নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবিরোধী ঐক্য

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩

সম্রাট আকবরের সময় নাকি বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেতো। যথারীতি এ ব্যাপারেও রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ বলেন, বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেতো বটে, তবে সে সময় মহিষের খরচা নাকি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারণ বাঘ জল খাওয়ার পরই একটি করে মহিষ খেয়ে ফেলত। তখন ঘাটে আরেকটি নতুন মহিষ আনা হতো। এভাবে মহিষের চালান বাড়িয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছিল। আরেকদল পণ্ডিতের মতে, একদিন সম্রাট ঠিক করলেন বাঘ আর মহিষকে তার প্রাসাদে দাওয়াত খাওয়াবেন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, বাঘ আর মহিষ এলো দাওয়াত খেতে, তাদের দু’জনের সামনে খুবই সমাদর করে বিশাল বিশাল দু’টা হরিণের রোস্ট খেতে দেওয়া হলো। বাঘ তো মহা খুশি! আহা এতো মজার সুস্বাদু খাবার কতদিন খাই না বলেই ইয়ামি! ইয়ামি! বলে খাওয়া শুরু করলো। চেটে-পুটে সবটা সাবাড় করে কোমল পানীয় পান করে পরম তৃপ্তিতে একটা বিকট আওয়াজসহ ঢেঁকুর তুললো। এদিকে তো মহিষ বেচারা মন খারাপ করে, মুখ চুন করে বসে আছে, সে কি করে খাবে এই হরিণের মাংস? কোনোদিন খায়নি হরিণের মাংস, কি করে খেতে হয় তাও জানে না, সবচেয়ে বড় কথা হলো তার শরীরের গঠন, তার খাদ্যাভ্যাসে, তার পরিপাকতন্ত্রের গঠনে মাংস খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই দেখে তো সম্রাটের কপালে ভাঁজ! হায় ! হায় ! মেহমান খেতে পারছে না! এ দফা এভাবেই গেল।
অনেক ভেবেচিন্তে সম্রাট কিছুদিন পর ওই মেহমানদের আবার দাওয়াত করল। এবার তিনি দু’জনের সামনেই নরম কচি তাজা তাজা সবুজ ঘাস দিলেন। মহিষের তো আজকে পোয়াবারো! জিভে জল এসে যাচ্ছে! সে তো আর সইতে না পেরে হম্ হম্ করে সুস্বাদু, পুষ্টিকর ঘাস খাওয়া শুরু করল। বাঘ বেচারার তো গালে হাত, সে কি খাবে! ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। এই দেখে সম্রাট মহাফাঁপরে পড়ে গেলেন, কি মুশকিল! এদের দু’জনকে তো ঠিকমতো মেহমানদারি করা যা্চ্ছে না!
কিছুদিন পর তিনি আবার ওই দুই অতিথিকে দাওয়াত করলেন। এবার আর তিনি আগের ভুল করলেন না। সম্রাট মহোদয় গত দু’বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঘকে দিলেন বিশাল বড় আকারের হরিণের রোস্ট, আর মহিষকে দিলেন বিরাট বড় রাজ থালায় তাজা তাজা ঘাস। এইবার বাঘ আর মহিষ দু’জনেই পেটপুরে, আয়েশ করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে হাসিমুখে সম্রাটের দরবার থেকে বিদায় নিলেন। সম্রাটও বুঝলেন যে কখন, কাকে, কীভাবে তার প্রয়োজনমতো, চাহিদা অনুয়ায়ী ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়!
সম্প্রতি সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা’র আহবান প্রসঙ্গে এই গল্পটি মনে পড়ে গেল। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদী তত্পরতা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ‘বাঘ’ নয়, আবার সবাই ‘মহিষ’ও নয়। কেউ কেউ বাঘ, কেউ কেউ মহিষ। তাহলে বাঘে-মহিষে কী ঐক্য সম্ভব? কবি গুরুদাস পালের লেখা বিখ্যাত গানের কথাগুলো আমরা কেমন করে ভুলে যাব? তিনি লিখেছেন: “থাকিলে ডোবাখানা, হবে কচুরিপানা,/বাঘে হরিণে খানা একসাথে খাবে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না!/জলের স্বভাব যেমন ধারা নিম্নদিকে ধায়,/আগুনেরই স্বভাব যেমন সবকিছু পোড়ায়/ছারপোকারই স্বভাব যেমন রক্ত চুষে খায়/তাকে না থুইলে বস্তু খায় উইপোকায়/পাতিকাক পুষে ঘরে, যতই পড়াও না তারে/সে শুধুই কা কা করে, ‘কেষ্ট’ ‘কেষ্ট’ বলে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনও যাবে না!”
“সাপের স্বভাব যেমন মারে বিষাক্ত ছোবল/ছেলে-ছোকরার স্বভাব যেমন পাকায় গণ্ডগোল/বিড়ালেরই স্বভাব যেমন হাঁড়ির পানে চায়/কখন শিঁকে পড়বে ছিঁড়ে তারই লালসায়। বুনো ওল খেলে পরে/গলাটা কুট কুট করে/ও যেমন সিঁধেল চোরে/ধরা পড়ে কবুল করে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না! ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না!”
আসলে স্বভাব সহজে যাবার নয়। যার যেমন স্বভাব তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা দরকার। জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্যে কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিবাদ সমর্থকদের নেয়া যাবে? ‘বাঘে-মহিষে’ বা ‘বাঘে-হরিণে’ খানা কী কখনও কোথাও খেয়েছে? না তাই সম্ভব?
স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য কী করে হবে? কীভাবে হবে স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য? আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত আর বিএনপির সম্পর্ক তামাক আর ফিল্টারের মত—দু’জনে দু’জনার! আর জামায়াত সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নেই। এই দলটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে বাঙালি-নিধনে ভূমিকা পালন করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও একটি কারণে জামায়াত প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা মানুষের কাছে ধিকৃত। কারণটি হচ্ছে তাদের ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। যারা জঙ্গি তত্পরতা চালাচ্ছে, ধর্মের নামেই চালাচ্ছে। তাই এই ধরনের তত্পরতায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে, জামায়াতের গোপন সম্পর্কের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কারো কারো শেকড় ছিল জামায়াতে এটাও ধরা-পড়া জঙ্গিদের কাছ থেকে জানা গেছে। এই জামায়াতকে কোলে নিয়ে বিএনপি বর্তমানে জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের তত্ত্ব-তালাশে ব্যস্ত!
এইসব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়া কী আদৌ বাস্তবোচিত? তাতে কি সুফল আসবে? স্বাধীনতার শত্রু, যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না, যারা সংবিধান ও শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে কিসের ঐক্য? কার ঐক্য? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ওই হিংস্র শক্তিগুলো আবার যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে তত্পর। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতা হিসেবে বিএনপির নাম জোরে-শোরেই উচ্চারিত হচ্ছে।
আমরা কী করে ভুলে যাব, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর চারদলীয় জোট কর্তৃক জঙ্গিবাদী সব অপশক্তিকে মদদ দেয়ার ঘটনা? আওয়ামীবিরোধী সন্ত্রাস, বোমাবাজি, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের কারো কারো সঙ্গে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর গোপন সংযোগের কাহিনি? তখন জঙ্গিবাদী কর্মতত্পরতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে হত্যায় জঙ্গিদের আর্জেস গ্রেনেডসহ নানা অস্ত্র প্রয়োগের ঘটনাগুলো কী ভুলে যাওয়া যায়? ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা হামলা, বিচারক হত্যা, শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অনেক নেতাকর্মী হত্যায় জঙ্গিবাদীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং সরকারের মদদের কথা কী ভুলে যাওয়া যায়? ১০ ট্রাকসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোপন পথে বিদেশ থেকে এনে দেশের ভেতরে ও বাইরে নেয়া এবং ব্যবহার করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাতে জঙ্গিবাদের বিস্তার এবং এদের ওপর বিএনপির নির্ভরশীলতার কথা কী ভুলে যাওয়া যায়?
২০০৮ সালে নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটার পর বিএনপি আরও বেশি মৌলবাদী ভাবধারায় পুষ্ট হয়। চারদলীয় জোট ২০ দলে সম্প্রসারিত হয়। হেফাজতে ইসলামের সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ৫ মে সরকার উত্খাতের যে নীলনকশা হয়েছিল তা রাজনীতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। এই হেফাজতকে প্রকাশ্য সমর্থন জানায় বিএনপি। এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিশ্বাস ও অবস্থান বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার হুমকি সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ভুল করার জন্য জামায়াত-হেফাজতসহ নানা গোষ্ঠী রাজনীতির মাঠে সশস্ত্র তত্পরতা চালায়। লাগাতার হরতাল-অবরোধের নামে বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। এখন জঙ্গিরা যা করছে, তখন জামায়াত-বিএনপি জোট সেই মানুষ হত্যার কাজটিই করেছিল।
ঐক্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে এই ঐক্য হতে হবে স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তি ও দলগুলোর মধ্যে। ইতোমধ্যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখনও ঐক্যের কি বাকি আছে? সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য তো ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। গ্রামে গ্রামে কমিটি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। অবশ্য যারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী এবং জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের কথা আলাদা। তারা ‘সর্প হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য ঠিকই গড়ে উঠেছে। এই ঐক্য টিকে থাকবে, এটাই বাস্তবতা। দেশের মানুষকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এর বিরুদ্ধে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে বলেন।
কথা ঠিক। সব দলকে, ‘বাঘ-মহিষ’কে একসঙ্গে, একমঞ্চে কেন উঠতে হবে? জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাইলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে, নিজ নিজ দল ও জোট থেকেই তা করা হোক না কেন। জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য চাইলে অবশ্যই বাঘ-সাপ-হায়েনা, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-মদদদাতাদের বাদ দিয়েই করতে হবে। না হলে জোট হবে, ঐক্যও হয়তো হবে, কিন্তু এর ফাঁক দিয়ে জঙ্গিরা ঠিকই তাদের হিংস্রতা চালিয়ে যাবে!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

প্রথমকথা বলেছেন:


জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাইলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে, নিজ নিজ দল ও জোট থেকেই তা করা হোক না কেন। জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য চাইলে অবশ্যই বাঘ-সাপ-হায়েনা, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-মদদদাতাদের বাদ দিয়েই করতে হবে। না হলে জোট হবে, ঐক্যও হয়তো হবে, কিন্তু এর ফাঁক দিয়ে জঙ্গিরা ঠিকই তাদের হিংস্রতা চালিয়ে যাবে!

খুব সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.