নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫১

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছিল আজ থেকে ৪৪ বছর আগে। সেদিন আমাদের যাদের বয়স ছিল ৪০ বা তার নিচে তাদের চোখে-মুখে ছিল কতই না স্বপ্নের বিস্তৃতি, কতই না আশা-আকাঙ্ক্ষা-সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের উজ্জ্বল হাতছানি। সেই আশাবাদে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন কোটি কোটি দেশবাসী লাখো লাখো তরুণ-তরুণী।
এই তরুণরাই লড়াই করেছে ১৯৪৮ সালের মার্চ থেকে। মাতৃভাষার অবমাননা প্রতিরোধ এবং তাকে যথার্থ সম্মানজনক মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করার দাবিতে প্রাণপণ লড়াই করেছে তারা_ পাকিস্তানের বুকে সেই প্রথম বাঙালি জাতিসত্তার, জাতিচেতনার নব উন্মেষ ঘটিয়েছে তারা ধর্মের নামে সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষাক্ত তত্ত্বকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। সেই যে শুরু লড়াইয়ের সেই লড়াই এত মাসেও বিস্তার লাভ করতে থাকল নগর থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এভাবেই সে আগুন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে শহরে-নগরে-বন্দরে এমন কি দেশ থেকে দেশান্তরেও।
দাবি শুধু মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সীমিত থাকেনি। তা সফল করেছে যেমন মধ্যবিত্তকে, তেমন শ্রমিক ও কৃষককেও, বিত্তহীন বেকার যুবক-যুবতীদেরও। দাবি নামায়, ক্রমান্বয়ে যুক্ত হয় দেশপ্রেমিক উৎপাদনকামী ধনিকশ্রেণির দাবিও। অর্থাৎ বাংলায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন। তার অনুকূল যাবতীয় পরিবেশ সৃষ্টি প্রভৃতি। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যে ভূমিহীনদের জন্য জমি বেকার যুবক-যুবতীর জন্য কাজের ব্যবস্থা, সবার জন্য বাসস্থান, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, বিনাব্যয়ে ও স্বল্পব্যয়ে উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা, দারিদ্র্য নিরসন, নারী-পুরুষের সব বৈষম্যের অবসান, সাম্প্রদায়িকতা ও সর্বপ্রকার বিভেদ বৈষম্য মুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ, সবার জন্য আইনের সমপ্রয়োগ ও তা ব্যবহারের সুযোগসহ জনজীবনকে অভাব অনটনমুক্ত, অশিক্ষা-কুশিক্ষামুক্ত, দারিদ্র্য বেকারত্বমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন উদ্দীপ্ত ও বিভোর যুব-সমাজ অক্লান্তভাবে কর্মবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে কি অসম সাহস নিয়েই না ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন। গড়ে তুলেছেন একটি প্রাণবন্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য।
সে ঐক্যে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি শত চেষ্টা অপচেষ্টা সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ভিত্তিও রচনা করেছিল বাঙালি জাতির ওই লৌহদৃঢ় ঐক্য। সুগভীর জাতীয় ঐক্য।
আজ সেই বিজয়ী বাংলাদেশ তার পথচলার ৪৪টি বছর অতিক্রম করে ৪৫ বছরে পদার্পণ করেছে। আর পাঁচটি বছর পরেই বাংলাদেশের অর্ধশতবার্ষিকী গোল্ডেন জুবিলিও উদযাপিত হবে। তাই এই সময়কে সামনে রেখে বাঙালির পথচলার সাম্প্রদায়িকতা আমাদের নিজ নিজ চেতনায় ঐতিহাসিকভাবে পুনঃস্থাপিত করা, তার বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করা এবং তার ভিত্তিতে আগামী দিনগুলোতে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করা নিতান্ত অপরিহার্য করণীয় হিসেবে ধরে নেয়া প্রয়োজন। বছর যাবে বছর আসবে ঠিকই কিন্তু ওই সময়ে দেশ কতটুকু এগুলো কতটুকু পেছাল_ আগামী দিনগুলোতে কিভাবে পথ চললে দেশটাকে অধিকতর অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নেয়া যাবে_ লাখো শহীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা যাবে_ জনগণের অভাব অভিযোগ দাবি-দাওয়া মিটিয়ে একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করা যাবে_ সেটাই হওয়া উচিত ভাবনার বিষয়বস্তু।
একটি সশস্ত্র বিপ্লবকে সফল করে তোলা নিশ্চিতভাবেই একটি কঠিন কাজ কিন্তু সেই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর সদ্য স্বাধীন দেশকে দেশের জনগণকে অগ্রসর করে নেয়া_ জনগণের ক্রমবর্ধমান আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা ততোধিক কঠিন, দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষ কাজ এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। তার উপরে সেই দেশে যদি রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকে তবে তো কথাই নেই। একদিকে যেমন এগুলির অর্থাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা না থাকা প্রয়োজন_ অন্যদিকে একটি অত্যন্ত সংগঠিত নীতিনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক, সৎ ও জনগণের আস্থাশীল আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক, সরকারও সদ্য-স্বাধীন ওই দেশটাকে গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য কয়েকটি শর্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে এবং সব কয়টারই অভাব রয়েছে ফলে দেশটিকে ঠিকমতো গড়ে তোলাও যাচ্ছে না_ যায়নি এই দীর্ঘ সাড়ে চারটি দশকের মধ্যেও। কিন্তু পেরেছে চীন, ভিয়েতনাম এবং অপরাজয়ের আরও কয়েকটি রাষ্ট্র।
বাংলাদেশে এই চুয়ালি্লশটি বছরে যে কয়টি ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যত চোখে পড়ে তার মধ্যে নারীশিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহের তুলনামূলক অগ্রগতি, হাসপাতালের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ ও গার্মেন্ট শিল্প, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির সংখ্যাবৃদ্ধি, শিক্ষিতের হারবৃদ্ধি প্রভৃতি। মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে, তবে সে হারে নয়_ যে হারে সরকার দাবি করে।
ওই বৃদ্ধিটা গড় হিসেবে_ এবং তার শতকরা ৯০ ভাগই ধনী ব্যক্তিদের পকেটে যায়। শতকরা ১০ জনের বা তারও কম সংখ্যক মানুষের মধ্যেই তা সীমিত। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মাথা পিছু প্রকৃত আয়ের সাথে সরকারি ওই তথ্যের আদৌ কোনো সামঞ্জস্য নেই। কিন্তু এর পরেও কেন আজও বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই একটি দরিদ্র দেশ অনুন্নত দেশ তা আমাদের আজকের দিনে বিজয়ের এই মাসটিতে গভীরভাবে ভাবতে হবে দলীয় সংকীর্ণতাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে। কারণ দেশটি সবার ১৬ কোটি মানুষের দলমত নির্বিশেষে।
একটি দেশে অর্থনীতির উন্নতি অগ্রগতি নির্ভর করে_ তা কতটা উৎপাদনশীল তার ওপর। আর এই উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে মূলত দুটি সেক্টরের উন্নয়নের ওপর কৃষি ও শিল্প।
সঙ্গে-ই নেই কৃষিক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। খাদ্যে, বিশেষ করে ধান উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কখনো কখনো তা উদ্বৃত্তও বটে রপ্তানিও হয় বিদেশে রপ্তানি কিছু পরিমাণে_ তা যত কমই হোক না কেন। এতে আনন্দিত না হয়ে তো উপায় নেই। কিন্তু কৃষি মানে তো শুধু ধান উৎপাদনই নয়। তার সাথে পাট, ফলমূল শাসকসবজি, তরি-তরকারি, মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতিও তো কৃষির অন্তর্গত। ডাল, তেলই বা নয় কেন? তাই সামগ্রিক বিষয়টা ভাবলে মনে হয়_ কৃষিতেও এখনো বহু পণ্য বাকি। পাঠ আমাদের এক অমূল্য সম্পদ_ কিন্তু কৃষক ওই যে মার খেয়েছে ৫০-৬০-এর দশকে আজও সে বিষয়টা তারা ভোলেনি। ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি আজও নিশ্চিত করা গেল না। যেন ক্যান্সারের চেয়েও কঠিন এ রোগটি। এক্ষেত্রে অবশ্যই কঠোর হতে হবে সরকারকে সব মধ্যস্বত্বভোগীকে উচ্ছেদ করে কৃষকের হাতে ন্যায্য মূল্য পেঁৗছানোর ব্যবস্থা করতেই হবে। পাট উৎপাদন বৃদ্ধি ও পাটের বহুমুখী পণ্য উৎপাদন উপযোগী শিল্পস্থাপন অপরিহার্য।
এছাড়াও কৃষি জমির যে মারাত্মক স্বল্পতায় বাংলাদেশ ভুগছে তা মোকাবেলা করার লক্ষ্যে একদিকে কৃষিজমি যাতে কিছুতেই অন্য কাজে ব্যবহৃত না হয়, তার ব্যবস্থা সাধ্যমতো নিশ্চিতকরণ এবং দ্বিতীয়ত, লাভজনক পণ্যাদি উৎপাদনে বা তার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং গবেষণার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা জরুরি। অলাভজনক পণ্য উৎপাদনের দিকে তেমন নজর না দেয়াই সঙ্গত।
গরু, মহিষ, ছাগল, মুরগি, মাছ_ এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সর্বজনস্বীকৃত হলেও তার উপযুক্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থা আজও দৃশ্যমান নয়। গরুর যে ভয়াবহ স্বল্পতা তা বহুলাংশ এড়াতে পারা সম্ভব যদি সপ্তাহে দুদিন গরু-খাশির মাংস অর্থাৎ ওই দুটি পশু নিধন কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করা যায়, ব্যাপকভাবে গরু-ছাগল পোষার জন্য গরিব কৃষকদের বিনামূল্যে ঋণ প্রদান, উন্নত জাতের বাছুর, ছাগল বিদেশ থেকে আমদানি ও দেশেও প্রতিটি উপজেলায় কার্যকর, প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা, পশু চিকিৎসার সর্বাধুনিক ব্যবস্থা এবং মাছ উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই সবের মিলিত উন্নয়নকেই কৃষির উন্নয়ন বলে অভিহিত করা যাবে।
আবার কৃষিজমির অপ্রতুলতা হ্রাসের তো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা_ তার বহুমুখী প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বাড়তি জমির প্রয়োজনও অবশ্যম্ভাবী কিন্তু তা আসবে কোথা থেকে? এর জন্য উপযুক্ত হাউজিং, হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্সিং এবং গ্রাম-শহর নির্বিশেষে বহুতল দালান নির্মাণ সম্ভবত অপরিহার্য হয়ে পড়ছে_ যদিও তা এক দুঃসাধ্য ব্যাপারও বটে। কিন্তু যে পরিমাণ আবাসস্থলের প্রয়োজন তা কাঁচা একতলা বা দোতলা ঘর-বাড়ি বা দুই-তিনতলা দালান বা ফ্ল্যাট বানিয়ে মেটানো যে অসম্ভব পরিকল্পনা কমিশন গোটা বিষয়টা ভেবে অর্থমন্ত্রক এবং ব্যাংক মালিক ও দাতা সংস্থাগুলো বিষয়টি সম্যক বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু দীর্ঘ মাঝারি ও স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প আমার মাথায় ঢুকছে না। তবে সমস্যাটি প্রকট সমাধানও জটিল এবং দুরূহও বটে তবে তা অপরিহার্যও।
এছাড়া তো সড়ক ও রেল যোগাযোগ, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে যেসব বাড়াতে হবে তেমনি সেগুলোর ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কার্যকর পন্থা দ্রুতই বের এবং কার্যকর করা প্রয়োজন। যেখানে ২০,০০০ ছেলেমেয়ে পড়ে সেখানে ক্রমান্বয়ে ৩০-৪০ হাজারের ব্যবস্থাও সম্ভবত করা প্রয়োজন। নিচের দিকেও একই ধরনের সমান বৃদ্ধির ফল ভাবতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি হলেও আরও একটি ব্যাপারও ভাবতে হবে যা আজ যেন সবাই ভুলে যেতে বসেছি।
আন্তর্জাতিক আদালতে দুই দফায়, আমরা জিতলাম_ বিস্তর আনন্দোল্লাসে মাতলাম বিশাল সংবর্ধনা সভারও আয়োজন করলাম বটে কিন্তু তার ফলাফল জনগণের কাছে পেঁৗছানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা কাউকে তো আদৌ ভাবতে দেখাচ্ছে না। দুই দুটি বাংলাদেশের সমান বা তারও বেশি এলাকা পেলাম বঙ্গোপসাগরে যার অভ্যন্তরে গ্যাস, তেল ও নানা জাতীয় খনিজ সম্পদের বিপুল অস্তিত্বের খবরও শুনেছি। সেগুলো উত্তোলন দুরূহ বটে কিন্তু তার উদ্যোগ তো নিতে হবে_ অসাধ্য তো নয়। দ্বিতীয়ত, বঙ্গোপসাগরের যে বিশাল অংশ শুকিয়ে গেছে_ তাকে নানা প্রক্রিয়ায় মানুষের বসবাসযোগ্য করা, কৃষির উপযোগী করে তোলা, পশুপালন ও বৃক্ষরোপণ উপযোগী করে তুলতে পারলে বাংলাদেশের ও তার জনগণের চেহারাই তো পাল্টে ফেলা যায় এ বিষয়টি পৃথকভাবে স্থাপন করে বা টাসফোর্স গঠন করে বা গবেষকদের সেলগঠন করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা কার্যকর করার দিকটায় গুরুত্ব আরোপ করতে সরকারের অন্যতম জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
কৃষি নিয়ে অনেক কথা বললাম। আরও বহু কথা বলা যেতে পারত কিন্তু স্থানভাবে বিরত থাকতে হলো। এবারে আসি শিল্প প্রসঙ্গে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এ সব ব্যক্তিগত মালিকানার শিল্প জাতীয়করণ করেন। শিল্প-কারখানাই দেশে ছিল অত্যন্ত কম। পাকিস্তানি আমলে দেশি-বিদেশি বা সরকারি মালিকানায় যা শিল্পস্থাপন করা হয়ে থাকক_ তা শতকরা ৯০ ভাগই করা হয়েছিল পশ্চিম পকিস্তানে পূর্ব বাংলায় নয়। আবার বাঙালি পুঁজিপতিদেরও শিল্প স্থাপনে নানা আইনের মারপ্যাঁচে বাধাদান করা হয়েছে। এগুলোকে উপেক্ষা করে যা দু'চারটা শিল্প ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছিল তাও হয়ে গেল সব সরকারি কারখানা। শ্রমিকরা রাতারাতি হয়ে গেল শ্রমিক লীগ। শ্রমিক লীগের নেতৃত্ব যেমন ছিল শিল্প স্বার্থবিরোধী, তেমনই জাতীয় স্বার্থবিরোধী। কাজে ফাঁকি ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে ক্রমাগত যোগসাজসের পাল্লায় পড়ে যায় শিল্প-কারখানাগুলো। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মালিকানায় যেসব শিল্প গড়ে উঠেছিল_ সে মালিকরা তো বরাবরই কলকাতাবাসী। ফলে পাকিস্তান সরকার তাদের প্রতিষ্ঠিত শিল্পগুলোতে পরিত্যক্ত সম্পত্তি এবং অতঃপর ঋণ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করায় সেগুলোর হাল হয়ে পড়েছিল আরও খারাপ। ফলে শ্রমিকরা হয়ে পড়েন বেকার উৎপাদন বন্ধ_ এবং কল-কারখানা সবই যন্ত্রপাতি দালান-কোঠাসহ সব চুরি, বিক্রি হরিলুট হয়ে যায়। ব্যাংক ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। নতুন করে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলো না তেমন একটা। সরকারের শিল্পনীতি পাল্টে গেল বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর_ জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর। সব ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ার নীতি। কিছু কিছু তা করা গেলেও বেশির ভাগই বিক্রি হয়নি। আজও না। তখন থেকে আজ পর্যন্ত হওয়ার মধ্যে গার্মেন্ট এবং ঔষধ শিল্প যথেষ্ট গড়ে উঠেছে। এই দুই শিল্পেই বিস্তর বিদেশি মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে কিন্তু কি টেক্সটাইল, পাট, চিনি বা অন্যান্য শিল্প কোথাও কোনো ভালো খবর নেই। দেশীয় উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক মারাত্মক রোগে পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিস্থিতিও তদ্রূপ। ফলে দেশের শিল্প উৎপাদন অত্যন্ত সীমিত এবং যুব বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান।
এ পরিস্থিতিতে দেশকে ব্যাপকভাবে শিল্পায়িত করতে হলে দেশি-বিদেশি বিনয়োগক বৃদ্ধি এবং তার জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করার কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতির কথা আগেই বলেছি এবং মান আদৌ বাড়েনি বরং তা দুঃখজনকভাবে কমেছে। অন্যপক্ষে ত্রিমুখী শিক্ষা যেমন বাংলার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজির মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ও আরবির মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করেছে মারাত্মক বৈষম্যেরও। ইংরেজি শিক্ষায় যারা শিক্ষিত হচ্ছে তারা চাকরি-বাকরি প্রভৃতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে_ অতঃপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আবার ধনীর সন্তানেরাই ভালো ফল করছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের একটা বড় অংশ বেকার। তাই এই বৈষম্য দূর করতে শিগগিরই একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রচলন অপরিহার্য। দেশে ছেলেমেয়েরা ক্রীড়া ক্ষেত্রে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। প্রতি জেলায় নানা জাতীয় ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলে উৎসাহী তরুণ-তরুণীদের সে ক্রীড়া শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুললে দেশের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে সমুজ্জ্বল হবে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা ধর্ম নিরপেক্ষতাকে শিক্ষার সব পর্যায়ে, বাধ্যতামূলক করতে হবে। এভাবে আমরা দেশকে নানা দিক থেকে গড়ে তুলে আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে পারি। এই চেতনা সবার মাঝে জাগ্রত হোক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.