নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউপি ইলেকশন এবং ...

২০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪০

বাংলাদেশের তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারের পরমাণু এককের নাম ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮৭০ সালের ব্রিটিশ-ভারত সরকারের গ্রাম চৌকিদারি-অ্যাকেটর মাধ্যমে গ্রাম্যপুলিশের (চৌকিদার) ভরণপোষণের জন্য কর আদায় করতে গিয়ে যে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত সৃষ্টি করা হয়েছিল তাই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে (১৯৭৩) ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের বলে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করে। তবে আজকের ইউনিয়ন পরিষদ ব্রিটিশ আমলের সেই চৌকিদারি সংগঠন নয়, বরং একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-সাংগঠনিক রাষ্ট্র সংগঠন। জনপ্রশাসনকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার হাত থেকে রক্ষা করতে, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে সহজ, সুলভ এবং জনবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিত করতে ইউপির ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেই ক্ষমতায়নের জন্য আবার নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি-নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কেবল ইসি তার পূর্ণ কার্যকারিতা বহাল রাখতে পারে। সেই উপলব্ধি থেকেই সম্ভবত আসন্ন নির্বাচনের তৎপরতা চলছে। বর্তমান ইসি কর্তৃক পরিচালিত দশম জাতীয় সংসদ, উপজেলা, সিটি এবং মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নির্বাচনসমূহের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাদের নেতৃত্বেই আয়োজিত হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। এই নির্বাচনমুখী প্রবণতা-গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পক্ষান্তরে নির্বাচনবিমুখতা_ দেশ ও দলীয় উভয় রাজনীতির জন্য নেতিবাচক।
একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ছয় পর্বের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ১ম পর্বের (২২ মার্চ, ২০১৬) দিন ঘনিয়ে আসছে। ইউপি নির্বাচন এদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আটবার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নবমবারের জন্য প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিতান্তই গতানুগতিক হলেও এবারের নির্বাচন নিয়ে আশা-নিরাশার একটা দোলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ দলীয় প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সুসংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রশস্ততর হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। সে ধারণা যে এতো তাড়াতাড়ি অমূলক প্রমাণিত হয়ে গেল ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। তবে ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থিতা শিকার, প্রতিদ্বন্দ্বিতা-মোকাবেলা প্রভৃতির নামে যে ডামাডোল সৃষ্টি হয়েছে তা মামুলি উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে খুন-জখমের পরিবেশ পর্যন্ত সৃষ্টি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে কোনো ইউপি নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়নি। প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হওয়া, পাল্টা হামলায় আহত হওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ঘরবাড়ি ভাংচুর প্রভৃতি ঘটনা ঘটছে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসনের নাকের ডগায়। এভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ বিঘি্নত হলে প্রত্যাশিত ফলাফল নিশ্চিত করা যাবে না_ অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় রাজনীতিকে সুসংঘবদ্ধ করে গণমুখী করা যাবে না।
কেন এরকম হচ্ছে? এর কোনো সোজাসাপটা উত্তর আছে কি? এই সংঘাত কি কেবল রাজনৈতিক পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াই? মনে হয় না। লড়াই হচ্ছে বহুমুখী। পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘাতের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খবর পাওয়া যাচ্ছে স্বপক্ষের মধ্যকার লড়াইয়ের অর্থাৎ আত্মকলহের। মনোনীত প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যকার সংঘাত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আত্মঘাত। প্রত্যেকটি দলে যত না মনোনীত প্রার্থী, তারচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে স্বতন্ত্রের মুখোশ পরে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে অনেক ভয়ঙ্কর দলের ভয়ঙ্কর মানুষ। দলীয় মোড়কে যারা আসছে, তাদের সবাই যে ধোয়া তুলসি পাতা তাও হলফ করে বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে মনোনীতদের ভেতরে অনেকের নামে রকমারি ফৌজদারি অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। আবার অনেক যোগ্য প্রার্থী যোগ্য লবিস্ট ধরতে না পেরে ছিটকে পড়েছে মনোনীতের তালিকা থেকে। সৎ এবং যোগ্যপ্রার্থী তা যে কোনো দল থেকেই হোক না কেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে সমাজে সংঘাতের সম্ভাবনা অনেকখানিই হ্রাস পেত। যারা পেশিশক্তি কিংবা ক্ষমতাবলে মনোনয়ন ছিনিয়ে আনতে পারে, তারা নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতেও ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চাইবে। কিছু ইউনিয়নে একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিশেষের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার নেপথ্য কাহিনী হতে পারে তার বিশেষ ক্ষমতা কিংবা প্রতিপক্ষের ক্ষমতাহীনতা। অথচ খুব সহজেই এই অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যেকোনো মূল্যে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনীত করা দরকার। সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত কিংবা সন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ কোনো প্রার্থীকে কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া উচিত নয়। উপযুক্ততম প্রার্থী মনোনয়ন পেলে এমনিতেই বিদ্রোহের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। আর না পেলে কঠোর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে তা দমন করতে হবে। সর্বোপরি, প্রাক-নির্বাচন এবং নির্বাচনকালে অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একপেশে নির্বাচন নানান প্রশ্নের জন্ম দেবে।
আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার আরেকটি বড় সমস্যা হলো বিভিন্ন দফাভিত্তিক নির্বাচনে আলাদা আলাদা করে ফলাফল ঘোষণা করা। ভারতের মতো সব দফার নির্বাচন শেষে একসঙ্গে ফলাফল দিতে পারলে সম্ভবত আরো ভালো হতো। প্রথমদফার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের কোনো প্রভাব দ্বিতীয় দফায়, কিংবা দ্বিতীয় দফারটা তৃতীয় দফায় এভাবে পূর্ববর্তী দফার প্রভাব পরবর্তী দফায় পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পেত এবং সার্বিক নির্বাচন অধিকতর অর্থবহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু আমাদের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদফার ফলাফল আলাদাভাবেই ঘোষিত হবে। সেক্ষেত্রে ফলাফল স্বাভাবিক হলে হয়তো পরবর্তীতে তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আর কোনো কারণে যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে পরবর্তী দফার নির্বাচনসমূহে তার সাংঘাতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিক নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অতএব প্রথম দফার নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সরকার ও ইসির সর্বাত্মক তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে অভ্যস্ত। নিশ্চয়ই তাদের সঙ্গত কারণও থাকে। কারণ কমিশন তাদের সীমাবদ্ধতার দিকটি বড় করে দেখিয়ে যতই পাশ কাটাতে চাক না কেন, তার ক্ষমতা একেবারে কমও নয়। যথাযথ কারণ দেখিয়ে যেকোনো প্রার্থীকে নির্বাচন-অযোগ্য ঘোষণা করা থেকে শুরু করে ইউনিয়নবিশেষের নির্বাচন স্থগিত/বাতিল করার পূর্ণ অধিকার কমিশন সংরক্ষণ করে। সে ক্ষমতার কিছু নমুনা যে কমিশন দেখায়নি তাও নয়। তারপরও মনে হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়; কমিশনকে আরো অনেক বেশি সক্রিয়তা প্রদর্শন করা দরকার। তৃণমূলের এক অতি সাধারণ নির্বাচনে একেবারে হেলিকপ্টার নিয়ে এসে সাড়ম্বরে প্রচারাভিযান চালানো কিংবা প্রতিশ্রুতির ঠাঁট দেখিয়ে ভোট শিকারের পাঁয়তারা যতই সরকারি দল সমর্থিত কেউ করেন না কেন, তাকে প্রশ্রয় দেয়া কমিশনের উচিত না। আচরণবিধি লংঘনের দায়ে সাংসদদেরও ইম্পিচ করতে কমিশনের দ্বিধা থাকা উচিত নয়। নির্বাচনের সাফল্য-ব্যর্থতায় পুরো দায়ভার, প্রাথমিক বিবেচনায়, কমিশনকেই নিতে হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নানা বিবেচনায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউপি নিছকই একটি স্থানীয় সরকার প্রশাসনের টায়ার নয়, এর একটা দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক গুরুত্ব আছে। ইউপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা এবং মামলাযোগ্য বিষয় খুব সহজেই নিষ্পত্তির মুখ দেখে এবং অসহায় তৃণমূল মানুষদের আর্থিক ও মানসিক স্বস্তি দেয়। তবে শর্ত থাকে যে, মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিরা সৎ, যোগ্য ও সাদা মনের মানুষ হবেন। সেই সততা ও যোগ্যতার জায়গা যদি ভালো মানুষদের নাগালের বাইরে গিয়ে সন্ত্রাসী ও লুটেরাদের দখলে চলে যায় তাহলে বিবাদ নিষ্পত্তি তো দূরের কথা নতুন নতুন ঝামেলা-ফ্যাসাদে পড়বে তৃণমূলের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো। ফলে ইউপির ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ভূমিকা মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হবে।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা জন্মলাভ করছে সেগুলো, নিরসিত না হলে, চূড়ান্ত পরিণতিতে তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় রাজনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়নের হরিণ শিকার করতে গিয়ে একই দলের মধ্যে অন্তর্কলহ যে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে তাতে সার্বিকভাবে দলের যে ক্ষতি সাধিত হবে, তা নির্বাচনে সাময়িক বিজয়ে লাভের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। তাছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে এমনিতেই দলীয় আনুগত্য, শৃঙ্খলা, সংঘবদ্ধতা প্রভৃতি অনুশীলনের স্কোপ কম। দলের আদর্শ ও সাধারণ ইমেজকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ মানুষগুলোর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভক্তি দলের জাতীয় রাজনৈতিক সংহতিকে বিঘি্নত করবে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
র্বিক বিবেচনায়, রাজনৈতিক প্রতীকে এই প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার যে চ্যালেঞ্জ সরকার গ্রহণ করেছে, তা সফল করার গুরুদায়িত্ব মূলত সরকারের ওপরই বর্তাবে। বর্তমান সরকার তাদের কর্মপরিচালনার অনেক ক্ষেত্রেই সফল ইনোভেশনের সাক্ষ্য রেখেছে। ঘুণে ধরা সনাতন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে অধিকতর গতিশীল করার অভিপ্রায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তন যদি অভিপ্রায় বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন না করে, বিশেষত প্রভাবক মহলের ক্ষুদ্র স্বার্থবুদ্ধির কারণে, তাহলে তা স্থানীয় সরকার প্রশাসনে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সরকারের ভাবমূর্তিতেও তেমনি চিড় ধরাবে। তবে এখনি সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। বরং ওঃ রং হবাবৎ ষধঃব ঃড় সবহফ. সংশোধনের উপায় কখনোই নিঃশেষিত হয়ে যায় না। সব ক্ষেত্রেই সদিচ্ছাই বড় কথা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এ মুহূর্তে জাতিকে অনেকখানি ভারমুক্ত করবে।
ড. রাশিদ আসকারী: কলামিস্ট, রাজনীতি বিশ্লেষক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

বিজন রয় বলেছেন: ভাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.