নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন এই বিভ্রান্তি?

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২২

বিভিন্ন মহলের নানাবিধ মন্তব্য এবং মিডিয়ার সংবাদ থেকে কেউ কেউ মনে করছেন সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য জড়িত। ৭ এপ্রিল (২০১৬) খুনি শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি থেকে ২৫ এপ্রিল সারাদেশে অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রাচীরহীন সীমানার মধ্যে নাট্যকর্মী ও ভিক্টোরিয়া কলেজের ওই ছাত্রী নিহতের ১৮ দিনেও কোনো খুনি শনাক্ত না হওয়া এবং ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত না পাওয়ায় এর সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, সুরক্ষিত জায়গায় তনুকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, তারা কি স্থানটি সরেজমিনে দেখেছেন? কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পুরো এলাকা দেয়াল দিয়ে ঘেরা নয়। উপরন্তু যে জায়গায় তনুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেটি পার্শ্ববর্তী গ্রামের কাছে। ধান ক্ষেতের আল দিয়ে জঙ্গলময় উক্ত স্থানে সহজেই প্রবেশ করা যায়। তাছাড়া কিছু দিন আগে ওই এলাকা দিয়ে সেনানিবাসের প্রাচীর স্থাপনের সময় গ্রামবাসীদের বাধার মুখে কাজটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এজন্য সুরক্ষিত জায়গায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলা হলেও তা যথার্থ নয়।

অন্যদিকে ফেসবুক এবং অনলাইন মিডিয়াতে ছড়িয়ে থাকা রক্তাক্ত নারীর ছবিটি ২০১৩ সালে বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত ভিয়েতনামের একজন নারীর ছবি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির জন্য নারীটিকে খুন করা হয়েছিল। সেই ছবিকে তনুর বলে প্রচার করা হয়েছে কেন, কোন্ মোটিফে তনুকে রক্তাক্ত দেখানো হয়েছে তা পরিষ্কার করা দরকার। তনুর প্রকৃত ছবি কেন মিডিয়াতে প্রচার করা হয়নি সেটিও রহস্যজনক। তাছাড়া তনুর ধর্ষণ বিষয়ে উপাখ্যান কে প্রথম প্রচার করেছে? যে ব্যক্তি বলেছে তনু ধর্ষিতা, সে কি তার মরদেহ দেখেছে? এমনকি কুমিল্লার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জনৈক সাংবাদিককে বলেছেন তাদের মনে হয়েছে তনু ধর্ষিতা। কিন্তু তিনিও ভাল করে মরদেহ দেখেননি। পরে অবশ্য লাশ তুলে ময়নাতদন্তে দেখা গেছে তনু ধর্ষিতা হয়নি।

তনু হত্যাকাণ্ডে ‘‘সুরক্ষিত’ বিষয়টি আসলে অমূলক। যারা বলছেন তারা জানেন না জায়গাটি অরক্ষিত। এজন্য ঘটনাটিকে যারা `বিশেষ’ বলে চিৎকার করছেন আসলে তারা কি বোঝাতে চাইছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লাশ পড়লে কি সেই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী দায়ী হয়ে পড়েন? কিংবা পুলিশের একজন সদস্যের অপরাধের দায় কি গোটা পুলিশ সংস্থার কাঁধে বর্তায়? এজন্য সুরক্ষিত তত্ত্বের কথা খাটে না তনুর মৃত্যুর ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে।

ঘটনার পর আঠার দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখন এটা স্পষ্ট যে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করতে হবে। না হলে অনেকেই এই বিষয়টিকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করবে। ইতোমধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেখানে তনুকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী দ্রুত ধরা পড়ুক এবং শাস্তি পাক এই প্রত্যাশা আমাদের। তবে এই হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে নানা মাত্রায় এবং বিচিত্র ভঙ্গিতে অপপ্রচার চলছে। সেখানে সেনানিবাস এবং সেনাবাহিনীকেও জড়িত করা হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী তাদের পেশাদারিত্বের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে। এজন্য সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য বা কর্মকর্তা তনু হত্যায় জড়িত থাকলে তার বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক।

২০ মার্চ হত্যার পর ঢাকা সেনানিবাসে আইএসপিআর থেকে বিবৃতির মাধ্যমে তনুকে সেনা পরিবারের সন্তান দাবি করে এ ঘটনায় দোষীদের ধরতে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় ‘অসাধারণ’ কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলেছে- তনুর বাবা মোঃ ইয়ার হোসেন বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ কুমিল্লা সেনানিবাস ‘ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে’র একজন বেসামরিক কর্মচারী। যিনি সেনাপরিবারের সদস্য এবং তনু কুমিল্লা সেনানিবাসে বড় হয়েছে ও তাদের সন্তান। তনুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে সেনাসদস্যরা দারুণভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছেন। তাছাড়া সেনাবাহিনী জনসাধারণের অংশ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেদিন সেনাবাহিনী তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আকাক্ষা তাদেরও।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রথম থেকেই সকল তদন্তকারী সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনুমাননির্ভর ও মনগড়া বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে অন্যতম গণজাগরণ মঞ্চ, কিছু প্রিন্ট মিডিয়া এবং বাম ঘরানার সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। তাদের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে সেনাবাহিনী এবং তনু হত্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপস্থাপনা চোখে পড়ে। এ বিষয়ে তারা দায়িত্বশীল হওয়ার পরিবর্তে নির্বিচারে নানা মন্তব্য করে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় লিপ্ত। হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তার দায় কোনোভাবেই পুরো বাহিনীর নয়। সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার। অথচ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্য তনুকে নিয়ে মিথ্যাচারে মেতে উঠেছে কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীরা। দেশ ও জাতির গৌরব এবং শক্তির প্রতীক আমাদের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে ক্ষমতালোভীদের হাতে দেশকে তুলে দেওয়ার স্বপ্ন-জাল বুনছে অনিষ্টকারীরা।
আগেই বলা হয়েছে, তনুর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত এবং বিবস্ত্র দেহের যে ছবি প্রচার করা হয়েছে তাও সত্য নয়। মাথার চুল কাটা ছবিটিও তনুর নয়। তনুর মৃতদেহ স্ট্রেচারে শায়িত, শান্ত, ছিন্ন-ভিন্ন নয়- এই ছবি কোনো মিডিয়া প্রচার করল না কেন? বরং একজন মৃত নারীকে ধর্ষণের অপবাদ দিয়ে ছোট করা হচ্ছে সারা দেশ জুড়ে। হত্যাকারীর বিচার চাইতে গিয়ে ধর্ষিতা আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তনুকে। এটা অন্যায়। তনুর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং গায়িকা কৃষ্ণকলির বাসায় গৃহকর্মী শিল্পীর রহস্যময় মৃত্যু কাছাকাছি সময়ের ঘটনা। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান সরকার তনুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার হলেও নীরব রয়েছেন গৃহকর্মী শিল্পীর বিষয়ে। দেশে যে কোনো ধর্ষণ এবং হত্যার বিপক্ষে আমরা। কিন্তু ইমরান সরকার কেন তনুকে নিয়ে অতি বেশি আগ্রহী। কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে এসে যায়। যেমন, কৃষ্ণকলি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হওয়াতে কি তিনি গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডকে চাপা দেয়ার জন্য তনু হত্যার ঘটনা নিয়ে সরব। তনুর জন্য কনসার্ট করা হচ্ছে। শিল্পীর হত্যাকাণ্ড চাপা দিতে তাদের রাতদিনের প্রচেষ্টা লক্ষ করলে মনে হয় তিনি অতি উৎসাহী তনুর বিষয়ে। তার কনসার্টের জন্য ব্যয়িত অর্থের উৎস সম্পর্কে জানা দরকার। উপরন্তু তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলা হচ্ছে। বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে তিনি কি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। কৃষ্ণকলির স্বামীর মুখে শিল্পীর নখের আচড় পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ড দুটিই নৃশংস- এজন্য আমরা দুটি ঘটনার অপরাধীরই বিচার দাবি করছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে দোষ দেওয়া বা এই সংস্থাকে বিতর্কিত করার অধিকার কারোর নেই।

সেনাবাহিনী তনুকে নিজেদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিচার দাবি করেছে। এমনকি তাদের কেউ জড়িত থাকলে শাস্তি পেতে হবে সেটাও বলা হচ্ছে। তবু সুশীল সমাজ গলা ফাটাচ্ছে কেন সেটাই আমাদের বোধগম্য নয়। এমনকি হত্যার ঘটনায় তদন্তে সর্বপ্রকার সহায়তা দিচ্ছে সেনাবাহিনী। এজন্য প্রমাণ হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলা ঠিক না। সেনাবাহিনীকে হেয় করা বা আসল খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে অনন্য ভূমিকা পালন কওে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা অর্জন করেছে। গোটা বাঙালি জাতি এখন তাদের নিয়ে গর্ব বোধ করে। এজন্য তাদের তদন্ত করার সুযোগ দিতে হবে। অযথা তাদের ওপর খুনের দায় চাপানোর সংস্কৃতি দূর করতে হবে। প্রকৃত খুনি কে তা প্রমাণ করার সুযোগ না দিয়ে দোষারোপ করলে তা হবে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তের অংশ। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি আমাদেরও। সেনাবাহিনীকে তদন্ত করার সময় ও সুযোগ না দিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে দোষী হিসেবে প্রচার করা হলে তা হবে আত্মঘাতী।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মাঠে-ময়দানে প্রতিবাদ দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তনু হত্যার ঘটনাটি এতো গুরুত্ব পাচ্ছে কেন? নিকট অতীতে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ব্লগারদের হত্যা কিংবা বিদেশীদের হত্যাসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তনু হত্যার পার্থক্য কোথায়? উত্তর হলো ‘`ক্যান্টনমেন্ট’। ক্যান্টনমেন্টের সীমানা প্রাচীরহীন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলেই তনু হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার বামপন্থী সংগঠনগুলো ছাড়াও সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তিবর্গ। অনেকে হয়তো ঘটনার আদ্যোপান্ত না বুঝেই সামিল হচ্ছে প্রতিবাদের কাতারে। আবেগ, অনুভূতি কিংবা দুর্বলতা, যাই বলি না কেন বিষয় একটিই তা হলো ক্যান্টনমেন্ট তথা সেনাবাহিনী। কিন্তু আমরা কেউ বলছি না কেবল ক্যান্টনমেন্ট কেন, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কোনো স্থানে এমন নৃশংস এবং বর্বর হত্যাকাণ্ড কাম্য নয়। কোনো হত্যাকাণ্ডই মেনে নেওয়া যায় না। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে এটা প্রমাণ করে না যে, এতে সেনাসদস্যরাই সম্পৃক্ত। কারণ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শুধু সামরিক বাহিনীর লোকজন নয়, অনেক বেসামরিক লোকজনও থাকে। আর ঘটনার সঙ্গে সেনাসদস্যরা জড়িত তারও কোনো প্রমাণ নেই। তারপরও দেশের কিছু সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী তনু হত্যায় সেনাবাহিনীর দিকে তীর ছুড়ে মারছে। তাদের বক্তব্য এমন যে, ক্যান্টনমেন্টের মতো সংরক্ষিত এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, কাজেই ঘটনার সাথে সেনাসদস্যরা জড়িত। এর আগেও আমরা দেখেছি কোনো ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কাজেই আমাদের অহংকার এই সেনাবাহিনীকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা বরাবরই লক্ষ করা গেছে। তনু হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং দোষীদের শাস্তি হোক তা আমরা সবাই চাই। কারণ এই হত্যার বিচার না হলে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে এবং মানুষ দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবে। তারপর ভাবতে হবে ক্যান্টনমেন্টে আমাদের মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষই থাকে। সেখানে ফেরেস্তা থাকে এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। আমরা কেবল তনু হত্যার প্রতিবাদ করেই চলছি, কিন্তু অনুধাবন করার চেষ্টা করছি না সমাজে এসব অনাকাক্ষিত ঘটনা কেন ঘটছে? প্রতিবাদের ফলস্বরূপ অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে, কিন্তু তারপরও থেমে নেই এই সব জঘন্য ঘটনা। মৃত্যুদণ্ড দিলেই যদি সমাজের নানা অনাচার, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি দূর হতো তাহলে জঙ্গি নেতা শাইখ আব্দুর রহমান কিংবা খুনি এরশাদ সিকদারের ফাঁসির পর সমাজে আর কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হত না।

দেশে যখন ধর্মীয় মৌলবাদীরা ব্লগার হত্যাযজ্ঞ চালায় কিংবা বিএনপি-জামায়াত যখন পেট্রোল বোমায় মানুষকে পুড়িয়ে মারে, তখন আমাদের প্রতিবাদ বেশি বেগবান হয় না। কয়েকদিন নামমাত্র মানববন্ধন করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে দেশের বামপন্থী এবং সুশীল সমাজ। সন্ত্রাসী হামলায় যখন মানুষের প্রাণহানি হয়, তখনও নীরব ভূমিকা পালন করে কিছু মহল। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দমাতে অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে তখনও প্রতিবাদ তেমন দৃঢ় হয় না। কিন্তু তনু হত্যায় সেনাবাহিনীর গন্ধ পাওয়া যায়, তাই বুঝি এতো প্রতিবাদ, হরতালও আহ্বান করা করা হয়। এর মানে কি এই নয় যে, আমরা মৌলবাদী, সন্ত্রাসী এবং অন্য অপশক্তিকে ছাড় দিলেও সেনাবাহিনীর ব্যাপারে কঠোরতা প্রকাশ করি। এক্ষেত্রে প্রতিবাদের ভাষা তীব্র, দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। তবে কেন আমাদের এই মনোভাব? সেনাবাহিনী তো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতির নিরাপত্তায় নিয়োজিত। তাদের কোনো দুর্বলতা পেলে আমরা এতো উঠে পড়ে লাগি কেন? আর এতো মরিয়াই বা কেন হই। তবে কি আমরা ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রতি সদয় এবং সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দয়। কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই তনু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আজ ইমরান সরকাররা সরব। তবে একথা ঠিক খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। কিন্তু তার জন্য সময় দরকার। প্রথম থেকেই ইমরান এইচ সরকার এই হত্যাকাণ্ডকে নিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। যেখানে গায়িকা কৃষ্ণকলির স্বামীকে গৃহকর্মী হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সেখানে তনু হত্যার বিষয়টি না জেনে এতো তৎপরতা দেখানোর কারণ কি? সাধারণ মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা নয় কি?

অবশ্য সেনাবাহিনীকে অযথা বিতর্কিত করার প্রয়াস সফল হবে না। তাছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তনু হত্যার বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশবাহিনীসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা এই হত্যার তদন্তে নিয়োজিত। অন্যদিকে নারী সংগঠনগুলোও উচ্চকণ্ঠ। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা এখন সেনাবাহিনীর জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ভাবমূর্তি দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। এজন্য উদ্দেশ্য-প্রণোদিত হয়ে কোনো বক্তব্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। মূলত বর্তমান পরিস্থিতিতে বামপন্থীদের অতি উৎসাহ মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে পারে। প্রতিবাদ বা আন্দোলন হবে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে, নিশ্চয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যেখানে সক্রিয় বিষয়টি নিয়ে সেখানে কেন দোষী সাব্যস্ত করার রাজনীতিতে লিপ্ত সুশীল সমাজ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা? ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য এই ইস্যুতে রাস্তায় নামার দরকার নেই। বর্তমান সেনাবাহিনী নিজেদের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা খুনিকে বের করে বিচার করলে তাদের ওপর সকলে আস্থা স্থাপন করবে। আমাদের বিবেচনায় সুরক্ষিত-অরক্ষিত বাংলাদেশের কোনো জায়গায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে না; অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দ্রুততম সময়ে বিচার করা গেলে সাধারণ মানুষের সংশয় দূর হবে। নারী নেত্রীদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও নিশ্চুপ হবে। তবে তাড়াহুড়ো করে বিচার কার্য না করে সুষ্ঠু ও যথার্থ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার দাবি করছি আমরা।

ড. মিল্টন বিশ্বাস লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭

নকীব কম্পিউটার বলেছেন: স্বপ্নের জগতে আছি আমরা।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯

হোসেন মালিক বলেছেন: কয়েকটা মার্কামারা সরকারি চামচা ব্লগে ভাড়া খাটে। তারমধ্যে ব্লগার মন্ত্রক একটা।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪

এই সুমন এই বলেছেন: হোসেন মালিক ভাই, ব্যক্তিগত আক্রমন না করে বরং কমেন্টে আপনার যুক্তি তুলে ধরুন। কেনো এবং কোন কথায় আপনি এই পোস্টের সাথে দ্বিমত?

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মাঠে-ময়দানে প্রতিবাদ দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তনু হত্যার ঘটনাটি এতো গুরুত্ব পাচ্ছে কেন? নিকট অতীতে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ব্লগারদের হত্যা কিংবা বিদেশীদের হত্যাসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তনু হত্যার পার্থক্য কোথায়?
বলতে চাচ্ছেন, এই প্রতিবাদের কোন অর্থ নেই?
সেনাবাহিনীর হয়ে অনেক কথা বলেছেন, মানলাম। তারা কয়েকবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় অবৈধ ভাবে বসেছে, জানেন?
আর উত্তর হলো ‘`ক্যান্টনমেন্ট’। ক্যান্টনমেন্টের সীমানা প্রাচীরহীন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলেই তনু হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার বামপন্থী সংগঠনগুলো ছাড়াও সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তিবর্গ
জি না, জনাব। সব জায়গায় রাজনৈতিক ফয়দা খুঁজতে যাবেন না। বাংলাদেশে মানুষ অনেক বেঁচে আছে এখনো।
আপনার মতো সুশীলের গায়ে জামাতশিবিরের গন্ধ লেগে আছে। গণজাগরণ মঞ্চ হতে প্রতিবাদ করা হচ্ছে, তাতেও দোষ দেখছেন, প্রতিবাদ না করলে, কেন প্রতিবাদ করা হচ্ছে না, সেটা নিয়ে অভিযোগ করতেন। জানা আছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.