![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিদেশি কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর যে সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার কথা ছিল, তার বেশ অনেকক্ষণ পরে যান তিনি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা শেষে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া যাবেন বলে পুলিশ তাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিচ্ছিল। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পরও খালেদা জিয়ার গাড়িবহর না পৌঁছানোয় লাইনে অপেক্ষমাণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পেছন থেকে চাপ বাড়ার ফলে সামনে থাকা অনেকেই কাঁটা তারের বেষ্টনীর ওপর পড়ে যায়। এভাবেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়া শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে স্বাগত জানাতে যান। ওই সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পেছন থেকে ধাক্কা দিলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমান তখন নিচে পড়ে যান। এরপর শহীদ মিনারের মূল বেদিতে যাওয়া নিয়ে আরেক দফা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ওই সময় বলা হয়, খালেদার সঙ্গে শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়া আর কেউ বেদিতে যেতে পারবে না। কিন্তু এই ঘোষণা না শুনে বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্রদল নেতারা ধাক্কাধাক্কি করে বেদিতে ওঠে যান। অনেকের পায়ে তখন স্যান্ডেল ছিল। তখন সেখানকার শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, যথাসময়ে খালেদার গাড়িবহর শহীদ মিনারের উদ্দেশে রওনা দিলেও বিনা কারণে পুলিশ পথে তিনবার বাধা দিয়েছে। এ কারণেই শ্রদ্ধা জানাতে বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া জুতা পায়ে বেদিতে ওঠার অভিযোগ বানোয়াট বলেও দাবি করে বিএনপি।
রাত দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতাকর্মী।
এদিকে প্রথম প্রহরের ২০ মিনিট পরই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় শহীদ মিনারের বেদি। উন্মুক্ত করার পরও খালেদা জিয়ার আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ ২০-২৫ জন শিক্ষক।
জানা যায়, রাত ১টা ২০ মিনিটে দোয়েল চত্বরে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শহীদ মিনারে প্রবেশের পথ এখান দিয়ে না হওয়ায় তাদের ঢুকতে দিচ্ছিল না পুলিশ। নির্দেশনা ছিল শহীদ বেদি সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করার পর শহীদ মিনারে যেতে হবে নীলক্ষেত হয়ে পলাশি ও জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে। কিন্তু ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দোয়েল চত্বর দিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর উপস্থিত হয় সেখানে। তখন পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কথা বলে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
খালেদা জিয়া শহীদ মিনারের মূল বেদিতে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন বিএনপি ও ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মীও। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বেদির কাছে পৌঁছলে বেদিতে তিনস্তরের মানবপ্রাচীর তৈরি করেন বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা। কারণ শহীদ মিনারের বেদি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও কাউকেই মূল বেদিতে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেওয়া হয় না। শহীদ মিনারের তৃতীয় বেদিতে সবাইকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে যাওয়ায় মানবপ্রাচীর অতিক্রম করে শ্রদ্ধা জানাতে বাধা দেওয়া হয়। ওই সময় বলা হয়, খালেদার সঙ্গে শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বেদিতে যাবেন। আর কেউ যেতে পারবেন না। কিন্তু এই ঘোষণা না শুনে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ধাক্কাধাক্কি করে বেদিতে ওঠে যান। তখন অনেকের পায়ে সেন্ডেল ছিল। ধাক্কাধাক্কির সময় ছাত্রদলের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার এক কর্মীকে ওই হলের ছাত্রলীগকর্মীরা পিটিয়েছে বলে জানা যায়। তাত্ক্ষণিকভাবে ছাত্রদলকর্মীর নাম পাওয়া যায়নি।
বিএনপির দাবি, তিনবার পুলিশি বাধায় পড়েন খালেদা : একুশের প্রথম প্রহরে গুলশান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার আগে পথে খালেদা জিয়াকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শহীদ মিনারের বেদিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের জুতা পায়ে ওঠা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে হাতাহাতির বিষয়টিও অস্বীকার করে এ-সংক্রান্ত টিভি ফুটেজ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গুলশানের বাসা থেকে শহীদ মিনারে আসা পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন অন্তত তিনবার পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তাঁর গাড়িবহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছাকাছি গেলে পুলিশ দুই জায়গায় ব্যারিকেড দেয়। এ সময় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালালে অন্তত ৫০ জন মারাত্মকভাবে আহত হন।
ডিএমপির দাবি, বাধা দেওয়া হয়নি : খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আটকে বাধা দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের বাধা দিইনি। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ওনাকে (খালেদা জিয়া) সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হয়েছে।’ শহীদ মিনারের কাছে হট্টগোলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ডিসি মারুফ হোসেন বলেন, ‘শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থানে বিশৃঙ্খলা হলে সেটা তো আমাদের বিষয় নয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রয়েছে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছি। এখানে সব ঠিক ছিল।’
©somewhere in net ltd.