নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় ঐক্য কতদূর

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯

দেশে জঙ্গি তত্পরতা নতুন না হলেও গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ হামলার পর থেকে জঙ্গিবাদের বিপদ সম্পর্কে আমরা সবাই যেন বেশি সচেতন হয়ে উঠেছি। জঙ্গিরা যখন একজন মানুষ হত্যা করে নিরাপদে সটকে পড়ছিল তখন আমরা অনেকেই একে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে দেখেছি এবং মনে করেছি এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে গুলশান এবং শোলাকিয়ার ঘটনার পর আমাদের সবার কানেই পানি ঢুকেছে। জঙ্গিরা যে কতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং তারা যে যেকোনো মাত্রার নিষ্ঠুর সহিংসতা চালাতে সক্ষম সেটা বুঝতে পেরে আমরা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বানও এখন বেশ জোরেশোরেই চারদিক থেকে উঠছে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিবৃন্দ সবাই এখন ঐক্যের কথা বলছেন।
জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের কথা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে। আমার সাম্প্রতিক দু-একটি লেখায় রাজনৈতিক ঐক্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো ধরনের ঐক্য সম্ভব নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন না করলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে ঐক্য করবে না। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে দেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে বিএনপির বড় ভূমিকা রয়েছে। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদেই দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের এই অভিযোগ বা ধারণা ভুল প্রমাণ করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। বরং বিএনপি নেতারা একদিকে জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, অন্য দিকে জঙ্গিবাদ উত্থানের জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকা এবং মানুষের কথা বলার অধিকার না থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে।
জঙ্গিবাদ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণেই শুধু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ঐক্য হবে না, তা নয়। এই দুই দলের মধ্যে আরো অনেক প্রশ্নেই রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে, যেগুলো দূর না করে ঐক্য গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এই দূরত্ব দূর করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কখনোই কোনো উদ্যোগ বা আগ্রহ দেখা যায় না। আমার এই মতের সঙ্গে বিএনপি সমর্থক কেউ একমত হবেন না। তারা বলবেন, বিএনপিকে দূরে ঠেলার দায় সরকার তথা আওয়ামী লীগেরই। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার না দিয়ে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে সরকারই দেশে অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে। সেজন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেটা না করে সরকার দেশে যাই ঘটুক না কেন তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে বিএনপিকে হেনস্থা করার কৌশল নিয়ে চলছে।
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির যে অভিযোগ তার সবটুকু হয়তো অমূলক নয়। তবে সরকার যে বিএনপির প্রতি কিছুটা মারমুখী নীতি নিয়েছে সেটার জন্য বিএনপিই মূলত দায়ী। অবশ্য এটা লম্বা বিতর্কের বিষয়। আজ সেদিকে না গিয়ে আমরা বরং দেখার চেষ্টা করি, বর্তমান পর্যায়ে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কীভাবে আস্থা-বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের দেশের মানুষ মোটা দাগে দুই রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত। এক শিবিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, আরেকটার বিএনপি। অন্য মতের মানুষ অবশ্যই আছেন। কিন্তু তারা এই দুই দলের চাপের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সব সময় আলাদাভাবে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে না। ফলে আমাদের দেশে রাজনীতি আবর্তিত হয় মূলত এই দুই দলকে কেন্দ্র করেই। দুই দল দুই বিপরীত অবস্থানে থাকে বলেই আমাদের রাজনীতিতে সুস্থতা কম। দুই দল কেন নিজেদের মধ্যেকার বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয় না সেটা অনেকের কাছেই রহস্যজনক বলে মনে হয়। কি করলে দুই দল কাছাকাছি আসতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ কেউ কেউ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু যে হয়নি সেটা অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।
আমার কাছে দু-একজন জানতে চেয়েছেন, বিএনপি কি করলে আওয়ামী লীগের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে বলে আমি মনে করি। আমি তাদের যে উত্তর দিয়েছি সেটাই এখানে পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছি। আমি মনে করি, বিএনপিকে অবিশ্বাস করার অনেক কারণ আওয়ামী লীগের আছে। সবচেয়ে বড় কারণ জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতার যে পরিবর্তন ঘটে তার প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি আওয়ামী লীগ ভুলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় জিয়াউর রহমানের নাম নানাভাবেই এসেছে। তাছাড়া বিএনপি যেভাবে জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে এবং করছে সেটাও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করার যে মূঢ়তা বিএনপি দেখিয়ে আসছে তা আওয়ামী লীগকে সারাক্ষণই পীড়িত করে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিংবা ক্ষমতার বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও সমঝোতা তৈরি হওয়ার মতো কোনো কিছুই করেনি। এখন বিএনপির সামনে সুযোগ এসেছে পুরনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে নতুনভাবে সামনে অগ্রসর হওয়ার। বিএনপি যদি আন্তরিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসা করতে চায় তাহলে এই আগস্ট মাসেই তারা তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।
১৫ আগস্ট বাঙালির শোকের দিন। বেদনার দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একদল কুলাঙ্গার নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিএনপি নিজেদের গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দাবি করলেও কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যার নিন্দা করেছে বলে শোনা যায়নি। উল্টো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিনটিতে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা শুরু করেন। অথচ এটা সবারই জানা যে, ১৫ আগস্ট তার প্রকৃত জন্মদিন নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটিকে নিজের জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত নিচু রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। তার এই হঠাত্ জন্মদিন আবিষ্কারের বিষয়টি আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এবার কি খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকবেন? যদি তিনি সেটা করেন এবং ১৫ আগস্ট তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করতে যান তাহলে আওয়ামী লীগকে তিনি কিছুটা চাপের মধ্যে ফেলতে পারবেন। কিন্তু এমন ঔদার্য দেখানোর মতো মানসিকতা বেগম জিয়ার আছে কি ? বিএনপি যদি ১৫ আগস্ট অন্তত একটি বিবৃতি দিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে দলের অবস্থানের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে তাহলে বলা যাবে যে জাতীয় সংকটের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলার সদিচ্ছা বিএনপির রয়েছে। বিএনপি কি সেটা করবে ?
১৭ আগস্টও বিএনপির সামনে সুযোগ আসবে নিজেদের জঙ্গি বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করার। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে এতো বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটানো অসম্ভব ছিল বলে তখন নানা মহল থেকেই অভিযোগ করা হয়েছিল। বিএনপি নেতাদের কারো কারো সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি বিষয়টি খুব বেশি আমলে নিয়েছে বলে মনে হয়নি। এখন বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদের অভিযোগ এখনো উঠছে। এবার ১৭ আগস্ট উপলক্ষে বিএনপি এমন কিছু করতে পারে যা থেকে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মানুষের কাছেও ভিত্তিহীন বলে মনে হবে। বিএনপি বিবৃতি দিয়ে কিংবা সমাবেশে বক্তৃতা দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপিকে বলতে হবে যে ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গিদের ব্যাপারে তারা পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেনি। তাদের অমনোযোগ কিংবা শৈথিল্যের কারণেই সে সময়ে জঙ্গিরা দেশে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এখন সব দোদুল্যমানতা পরিহার করে বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবেই দাঁড়াতে চায়। দলটি কথায় এবং কাজে এমন কিছু করবে না যা থেকে কারো মনে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে তারা আসলে জঙ্গিবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
২১ আগস্টও বিএনপি নিজেদের ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিশ্বাস অর্জনের দিকে পা ফেলতে পারে। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ই ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২২ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন শেখ হাসিনাসহ দলের শত শত নেতা-কর্মী। শেখ হাসিনাসহ শীর্ষনেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য। এতো বড় একটি হামলার ঘটনার দায় তখন সরকারে থাকা বিএনপি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বিএনপি নেতাদের কারো কারো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য এর মধ্যেই জানা গেছে। হাওয়া ভবন এবং বিএনপির ‘ভবিষ্যত্ কান্ডারি’ বলে পরিচিত তারেক রহমানের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি বিএনপি স্বীকার না করলেও অন্যদের কাছে তা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। বিএনপির আরেক নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন। ২১ আগস্টের ঘটনাটি আওয়ামী লীগের কাছে ১৫ আগস্টের মতোই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখন বিএনপি কি তাদের তখনকার ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবে ? যদি বিএনপি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, অভিযুক্তদের দল থেকে বের করে দেয় এবং ঘটনাটি খুবই গর্হিত ও নিন্দনীয় ছিল সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করে তাহলেই কেবল আওয়ামী লীগের কাছাকাছি যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হতে পারে। ঐক্যের পথের বাধা দূর হতে পারে। বিএনপি কি তেমন পরিবেশ তৈরি করতে চায় ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.