![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ জাপান। আর জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের নাগোয়ায় জি-সেভেন আউটরিচ বৈঠকে যোগ দিতে ৪ দিনের জাপান সফরে রয়েছেন। শনিবার তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নকল্পে বেশ কিছু প্রস্তাবও তুলে ধরেন বৈঠকে। শনিবার বিকালে টোকিওতে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের আস্থার সম্পর্কটি নতুনমাত্রা পাবে এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, দীর্ঘদিন ধরে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিভিন্ন খাতে নিঃশর্ত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশও জাপানের সমর্থনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে এসে দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো পোক্ত করেছে। বিষয়টি জাপানের শীর্ষ নেতৃত্ব অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে নিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিবিড় করেছে- যা অন্য দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে- বিশেষজ্ঞরা এভাবেই দুই দেশের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাপানের মতো দেশ যদি বাংলাদেশের সঙ্গে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ কেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে না!
স্বাধীনতার চার দশকে জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটেছে। লক্ষ্যণীয়, দুই দেশের পারস্পরিক কোনো ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি তো দূরের কথা, নূ্যনতম মতপার্থক্যও সৃষ্টি হয়নি। জাপান শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রেও জাপান ভূমিকা রাখছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর পরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের স্বীকৃতিদানের মধ্যদিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরের মাধ্যমে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন দিকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক, সংস্কৃতি খাত তথা এমন কোনো খাত নেই যেখানে জাপানের অবদানকে খাটো করে দেখা যায়। উপরন্তু বাংলাদেশে নির্মিতব্য সর্ববৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণেও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক দেশই সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কিন্তু উল্লেখ করার বিষয় হলো, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে যে সহযোগিতা দিয়ে আসছে তা শর্তমুক্ত। এছাড়া কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে দেশটি নাক গলায় না। জাপানের এই মনোভাব বন্ধুত্বের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন বলেই মনে করা যায়। স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের নিঃশর্তভাবে সহযোগিতা প্রদানের মধ্যদিয়েই তা স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এই সম্পর্ককে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক হামলার পর জাপান শুধু সমরশক্তিই নয়, অর্থনৈতিক শক্তিতেও সফল হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ দু-তিনটি দেশের মধ্যে জাপান একটি। ফলে জাপান আমাদের সঙ্গে থাকলে অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ঘুড়ে দাঁড়ানো অসম্ভব নয়। ফলে জাপান শুধু উন্নয়ন সহযোগীই নয়, আমাদের জন্য অনুকরণীয়ও হতে পারে। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা সমীচীন।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশ বর্তমানে যে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে তাতে জাপানের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেকেই এখন সহযোগিতা দিতে আগ্রহী। তবে জাপানের মতো নিঃস্বার্থ সহযোগী পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের। জাপান যেহেতু বাংলাদেশের পাশে রয়েছে সুতরাং জাপানের এই সহযোগিতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সরকার আরো সচেষ্ট হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.