![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯ জুলাই (২০১৬) একটি অনুষ্ঠানের ভাষণে অভিভাবক-দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের মনের কথাটা শোনার চেষ্টা করুন। তাদের সঙ্গ দিন। তাদের কী চাহিদা সেটা জানা, তাদেরকে আরও কাছে টেনে নেওয়া, তাদের ভালো-মন্দ, সমস্যা দেখা, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সে সুযোগটা তাদের দেওয়া।’ অর্থাত্ সন্তানেরা কীভাবে চলছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে-সেদিকে ‘বিশেষভাবে দৃষ্টি’ দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। জঙ্গিবাদ নির্মূলে সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রত্যেকটা মানুষকে সচেতন হতে হবে। প্রত্যেকের ভেতর জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। ‘ধর্মের নামে’ ও ‘ধর্মান্ধতা’ দিয়ে যুব সমাজকে বিভ্রান্তির পথে চালিত করলে তা থেকে সঠিক জীবনে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক আরও ‘নিবিড় ও দৃঢ়’ করার পাশাপাশি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাত্ প্রায় ৫ কোটি তরুণ। দেশের অগ্রগতিতে তাদের অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এরা মিথ্যা শক্তিকে যেমন গুঁড়িয়ে দিতে পারে তেমনি ভূমিকা রাখতে পারে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ গড়তে। জাতির কান্ডারির ভূমিকায় শক্ত হাতে হাল ধরার ক্ষমতাও এদের আছে। কোনো অন্যায় কিংবা মিথ্যা শক্তির কাছে এরা কখনো মাথা নত করেনি আর করবেও না কোনোদিন। বাংলাদেশে এখন প্রতি তিনজনে দুজনই উপার্জনক্ষম। নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাতীয় সঞ্চয় বেড়েছে। অর্থনীতি সবল হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি। এর সঙ্গে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুব জনসংখ্যাকে ধরলে বলা যায় যে জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগই টগবগে তরুণ। বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর ‘উন্নতি করার’ তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা একটা সামাজিক-পুঁজি। তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব পালন করছে বর্তমান সরকার। একথা ঠিক মেধা আর যোগ্যতার জোরেই বিশ্ব মানচিত্রের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের নাম। এদেশের সীমিত সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাবই।
কিন্তু দেশের এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা সক্রিয় হয়েছে শিক্ষিত যুব সমাজকে তাদের জেহাদি কাজে ব্যবহারের জন্য। জুলাই মাসের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ইতোমধ্যে তারা সফলও হয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্ত আস্তানা গেড়েছে তারা। সেখানকার শিক্ষার্থীরা ইসলামের শত্রু চিনে দেশের মুক্তমনাদের হত্যা করেছে। মাদকাসক্তের মতো জঙ্গি আসক্তিতে বর্তমান যুব সমাজ মরণ খেলায় মেতে উঠেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে সংগঠিত হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টিতে তরুণ সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তরুণ সমাজের সোচ্চার হওয়ার পটভূমি প্রশংসিত হয়েছে। তবু দেশে বর্তমানে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিত বেকার রয়েছে এবং দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ায় চাহিদা মোতাবেক সুষ্ঠু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এর সঙ্গে জড়িত আছে বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে মন্দা অবস্থা এবং নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ না হওয়া। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে প্রতিবছর নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে চাকরি খুঁজতে তরুণদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেকার সমস্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থ-সামাজিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে। সন্ত্রাস, হত্যা ও রাহাজানি বাড়ার সঙ্গে বেকারদের সংশ্লিষ্টতা আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর টার্গেটেও পরিণত হয়েছে এসব বেকার কিন্তু শিক্ষিত যুব সমাজ। যুব সমাজকে জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এখন স্বীকার করতে বাধ্য যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখভাগে রয়েছে বাংলাদেশ। ইসলামিক স্টেটস (আইএস) প্রতিরোধে বৈশ্বিক জোটের অংশীদার না হলেও বাংলাদেশ এই হুমকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া সহিংস জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর নজরদারি করছে এবং মানসম্পন্ন জাতীয় পাঠ্যক্রম তৈরি করছে, যাতে ভাষা শিক্ষা, গণিত ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একইসঙ্গে অষ্টম ধাপ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় ন্যূনতম মানের ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলো পড়ানো বাধ্যতামূলক করেছে। এমনকি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে ইমাম ও আলেমদের নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পূর্ণরূপে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ। জঙ্গিগোষ্ঠী দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার রয়েছে ব্যাপক সাফল্য। তবে সন্ত্রাসের কারণে বিশ্ব আজ নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত সহযোগিতা, যা বাংলাদেশ করে যাচ্ছে।
সন্ত্রাস সম্পর্কে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী হিসেবে অভিনন্দিত হয়েছে বর্তমান সরকার। জীবনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিধানের অধিকার রয়েছে প্রত্যেকের। জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক কাউকে নৃশংস অত্যাচার ও খুন করা স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত পর্যায়। তাদের নির্মূল করা এবং যুব সমাজকে বাঁচাতে যা করণীয় তার সবই করতে হবে সরকারকে। ২ জুলাই জিম্মি সংকট মোকাবিলার পর এখন যুব সমাজকে জঙ্গিবাদের মুঠো থেকে বের করে আনা সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার জন্য বিপথগামী যুব সমাজকে যথার্থ পথে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাত্ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পারিবারিক বন্ধনই জঙ্গিবাদ মুক্ত স্বদেশ গড়তে সহায়ক হবে।
©somewhere in net ltd.