![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশ তো চলছিল দেশ। বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে স্বধর্মের মানুষ বসবাস করে আসছিল। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিবেচনায় বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ ছিল না। বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছিল এ ভূমিতে। ১১ শতক থেকে বহিরাগত মুসলমান সুফি সাধকরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকেন বাংলায়। সীমিতভাবে ইসলাম প্রচারিত হতে থাকে। ১৩ শতকে তুর্কি মুসলমানরা দখল করে নেয় বাংলার একাংশ—পরে পুরো বাংলা। এ পর্বে আরব, ইরান, সমরখন্দ, বুখারা প্রভৃতি দেশ থেকে সুফি-সাধকরা বাংলায় আসতে থাকেন। ইসলাম ধর্মের বিস্তারে মুসলিম শাসকরা তেমন ভূমিকা রাখেননি। জোরজবরদস্তি ছিল না ধর্ম প্রচারে। ইসলামের শান্তির বাণী ও মানবিকতার আহ্বানে ধর্ম প্রচারে নেমেছিলেন সুফিরা। অত্যাচারী সেন রাজাদের ও পরে কট্টর ব্রাহ্মণদের নিপীড়নের শিকার সাধারণ হিন্দু মানবতাবাদী সুফিদের প্রতি অনুরাগী হয়। এভাবে ধীরে ধীরে মুসলিম অধ্যুষিত দেশে পরিণত হতে থাকে বাংলা। নৃতাত্ত্বিক বিচারে বাংলাদেশের মুসলমানদের বড় অংশই ধর্মান্তরিত মুসলমান; যে কারণে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতিই লালন করে এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। আর এটিই প্রধান কারণ এ দেশের মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জায়গা করে নেওয়া।
কিন্তু বলা যায়, এই চমত্কার মানবিক দৃশ্যপটের বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অমানবিক হিংস্রতা নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীরা এ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনকে কলঙ্কিত করছে। জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীর, জামায়াত-শিবির চক্র ইসলামের মূল সৌন্দর্যকে কলঙ্কিত করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কিশোর-তরুণদের মগজ ধোলাই করছে। ওদের ভালো করে ধর্মচর্চার সুযোগ না দিয়ে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিকৃত ব্যাখ্যা। হাতে তুলে দিচ্ছে অস্ত্র। মানুষ খুন করার মতো গর্হিত কাজে নামিয়ে দিচ্ছে। যেখানে ইসলামী আইনে যুদ্ধের ময়দান ছাড়া মানুষ হত্যা করা নিষিদ্ধ; যেখানে স্বয়ং মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একটি মুসলিম দেশে আইনানুগভাবে বসবাসকারী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করলে হত্যাকারী কখনো বেহেশতের স্বাদ পাবে না এবং তার অবস্থান হবে বেহেশত থেকে ৪০ মাইলের দূরত্বে’, সেখানে সুবিধাবাদী বড় ভাইরা ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা করে নিজেদের কবজায় নেওয়া তরুণদের মগজ ধোলাই করে খুনি বানাচ্ছে। জান্নাতের লোভ দেখিয়ে তাদের জাহান্নামে পাঠাচ্ছে। আমি দেখেছি চটি চটি জিহাদি বই তারা এসব বোকা তরুণকে পড়াচ্ছে, যার মধ্যে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণীর প্রকাশ নেই। যেটুকু প্রচারণা করলে ওদের বিভ্রান্ত করা যাবে সেটুকুই উপস্থাপন করা হচ্ছে। ইসলামের ভাষায় যা একরকম মোনাফেকি।
এসব নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য মধ্যযুগে খ্রিস্টান পোপদের একাংশ একইভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ খ্রিস্টানকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। প্রাচীন বাংলায় সেন শাসক ও ব্রাহ্মণরা একইভাবে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করে সাধারণ শূদ্র হিন্দুকে নির্যাতন করেছিল। আর এখন একই পথে ইসলামী মৌলবাদী দলগুলো নিজেদের লোভী উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কিছুসংখ্যক তরুণকে বিভ্রান্ত করে মানবতার প্রতি আঘাত হানছে আর ইসলামের সৌন্দর্যকে কলঙ্কিত করছে।
ইসলামের শিক্ষা এ ধারার সন্ত্রাসবাদী ধারণা গ্রহণ করে না। ইসলামে জিহাদের জন্য প্রেরণা আছে; কিন্তু সে জিহাদের ব্যাখ্যা ও তাত্পর্য আলাদা। এই বিভ্রান্ত তরুণরা সে ব্যাখ্যা জানার সুযোগ পায় না। সেই সাত শতকে প্রথম আরবে একটি গোষ্ঠীকে দেখা যায়, যারা প্রয়োজনে অমুসলিমদের প্রতি শক্তি প্রয়োগের কথা বলেছিল। তারা ইতিহাসে খারিজি সম্প্রদায় নামে পরিচিত হয়। তাদের এই দর্শন মোটেও ধর্মীয় নয়—রাজনৈতিক। পরবর্তীকালে আলজেরীয়, মরোক্কান ও ইয়েমেনিদের মধ্যে জঙ্গি তত্পরতা দেখা যায়। আধুনিক সময়ে এসে ফিলিস্তিন, ইরাক ও আফগানিস্তানে জঙ্গি ধারণা প্রসার লাভ করে; যার পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে।
২০০৭ সালে ১১০ জন আফগান আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জঙ্গির শারীরিক-মানসিক গঠনের ওপর গবেষণা করেন আফগান বিজ্ঞানী ড. ইউসুফ ইয়াদগারি। তিনি দেখিয়েছেন, ৮০ শতাংশ এ-জাতীয় জঙ্গি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। সাধারণ মুসলমানের মানসিক ও ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে এদের তেমন মিল নেই।
নাইন-ইলেভেনে আমেরিকায় আল-কায়েদার হামলার পর সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ আল আশ-শাইখ অফিশিয়াল প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ইসলামী শরিয়াহ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। ইসলামী জঙ্গিরা ২০০৩ সালে রিয়াদে বোমা হামলা করেছিল। তখন ইসলামী ধর্মবেত্তা মুফতিরা বলেছিলেন, এই কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে শরিয়াহ আইনের লঙ্ঘন এবং এই কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা ইসলামের শত্রু।
ইসলাম ধর্মের একটি প্রধান দর্শন মানুষের পাপ-পুণ্যের শাস্তি প্রদান বা পুরস্কার দান একমাত্র আল্লহর এখতিয়ার। এই সত্য বুঝতে পারলে কোন ব্লগার কী লিখল, কে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করল বা একজন অমুসলিমের আচরণ কিভাবে গৃহীত হবে এসবের নির্ধারণ তো আল্লহরই করার কথা। যারা আল্লাহর বিচারের তোয়াক্কা না করে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নেয় তারা কি শিরক করছে না? এ প্রসঙ্গে পবিত্র বুখারি শরিফের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি। কিতাবুল ই-তিছামে উল্লিখিত আছে, হজরত ইবনে ওমর নবী করীম (সা.)-কে ফজরের নামাজের রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতে শুনেছেন, ‘হে আল্লাহ আপনি অমুকের অমুকের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করুন।’ তারপর এ আয়াত নাজিল হয়, ‘(হে নবী!) চূড়ান্তভাবে কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বা এখতিয়ার আপনার হাতে নেই। (বরং এটা) আল্লাহরই এখতিয়ার রয়েছে। তিনি চাইলে তাদের ক্ষমা করবেন আর চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন।’
এভাবে হাদিস-কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হবে জঙ্গি নামধারী বিপথগামী সংগঠন ও তরুণরা যেভাবে জনজীবন সংকটাপন্ন করে তুলছে, তা প্রকৃত ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর তাকিয়ে থাকলে চলবে না। বিশেষ করে ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বিচ্ছিন্ন কোনো সংলাপ নয়, দেশব্যাপী প্রবলভাবে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে অভিন্ন প্রেরণায়। উন্মোচন করতে হবে জঙ্গিবাদীদের আসল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এই প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের। আর একে সম্ভব করতে হলে শক্তি ও সামর্থ্যের ছায়া নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে। ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাই এখন খুব প্রয়োজন। এভাবেই সাধারণ সরল তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এই পথ ধরে গড়ে উঠবে সামাজিক প্রতিরোধ। আইনের শাসন ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি, এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন সম্ভব। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো এখনো শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। ফলে যদি আমাদের ক্ষমতাবান রাজনীতিকদের মধ্যে সততা থাকে ও দলীয় স্বার্থকে তাঁরা সবার ওপরে না দেখে জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেন এবং সামাজিক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন, তাহলে সাফল্য পাওয়া নিয়ে দ্বিধা থাকার কোনো কারণ নেই।
সুখের কথা, গত ১৮ জুন এ দেশের এক লাখ মুফতি, আলেম ও ইমাম ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা কোরআন-হাদিসের আলোকে জানিয়েছেন, চলমান জঙ্গি তত্পরতা হারাম। ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। আমি মনে করি, এখানে থামলেই চলবে না। এখন বারবার এই বার্তা দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো তত্পরতা অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু এই বাহিনীর তত্পরতা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই বাহিনী কতটা লক্ষ্য অর্জনে নিবেদিত আর কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে মনোযোগী এই ধোঁয়াশা মানুষের মধ্য থেকে দূর করা যায়নি। এই প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না যে জঙ্গি সমস্যা তো রয়েছেই, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। এর বদলে কেন বিশেষ সপ্তাহের নাকাড়া বাজিয়ে ‘সাঁড়াশি’ অভিযান করতে হয়? ১০০ জঙ্গি ধরা পড়লে কেন পাঁচ হাজার অজঙ্গি ধরা পড়ে? এমন হাটবাজার বসিয়ে জঙ্গি প্রতিরোধ কার্যক্রম কতটুকু সাফল্য বয়ে আনবে?
মাদারীপুরে শিক্ষকের ওপর হামলাকারীর অন্যতম ধৃত ফাহিম কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এর আগে সে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে গেছে। এর ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি। তাতে এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের নীলনকশার কথা বলা হয়েছে। এমনটি এ দেশের মানুষের অনুমানেও ছিল। এখন পরিষ্কার হলো। আমার মনে হয়, এই তথ্য এখন এসব খুনি চক্রের মূলোচ্ছেদে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আমাদের পরিবারগুলো ও প্রতিবেশীদেরও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। ধরা পড়া জঙ্গিদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী তরুণই বেশি। তারা নিজেরা যে গভীরভাবে ধর্ম অধ্যয়ন করে জিহাদি হয়েছে তেমন নয়। তাদের ধর্মপ্রবণ মন পাশাপাশি ধর্মের ব্যাখ্যা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়েছে সুযোগসন্ধানী ওস্তাদরা। নিজেরা নিরাপদে থেকে শাগরেদদের পাঠিয়ে দিচ্ছে অপরাধ আর মৃত্যুর দিকে। অথচ হয়তো পরিবারের অভিভাবকরা জানেনই না তাঁদের সন্তান বা শান্তশিষ্ট ধর্মপ্রবণ ভাইটির মগজ ধোলাই হয়ে যাচ্ছে। সে ক্রমে অন্ধকারের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কোনো পরিবারও জঙ্গি ভাবাপন্ন হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন আছে। এমনই করে নানাভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে এ দেশের মাটি থেকে জঙ্গিবাদ নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব।
যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা নিতে চায় তাদের চেয়ে ভয়ংকর অমানবিক আর কেউ হয় না। মধ্যযুগে রোমান পোপ ধর্মযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছিলেন নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য। চারটি ক্রুসেডে মুসলমানদের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে ভয়ংকর নরপিশাচের ভূমিকায় নেমেছিলেন ধর্মযাজকরা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার খ্রিস্টান শিশু এনে জড়ো করেছিলেন। জাহাজের সামনে মানব-ঢাল হিসেবে রেখেছিলেন শিশুদের। বিশ্বাস ছিল, মুসলমানরা শিশুদের ওপর আঘাত করবে না। কিন্তু দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার কারণে, ক্ষুধার্ত হয়ে ও গরমে অধিকাংশ শিশু পথেই মারা যায়। শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয় ক্রুসেড।
পৃথিবীর নানা দেশে ও আমাদের দেশেও জঙ্গিরা একই মানসিকতায় ধর্মের নাম ভাঙিয়ে মানুষ খুন করছে। ইসলামের নামে ভয়ংকর ইসলামবিরোধী কাজ করছে। তাই ধর্মের দায়ে, মানবতার দায়ে এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংহতির প্রশ্নে এই নিকৃষ্ট মানসিকতার জঙ্গিদের মূলোচ্ছেদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
©somewhere in net ltd.