![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার আহ্বান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করল স্বাধীনতার ৪৫তম বার্ষিকী। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হলো পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা মহান শহীদ, নির্যাতিতা নারী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপজেলা পর্যায়েও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আধিক্যের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা খুব কমই সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। যেসব মুক্তিযোদ্ধার আত্মসম্মানবোধ আছে তারা সংবর্ধনায় যোগ দেয়া একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিবছর দু'বার অধিকাংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাই সংবর্ধনা গ্রহণ করে থাকেন।
বিএনপির পক্ষ থেকেও দিবসটি উদযাপন করা হয়। এ বছর বিএনপির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেয়া। ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী একটি দল। এবার তারা তাদের অনুগত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা না দিলেও গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৫-এর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তার কোন প্রতিবাদ করেননি।
গত ২৭ মার্চ ২০১৬ জনকণ্ঠে এক বিস্ময়কর খবর ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে নাকি ছাত্রশিবির, প্রহরী ছিল জামায়াত নেতারা। এমন সেস্নাগান নিয়ে এবার প্রকাশ্যেই মহান স্বাধীনতা দিবসে র্যালি বের করে জামায়াত-শিবির। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ডেকে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনই দলীয় অনুগত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিয়েছে বলে দাবি করেছে শিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। দেশের অনেক স্থানের মতো খুলনায়ও র্যালি করে শিবির। ব্যানারে লেখা ছিল, 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব, স্বপ্নীল স্বাধীনতা অন্তরে অাঁকব।' ছাত্র শিবিরের স্বাধীনতা র্যালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার বিষয়টিকে ঔদ্ধত্য ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তামাশা ও বেয়াদবি হিসেবে দেখছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধারা।
একই তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৬ কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় 'ভুয়াদের আগ্রাসী থাবা' শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে এক বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি-রাজনৈতিক প্রভাব আর জালিয়াতি করে অনেক স্বাধীনতাবিরোধী মুক্তিযোদ্ধা সনদের মালিক বনে গেছে। তাদের অপতৎপরতায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও সম্মানহানি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে এই পদ্ধতিটি একটি একক কাঠামোয় এনে দুর্নীতির সব রাস্তা বন্ধ করার দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা আরও নাজেহাল হবেন। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন মতবাদে বিভক্ত ছিলেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কেন, অল্পসংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী বাদে পুরো জাতির মতবাদ একটাই ছিল। আজ জাতীয় চরিত্রের যখন অবক্ষয়ের কাল চলছে, তখন মুক্তিযোদ্ধারাও এ জাতিরই অংশ। সুতরাং তাদেরও যে অনেকের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর সুযোগ-সুবিধার গন্ধ পেয়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। সুতরাং বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত সম্ভব নয়। এজন্য ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দেয়া সম্ভব হলে ভুয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার ও শস্তি দেয়াও অসম্ভব নয়। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যাদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার প্রক্রিয়াও তাদের দ্বারাই বাধাগ্রস্ত হবে। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর রোড মার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী নয়, তাদের মুক্তি দিতে হবে। ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবি জানান। ব্যারিস্টার খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিচার হবে। ২০১৩ সালে সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপিও যোগ দিয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামী নামক দলটি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিল। মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত করার জন্য রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করেছিল। বাংলাদেশের পথঘাট ও মুক্তিকামী জনতার বাড়িঘর চেনাতে পাকিস্তানি বাহিনীর গাইড ছিল। ত্রিশ লাখ বাঙালি নিধনে, এক কোটির ওপর দেশ ছাড়া, আরও কয়েক কোটিকে ঘরবাড়ি ছাড়া, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হরণ, কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন ও হাজার হাজার বাড়িঘর জ্বালানো-পোড়ানো তারা পাকিস্তানি বাহিনীর চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। গত ৫ অক্টোবর ২০১১ পাকিস্তানের ইংরেজি জাতীয় 'ডেইলি টাইমস'-এর সম্পাদকীয় মন্তব্যে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে কবুল করে নিয়ে বলা হয়েছে, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী যতটা না হিংস্র ছিল ওই উগ্র গোষ্ঠীটি গণহত্যায় তাদের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল।' দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওই দলের নেতারা পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমেটি করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। খুন-ধর্ষণ-লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগকারী যুদ্ধাপরাধীরা সাধারণ ক্ষমার আওতাবহির্ভূত ছিল। প্রায় ১১ হাজার পাপিষ্ঠ নরাধম এসব অপরাধের দায়ে কারাগারে আটক ছিল। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জেলাখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা ও ক্ষমতা দখলের পর ১৯৭৫-এর ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার দালাল আইন বাতিল করে। ফলে অভিযুক্ত ও দ-িত ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেল থকে বেরিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী জলসায় সেস্নাগান ওঠে, 'তাওয়াব ভাই, তাওয়াব ভাই; চাঁদ তারা পতাকা চাই।' (ইত্তেফাক ৮ মার্চ ১৯৭৬) সেদিনের উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এমজি তাওয়াবের বদান্যতায় ওই জলসায় জামায়াত-আলবদর, রাজাকারদের ছিল স্বাধীনতার পর প্রথম আত্মপ্রকাশ। ওই মজলিসে জামায়াতে ইসলামী ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- দেশের পতাকা বদলাতে হবে, নতুন জাতীয় সঙ্গীত চাই, দেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করতে হবে, '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার ভেঙে দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত রাজাকারদের স্মরণে মিনার নির্মাণ করতে হবে। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাতিল করেন। ধর্মের নামে দল গঠনের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। জামায়াতে ইসলামীর মতো স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। সম্প্রতি এমপি মেহজাবিন খালেদের সংসদ বক্তব্যে উঠে এসেছে কিছু অজানা তথ্য। জানা গেছে, 'বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ক্ষমতায় আরোহণকারী জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফেরাতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।' মেহজাবিনের ভাষায়, 'ভুট্টো বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে গোপনে গোপনে পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের নিয়ে বৈঠক করে সরকারবিরোধী তৎপরতা চালান।' 'যদিও জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের সামান্যতম চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারণা ও আদর্শের চিহ্ন ছিল না। জিয়া প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি আইএসআইর চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।' ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সহস্রাধিক বাঙালি সৈনিক হত্যাকা-ের জন্য জিয়াকে দায়ী করে মেহজাবিন বলেন, 'জিয়ার নির্দেশে ২৫ মার্চ রাতে বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৮শ' সৈনিক অস্ত্র জমা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র সৈনিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে প্রায় ১২শ' বাঙালি সৈনিক নিহত হন। এ হত্যাকা-ের দায় থেকে কোন ভাবেই জিয়া রেহাই পেতে পারেন না।'
গণতন্ত্রের মৌলভিত্তি ধ্বংস করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, মুক্তিযুদ্ধের সব উপাত্ত-উপাদান ও অর্জনকে অাঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে নির্বাসনে পাঠিয়ে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন করে, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী দল বলে দাবি করা যায় না। অবৈধ পথে অথবা বোমা ও অগি্নসন্ত্রাস করে ক্ষমতা পুনঃদখলে ব্যর্থ হয়ে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রামে নেমেছে বিএনপি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চিহ্নিত শত্রুরাও স্বাধীনতা এনেছে বলে আজ দাবি করছে।
গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো পরমতসহিষ্ণুতা। আর পরমতসহিষ্ণুতার পূর্বশর্ত হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যা মহান মুক্তিযুদ্ধেরও প্রধান উপাদান ছিল। তা কি জামায়াত-বিএনপির চরিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে? একদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী বলে দাবি, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের শত্রু জামায়াতের সঙ্গে জোট এবং হেফাজতের মতো কঠোর সাম্প্রদায়িক ও নারী বিদ্বেষী মোল্লাদের ১৩ দফার সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিএনপি কিভাবে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি বলে দাবি করে ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে।
মুক্তিযুদ্ধের অনেক পূর্ব হতেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি গণমানুষকে সংঘবদ্ধ করে। পাকিস্তান আমলের ধর্ম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে '৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী রাজনীতি ঐতিহাসিক রায় পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চেতনা মুক্তিকামী বাঙালি গণমানুষকে প্রচ-ভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়। এই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান নেয় এবং '৪৭-এর দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক ধর্মসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী জাগরণই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। 'জাগো-জাগো বাঙালি জাগো, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।' 'জয়বাংলার' মতো সস্নোগানগুলোই ছিল মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই এই সেস্নাগানগুলো এড়িয়ে চলে। শুধু তাই নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে রোখার জন্য পাকিস্তানের অনুকরণে বাংলাদেশি নামক একটি নতুন জাতির জন্ম দেয়। এরপরও কি বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলা যায়? মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাগো জাগো, বাংলাদেশি জাগো, বীর বাংলাদেশি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, কিংবা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এমন সস্নোগান কখনই শোনা যায়নি। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিএনপি দ্বারা বিভক্ত হয়ে দুই জাতির বাংলাদেশে পরিণত হয়। এভাবেই বিএনপি অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতাকে এবং বাঙালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জাতি নামের বিভক্তির দেয়াল তুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করে।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, বিএনপির শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতা আর ভারতবিরোধিতার বাংলাদেশেও পরিণত হয়। ৮ জুন ২০১৫ সংবাদের উপসম্পাদকীয়তে শ্রদ্ধেয় মুনীরুজ্জামান লিখেছেন, বিএনপির যদি আদর্শিক অবস্থান থেকে ভারতবিরোধী রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হয় তবে দলটিকে জামায়াতে ইসলামী তথা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সঙ্গে যে গাঁটছড়া রয়েছে সেটা তাদের ছিন্ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থান নিতে হবে। রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরুদ্ধে থাকতে হবে। অর্থাৎ আদর্শ, রাজনীতি এবং চেতনায় বিশুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি করতে হবে বিএনপিকে। দলটির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কুখ্যাত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সংশ্লিষ্টতার বহু ঘটনা রয়েছে, আইএসআইকে ছাড়তে হবে ঘোষণা দিয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-ধর্মভিত্তিক এবং ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে। সবার আগে বিএনপিকে পাকিস্তানি রাজনীতির আদর্শ ছাড়তে হবে। বিএনপি তাদের পাকিস্তানি রাজনীতি পরিত্যাগ করেনি। আর বাংলাদেশ-ভারত এবং পাকিস্তানি রাজনীতির আদর্শ একবারেই বিপরীত। পাকিস্তানি রাজনীতি করে যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি করা যায় না, তেমনি ভারতবিরোধিতার বাইরেও আসা যায় না। বিএনপি যদি বাস্তবেই বাংলাদেশের রাজনীতি করতে আগ্রহী হয়, ভারতবিরোধী রাজনীতির চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী হয় তবে সর্বাগ্রে পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী রাজনীতি ছাড়তে হবে, ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে। তাহলেই তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক দল হবে।
[লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট]
http://www.thedailysangbad.com/sub-editorial/2016/04/05/59555
২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেছেন: বিএনপি কোন সংগঠনই নয়। তাই, এটি নিয়ে কোন কথা নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
বিজন রয় বলেছেন: বিশ্বাসী তবে।