স্বীকার করেছেন।
তিনি সত্য বলে যা জেনেছিলেন, তাকেই প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই করেছিলেন। ভিন্নধর্মীদের বিনাশ করার কোনো অভিযান তিনি পরিচালনা করেননি। এটা একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত যে, আল্লাহর রাসুলের আপন চাচা আবু তালেব শেষ মুহূর্তেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। মহানবী কী তার চাচাকে ঘৃণা করতেন? তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন?
আল্লাহর রাসুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক দৃষ্টিতে। ইসলামের ইতিহাসে অগণতান্ত্রিক সুবিধাবাদ এবং ধর্ম ব্যবসার ফেরেববাজি প্রবেশ করতে থাকে হজরত মুয়াবিয়ার আমল থেকে। মাওলানা মওদুদী, গোলাম আযম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এজিদের সার্থক অনুসারী বললে কম বলা হয়। আর পাকিস্তানি শাসকরা? ইসলামের বিন্দুমাত্র নির্দেশ কি তারা মানতেন? ব্রিটিশ সাংবাদিক ম্যাসকারেন হাস তার ‘দি রেপ অব বাংলাদেশ’ বইতে বলেছেন রোজার দিনেও তিনি ইসলামাবাদের শাসকদের সঙ্গে একটেবিলে বসে দিনে-দুপুরে মদ খেয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন রোজাদার অবস্থায় নির্বাচনী প্রচার চালাতে।
অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার যে, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্না ছিলেন শিয়া স¤প্রদায়ের লোক। তার পূর্বপুরুষরা তাও ছিল না, ছিল অগ্নি উপাসক। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আগা খান ছিলেন শিয়া স¤প্রদায়ের। যে স¤প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশের জঙ্গিরা। এখন কি শিয়া ও সুন্নিদের জন্য আলাদা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে হবে? কিন্তু বাংলাদেশে সামান্য কয়েকজন শিয়া আছে, আরো অল্পসংখ্যক বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আছে। ওরা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। ওদের হত্যা করা এবং হত্যার হুমকি দেয়ার পেছনে সেক্যুলার রাজনীতি ধ্বংস করার মতলব আছে, মওদুদীবাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে এ দেশে ডেকে আনার দৃশ্যপট তৈরি করছে জঙ্গিরা। এদের অপরাজনীতি প্রতিহত করার জন্য জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। কবি বলেছেন, নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
মাহমুদুল বাসার : কলাম লেখক, গবেষক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.