নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি দমনে সচেতনতা

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৫

মানুষই শক্তি। যুগে যুগে একথা শুনিয়েছেন জ্ঞানী-গুণী ও সুধীজনে। তথ্য-প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিপ্লবের যুগে আজও এই সত্য সব সত্যের চাইতে মহাসত্য হিসেবে দণ্ডায়মান। এ কারণেই আজ চীনের ১৩০ কোটি এবং ভারতের ১২০ কোটি মানুষ এখন আর বোঝা নয়, সম্পদ। শুভ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলে একাই একজন মানুষ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য অনেক কিছু করতে পারে, যার অজস্র উদাহরণ আছে। তবে একজনের সঙ্গে পাঁচজন, দশজন একত্র হলে জ্যামিতিকহারে মানুষের শক্তি বাড়ে। জনমানুষ সচেতন হলে কি রকম অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তার উদাহরণ ইতিহাসে ভুরি ভুরি, বাঙালিদের ইতিহাসেও তা রয়েছে। আর জনমানুষের উত্থান সবসময় শুভ মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে হয় এবং তার পক্ষে হয়। অমোঘ নিয়তি এবং আধুনিক যুগের যৌক্তিক দর্শনের শক্তিবলে সবসময় চূড়ান্ত বিচারে শুভ শক্তির জয় হয়েছে, জনমানুষ কখনো অশুভ শক্তির পক্ষে যায়নি। তত্ত্বকথার সূত্র ধরে এখন আসল কথায় আসি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটা টেকঅব পর্যায়ে আছে। চলমান ক্রান্তিকাল বা টার্নিং পয়েন্ট সফলভাবে অতিক্রান্ত করতে পারলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটা মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু কোনো যুগেই কোনো দেশের ক্রান্তিকাল কন্টকমুক্ত ছিল না। বাংলাদেশও আজ একই রকম কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন। তাই ভয়, শঙ্কা নয়, ভীতি ছড়ানো নয়, আবার শত্রুপক্ষকে খাটো করে দেখাও নয়। ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে অবলম্বন করে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। শুভ মূল্যবোধের জয় চিরদিন হয়, হবে। ক্রান্তিকালের বড় চ্যালেঞ্জ ও সংকট চলমান উগ্র ধর্মান্ধতাপ্রসূত জঙ্গিবাদ ও মাঠপর্যায়ে জঙ্গিদের তত্পরতা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনমানুষ, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সচেতন হলে এবং যথার্থ ভূমিকা রাখলে জঙ্গিরা পানিবিহীন মাছের অবস্থায় পড়বে। তাদের কোনো উদ্দেশ্যই সফল হবে না। একটা প্রধান দৈনিকের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৯৯-২০১৬ পর্যন্ত, ১৭ বছরে জঙ্গি আক্রমণে নিহত হয়েছেন ২৭৬ জন এবং আহত ১৬৭৭ জন। উল্লিখিত আহত-নিহতদের পরিচয়ের ওপর একটু মোটাদাগে তাকালেই কারা এদেরকে হত্যা করতে পারেন, সেই জঙ্গি ও তাদের গডফাদার-মেন্টরদের সঠিক পরিচয় ও শেকড় চিনতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রথমত তারাই জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যারা রাষ্ট্র-সমাজের সকল অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শন অর্থাত্ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন এবং মনে করেন রাষ্ট্র পরিচালনার মূল অবলম্বন হতে হবে বাঙালি সংস্কৃতি। দ্বিতীয়ত. গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাবের পরপরই জঙ্গিরা নতুন ক্যাটাগরির টার্গেট নিধারণ করে। যার প্রথম শিকার হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার। পরবর্তীকালে আরো অনেকে। গণজাগরণ মঞ্চকেন্দ্রিক তরুণ ব্যক্তিবর্গও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেন, কি কারণে আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন, তার কমপ্রিহেনসিভ বিশ্লেষণ জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ও পরিচয়কালে স্পষ্ট করে দিবে এবং এদের গডফাদার-মেন্টর ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাদের পূর্ণ পরিচয়ও দিবালোকের মতো সকলের কাছে স্পষ্ট হবে। ২০১৩ সালে এসে জঙ্গিরা তৃতীয় ক্যাটাগরির টার্গেট নির্ধারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ, ধর্মগুরু-যাজক ও বিদেশি নাগরিকদের বেছে নেয়।
ভারতের মুর্শিদাবাদের খাগড়াগড়ে ধরা পড়া বাংলাদেশি জেএমবি সদস্য এবং সিঙ্গাপুরে আটক ও শাস্তি হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় এ পর্যায়ে জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করা এবং তাঁর সরকারকে উত্খাত করা। এ পর্যন্ত বর্ণিত তথ্য-উপাত্ত এবং যৌক্তিকতার অবস্থান থেকে মূল্যায়ন করলে, জঙ্গি, তাদের গডফাদার-মেন্টর ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাদের পরিচয়ের আর কিছু বাকি থাকে না। একই সঙ্গে জঙ্গিরা জনগণের মধ্যে কিভাবে বিচরণ করছে, সেটাও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রথমত, তারা মূল স্রোতের রাজনীতির সকল স্তরের সঙ্গে ছদ্মবেশে বিচরণ করছে। দ্বিতীয়ত. মসজিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ছদ্মবেশে আছে। তৃতীয়ত. রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তর ও সেক্টরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছদ্মবেশে বহাল-তবিয়তে বসে আছে। তারপর শিক্ষাঙ্গনে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সর্বত্রই নিজ নিজ পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে অবস্থান করছে। এরাই যে যেখানে আছে, সেখান থেকেই সুযোগমতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাই করে জঙ্গিতে পরিণত করছে। চট্টগ্রামের সুমন হোসেন, উত্তরার মুহম্মদ ওমর এবং কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি জোবায়েরের জঙ্গি হওয়ার কাহিনী (ডেইলি স্টারে যথাক্রমে ২৪, ২৬ ও ২৮ জুলাই) পড়লে আমার উপরোক্ত কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। পরিপূর্ণ মগজ ধোলাই সম্পূর্ণ হলে তারা জঙ্গিরূপে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নির্দেশিত মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য জনমানুষের ভেতরে অবস্থান করে ছদ্মবেশে আক্রমণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। তাই জনমানুষ সচেতন হলে, সাহস সঞ্চয় করলে কোনোভাবেই তারা জনমানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জঙ্গি আক্রমণের প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে পারবে না। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটা একেবারেই অসম্ভব। তাই প্রত্যেকটি মানুষ, যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই যতটুকু সম্ভব, আর কিছু না পারলে অন্তত জঙ্গিদের প্রতি প্রকাশ্যে মানুষের সামনে ঘৃণা প্রকাশ করাটাও বিশাল কাজ। ইতোমধ্যে এরকম কাজের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের মায়ের থেকে সংসারে কেউ আপন হয় না। লাশ সব পরিবার গ্রহণ করছেন না।
সেই মাও জঙ্গি ছেলের লাশ দেখতে অস্বীকার করেছেন। মানসতন্ত্রের এমন জাগরণকে আরো বিস্তৃত করার জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশেষ করে মিডিয়া বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যক্তির পরে আসে পরিবারের ভূমিকা। জঙ্গিয়ায়নে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে জঙ্গিরা ভার্চুয়াল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। প্রতিনিয়ত শত শত নিবন্ধ, লিফেলট, স্লোগান ছেড়ে দিচ্ছে। তরুণদের একটা অংশ এসব পড়ার পর তার বিপরীতের কোনো পাল্টা বর্ণনা পেয়ে জঙ্গিয়ানার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সুতরাং পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলেমেয়েদের ল্যাপটপের প্রতি আসক্তি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া দরকার। ধর্মের মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার করে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে বহু রকম বিকৃতিমূলক তথ্য প্রচার করে। অনলাইনে এসব পড়ে রক্ত গরম তরুণ প্রজন্মের মাথা বিগড়ে যায়। তারা এতই একরোখা হয়ে যায় যে, ওসবের বিপরীতের বক্তব্যকে আর শুনতেই চায় না। মূল স্রোতের মিডিয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ কম। হতে পারে তাদের মনের ভেতরে উদ্রেক হওয়া প্রশ্নের উত্তর তারা কারো কাছ থেকে পাচ্ছে না। তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে কেউ ইন্টার অ্যাকশন করছেন না। তাই পরিবারের সদস্যরা যদি ঘরোয়াভাবে খোলামনে দেশ, জাতি, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরবগাঁথা এবং চলমান বিশ্ব নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলে তরুণ প্রজন্মের মনের ভেতরের অনেক বিভ্রান্তি সহজেই দূর হতে পারে। তার আগে সর্বাগ্রে দরকার পিতা-মাতার জ্ঞান আহরণ এবং সচেতন হওয়া। আশা করা যায় নিজ সন্তানের সঙ্গে কেউ মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিবেন না। বর্ধিত ও বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নিবিড় সম্পর্ক থাকলে তখন কারো মধ্যে হঠাত্ কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটলে তা অন্য যে কারো চোখে ধরা পড়বে। পয়েন্ট অব নো রিটার্নে পৌঁছাবার পূর্বে ধরা পড়লে সহজে তাকে ফিরানো যাবে। একই সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকরা সচেতনভাবে ছাত্রদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখলে জঙ্গিয়ায়ন বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এভাবে ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে একদিকে যেমন মগজ ধোলাই রোধ হবে, তেমনি জঙ্গিরা মানুষের মধ্যে বিচরণ করে, সেই মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালাতে পারবে না। জনসচেতনতার উদ্রেক ও তা বিস্তারের ব্যক্তি ও পরিবারের চাইতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। দেশের সর্বত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ ও গণপ্রতিরোধের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলে মানুষের ভেতর সাহস ও আস্থা অটুট থাকবে, বৃদ্ধি পাবে। জঙ্গিদের অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষের ভেতর ভয়, ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করতে পারবে না। এখানে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহালো—জঙ্গিরা যেহেতু সশস্ত্র অবস্থায় থাকে, তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাহস সঞ্চয় করে মানুষের দাঁড়ানোর জন্য মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলে ছদ্মবেশ কেন, কোনো বেশেই তারা কোথাও জায়গা পাবে না। জনগণ সচেতন, সাহসী ও জোটবদ্ধ হলে জঙ্গিরা গ্রামে-গঞ্জে নিভৃত পল্লিতে নিরীহ মানুষকে আর হত্যা করতে পারবে না, তার একটা উদাহরণ গত ৪ আগস্ট বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষ সৃষ্টি করেছেন। জানা যায় ওইদিন জঙ্গিরা পূর্বের মতো বৌদ্ধ মন্দিরের ভিক্ষুকে হত্যা করতে এলে মন্দিরে রক্ষিত মাইকে ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত মানুষ জঙ্গিদের ধাওয়া করে। জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। তাই জনসচেতনতাই জঙ্গিদেরকে রুখে দেওয়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.