![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি বিএনপি পৌনঃপুনিকভাবে রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে চলেছে। কথাটি আমার নয়। The Economist-এর কলামিস্ট টম ফেলিক্স জোয়েন্স এবং অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট কুকসন সম্প্রতি East Asia Forum-এর একটি বিশেষ প্রতিবেদন সিরিজের একাংশে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিরোধী রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এ রকম মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলেন: “বিএনপি একটি বিশৃঙ্খল দল। ২০০৬ সাল থেকে দলটি বিরোধী অবস্থানে আছে এবং দীর্ঘদিন হলো পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। দলটির নেতা দুর্বল এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। দলটির বেহাল এবং বিভক্ত নেতৃত্ব ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে।” বিএনপির ভুল সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্ত হিসেবে ফেলিক্স এবং কুকসন ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ না করার কথা বলেছেন। ফেলিক্স-কুকসনের বিএনপি তত্ত্ব যদি সত্য ধরে নেয়া যায়, তবে দীর্ঘ ভ্রান্তিক্রমের এ পর্যায়ে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বিষয়টি সংযুক্তি করা যেতে পারে। রাজনীতিতে হাইবারনেশনে থাকা বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল হঠাত্ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত্রে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের কমিটিকে বাড়িয়ে ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। এই ঢাউস কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে স্থান পেয়েছে ৬৯ জন, যুগ্ম-সম্পাদক পদে ৬৪ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬৭ জন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১২৪ জন এবং সাধারণ সদস্য ২৪২ জন। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে তো বটেই, পদসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বিশেষত্ব নির্ধারণের বিষয়টিও রীতিমতো মাইন্ড বগলিং। কমিটির আবশ্যিক সাংগঠনিক প্রয়োজনে এ ধরনের পদবিন্যাস এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ বোঝাইয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য ঠাহর করতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পুরো ব্যাপারটি এমনই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে যে, পদবঞ্চিতরা তো বটেই (তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কক্ষটি ভস্মীভূত করেছে, বিএনপি-প্রতিষ্ঠাতার ছবি, চেয়ারপার্সনের ছবি, আসবাবপত্র, দলিল দস্তাবেজ- সব পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে), এমনকি কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারাও জানিয়েছেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ার ঘোরতর অনিয়ম করা হয়েছে। নতুন কমিটির অধিকাংশ নেতা অছাত্র, বিবাহিত এবং সন্তানের জনক। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তা হবার কথা নয়। জেসিডি’র গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ: ৬:১-এর (খ) ধারায় সুস্পষ্টভাষায় উল্লেখ আছে: “বাংলাদেশের নাগরিক এবং অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দই কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য/সদস্যা হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।” অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ব্যবসায়ী ও আইনজীবীসহ নানা পেশার মানুষ স্থান পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও জায়গা মিলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর বিভিন্ন পদে সংখ্যাবৃদ্ধির নজির অতীতের সকল রেকর্ডস ম্লান করে দিয়েছে। জেসিডি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ার কথা ছিল। এতে একাধিক সদস্যবিশিষ্ট পদগুলোর মধ্যে— সহসভাপতি ১২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২ জন, সহসাধারণ সম্পাদক ৫ জন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে একাধিক সদস্যবিশিষ্ট পদগুলোতে ব্যাপক সংখ্যাবৃদ্ধি (১২ জন সহ-সভাপতির স্থলে ৬৯ জন, ২ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের স্থলে ৬৪ জন, ৫ জন সহসাধারণ সম্পাদকের স্থলে ১৬৭ জন, ৬ জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের স্থলে ১২৪ জন) সকলের নজর কেড়েছে। কেনো এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে একেবারে নেতৃত্ব প্রদান করা হলো, তা রাজনীতি মহলে আলোচনার ঝড় তুলছে। সে ঝড়ে দমকা হাওয়া দিচ্ছে পদবঞ্চিতদের সহিংস আচরণ। অবশ্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে মতানৈক্য এবং তত্পরবর্তী সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে এই মাত্রাতিরিক্ত পদসংখ্যা সম্প্রসারণ নজীর বিহীন। কমিটিতে নির্ধারিত পদানুসারে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়নি, বরং নির্বাচিত/মনোনীতদের জায়গা দিতে এই সম্প্রসারণ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
অবশ্য বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদলের কিংবা ছাত্রদল সমর্থক বিএনপির এই আকস্মিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং তাতে ব্যাপক সম্প্রসারণ নীতি অনুসরণের স্বপক্ষে নিশ্চয়ই তাদের যুক্তি আছে। ১৯৯৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিয়ে বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকা হয়তো সম্ভবপর নয়। ২০০৬-এর পর থেকে অদ্যাবধি বিএনপি যে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে চলছে, তা সম্ভবত সর্বোচ্চ প্রতিকূলতা পেরুচ্ছে বর্তমান সময়ে। তাই দলের এই ঘোরতর সংকটকালে অঙ্গ-সংগঠন মুমূর্ষু ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে প্রাণসঞ্চার আনয়নের জন্যে অনেককে নেতৃত্বের স্বাদ পাইয়ে দিয়ে প্ররোচিত করার কৌশল যতোই অগণতান্ত্রিক হোক না কেনো, ডকিট্রন অব নেসেসিটির তকমা দিয়ে তাকে জায়েজ করিয়ে নেয়া কঠিন কিছু নয়। তাছাড়া এই সম্প্রসারণ নিয়ে কেউ কোর্টকাচারি করতেও যাবে না। কিন্তু বাদসাধছে বিএনপির নিজেদের ছেলেপেলেরাই। অবশ্য ‘পদবঞ্চিত’দের আপত্তি তাদের বঞ্চনায় নাকি অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দেয়ায়— তা আপাতত স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। অযোগ্যদের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আপত্তি না থাকলে, নেতৃত্ব নির্বাচনে সম্প্রসারণরেখা আরো খানিকটা বাড়িয়ে দলটি একটা আপোষ রফায় পৌঁছুতে পারে। সে যাই হোক, আপাতত যা হয়েছে তা ফেলিক্স-কুকসনের তত্ত্বানুযায়ী “mess”-ছাড়া আর কিছু নয়।
ফেলিক্স-কুকসন বিএনপি রাজনীতির এই বেহাল দশার জন্যে তাদের নিজেদের সৃষ্ট পরস্পর সম্পর্কিত এক ত্রিমাত্রিক সমস্যা-চক্রকে দায়ী করেছেন। প্রথমত, জিয়া তনয় এবং তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তারেক রহমানের লন্ডনস্থ নির্বাসিত জীবন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ‘আনীত ফৌজদারী মামলার ভার। তারেকের এই পরিস্থিতি বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্লোগানকে (জিয়া মোদের অতীত, খালেদা জিয়া মোদের বর্তমান, তারেক জিয়া মোদের ভবিষ্যত্) জটিল করে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি ভারতকে বোঝাবার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যে বাংলাদেশের সেকুলার ঐতিহ্য তাদের শাসনামলেও অক্ষুণ্ন থাকবে। তৃতীয়ত, খালেদা জিয়া এবং তার নীতি নির্ধারকমহল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অস্বীকার করছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী এবং পাকিস্তান ও সৌদি সমর্থিত রক্ষণশীল ওয়াহাবী মতবাদের সমর্থক। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় এবং প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সুবিধাজনক রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরীতে কৌশলগত লড়াই বিএনপি কুলোতে পারছে না। দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা ছাত্রদলে প্রাণস্পন্দন সৃষ্টি করে আবার রাজনীতির মাঠ গরম করতে চাইছে। তা চাইতেই পারে, অহিংস রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে আত্মশক্তি ফিরিয়ে এনে বিএনপি যদি একটি সার্থক বিরোধী রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে ছাত্রদলের এই সম্প্রসারণ নীতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ধরে নেয়া যেতে পারে যে, আসন্ন ১৯ মার্চের কাউন্সিলেও দলে বড়ো রকমের সংস্কার আসবে। তা নিয়ে যথেষ্ট কানাঘুষাও চলছে। সংস্কার আসুক। বিএনপির সংস্কার দলটির অস্তিত্বিক প্রয়োজনে যেমন জরুরি, দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যেও তেমন জরুরি। ভয়ের রাজনীতি, হতাশার রাজনীতি, বিভ্রান্তির রাজনীতি এবং সহিংসতার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে যদি বিএনপির রাজনৈতিক নবজন্ম ঘটে, নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি প্রাণচাঞ্চল্য এবং নবজাগরণ ঘটে তাহলে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রুগ্ন, ম্রিয়মাণ বিরোধী রাজনীতিতেও খানিকটা প্রাণের ছোঁয়া লাগবে। বস্তুত, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশের জন্যে, সরকারি কর্মকাণ্ডের গঠনমূলক সমালোচনার জন্যে এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সুসমন্বিত রাজনৈতিক বাতাবরণ সৃষ্টির জন্যে—একটি সুন্দর, সুস্থ, দেশাত্মবোধক বিরোধী রাজনৈতিক ধারার অনিবার্যতা অনস্বীকার্য। আসন্ন কাউন্সিলে সেই নীতির বাস্তবায়ন দেখতে চাইবে সবাই। না হলে দলে গণতন্ত্র এবং গঠনতন্ত্র উভয়কেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মতো সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন নীতির প্রয়োগ ঘটাতে গেলে বিএনপি আরেকটা mess-এর জন্ম দেবে। দেশের অন্যতম প্রধান তিন রাজনৈতিক দল ঃ আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছে। দলে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র, তৃণমূল নেতাকর্মীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সত্ এবং যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন প্রভৃতি বিষয়ে খেয়াল রেখে একটি সুন্দর কমিটি আওয়ামী লীগের কাছেও দেশবাসীর প্রত্যাশা। জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুর বাজছে। জাতীয় পার্টির ঐক্য ও সংহতিও দেশের গণতন্ত্রায়ণ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। সব মিলে একটি পরমতসহিষ্ণু, সংবেদনশীল সরকারি দল এবং একটি গঠনমূলক অহিংস বিরোধী রাজনৈতিক ধারার সম্মিলন—বর্তমানের সবচাইতে বড়ো রাজনৈতিক বাস্তবতা। হতাশা ও বিভ্রান্তির বিরোধী রাজনীতিকে না বলতে হবে। ড. রাশিদ আসকারী
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সব মিলে একটি পরমতসহিষ্ণু, সংবেদনশীল সরকারি দল এবং একটি গঠনমূলক অহিংস বিরোধী রাজনৈতিক ধারার সম্মিলন—বর্তমানের সবচাইতে বড়ো রাজনৈতিক বাস্তবত
এটা অবশ্যই দরকার। কিন্তু বিএমপির মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রক্ষণশীল দল চাই না।
বাংলাদেশে সরকারী দল, বিরোধী দল দুটোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকবে, মৌলিক বিষয়গুলোকে মেনে নেবে।
বিম্পি, ছাত্রদলের অবস্থা দেখে এখন হাসি পায়। যারা নিজেদের কার্যালয় ভাঙতে পারে তারা দেশের কী করবে?
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯
বিপরীত বাক বলেছেন: বিএনপি হলো সুবিধাবাদী, চাটুকার, ধান্দাবাজ, বাটপার, দুধমাখন ভোগী দিয়ে ভরা ভরপুর একটি দল। এই দল টিকে নিষিদ্ধ করা সময়ের দাবী। এরা রাজনীতি করার অযোগ্য।
চোর চাট্টা দিয়ে নীতি নির্ধারণ করলে এই দশাই হয়।
তবে বিএনপির প্রধান কাজ হলো হাওয়া ভবনের হাউয়া বেজন্মা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকটা হাউয়ার পুতেদের ধরে রাস্তায় প্রকাশ্যে গুলি করে মারা।
ছাত্রদলের মেরুদন্ড ২০০২-২০০৬ এর মধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর জন্যে দায়ী ওই তারেইক্যা চুরা।
ওই তারেইক্যা চুরা, অযোগ্য টাকে জ্যান্ত মাটিতে পুতে ফেললে বিএনপি র ৮০% সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
কারণ তখন বিএনপির ত্যাগী নিবেদিত কর্মী রা মাঠে নেমে পড়বে। সুবিধাবাদীগুলোর শেকড় থাকবে না তখন।