![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্প্রদায়ের বাইরে অন্যদের অবস্থানকে সমানভাবে গুরুত্ব না দেওয়া, গ্রাহ্য না করার ধারণা লালন করাকেই সহজ-সরলভাবে সাম্প্রদায়িকতা বলা হতে পারে। এটি ধর্মীয়ভাবে যখন অবাধে সংক্রমিত হতে থাকে তখন এর নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কারো হাতে থাকে না। শেষ পর্যন্ত এর ভয়ানক প্রকাশ ঘটে। যেটিকে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়। জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রেও যখন সীমা লঙ্ঘিত হতে থাকে, তখন উগ্র জাতীয়তাবাদ তথা ফ্যাসিবাদ, নাৎসবাদ বা শভিনিজমের রাস্তা খুলে দেয়। এতে নিরীহ মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়, সভ্যতা ধ্বংসের হুমকিতে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে, জার্মানিতে উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদ থেকে নাৎসবাদ তৈরি হয়েছে। জার্মান রক্তকে নির্ভেজাল ভাবা, অন্য জাতিকে নিকৃষ্ট ভাবার ভাবাদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিটলার উৎসাহিত করেছিল। ফলে জার্মানি থেকে ইহুদিরা বিতাড়িত হতে থাকে, যুদ্ধের সময় ইহুদিসহ প্রতিবেশী জাতির মানুষকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, পৃথিবীতে এককভাবে জার্মান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উগ্র মতাদর্শে যুবক শ্রেণিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। সভ্যতাকে গুঁড়িয়ে ফেলার জন্য তরুণদের হাতে অস্ত্র, অর্থ ও মগজে উগ্র মতাদর্শ ঢুকিয়ে দেওয়া হলো, যারা সন্ত্রাসী উপায়ে নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছিল। এটিকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বা শভিনিজম বলা হয়। অথচ উনিশ শতকে জার্মান জাতীয়তাবাদের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খণ্ড খণ্ড জার্মান জাতি ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্র গঠন করেছিল। একইভাবে ইতালিও। ইউরোপ জাতিতান্ত্রিক আধুনিক রাষ্ট্রের পর্বে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে বড় জাতির নেতৃত্বে রাষ্ট্র গঠিত হলেও ছোট জাতিগুলোর সমানাধিকারকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, আর্থসামাজিকভাবেও তাদের একইভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোনো সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ, অথবা সংকীর্ণ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে স্থান না দেওয়ার নীতি অনুসৃত হতে থাকে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও ইতালিতে উগ্র হঠকারী জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়, পাঁচ কোটির মতো নিরীহ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়, ১০ কোটির মতো মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়, হাজার হাজার গ্রাম ও লোকালয়, শত শত শহর ধ্বংস হয়, মানবসভ্যতা চরম ধ্বংসের মুখে পড়ে। কেননা ফ্যাসিবাদ-নাৎসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে উগ্র রাষ্ট্রীয় বাহিনী সংঘবদ্ধ হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন জাতি পরিচয়ের মানুষের অধিকারকে ধূলিসাৎ করার জন্য নানা বাহিনীকে মতাদর্শগতভাবে এতটাই প্ররোচিত, উত্তেজিত, অন্ধভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছিল যারা বিশ্বাস করতে শিখেছিল পৃথিবীতে হিটলারের লিখিত ‘মাইন ক্যাম্প’ ছাড়া আর কোনো বইপুস্তকের প্রয়োজন নেই, লাইব্রেরি থেকে বইপুস্তক, রাস্তায় নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, আইনস্টাইনদের মতো জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের মেরে ফেলার উন্মাদনাও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই তখন দেশত্যাগ করে প্রাণে বাঁচলেও অনেককেই হত্যা করা হয়েছিল তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার জন্য, লেখালেখি ও গবেষণার জন্য। যে কারণে ফ্যাসিবাদকে বলা হয় উগ্র মতাদর্শ—যার ভিত্তি হচ্ছে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ, যার পেছনে ছিল বিরাট লগ্নি পুঁজির জোগান। নাৎস ও ফ্যাসিবাদের মতাদর্শিক চরিত্র অনেকটাই হুবহু মিলে যায় বর্তমান দুনিয়ার উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিবাদের সঙ্গে। এটিও একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ—যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, মতাবলম্বীদের হত্যার জন্য তরুণদের ব্যবহার করে, এর পেছনেও থাকে প্রচুর লগ্নি পুঁজির জোগান, সেই অর্থ দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা অপশক্তি নানা উপায়ে সরবরাহ করে থাকে। এখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় না থেকেও জঙ্গিবাদী শক্তি সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের আবেগ, অনুভূতি ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে হঠকারী উপায়ে হত্যার কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ নিয়ে থাকে। বিষয়টিকে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক ধারার পরিণতি হিসেবেই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। আমাদের দেশে চল্লিশের দশকে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ দ্বিজাতিতত্ত্বের উদ্ভাবিত রাজনৈতিক প্রবাহের সুযোগ লাভ করেছিল। এর আগেও এর যৎসামান্য প্রভাব সমাজ ও রাজনীতিতে ছিল। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের বিস্তারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ফলে সাম্প্রদায়িকতা পুষ্ট হতে সুযোগ পায়। ফলে এর শিকড় ছিন্ন করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই। সেই লড়াইটি পূর্ব বাংলায় যতটা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বুঝেশুনে করেছিল, অন্য কোনো দলই অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের লড়াইতে ততটা যুক্ত ছিল না, তাদের বেশির ভাগই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এ ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় গোটা জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ষাটের দশকে তিনি সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিশ্বাসের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, এর ফলে বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্র স্বাধীন হতে পেরেছিল। তবে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা স্বাধীনতা-উত্তরকালে দীর্ঘ পথপরিক্রমার বিষয় ছিল। এর সঙ্গে প্রথমেই একটি আধুনিক শিক্ষানীতিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার আলোকে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করা, গড়ে তোলার গুরুত্ব অপরিসীম ছিল। বঙ্গবন্ধু সেই উপলব্ধি থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের শিক্ষানীতির ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন। কেননা পাকিস্তান যুগের সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত করা ব্যতীত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া মোটেও সম্ভব নয়। এটি বঙ্গবন্ধু ঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া মৌলনীতির একটি সংবিধান প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা চালু করতে চেয়েছিলেন, দেশীয় নানা উগ্র, হঠকারী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, বিদেশি নানা অর্থের জোগানদাতা গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর একের পর এক প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর অনুসারীদের হত্যা ও উত্খাতের পরিকল্পনা মোতাবেক অগ্রসর হয়, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার পথচলাকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দেওয়া হলো। যারা হত্যা, ক্যু, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল তারা তাদের পরিকল্পনা মোতাবেকই করেছিল। ক্ষমতা দখল করেই তারা দ্বিজাতিতত্ত্বের ভাবাদর্শকে নতুন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মোড়কে হাজির করল, পাকিস্তান যুগের সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শকে সম্মুখে নিয়ে আসা হলো। আধুনিক জাতিতত্ত্ব থেকে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর বিভাজনে দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলে সুদূরপরাহত হয়ে যায় অসাম্প্রদায়িক জাতিতাত্ত্বিক শিক্ষা, রাজনীতি, সংস্কৃতি গঠনের স্বপ্ন। ফলে দ্রুতই সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ পলিমাটি খুঁজতে থাকে, সেটির শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা পেতে মোটেও দেরি হয়নি। ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়, মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতকে পাকিস্তান যুগের কালো চমশায় দেখার ব্যবস্থা করা হয়, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকেও সেভাবেই দেখা হয়, সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শকেই সর্বত্র আমন্ত্রণ জানানো হয়। অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র তথা ভাবাদর্শের রাজনীতিকে কোণঠাসা করা হয়, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতির সর্বত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয়। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে নেওয়া হলো সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে চিন্তা করতে সুযোগ করে দেওয়ার মধ্যে, ১১টি ধারা-উপধারায় প্রবাহিত করে শিক্ষাকে যেখানে নেওয়া হলো, সেখানে অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনায় তরুণ প্রজন্মের গড়ে ওঠার পথ প্রায় রুদ্ধ করে দেওয়া হলো। দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্যও প্রতিষ্ঠা করা হলো। শিক্ষা, রাজনীতি ও প্রচারমাধ্যমের কোথাও বিজ্ঞানচেতনা, বিজ্ঞানমনস্কতা, সামাজিক সচেতনতা, অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাকে উৎসাহিত করার সুযোগ রাখা হলো না। বরং উগ্র মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভাবাদর্শকেই নার্সিং করা হতে থাকে। দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাজার সৃষ্টি করা হলেও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িকতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হলো। মানুষের পবিত্র ধর্মচর্চাকেও উদারবাদের গণ্ডি থেকে আলাদা করা হলো। ফলে আমাদের সমাজে ঐতিহাসিকভাবে যে সুফিবাদের বিকাশ ঘটেছিল সেটি অচল করে দেওয়া হলো। মানুষের মধ্যে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার শিক্ষার ঐতিহ্যকে বিশ্ববাস্তবতায় চর্চা ও লালনপালনের শিক্ষা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ব্যাপকভাবে সুযোগ করে দেওয়া হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত করা হলো। তাদের হাতে প্রচুর লগ্নি পুঁজির সঞ্চালন ঘটল। এর মধ্য দিয়ে তারা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আর্থসামাজিক, সেবা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক নানা প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তারা আরেকটি সমান্তরাল আর্থরাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যার লক্ষ্যই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া, চ্যালেঞ্জ করা। তাদের পক্ষে অনেকটাই করা সম্ভব হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের একটা গোষ্ঠী এর ফলে এতটাই শক্তিশালী ও সক্ষম হয়ে উঠেছে যারা লোকবল, অর্থবল ও অস্ত্রবলে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নানা জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতা ও নেটওয়ার্ক তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কাজ করছে। তবে যে বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে তা হলো, গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মূলতই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিস্তারের বাতাবরণেই নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমান বা জেনারেল হু. মু. এরশাদ তা কতটা বুঝে করেছেন, গভীরভাবে বিশ্লেষণের বিষয়। তবে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধ্যানধারণায় বেড়ে ওঠা, গড়ে ওঠা কোনো রাজনৈতিক নেতার পক্ষে ফেলে আসা পাকিস্তানের জুতা রাজনীতির পায়ে পরা সম্ভব হতো না। যেহেতু জিয়া-এরশাদ রাজনীতির প্রোডাক্ট নন, তাই তাঁরা সাম্প্রদায়িকতার ঘুড়িকে উড়তে দিয়ে গোটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই পশ্চাত্মুখী করে ফেলেছেন। সাম্প্রদায়িক নানা বিষয় আমাদের রাষ্ট্রের সর্বত্র ফিরিয়ে আনার ফলে এখন চিরায়ত গণতন্ত্রের রাজনীতি মস্ত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী একসময় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করেছিল, সেই বাংলাদেশে এখন সাম্প্রদায়িকতার ভেদবুদ্ধিতে বিভ্রান্তি ও বিভাজন এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য এ দেশের শিক্ষিত তরুণদেরও একটি বড় অংশ ফ্যাসিবাদের মতোই সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে দ্বিধা করছে না, দেশ ছেড়ে আইএসে যোগ দিতেও প্রস্তুত। এটি হচ্ছে দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনব্যবস্থার কাল্পনিক প্রচার ও প্রসার ঘটানোরই পরিণতি। সেই অন্ধ মতাদর্শ আমাদের সমাজের ভেতরে এখন টর্নেডোর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করে রেখেছে, নানা বিভ্রান্তিতে সমাজ, রাজনীতি, ধর্মীয় সম্প্রদায়কে জর্জরিত করে রেখেছে। এমন আত্মঘাতী বিশ্বাস ও চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া খুব সহজ নয়। সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে শেখা, রাষ্ট্রকে ভাবতে শেখা, অন্যের অধিকার স্বীকার করে নেওয়া, শ্রদ্ধা করতে শেখা, রাষ্ট্রকে মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে শেখা, সেভাবে আচরণ করা খুব সহজ নয়। রাষ্ট্রের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে সেভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। এর বাইরে স্বর্গ-নরকের বিষয়কে রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুলিয়ে ফেলে বা সঙ্গে যুক্ত করা কাল্পনিক চিন্তাধারা থেকে মুক্ত করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। বিশ্বজনীন মানবিক মূল্যবোধে বেঁচে থাকা, সুখে-শান্তিতে থাকা, অন্যের অধিকারকে হত্যা না করে, নিজের জীবনকে বিপন্ন না করে আধুনিক যুক্তিসংগত শিক্ষায় বেড়ে ওঠা, বসবাসের চিন্তাই হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনের বিধান। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সেই শিক্ষা ও রাজনীতিই গ্রহণ করে, কোনো উগ্র, হঠকারী রাষ্ট্র বা রাজনীতি নয়। আজকের জার্মানিসহ বেশ কিছু উন্নত দেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির সেই উদাহরণ হয়ে আমাদের কাছে বিরাজ করছে। আমরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০৩
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: নিজের সম্প্রদায়ের বাইরে অন্যদের অবস্থানকে সমানভাবে গুরুত্ব না দেওয়া, গ্রাহ্য না করার ধারণা লালন করাকেই সহজ-সরলভাবে সাম্প্রদায়িকতা বলা হতে পারে। - এখানে সম্প্রদায় কি কেবল ধর্মীয় হবে না কি রাজনৈতিকও হতে পারে? যদি কোন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসীরা নিজেদের ছাড়া অন্যদের অবস্থান সমানভাবে গুরুত্ব না দেয় গ্রাহ্য না করে তাহলে কি তাদেরকে সাম্প্রদায়িক বলা হবে না? আর এটাই যদি চুড়ান্ত উগ্র রূপ ধারণ করে তখন সেটাকেই বা কী বলা হবে??
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০১
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ফ যডফগড