নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি হামলা ও টার্গেট কিলিং

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯

জঙ্গি ইস্যুতে অবশেষে ফেঁসে যাচ্ছে জামায়াত। গোয়েন্দাদের দাবি, গুলশান হত্যাকা- ও শোলাকিয়া হামলাসহ বিভিন্ন টার্গেট কিলিংয়ে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এর মদদদাতা হিসেবে ইতোমধ্যে জামায়াতের এক শীর্ষ নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গি তৎপরতায় সক্রিয় অংশ নেয়ার তথ্য মিলেছে। গুপ্তহত্যার বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারকৃত বেশ কজন শিবির নেতাও এ ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া এ দলটি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রমাণও তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ ব্যাপারে বেশকিছু অকাট্য প্রমাণ আগেই তাদের হাতে ছিল। সম্প্রতি তারা এ ব্যাপারে আরো কিছু তথ্য পেয়েছে। এগুলো এখন ক্রসচেক করে দেখা হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন হলে জামায়াতের জঙ্গি সম্পৃক্ততার পুরো ছক জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি ধর্মের ব্যানারে নানা গোপন অপতৎপরতা চালিয়ে যাওয়া উগ্রপন্থী এ দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব দেবে গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি সময়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের নেপথ্য ইন্ধনদাতা হিসেবে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার নাম বেরিয়ে এসেছে। কারাবন্দি এই নেতা কোন লিঙ্কে কাকে দিয়ে কীভাবে এর কলকাঠি নেড়েছেন তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জামায়াতের প্রথম ও মধ্যসারির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার জড়িত থাকার সন্দেহও ঘনীভূত হয়েছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা কারো নাম বলতে চাননি।
এদিকে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে জামায়াত। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, কোনো কিছু ঘটলেই সুষ্ঠু তদন্ত করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ জামায়াতকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। তাদের এ ধরনের বক্তব্যের ফলে প্রকৃত খুনিরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। ফলে দুর্বৃত্তরা আরো উৎসাহিত হয়ে একের পর এক হত্যাকা- ঘটাচ্ছে।
তিনি বলেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা অদ্যবধি কেউ প্রমাণ করতে পারেনি দাবি করে দায়িত্বশীল এই নেতা বলেন, সরকারের এ ধরনের ভূমিকার কারণে জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে_ যা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের অপর এক নেতা বলেন, 'জঙ্গি ইস্যুতে জামায়াতকে ফাঁসানোর ফন্দি ভারত-ই এ সরকারকে দিয়েছে। আর তা বাস্তবায়ন করার জন্য গোয়েন্দাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আর সে ছক অনুযায়ী 'উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে' চাপানোর চেষ্টা চলছে।'
এদিকে একাধিক জঙ্গি মামলার তদন্তের তত্ত্বাবধানকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত শিবিরই যে আইএসের নামে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে তা বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তাদের নেতাকর্মীই স্বীকার করেছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং সেখানে থেকে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। দেশের বিত্তশালী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে মগজ ধোলাই করে জঙ্গি বানানোর সঙ্গেও জামায়াতের সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেন উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রীও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। গত জুনের শেষভাগে মাদারীপুরে কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টায় আটকের পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল্লাহ ফাহিম শিবিরকর্মী বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'সামপ্রতিক গুপ্তহত্যায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নেই। মাদারীপুরে কলেজশিক্ষকের হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত একজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।'
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'আমরা বলেছিলাম আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, সেটি আপনাদের কাছে এখন স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই গুপ্তহত্যাগুলো সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে তা এই ঘটনার পর আর কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়।'
এদিকে পুলিশের দাবি, ঝিনাইদহের চারটি গুপ্তহত্যাকা-ের তদন্তে শিবিরের নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার প্রত্যেকটিতে দায় স্বীকার করে ইন্টারনেটে বিবৃতি এসেছিল আইএসের নামে।
এর আগে পাবনার হেমায়েতপুরে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন হত্যার ঘটনায় পাবনা পশ্চিম অঞ্চল ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আরিফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে সেবক হত্যার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী জড়িত থাকার অভিযোগে হাফিজুর রহমান নামে এক শিবির নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঝিনাইদহের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যার ঘটনায় ২১ জুন পুলিশ এনামুল হক নামে এক শিবির নেতাকে আটক করে। ওইদিন বিকালে আটককৃত এনামুল হক ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা জাহাঙ্গীরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর মন্দিরের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ও কালীগঞ্জ উপজেলায় হোমিও চিকিৎসক আবদুর রাজ্জাক হত্যার ঘটনায় আটক কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রাম শিবিরের সাধারণ সম্পাদক সবুজ খান এবং ঝিনাইদহ দক্ষিণ অংশের শিবিরের সভাপতি শাহিন আলম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ১৭ জুলাই ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও কালীগঞ্জ থানার আমলী আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা পলাতক থাকায় গোয়েন্দারা তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সংখ্যালঘু ধর্মগুরু, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বস্নগার ও ধর্মীয় ভিন্নচিন্তার একাধিক ব্যক্তিকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের যে স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে তা একত্রীভূত করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে তা দাখিল করা হবে।
এদিকে অধিকাংশ গুপ্তহত্যা মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই সরকারপ্রধানসহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের খড়গ তোলার পরিণতি সুখকর হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন গুপ্তহত্যা, বিশেষ করে গুলশান হামলার ঘটনায় 'জজমিয়া নাটক'এর পুনরাবৃত্তি হলে বিদেশিরা বিষয়টি ভালোভাবে নেবে না। এমনিতেই ওই ঘটনায় ১৭ বিদেশি খুনের পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে মন্দা দেখা দিয়েছে। এর ওপর কোনো 'পাতানো' তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের রেহাই দিয়ে একে রাজনৈতিক খেলায় পরিণত করা হলে এবং তা পরে ফাঁস হলে দেশের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
যদিও পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো 'জজমিয়া নাটক' বানানো হচ্ছে না। গুলশান হত্যাকা- ও শোলাকিয়া হামলাসহ বিভিন্ন গুপ্তহত্যার ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত মদদদাতাদেরই চিহ্নিত করা হয়েছে। আইএসের নামে জামায়াত-শিবিরই যে জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ (এটিবি) বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে সংঘটিত করে হামলা চালিয়েছে সে তথ্য-প্রমাণও গোয়েন্দাদের হস্তগত হয়েছে। বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় জামায়াতের সম্পৃক্ততার তথ্য সবিস্তারে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে, এতে সবার সন্দেহ দূর হবে_ তদন্তের ধারা সেভাবেই এগিয়ে নেয়া হচ্ছে, যোগ করেন তারা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.