![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের বাইরে জঙ্গি হামলায় বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জড়িত থাকায় অভিভাবকসহ দেশবাসী এবং সরকার নতুন ভাবনায় পড়ে। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত সমাজের উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরাই পড়াশোনা করেন। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার হাত থেকে কীভাবে শিক্ষার্থীদের বাঁচানো যায়, তার উপায় খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে সরকারের উদ্যোগে গতকাল রোববার রাজধানীতে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ থেকে মঙ্গলকর কিছু ফল আসবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সভা ছিল ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক’। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সরকার। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় জরুরি বলে মনে করি, ঢালাওভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এর মালিকপক্ষ কোন মতাদর্শের, তা কতটা খতিয়ে দেখা হয়েছে- সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে প্রশ্ন হলো, নর্থ সাউথসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে চলে আসায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় ইতোমধ্যে নর্থ সাউথের এক অধ্যাপকসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাই পরবর্তীতে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে যাঁরা অন্য ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে গুরুতর আহত করেছেন, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছেন, তাঁরা শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কী শেখাবেন? ছাত্র তৈরির কারখানার কারিগর যদি মৌলবাদ, জঙ্গিপনার পক্ষের লোক হয়ে থাকেন, তাহলে তো ছাত্ররাও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়বেই এবং ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ কেন এসব মৌলবাদীপন্থি শিক্ষককে নিয়োগ দিল, তাও সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। এ অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পরিবর্তন জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের বিপরীতে যেসব ব্যক্তিমালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, সাম্প্রতিক এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশেষভাবে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কোনো অভিভাবকই সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান না জঙ্গি হওয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তা-ই হচ্ছে। আর পরিস্থিতি এত দূর গড়িয়েছে যে, তা গোটা সমাজকেই ভাবিয়ে তুলেছে। সরকার এখন বাধ্য হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে। তবে এ ক্ষেত্রে এটুকু বলা যায় যে, বেশ আগে থেকেই এ ব্যাপারে সরকারের সচেতনতার প্রয়োজন ছিল। সরকারের অনুমতি নিয়ে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলছেন, তাঁরা কী প্রকৃতই উচ্চশিক্ষা বিস্তারে আন্তরিতা নিয়ে এদিকে এগিয়ে এসেছেন, না-কি তাঁদের মনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধি লুকিয়ে আছে! না-কি ছাত্রদের জঙ্গিপনার দিকে ঠেলে দেওয়ার লক্ষ্যই তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল? এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত। মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে চিনতে হবে, জানতে হবে’ শিক্ষকদের। শিক্ষামন্ত্রীর এই আহ্বানে শিক্ষকরা সাড়া দেবেন বলেই আমরা আশা করি। কারণ শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁরাই সমাজে আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্রতী রয়েছেন। কিন্তু এই মহৎ পেশার আড়ালে যেসব শিক্ষক নিজে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়েছেন এবং ছাত্রদেরও টেনে নিয়ে এসেছেন- তিনি কখনই শিক্ষক হতে পারেন না। তিনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক। এ ধরনের শিক্ষক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যেসব শিক্ষক আন্তরিকভাবে ছাত্রদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের প্রত্যেক ছাত্রের ব্যাপারে নজরদারি রাখতে হবে। গভীরভাবে তাঁদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়লো কি-না, সেটি খেয়াল করতে হবে। এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, শিক্ষকদের যথার্থ দায়িত্বশীলতা শিক্ষার্থীদের জঙ্গি হওয়ার প্রবণতা রোধ করতে পারে। ছাত্ররা পড়াশোনায় কতটা মনোযোগী-অমনোযোগী, তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সে সঙ্গে অভিভাবককে সন্তানদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হয়ে জানতে হবে তারা কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে ওঠাবসা করছে, সবকিছুই পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাহলেই জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থেকে অনেককেই বাঁচানো যাবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি করার অনুমতি নেই। মতবিনিময় সভায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরব রাজনীতি করার সুযোগ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন উপস্থিত ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। সরব রাজনীতি করার সুযোগ না থাকলেও নীরব রাজনীতি চলছে। এই নীরব রাজনীতি হচ্ছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৈরির কর্মকাণ্ড। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহরীরের সংগঠন আছে বলেও ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন। বিষয়টি অবশ্যই সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন।
পরিশেষে বলতে চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা থাকা উচিত। যে কেউ দরখাস্ত করলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচিত বলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে- এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধির উপস্থিতি একান্ত কাম্য। ইউজিসির তদন্ত করে দেখা উচিত যাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তিনি আসলেই যোগ্য কী-না। এ ব্যাপারে সব মহলকেই জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং ছাত্ররা যাতে কোনোভাবেই এর সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে; তাহলে কোনো ছাত্রই হয়তো ভবিষ্যতে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়ানোর সুযোগ পাবে না। এতে অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীও দুশ্চিন্তা ও শঙ্কামুক্ত থাকার স্বস্তিটুকু পাবে। Click This Link
©somewhere in net ltd.