নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি নয়

১৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

বর্তমানে জঙ্গিবাদের উত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সমস্যা কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয়। একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের নেপথ্যে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির তত্ত্বকে দাঁড় করানো হচ্ছে। আদৌ কি জঙ্গিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তা চিন্তার বিষয়। শুক্রবার (জুন ১০) রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত জিয়াউর রহমান এবং মোহাম্মদ আলী স্মরণে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে সহিংসতা ও উগ্রবাদ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরকার বিএনপিকে দোষারোপ করেই ব্যর্থতা ঢাকছে। এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সরকার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। গণতন্ত্র না থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। জঙ্গিবাদ উত্থান প্রসঙ্গে মওদুদ আরো বলেন, বেøমগেম বন্ধ করুন। এটি একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করি। গণতন্ত্র না থাকায় উগ্রপন্থীরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। সত্যিকারের গবেষণা করেন। দেশে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীনতা নেই।
আসলে তাদের এই বক্তব্য কতটা যৌক্তিক সেটাও ভাবার বিষয়। কেবল গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিই কি জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ। বর্তমানে দেশে কি গণতন্ত্র একেবারেই নেই! তবে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি বক্তব্য হলো দেশে গণতন্ত্র নেই। আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে গণতন্ত্র নেই। কাজেই গণতন্ত্র কেবল দুই দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারাই গণতন্ত্রের নির্মাতা। আর আমরা আমজনতা গণতন্ত্রের নীরব দর্শক। এবার আসুন দেখা যাক আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনের কথা। যখন দেশে গণতন্ত্র উপস্থিত ছিল অর্থাৎ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার ৬৩টিতেই একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের শক্তির জানান দিয়েছিল জেএমবি। তাছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। হামলায় শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। তবে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। জানা যায়, এই হামলা চালায় মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদ। এর আগেও ঢাকার রমনা বটমূল এবং যশোরে উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ। জেএমবি ১৭ আগস্টের পর সারাদেশে একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জনকে হত্যা করে। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তখনকার জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি হয়। ১৭ আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৯১টি মামলার বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, ১১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পলাতক আছে ফাঁসির তিন আসামিসহ ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি। অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং ২৪ জনকে হত্যার মামলা এখনো বিচারাধীন। তবে প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ অধিকাংশ আসামি এখন কারাগারে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও এই মামলার আসামি। যারা এখন গণতন্ত্র নেই বলে জঙ্গিবাদের উত্থানের ব্যাখ্যা দেন কিন্তু তাদের শাসনামলে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ উপস্থিত ছিল। তাহলে কেন তাদের সময় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কলঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। গণতন্ত্র রক্ষার নামে হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রল বোমা। নির্বাচনের নামে এসব অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে মানুষ হত্যার উৎসবে মেতে উঠছিল কারা? যারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তারা মনে হয় সেদিনের কথা ভুলে গেছেন। কাজেই কখন গণতন্ত্র উপস্থিত আর কখন অনুপস্থিত তা কেবল রাজনৈতিক দলের লোকরাই জানেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জঙ্গিরা একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। সেগুলো তো গণতান্ত্রিক পরিবেশেই করা হয়েছিল। কোটালিপাড়ায় তার জনসমাবেশ স্থলেও বোমা পেতে তাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জঙ্গিরা তাকে অন্তত ১৪ বার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। এ ব্যাপারে তাকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সব সময়ই জঙ্গিদের ‘টার্গেট’-এ রয়েছেন। তাহলে এর সঙ্গেও নিশ্চয় গণতন্ত্রের সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭১ সালে জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সে সময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল, যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মতো যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধা-সামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক হুমায়ুন আজাদকে জঙ্গিরা কুপিয়ে আহত করে। এমন ঘটনা অবশ্যই গণতান্ত্রিক শাসনামলেই ঘটেছে।
ধরেই নিলাম আমাদের এখানে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিই জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ কি? বর্তমানে বিশ্বের উন্নত মডেল গণতন্ত্রের দেশেও জঙ্গিদের নগ্ন হামলা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এ বছরের ৮ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে রম্য সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র কার্যালয়ে হামলায় নিহত হন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ আট সাংবাদিক, দুই পুলিশ সদস্য ও অন্য দুজন। জঙ্গিবাদের সমস্যাটি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, এখন উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেই জঙ্গিবাদ জন্ম নিচ্ছে। বাইরে থেকে গিয়ে জঙ্গি হামলা করার প্রয়োজনীয়তা আর নেই। কেবল আরব দেশে নয়, এই আইএসের আক্রমণের শিকার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলার দায়িত্ব কেউ স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ইয়াবেনতেম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের নিকটবর্তী মালবিক মেট্রো স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ২৭০ জন আহত হন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করেছে। কাজেই উগ্র জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
এই জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই অপশক্তির উত্থান মোকাবেলা করা। জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতির করার এখন সময় নয়। এই দেশ জঙ্গিদের দখলে চলে গেলে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কোনো দলের জন্যই শুভকর হবে না। সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের উচিত হবে সম্মিলিতভাবে একুশ শতাব্দীর প্রধান সমস্যা এই জঙ্গিবাদকে দমন করা। ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ধর্ম, দল, মত নির্বিশেষে সবাইকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একে অপরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ক্ষুণœ স্বার্থ ত্যাগ করে সবার সম্মিলিত প্রয়াস এখন একান্ত কাম্য। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলে চলবে না, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের এই দেশ আশাবাদের দেশ, নতুন স্বপন বোনার দেশ, এগিয়ে চলার দেশ, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার দেশ। আমরা উন্নয়নের বিশ্বাসী। বাঙালি জানে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে দেশকে আর কেউ পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। শত বাধাবিপত্তি এড়িয়ে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই। কাজেই সেখানে এই জঙ্গিবাদের মতো সমস্যা আমাদের কাটিয়ে উঠতেই হবে। যেভাবেই হোক এ জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।
বর্তমান সরকার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আটক করে আইনের আওতায় আনছে। কোনোভাবেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা আমরা চালাতে দেব না- এটি হোক আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মূলমন্ত্র। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য জড়িত বলা হলেও বিশ্বব্যাপী হত্যাকাণ্ডের কারণ কী? কারো মতামত, চিন্তা, ধ্যান-ধারণা তথা জীবন ধারণের ব্যাপারে অন্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে- তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে- এমন কোনো বিধান নেই। দেশে প্রচলিত আইনকানুন রয়েছে- যার আশ্রয় নিয়ে যে কেউ প্রতিবাদ করতেই পারে। কারো বক্তব্য যদি অন্যের অনুভূতিতে আঘাত লাগে তবে সেই ব্যক্তি প্রচলিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আমরা এর বিপরীত অবস্থা দেখছি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমত থাকবেই। কিন্তু ভিন্নমত দমনের নামে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত, তাদের উচিত হবে যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশ করা। আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা।
পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার কারণ কী। এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের পেছনে কিছু কারণ হলো শ্রেণি বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলা ও ভূস্বামীদের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। রয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু উন্নত দেশে তো গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তবে সেখানে জঙ্গিবাদের হামলা হচ্ছে কেন। তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় জঙ্গি উত্থানের পেছনে কেবল গণতন্ত্রই দায়ী নয়। তবে হতে পারে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি একটি কারণ। তাই বলে এটিই যে প্রধান কারণ তা বলা যাবে না। এখানে জঙ্গি হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। কাজেই আমাদের এখন সেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সুশিক্ষার অভাব, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নসহ জঙ্গি হওয়ার জন্য নানা উপকরণই সমাজে রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে।
বলা হচ্ছে, জঙ্গিদের লক্ষ্য ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। সেটাই যদি তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে ভালো। কারণ ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের কথা বলে। পৃথিবীর যেকোনো ধর্মেরই মূল কথা হলো শান্তি। ধর্ম কল্যাণকর। ধর্ম মানুষকে সুপথ দেখায়। কিন্তু ধর্ম প্রতিষ্ঠার পথ কি হত্যা! মানুষ হত্যা করেই কি ধর্মের অনুশাসন কায়েম করতে হবে! কিন্তু মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠার নজির কোনো সময়েই নেই। আমাদের ইসলাম ধর্ম কি মানুষ হত্যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহানবী (স.) তাঁর আদর্শ এবং সৎ গুণাবলির মাধ্যমে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি শান্তি এবং কল্যাণের কথা বলেছেন। তাঁর কথার মাধ্যমে সে সময় মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি সব ধর্মের মানুষকে সম্মান দেখিয়েছেন। এই মহামানব ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেছেন। তারপরও তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু এখন আইএস নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বব্যাপী নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তারা ভুলে গেছে ইসলামের আদর্শ। তারা ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা করে মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত।
এসব হত্যার সঙ্গে ইসলামের মতো শান্তির ধর্মের নাম জড়িয়ে দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করছে। ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি তারা ক্ষুণœ করছে। মানুষ হত্যা মহাপাপ এবং জঘন্য কাজ। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কেবল তাই নয়, ইসলাম ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে- তারা কোনো ধর্মের লোক হতে পারে না। তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা মানুষ হত্যা করে তারা কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শ কোনোভাবেই শুভকর হতে পারে না। মানুষ হত্যা ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে ধর্ম এবং নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠার নানা পথই রয়েছে। কাজেই এই জঙ্গিবাদ যেন অপর একটি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রধান নিয়ামক না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটি নিয়ে আমাদের প্রত্যক রাজনৈতিক দলের উচিত হবে হিংস্র রাজনীতিতে লিপ্ত না হয়ে বরং জঙ্গিবাদ নির্মূলে এগিয়ে আসা।
মো. মিঠুন মিয়া : প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



বর্তমান বিশ্বে জংগীবাদ ছড়ায়ে পড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে; বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে; এই বিষম্যের বীজ বপন করেছে জেনারেল জিয়া; সেই গাছের ফল খেয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ।

কোকোর বাচ্ছারা পড়ে মায়েশিয়ায়, তারেকের বাচ্ছারা লন্ডনে, কেরানীদের বাচ্ছারা নর্থ-সাউথে, হত- দরিদ্রের ছেলেরা এতিম খানায় বা ১০ বছর বয়সে চাকরাণী হচ্ছে; সমস্যা সেখানে।

জংগীবাদ ছড়াচ্ছে বলে মনে হয় না; কারণ, সরকারকে চিন্তিত মনে হচ্ছে না।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.