নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতি রাজনীতি ও উন্নয়ন

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

সম্প্রতি বাংলাদেশের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। তাদের জরিপে উঠে এসেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার ও এর প্রধান শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ আশাবাদী। এতে বলা হয়েছে মানুষ রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। অপরদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর রিপোর্টে এ বছর দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবনমন ঘটেছে এক ধাপ। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।
এই সব জরিপ নিয়ে কথা বলার আগে আমাদেরকে জরিপের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। আইআরআই এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যে পদ্ধতিতে গবেষণা করেছে তা খুবই তাত্ত্বিক এবং ধারণাভিত্তিক। তবে তারা খোলাসা করে বলেনি, তাদের জরিপ পদ্ধতি কী ছিল। কাজেই এইসব জরিপের তথ্য একেবারে শতভাগ সত্য তা ভাবারও কোনো দরকার নেই। জরিপকৃত জনসাধারণের অনেকেরই গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট নয়। গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জনগণের ধারণা হচ্ছে রাস্তায় মিছিল, সভা এবং বড় বড় সমাবেশ। তারা গণতন্ত্র বলতে এইসব বিষয়কেই বোঝে। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এসব ঘটনা তাদের সামনে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে কেবল রাজনীতির নামে জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসংযোগ এবং পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ছবি ভেসে উঠছে।
মনোবিজ্ঞানী হয়েও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড্যানিয়েল ক্যায়েনম্যান বলেছেন, ‘মানুষ উপকারের চেয়ে অপকারের কথা বেশি মনে রাখে।’ তথাকথিত রাজনীতির নামে হত্যা থেকে শুরু করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা মানুষ অবলোকন করেছে। এখন রাজনৈতিক সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে মানুষ স্বস্তির মধ্যে রয়েছে। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক সংজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ গণতন্ত্র বলতে বোঝে সভা, সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট।
২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই জরিপ করা হয়েছে। তখন জরিপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল। তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। আগামী বছরটা কেমন যাবে বলে আপনারা মনে করেন? এ প্রশ্নে ৭২ ভাগ লোক মনে করেছে ২০১৬ সাল অর্থনৈতিকভাবে তাদের জন্য ভালো যাবে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বলছেন, তারা তাদের দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন। এখন মাত্র ৩০০ টাকা হলে ১০ কেজি মোটা চাল কেনা যায়। আর এই ৩০০ টাকা একজন রিকশাচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার যাতায়াত করলেই উপার্জন করতে পারে। কাজেই এদিক থেকে মানুষ চিন্তা করলে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের সঙ্গে আয়ের সঙ্গতি রয়েছে। টেলিভিশনে বলা হয়, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তবে একজনের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়া মানে আরেকজনের আয় বাড়া। যাত্রীর ব্যয় বেড়েছে মানে রিকশাচালকের আয় বেড়ে গেছে।
গত দুই বছর দেশের মানুষ গণতন্ত্র চর্চার নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দেখেছে। ২০১৫ সালের মাঝামঝি সময় থেকে দেশের মানুষ শান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক দেখেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় প্রত্যেক মানুষ স্বতন্ত্রভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে শুরু করে। অ্যালফার্ড মার্শাল বলেছেন, ‘Every man is an economic man.’ মানুষ এখন নিজের অবস্থানটি বুঝতে পারে যে, সে এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছে। এগুলো মানুষকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বোঝানোর দরকার নেই। ঋণাত্মক রাজনৈতিক বক্তব্য মানুষ নিবে না। কারণ সে নিজেই দেখছে আগের অবস্থা থেকে অনেক ভালো আছে।
আইআরআই-এর রিপোর্টে দুর্নীতির বিষয়টি এসেছে। আগেও দুর্নীতি যা ছিল, এখনো তাই রয়েছে। দুর্নীতির বিষয়ে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সমালোচনা করা হয়, মাহাথির মোহাম্মদের শাসনের ফলেই মালয়েশিয়ার উন্নতি হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায়ও যে উন্নয়ন হয়, তাতে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রাখার কারণ নেই। গত শতকে আমেরিকানদের জিডিপি দ্বিগুণ হতে ৩০ বছর লেগেছে। আর মালয়েশিয়ায় ১০ বছরের কম সময়ে তা দ্বিগুণ হয়েছে। গণতন্ত্র সুশীল সমাজসহ অনেকের জন্য একটি আদর্শ মডেল এবং কথা বলার অধিকার। বাক-স্বাধীনতার অধিকারের কথা বলা হয়। যা আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আদায় করেছি। কিন্তু জনহিতৈষী কর্তৃত্ববাদীর ফলে চীন, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে অভাবিত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার কম রাজনীতি। এই কম রাজনীতিকে যে নামই দেয়া হোক না কেন, যদি খারাপ নাম কর্তৃত্ববাদী শাসনও দেয়া হয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। তবে কর্তৃত্ববাদের সঙ্গে দুর্নীতি কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। কম রাজনীতি এবং দুর্নীতি এক সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে চলবে না। দুর্নীতি দমন করার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান যেমন—দুদক, বিচার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে কোনো রকমের শিথিলতা দেখানোর কারণ নেই। একদিকে বলা হচ্ছে, বিগত সংসদ নির্বাচন ত্রুটিযুক্ত এবং সবার অংশগ্রহণে হয়নি। তবে মানুষ এখন এসব বিষয় মেনে নিয়েই অর্থনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকতে চায়। কাজেই সেখানে যদি দুর্নীতি দেখা যায়, তাহলে পরে জরিপ করলে তার ফলাফল ফের উল্টে যাবে।
আমাদের দেশে দুর্নীতি হচ্ছে এবং সে বিষয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে দুর্নীতি তো হচ্ছেই কিন্তু সেখানে কথা বলার মতোও পরিস্থিতি নেই। পাকিস্তানে বেশি দুর্নীতি করে সেনাবাহিনী। তবে সে বিষয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই। আইআরআই এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এইসব রিপোর্ট সূক্ষ্মভাবে দেখলে বোঝা যাবে, সেখানে অনেক দুর্বলতা আছে। বলা হয়, আপনি যেখানে আছেন, সেখানে থাকতে চাইলেও জোরে দৌড়ান। প্রথম এবং দ্বিতীয় নয়, আপনি তৃতীয় অবস্থানে আছেন। এই তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখার জন্য আপনাকে জোরে দৌড়াতে হবে। কারণ যে চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে, সে জোরে দৌড়ালে আপনি তো পিছিয়ে পড়বেন।
আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে টেন্ডারে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। যারা টেন্ডার কিনতে যাবে তাদেরকে আটকে রাখা এবং বেশি দাম দিয়ে সরকারি কাজ নিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। এই টেন্ডার হচ্ছে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় জায়গা। তবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন—ফ্লাইওভার আরো লম্বা করা হচ্ছে, মাটি খুঁড়তে গিয়ে নিচে দেখা যায় বিদ্যুত্ গ্যাসসহ নানা সংযোগ লাইন সরাতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এসব কারণে তো ব্যয় বাড়বেই। মূল সমস্যা হচ্ছে টেন্ডারের ক্ষেত্রে। এ জন্য পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া ই-টেন্ডারে রূপান্তর করতে হবে। এতে ইচ্ছে করলে আমেরিকা থেকেও টেন্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। এই ই-টেন্ডার একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি। এজন্য সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং এলজিইডিসহ সকল খাতে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এতে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্নীতি বিষয়ক মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। কারণ একটি দুর্নীতির মামলার সুরাহা হতে যদি কয়েক বছর লেগে যায়, তাহলে অন্যরা দুর্নীতি করার জন্য সুযোগ পায়।
দেশে উন্নয়ন হচ্ছে এবং মানুষ আগের চেয়ে ভালো আছে। তবে সেই সঙ্গে দুর্নীতিও হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ১৭/১৮ ভাগে নেমে এসেছে। দুর্নীতি আছে এটা অস্বীকার করা যাবে না, যা অবশ্যই দমন করতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষও ভালো আছে—এর জন্য কোনো জরিপের প্রয়োজন নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


"গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জনগণের ধারণা হচ্ছে রাস্তায় মিছিল, সভা এবং বড় বড় সমাবেশ। তারা গণতন্ত্র বলতে এইসব বিষয়কেই বোঝে। "

- গণতন্ত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা কি? লিখুন।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


হয়তো গণতন্ত্র সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই; আপনি যা পড়েছেন, তার কিছু বুঝেননি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.