নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে

০৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

পত্রিকায় এসেছে যে, পুলিশের চেয়ে জঙ্গিদের প্রযুক্তি ক্ষমতা অনেক বেশি। যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে হোক জঙ্গিরা রুটিন মাফিক নির্দোষ মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। আর আইএসের নামে দায় স্বীকারের বিবৃতি দিচ্ছে। সরকারের যত আন্তরিকতাই থাক না কেন, জঙ্গিরা অনায়াসে তাদের হত্যার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পালাতে সক্ষম হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে জঙ্গিরা দিন দিন অথর্ব প্রমাণ করে যাচ্ছে। এটা তো খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় যে, জঙ্গিদের ভয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি বুদ্ধিজীবী, প্রতিটি মুক্ত চিন্তার মানুষ, প্রতিটি যুক্তিবাদী সৃজনশীল মানুষ ভয়ে, আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কখন ঘাড়ের ওপর চাপাতি এসে পড়বে, গর্দান কেটে ফালাফালা করে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে, মোটরসাইকেলে উধাও হয়ে যাবে, এমন রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নে পেয়ে বসেছে মুক্তচিন্তার মানুষদের।
যে দেশে মৌলবাদী জঙ্গিদের ভয়ে মুক্তির চর্চা বন্ধ হয়ে যায়, মননশীল ব্যক্তিদের মনে ও মননে ভীতি প্রবেশ করে তাও হত্যার ভীতি তাহলে সেই দেশে আগাছার জন্ম হবে; দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিন্তাশীলদের জন্ম হবে না।
বাংলাদেশের সোনালি ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ছি এ কারণে যে, স্বাধীন চিন্তাশক্তির ওপর মারাত্মক আঘাত হানা হচ্ছে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান ‘রাষ্ট্রধর্ম’ নামক একটি পক্ষপাতমূলক আইনে খণ্ডিত হয়ে আছে। চারদিকে মৌলবাদের হুমকি প্রখর হয়ে উঠেছে। পত্রিকায় দেখেছি একটি ধর্মভিত্তিক দল সরকারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, ‘অবিলম্বে ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন বাতিল ও বিতর্কিত সেক্যুলার পাঠ্যসূচি সংশোধন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।’ (আমার সংবাদ-২৫/০৪/১৬)।
এই হুমকি শুধু সরকারের প্রতি নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, সভ্যতার প্রতি। বাঙালি একটি সভ্য জাতির নাম। বাঙালি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম নয়। মোল্লা ওমর, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, লাদেন এদের মতো রক্তপিপাসু নরদানবের দর্শন ভিত্তি করে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠেনি। বাঙালি দর্শন সমন্বয়বাদী, বহুত্ববাদী, লোকায়ত দর্শন। এই দর্শনের ওপর ক্রমাগত সেই পাকিস্তান আমলের মতো বাঙালিত্ব বিরোধী অপশক্তি অন্ধকারের আড়াল থেকে অস্ত্রাঘাত করছে। যেভাবে বাঙালি বিদ্বানদের চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, এমন নরহত্যা কোনো সভ্য দর্শন হতে পারে না। হিংস্রতাকে সভ্যতা বলে না। মানব ধর্মকে যারা মূল্য দেয় না তারা মানব হত্যার ধর্মসাধক। এতে সন্দেহ কী? মানুষ হত্যা করে আইএসের নাম ব্যবহার করছে, তাহলে বুঝুন আইএস কত ভয়ঙ্কর মানববিধ্বংসী, রক্তপিপাসু, হিংস্র-দানবীয় সংগঠন। আইএস গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে গোরস্থানে পরিণত করেছে। শ্মশান- গোরস্থানের দর্শন তো পিশাচের দর্শন। মানুষের লাশের ওপর যারা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা নরমুণ্ডুধারী কাপালিক হতে পারে কিন্তু মানুষ হতে পারে না। আর যারা মানুষ নয় তাদের আবার ধর্ম কি? যাদেরই চিন্তা থেকে মানবতার স্খলন ঘটেছে, তারাই নরমাংসখেকো হয়েছে। হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব, ইয়াহিয়া, টিক্কাখান, মওদুদী, গোলাম আযম, নিজামী এরা নরমাংস খেকো। এ কথা ভাবতেও শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে যে আইএস ও বোকাহারামের হাতে কত নারী, কত শিশু, কত মানুষ জীবন দিয়েছে। সেই আইএসের দোহাই দিচ্ছে এ দেশের জঙ্গিরা। তাহলে জঙ্গিবাদ হচ্ছে হত্যা আর খুনের দর্শন, মানুষের দর্শন নয়। তেমনি জঙ্গিবাদও ধর্ম নয়। সাম্প্রদায়িকতা যেমন ধর্ম নয়, কোনো যুক্তিতেই পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা যায় না।
কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। জঙ্গিরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাদের নেটওয়ার্ক বিশাল, তাদের টার্গেট অব্যর্থ, তারা সমাজে একটা নীরব সমর্থন পাচ্ছে। তারা বোধ করি যাদের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকে, তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে তারা বিধর্মী, নাস্তিক, মুরতাদ হত্যা করে পরকালের ছওয়াবের কাজ করছে। তাদের যারা আশ্রয় দেবে তারাও ছওয়াবের ভাগ পাবে।
জঙ্গিবাদবিরোধী চেতনা দেশে ও সমাজে তেমন জেগে ওঠেনি, তাই জঙ্গিরা এক একটা মানুষ খুন করে মানুষেরই মধ্যে আত্মগোপন করতে পারছে। এটা আরো খারাপ কথা যে, নিরস্ত্র সিভিল সমাজ জঙ্গিদের ভয়ে বিপন্ন। জঙ্গিরা সংখ্যালঘুদের, বুদ্ধিজীবীদের, মুক্ত চিন্তার লেখকদের জিম্মি করে ফেলেছে। যে সমাজে হত্যার ভয় ঢুকবে, সে সমাজে মুক্তচিন্তা বন্ধ হয়ে যাবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ হলে সমাজে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যুক্তির চর্চা না করেও ন্যাশনাল হওয়া যায় কিন্তু মুক্তির চিন্তা না করে র্যা শনাল হওয়া যায় না।
বর্তমান সরকারের মধ্যে যতটুকু ছিটাফোঁটা ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা আছে তার গলা টিপে ধরার জন্য চারপাশ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীকে নাস্তিক বলার অর্থ কী? সরকারের ওপর নানা কৌশলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যেন সরকার সেক্যুলার দর্শনকে উৎসাহিত না করে। সরকার যেন সংখ্যালঘুদের মানবিক গণতান্ত্রিক অধিকার না দেয়। সরকারকে পাকিস্তানপন্থী দর্শনে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে ভয়ঙ্করভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে আঘাত সহ্য করা হবে না।’ এ কথার ভুল অর্থ করে মোল্লারা চাঙা হয়ে উঠেছে। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক-ধর্মভিত্তিক করার একটা জোরালো চেষ্টা চলছে। এখনো প্রধানমন্ত্রী আপেক্ষিক দৃষ্টিতে ‘ধর্ম’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এটি কমন নাউন। এখন সরকারকে এবং বক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চাপ সৃষ্টি করে কংক্রিট নাউনে আনার চেষ্টা হচ্ছে যেন তিনি বলতে বাধ্য হন, ‘এটা শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। বাকি আট ভাগ শিয়াল, কুকুর, কীট-পতঙ্গ।’
একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে, ভয়াবহ হয়ে উঠেছে অধরা খুনিরা।’ এই পত্রিকা আরো শিরোনাম করেছে, ‘গাইবান্ধায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা; ‘লক্ষীপুরে দুই সহোদরকে গুলি করে হত্যা’, ‘নারায়ণগঞ্জে মসজিদের খাদেমকে কুপিয়ে জখম,’ ‘হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ।’ একই পত্রিকা বলছে, ‘কিছুদিন আগে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা বান্দরবানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। এর রেশ না কাটতেই চলতি মাসেই কুষ্টিয়ায় একই কায়দায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানকে। কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে সানাউরের সঙ্গে থাকা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামানকে। চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই ধরনের ১৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে হিন্দু মঠের পুরোহিত, সাধু, বৌদ্ধ ভিক্ষু, ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান, শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা, পীরের অনুসারী, দর্জি, শিক্ষক, ছাত্র রয়েছেন।’ (আমার সংবাদ-২৭/০৫/১৬)
এই হত্যার তালিকায় এলোমেলো চিত্র ভেসে উঠলেও এই তালিকায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কোনো লোক নেই। প্রতিদিন এভাবে চাপাতি দিয়ে যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকে জঙ্গি তালেবানি চরমপন্থার বাইরের। তারা লোকহিতৈষী, জনপ্রিয়, অজাতশত্রু, সুস্থ-প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ এবং ধর্মসাধক। এই হত্যার দায় সরকারের ওপর পড়ছে। এই হত্যা রাষ্ট্রকে ১৯৭১ সালের ভিত্তি থেকে সরিয়ে ১৯৪৭ সালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মনস্তাত্তি¡কভাবে হলেও সংকটের মুখে পড়েছে। সরকার রাজনীতির সম্মুখ সমরে জয়ী হয়ে গেরিলা জঙ্গিদের মোকাবেলায় পিছিয়ে আছে। জঙ্গিবাদকে গুরুত্ব দিতে সরকার অনীহা প্রকাশ করছে, এটা ক্ষতির কারণ হবে। শুধু পুলিশ বা বিজিবি, র্যা ব দিয়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হবে না। সরকারের উচিত হবে জঙ্গিদের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া, তার দলীয় লোকজনকে দিয়ে টিম গঠন করে সক্রিয় ভূমিবা পালন করা। জঙ্গিবাদবিরোধী একটা কমন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা অতি জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা উচিত হবে। অহমিকা, একরোখামি, অতি আত্মবিশ্বাস, আত্মতৃপ্তি ইত্যাদি খারাপ উপসর্গগুলো সরকারের মেরুদণ্ডে ঘুণ ধরিয়ে দিক, আমরা তা চাই না। জঙ্গি দমনে সরকার সফল হয়েছে কিন্তু গেরিলা জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না সরকার, এটা দুশ্চিন্তার কারণ বৈকি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তুলবার কাজটা করতে হবে। তাহলে চাপাতির নরদানবরা মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারবে না।
মাহমুদুল বাসার : কলাম লেখক, গবেষক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: এই থ্রেটটা নির্মুল করা সম্ভব না। করতে হলে আপনাকে দেশের প্রায় কোটীখানেক মানুষ গায়েব করে দিতে হবে যারা ধর্মের নামে জান দেয়া আর নেয়াকে বেহেস্তের চাবি মনে করে। নজরদারী তীব্র করতে হবে আরও। মাথা তুলতে নিলেই জীমবির মত উপড়ে ফেলতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.