![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি সময়ের পর পর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা এবং রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার পর এই সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করার জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে জঙ্গিবাদীদের তৎপরতা। এই তৎপরতা রুখতে না পারলে বাংলাদেশও একদিন পাকিস্তান, আফগানিস্তান সিরিয়ার মতো অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। দেশের সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমন করার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সরকার প্রধানের এই ডাকে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সরকারের এই আহ্বানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় গড়ে উঠেছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বদানকারী বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই দুই আহ্বানের মাঝে এক ধরনের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। গত ১৭ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মঙ্গোলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে যে সংবাদ সম্মেলন করেন তাতে তিনি জাতীয় ঐক্যর অগ্রগতির কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঐক্যর কথাকে কটাক্ষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি ধান ভানতে শিবের গীত গাইলেন। তার কথায়ও আবার বৈপরীত্যের সুর পাওয়া যায়, নজরুল ইসলাম খানও বলেছেন জাতীয় ঐক্য অগ্রাহ্য করা বিপজ্জনক। নজরুল ইসলাম খানসহ বিশ দলের নেতৃত্ব কী বোঝাতে চাইছেন জাতীয় ঐক্যর বিষয়ে। জাতীয় ঐক্যর সংজ্ঞাটা কী? ২০ দল কি চাচ্ছে দেশের সকল রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে এসে সমবেত হোক। তার মাধ্যমে তারা সরকারবিরোধী প্লাটফরম গড়ে তুলুক। আর এই প্লাটফরমের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়ে যাবে। এখানে প্রশ্ন জাগে জাতীয় ঐক্য কি ক্ষমতা বদলের জন্য প্রয়োজন নাকি প্রকৃতার্থে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটের উচিত আগে তা নির্ধারণ করা। বর্তমান পেক্ষাপটে জঙ্গি এবং সন্ত্রাস এমন এক চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে তা নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক খেলা খেললে তা সমগ্র জাতির জন্য হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর। তাই দলীয় মোড়কে বা ব্যানারে নয় জাতীয় ঐক্য জাতীয়ভাবে গড়ে ওঠা প্রয়োজন। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনগুলোর নৈতিক এবং আদর্শিক দিকগুলো বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন আছে। যেমন বিশদলীয় জোটকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠন করা হলে ওই জাতীয় ঐক্য দিয়ে কোনো দিনই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব নয়। কারণ বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত। বর্তমান দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসের উৎপত্তি জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে। জামায়াত বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটায় আর সেই জামায়াত হলো ২০ দলের অন্যতম শরিক। তাছাড়া ২০১৩ সালের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল অবরোধ এর নামে যে নারকীয় কর্মকা- ঘটেছিল তা কিন্তু দেশবাসী ভুলে যায়নি। আদালত কর্তৃক মানবতাবিরোধী '৭১-এর ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি ঘোষণার পর দেশব্যাপী জামায়াত যে নারকীয় কর্মকা- চালায় তার সূত্র ধরেই আজকের জঙ্গি সন্ত্রাসের উদ্ভব। পুলিশ ফাঁড়ি লুট, পুলিশ হত্যা, যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে আগুন, ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা তা-ব সংঘটিত হয়েছে এ দেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে। আর এইসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এখন ২০ দলীয় জোটকে একীভূত করে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য কি গঠন করা সম্ভব। রাজনৈতিকভাবে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য গড়তে মুক্তিযুদ্বের আদর্শের এবং চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি প্লাটফরমে আসতে হবে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্বের স্বপক্ষের কিছু দল এমন রাজনৈতিক আচরণ করছে যার ফল প্রত্যক্ষভাবে পরোক্ষভাবে জামায়াতের পক্ষেই যায়। তাই এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তি যদি জাতীয় ঐক্যর ব্যানারে একীভূত হয় তখন তো তারা জাতীয় ঐক্যর ভিতর থেকে জামায়াতের পক্ষে রাজনৈতিক ইন্ধন জোগাবে। কিছু বাম দল নিজেদেরকে থার্ড লাইনের শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচয় দিতে একটি প্লাটফরম গড়তে ব্যস্ত। তাদের এই কার্যকলাপের রাজনৈতিক ফসল তাদের ঘরে ওঠে না । এই ফসল পরোক্ষভাবে চলে যায় জামায়াতের ঘরে। জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের মসজিদগুলোতে জুমার দিন এক ধরনের খুতবার বয়ানের ব্যবস্থা করেছেন যার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের সম্পর্কে মুসলমানদের ধারণা দেয়া এবং সামাজের তৃণমূল পর্যায়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় নানাভাবে বাদ সাধছেন কেউ কেউ_ যেমন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী বলছেন, এ রকম খুতবা দশবার পড়লে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। হেফাজতের প্রধান হুজুর মাওলানা শফী বলছেন, মসজিদ দখলের চেষ্টা চলছে। তাই জাতীয় ঐক্য তৈরি যেমন জরুরি সেই সঙ্গে ঐক্য তৈরিতে সাবধানতা অবলম্বন করাও প্রয়োজন। দেশের সাম্প্রতিককালের সন্ত্রাসী কর্মকা- মুক্তিযুদ্বের চেতনা, লক্ষ্য ও আদর্শকে আঘাত করছে। স্বাধীনতার বিরোধীশক্তি ৪৫ বছর পর আবার আঘাত হানছে মুক্তিযুদ্বের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে। তাই এই সন্ত্রাসী কর্মকা-কে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত নয়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল কেন সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে তার কারণ আতশি কাচ দিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তাদের এই কারণ বের করার কৌশলটাতে দেখা যায় তারা পরোক্ষভাবে ওই সন্ত্রাসীদের মদদ জোগাচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছেন, সন্ত্রাসী কর্মকা- হওয়ার পেছনের কারণ হলো দেশের গণতন্ত্রহীনতা, ক্ষোভ, হতাশা। আসলে কি তাই? বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেই কি গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেল। যারা এ ধরনের কথায় বিশ্বাসী তারা গণতন্ত্রের প্রকৃত সংজ্ঞা বোঝেন না। দেশের গণতন্ত্র কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি নয়। কিন্তু তাদের কথায় মনে হয় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিএনপির কাছে লিজ দেয়া হয়ে গেছে তাই বিএনপি না এলে নির্বাচন গণতন্ত্রহীনতার কবলে পতিত হবে। একটি দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় কোনো দিন গণতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে না আর যদি গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েই থাকে এর জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দায়ী। বর্তমানে দেশে যতটুকু গণতন্ত্র আছে তা কি জিয়া এরশাদের আমলে ছিল, যারা নানা তাত্তি্বকতায় বর্তমান গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেন তারা একটু ভেবে দেখবেন। ১৯৭৫-১৯৯০ এই সময়টায় খুব লালন করে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করা হয়। আর এই ব্যবহারের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটে মৌলবাদী উগ্রতা যার ফল আজকের সন্ত্রাসী কর্মকা-। জাতীয় ঐক্যর ক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টিও দেখতে হবে, যেসব রাজনৈতিক দলে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে তারা জাতীয় ঐক্যে একীভূত হলে কোনো ফলদায়ক ফলাফল পাওয়া যাবে না। মার্কসীয় আদর্শ লালন করে দেশে একশ্রেণির প্রতারকের উদ্ভব হয়েছে, যারা বামপন্থী বাতাবরণে মানুষের টাকা মারছে, পার্টির সম্পত্তি কুক্ষিগত করছে তাদেরকে দিয়েও এই জঙ্গিবাদ প্রতিহতের জাতীয় ঐক্য করলে কোনো লাভ হবে না। নৈতিক স্খলনঘটিত এই বাম নেতারা যেভাবে মার্কসীয় আদর্শের বাতাবরণে মানুষ ঠকাচ্ছে অনুরূপভাবে পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিরা মানুষ হত্যা করছে। জঙ্গি আক্রমণের কবলে পড়লে মানুষের প্রাণ যায় আর এক ধরনের বাম নেতার প্রতারণার কবলে পড়লে অর্থ হারিয়ে তিলে তিলে জীবন্ত অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। ্ওই বামপন্থীরা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্রের লেশমাত্র নিজেদের মধ্যে নেই। পার্টির গণতন্ত্র অনুযায়ী পার্টি চলে না। তাই এই ধরনের লুম্পেনদেরকে জাতীয় ঐক্যে অন্তর্ভুক্তি করার প্রয়োজন নেই। কিছু বাম এবং বিএনপির ঘরানার বুদ্ধিজীবী ড. জাফর উল্লাহ বলেছেন, বাবাকে মারলে ছেলে জঙ্গি হবেই। তিনি আরও বলেছেন বর্তমান জঙ্গিবাদ নাকি এক ধরনের প্রতিবাদ। যদিও তিনি আবার এক জায়গায় বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার প্রতিবাদকে তিনি সমর্থন করেন না। তার কথায় আশ্চর্য হতে হয় জঙ্গিবাদও নাকি এক ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। যেসব জঙ্গিী ধরা পড়েছে বা নিহত হয়েছে তাদের কারো পরিবার পুলিশে হাতে নিগৃহীত হয়নি। তাছাড়া দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কথা একজন বুদ্বিজীবী কিভাবে বলতে পারেন? এদেশে জঙ্গিদের উত্থানে এ ধরনের কথিত বুদ্ধিজীবীরা পরোক্ষভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছেন এ কথা বললে কি ভুল হবে। কিছু বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের কর্মকা- পরোক্ষভাবে ইন্ধন জোগায় সন্ত্রাসী কর্মকা-কে। জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে এ ধরনের ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আচরণিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ জরুরি। সর্ষের মধ্যে যেন ভূত না ঢোকে এ ব্যাপারে সকলের সজাগ থাকতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর, অনৈতিক কাজ করা ব্যক্তি এবং প্রতারকদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়লে একসময় অর্থের বিনিময়ে মৌলবাদীরা ওদের সঙ্গে ঢুকে পড়বে জাতীয় ঐক্যে। দেশের সাধারণ মানুষ যারা রাজনৈতিক দলভুক্ত নন তারা কোনো সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। তাই জাতীয় ঐক্য গড়তে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেন এমন রাজনৈতিক দলকে এবং প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত কথিত বাম চেতনার রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত না করলেও সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যর কোনো ক্ষতি হবে না। '৭২-এর সংবিধানের কথা মুখে বলে আর প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক শক্তির জোগান দেয় তাদের কাছ থেকে জাতীয় ঐক্যকে দূরে রাখতে হবে।
সুপ্তভাবে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি নানা প্রলেপের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্লাটফর্মগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকা- করছে তাই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই। বর্তমান সরকারের সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কাজে জনগণের সমর্থন রয়েছে। দেশের ব্যাপক অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এই কার্যক্রমগুলোর মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী।
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন: কলাম লেখক
©somewhere in net ltd.