![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করার জন্য সবার প্রতি গত ২৯ জানুয়ারি তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি হোক, জাতীয় পার্টি হোক, সবার প্রতি আহ্বান, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাবেন না।' অন্যদিকে একই দিন পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে ১৪ দলের পক্ষে পরীক্ষাকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ ছাড়া আগামী কয়েকটি দিন নেতা-কর্মীদের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে মানবতার খাতিরেও বিএনপি-জামায়াত মন্ত্রীদের আহ্বানে সাড়া দেবে বলে মনে হয় না। প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর কথা ভাবার অবকাশ আছে বলে মনে হয় কি (?) যেখানে তারা ১৬ কোটি মানুষের দুর্দশাকে উপেক্ষা করে চলেছে দিনের পর দিন। অবশ্য সহিংসতা অবসানে আমরা আশাবাদী। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ জানুয়ারি দ্বিধা না করে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পরদিন অর্থাৎ বিএনপির লাগাতার অবরোধের ২৪তম দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নাশকতায় জড়িতদের 'গণতন্ত্রের শত্রু', 'মানবতার শত্রু' ও 'সভ্যতার শত্রু' আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে 'কঠোর' ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর এ কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীকেও অনুরোধ করেছেন। তবে এই সব কিছুর মাঝে ২৯ তারিখের সংবাদ অনুসারে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি অবরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমাদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। বিএনপির সেই সদিচ্ছা আদৌ আছে কি?
রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে স্পেস বা স্থান না দেওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগে অপপ্রচার এবং ২০ দলীয় জোট কর্তৃক লাগাতার নাশকতা চলছে সারা দেশে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে একটানা হরতালও দিয়েছে তারা। ২০ দলীয় জোটের মূল অভিযোগ হলো, সরকার তাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুরো এক বছর ২০ দলীয় জোট সভা-সমাবেশসহ সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবাধে পরিচালনা করেছে। কোনো কর্মসূচিতেই সরকার বাধার সৃষ্টি করেনি। ২০ দলীয় জোটের বড় দল হিসেবে বছরজুড়ে শুধু বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এককভাবে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি (গড়ে প্রতি মাসে ৯টি) পালন করেছে। জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দলও প্রচুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায়। রাজপথ ও মাঠেঘাটে এসব কর্মসূচির পাশাপাশি ছিল প্রায় প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলন, যা গণমাধ্যমের সহায়তায় সরাসরি সম্প্রচারসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই সরকার কর্তৃক কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। শুধু জনগণের জানমালের তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় অতি সম্প্রতি দুটি ক্ষেত্রে সরকার আইনগতভাবে সব দলের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে মিথ্যা অজুহাত তুলে বিএনপি-জামায়াতের দেশজুড়ে নাশকতা বা জঙ্গি স্টাইল কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর জনগণের বিরুদ্ধে নিজ ও দলীয় স্বার্থে পরিচালিত খালেদা জিয়ার এহেন নাশকতা ও জঙ্গি স্টাইলের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের সমর্থন প্রতিফলিত হয়নি। তাই জনজীবনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ইত্যাদি নির্মমতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির তরফ থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, 'বর্তমান সরকারের আমলে আমরা মিছিল করতে পারি না, মিটিং করতে পারি না। এর নাম কি গণতন্ত্র?' এটা ছিল মিথ্যা অভিযোগ। বিএনপি-জামায়াত রোডমার্চ করেছে, মিছিল-মিটিং তো নিত্যদিনের কাজ ছিল তাদের। গত এক বছরে (২০১৪) খালেদা জিয়া ঢাকাসহ সারা দেশে ১২টি মহাসমাবেশ এবং পেশাজীবী ও সহযোগী সংগঠনের চারটি বৃহৎ সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কঠোর সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরাসরি সম্প্রচার করেছে এবং দেশবাসী তা অবলোকন করেছে। গত এক বছরে বিএনপি ৪১টি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচিতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হলেও কোথাও কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি। বর্ণিত ৪১টি কর্মসূচির বাইরে বিএনপিদলীয় নেতারা নামসর্বস্ব বিভিন্ন পার্টির ব্যানারে অনুষ্ঠিত সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে প্রতিদিনই বক্তব্য দিয়েছেন। এসব কর্মসূচিতেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়নি। গত এক বছরে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো প্রায় ৪০টি বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ করেছে। এসব সভা-সমাবেশের বেশ কয়েকটিতে খালেদা জিয়া উপস্থিত থেকেছেন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসব কর্মসূচির বেশির ভাগই সরাসরি সম্প্রচার করেছে, যা সারা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সহযোগী সংগঠনের এসব কর্মসূচির কোনোটিতেই সরকার বাধার সৃষ্টি করেনি।
রাজনৈতিক সমস্যার অজুহাতে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হতে পারে না। যেহেতু আমরা শিক্ষামুখী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি; আর আধুনিক বিশ্বে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ ছাড়া উন্নয়নের কোনো বিকল্প রাস্তা নেই, এ জন্য এর একমাত্র সমাধান 'বেশি উন্নয়ন কম রাজনীতি' তত্ত্বের প্রয়োগ। 'কম রাজনীতি' বলতে অবরোধ-হরতাল নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা। সম্প্রতি ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের প্রতিদিনকার ক্ষতির হিসাব দিয়েছেন। দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় কয়েক দিন ধরে রিয়েল এস্টেট বা আবাসিক খাতসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ডের ক্ষতির সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশিষ্টজনরা সংকট নিরসনে পরামর্শও দিচ্ছেন। ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির বিকল্প খোঁজার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে হরতাল-অবরোধ বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে বলে আইনমন্ত্রী তাঁর একাধিক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এবারের এসএসসিতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, মাদ্রাসা ও দাখিলের পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি ভোকেশনালে পরীক্ষার্থী এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন। সারা দেশে মোট তিন হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১০ মার্চ। এই বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী ছাড়াও রয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস ও পরীক্ষা। আইন করে অবরোধ-হরতাল বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে পারবে এবং সব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে মনে রাখা দরকার, অবরোধ-হরতালে দেশব্যাপী অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সে জন্য কেবল রাস্তা কিংবা পরীক্ষাকেন্দ্র নয়, আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা বিধান করাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব। অলিগলির সামনে পুলিশ কিংবা র্যাকব সদস্যরা বসে থাকলে হবে না, বরং প্রতিটি এলাকা টহল দিয়ে অপরাধী ধরতে হবে। চিরুনি অভিযান পরিচালিত না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নন জঙ্গিবাদী সহিংসতা থেকে। তার উদাহরণ ২৯ জানুয়ারি ঢাকা নিউ মার্কেটের ২ নম্বর গেটের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে সাতজন আহত হওয়ার ঘটনা। উপরন্তু অবরোধ-হরতালে অব্যবস্থাপনা চরমে উঠেছে। আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকেও মনোযোগী হয়ে অপরাধীদের ধরার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বার্থে এর সবই করতে হবে বর্তমান সরকারকে।
লেখক: মিল্টন বিশ্বাস
©somewhere in net ltd.