![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিশোর-তরুণদের একটি অংশের বখে যাওয়া, অপরাধে জড়িয়ে পড়া, জঙ্গি হওয়া, মানুষ হত্যায় মেতে ওঠা ইত্যাদি ঘটনা দেখে আমরা হতবাক হচ্ছি, নানা পরামর্শ শুনছি এবং দিচ্ছি। কিন্তু এতে খুব একটা কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। কার সন্তান কোন বয়সে গিয়ে কী করে বসে তা যেমন কেউ আগে থেকে বলতে পারছে না, আবার বেশিরভাগ সন্তানই গড়পড়তা মানুষ হওয়ার চেয়ে আধুনিক চিন্তাশীল, সৃজনশীল মানুষ হয়ে ওঠার দৃষ্টিতে পড়ার মতো এমনটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তন দৃষ্টিতে পড়ার মতো, সামাজিক উপরি কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটছে দ্রুততার সঙ্গে, কিন্তু আধুনিক মানস গড়ে ওঠার সমস্যা যেন দিন দিন প্রকটই হয়ে উঠছে। অনেক অভিজাত পরিবারই ভাবতে পারছে না, তাদের বিত্ত ও বৈভবের শেষ ভোক্তা কে হবে। তাদের কারো কারো সন্তান তো অপ্রত্যাশিত পথেই চলে গেছে, তাদের মনের হাহাকার দূর করার উপায় যেন কিছুতেই নেই। বেশিরভাগ পরিবারই কোনো না কোনো সন্তানকে নিয়ে বেশ কষ্টে আছে, এদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। এমনিতে দেশের বেড়ে ওঠা তরুণদের বেশিরভাগই লেখাপড়া ও দক্ষ জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠা, কাজকর্ম পাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে মোটেও প্রত্যাশার ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারছে না। আমাদের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক অংশের খুব সামান্যই দেশের জন্য ইতিবাচক মানবসম্পদে পরিণত হতে পারছেন, বেশিরভাগই অদক্ষ, অযোগ্য এমনকি নানা ধরনের বোঝা হয়ে জীবনযাপন করছেন। দেশটাকে আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে অনেকটাই যেন বাধা হয়ে উঠছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিকজীবন ব্যবস্থায় শিশু-কিশোর ও তরুণ নিয়ে খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে চিন্তা করলে নানা অব্যক্ত অসম্পূর্ণতা, ব্যর্থতা, হতাশা এবং মর্মবেদনাকে যেন ঢেকে রাখছি। এ সমস্যার সমাধানে আমরা কেউ দেশ ছাড়ছি, অনেকেই নিয়তিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছি, বাকি মানুষগুলো জানিই না আসলে আমাদের কী করা উচিত। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা সামগ্রিক এই বিষয়টিকে নিয়ে একটি আধুনিক যুগোপযোগী অবস্থান তৈরিতে ততটা সক্ষমতা রাখে না।
বস্তুত আমাদের শিশু, কিশোর ও তরুণদের বেড়ে ওঠার পথে মানুষ হওয়া ও গড়ে ওঠার বিষয়গুলোর মধ্যে যেমন অসংখ্য বিরাট ঘাটতি ও অভাব রয়েছে, তেমনি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সচেতনতাবোধেরও প্রচ- অভাব রয়েছে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের দেহ গঠনে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি গরিব, ধনী নির্বিশেষে সবাই বোঝেন এবং আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ পরিবারগুলো তা মিটিয়েও থাকে, দরিদ্র পরিবারগুলোর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় খাবার শিশু-কিশোরদের দিতে পারছে না এটি জানা কথা। কিন্তু শিশু থেকে তারুণ্য পর্যন্ত বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাদের মানস গঠনে যে ধরনের শিক্ষা, দীক্ষা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, মানববোধ ও চেতনাবোধ গড়ে তোলার উপাদান থাকতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মহলেই রয়েছে অবিশ্বাস্য রকম ঘাটতি ও অভাব। এটি অনেকটাই নির্ভর করছে পারিবারিক বিশ্বাস, অবিশ্বাস, চেতনাবোধ, শিক্ষাদীক্ষার ধরন-ধারণের ওপর। একটি শিশুকে তার চারপাশ বোঝা, চেনা, জানা এবং শেখার শুরু থেকে শিক্ষালয় যাওয়া পর্যন্ত, কিশোরকালের গুরুত্বপূর্ণ জানা-শেখার ধাপগুলো এবং অবশেষে তারুণ্যে প্রবেশ ও সময়টি অতিক্রম করার পুরো সময়টিকে একজন তরুণ বা তরুণী কীভাবে অতিক্রম করছে, কী শিখছে, জানছে ইত্যাদি বিষয়ের কোনো একটিকেও অবহেলা করার সুযোগ নেই। বলা চলে শিশুর তিন-চার বছর বয়স থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার অর্থাৎ ২৩-২৪ বছর বয়সটি পর্যন্ত বড় ধরনের মানস গঠনের নানা স্তরভিত্তিক ধাপ রয়েছে, যার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে থাকে। বলতে দ্বিধা নেই, মানস গঠনের এমন টানেলের পরতে পরতে শিশু, কিশোর ও তরুণের বয়স বিবেবচনায় চাহিদা মোতাবেক জানা, শেখা ও বোঝার চমৎকার আয়োজন থাকতেই হয়।
আধুনিক সভ্য সমাজে শিশু-কিশোর ও তরুণরা পরিবার ও রাষ্ট্রের সেসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলার ফলে তারা চমৎকার শিশুকাল অতিক্রম করে, ঝরে যাওয়া বা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা এই স্তরে তাদের খুব একটা থাকে না, কিশোর বয়সটাও তাদের থাকে বেড়ে ওঠার উপযোগী করে, ফলে কৈশোর বয়সের চঞ্চলতাও নেতিবাচক প্রবণতাকে প্রায় শতভাগই অতিক্রম করতে পারে। এখানে পরিবার ও রাষ্ট্রের গড়ে তোলা পথচলার ব্যবস্থাই এদের সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। কৈশোর-উত্তীর্ণ বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই শিক্ষা এবং কর্মব্যস্ততার জীবনে প্রবেশ এবং বেড়ে ওঠার মধ্যে যুক্ত হয়। ফলে খুব অল্পসংখ্যক তরুণই বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অসফল হয়। রাষ্ট্র তার প্রতিটি শিশুকে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য পদে পদে আধুনিক শিক্ষাদীক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, সেভাবেই তারা শৈশব, কৈশোর এবং তারুণ্যকে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। ব্যতিক্রম ঘটার হার খুবই কম। তবে বেশিরভাগ শিশু, কিশোর এবং তরুণই আধুনিক স্বাস্থ্য ও মানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে, রাষ্ট্র নিজে এই মানবসম্পদে ক্রমাগতভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে, তাদের পেছনে অনুসরণ করে আসা শিশু-কিশোর ও তরুণরা একই কাতারে শামিল হচ্ছে মাত্র। এটাই আধুনিক উন্নত দুনিয়ার সার্থকতা।
আমাদের অবস্থাটি মোটেও এমন নয়। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনো আধুনিক ধ্যান-ধারণা, বিধিব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন ও সংস্কৃতিকে ধারণ করার ক্ষেত্রে মস্ত বড় সংকটে আছে। এর বেশিরভাগ মানুষই রাষ্ট্রের ধারণাটিকে মানবজীবন মান উন্নয়নের অপরিহার্য প্রাতিষ্ঠানিক উপাদান হিসেবে বোঝে এমনটি বলা বেশ কঠিন। রাষ্ট্রের চরিত্র কীভাবে গঠিত হয়, কীভাবে উন্নত করতে হয়, সে ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা কী, সরকার ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা ও করণীয় কী এসব নিয়ে কতসংখ্যক মানুষ স্পষ্ট ধারণা পোষণ করেন তাই প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এ ধরনের সমাজবাস্তবতায় বেশিরভাগ মানুষ প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, বোধ ও চেতনাবোধ দিয়েই পরিচালিত হয়। এমনকি ধর্ম, শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনাবোধকে মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল ও সৃজনশীলতা গঠনের লক্ষ্যে খুব একটা কাজে লাগাচ্ছে না। সবকিছুরই বহিরাঙ্গনকে দেখা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে, ভেতরের জ্ঞানগত সত্তা ও চেতনাকে খুব একটা ধারণ করা হচ্ছে না। ফলে আমাদের ধর্ম, শিক্ষা ও রাজনৈতিক শিক্ষার কোনোটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধারণা উপেক্ষিত, ধারণা ব্যতীত ঘটছে, চলছে। ফলে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন ব্যাপক ব্যর্থতা ও সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে, শিক্ষা এবং রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই রকম ঘাটতি ও সংকট বিরাজ করছে। আমরা কোনোটাকেই মর্মমূলে শিখিনি, তাই ধারণও করছি না, করতে পারার মতো সক্ষমতা অর্জন করিনি। আমরা এখনো শুনে শুনে ধর্ম বিশ্বাস করছি, বইপুস্তক পড়ে এর ভেতরে প্রবেশ করছি না, শিক্ষাকে পরীক্ষার সনদনির্ভর করে ফেলেছি গবেষণা ও পঠনপাঠনের সংস্কৃতিতে আত্মস্থ হচ্ছি না, রাজনীতির বিষয়টি তো সম্পূর্ণরূপে গলাবাজি, আর্থিক ও জনশক্তি সমাবেশের বিষয়ে পরিণত করে ফেলেছি। কোনো গভীর শিক্ষাদীক্ষার সংস্কৃতিতে আমাদের ধর্মীয়, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক চর্চা ও বিশ্বাস গঠনের বিষয়গুলো নেই।
আমাদের বেশিরভাগ পরিবারই নিজেদের বিশ্বাস এবং ধ্যান-ধারণা মতো শিশুদের বাহ্যিকভাবে গড়ে তুলছে। শিশুর মানস গঠনে প্রকৃতির তরুলতা, জীবজগৎ, প্রাণী, মানুষ, চারপাশ ইত্যাদির সহজ, সরল, কৌতূহল নিবারণ, নতুন নতুন উদ্দীপক প্রশ্ন করা ও জানার বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে এমন কিছু তথাকথিত শিক্ষকের হাতে শিশুদের তুলে দিচ্ছি যাদের এ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানভিত্তিক কোনো ধারণাই নেই। তারা কিছু অন্ধবিশ্বাসে নিজেরা যেমন শিশুদেরও তাদের নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে নানা বিষয়ের আশ্রয় নেয় যা শিশুদের জানা ও শেখার শুরুতেই নানা বিভ্রান্তি, ভয়-ভীতি, অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদি ভরপুর করে তোলে। আমরা যেসব শিক্ষকের হাতে আমাদের শিশুদের ধর্মপাঠ নিতে পাঠাই তারা আসলেই ধর্মের শিশুতোষ পাঠ সম্পর্কে কতটা জ্ঞাত তা নিয়ে গভীর সন্দেহ আছে। এদের বেশিরভাগেরই শিশুতোষ শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা নেই। কত বয়সের শিশুকে কী ধরনের পাঠ দিতে হয়, ধর্মের কোন কোন দিকগুলো দিলে শিশুদের মন-মানবিকতায় ভরে উঠবে, সৎ, সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক হবে তা এই স্তরের বেশিরভাগ ধর্মশিক্ষকেরই নেই। অধিকন্তু তারা শিশুদের মনে নানা বিষয় নিয়ে ভয়-ভীতি, ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করার মতো পাঠ দিচ্ছেন যার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় শিশুরা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত হয়। কোন বয়সের শিশুকে কী শিখতে দিতে হয়, কতটা দেওয়া উচিত তা নিয়ে না আছে শিক্ষক, অভিভাবক এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রেরও কোনো ধারণা নেই। আমাদের বড়দের এমন অজ্ঞতা, খামখেয়ালি, অন্ধ বিশ্বাসসহ নানা বিশ্বাস গঠনের শিকার হচ্ছে আমাদের বৃহত্তর শিশুরা। তারা যখন কেজি স্কুল, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিখতে যায় সেখানেও তারা বড়দের এমন অজ্ঞতা, মূর্খতা ও অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে। এখানে শিশুদের মানবিক গুণাবলির বিকাশের জন্য শিক্ষার উপাদানের চাইতেও অন্য বিষয়গুলো তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বেশি। তাদের প্রথমেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ফলে শিশু সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব বাস্তবতাকে সেই বিভাজনের রাস্তায় হেঁটেই শেখে ও বিশ্বাস করে। এই শিশুরা আর কোনোদিন নিজেদের বিশ্বমানব সম্প্রদায় ও সভ্যতার একজন হিসেবে ভাবছে না। তাদের শিক্ষাজীবনের কোথাও সভ্যতাপূর্ববর্তী সময় থেকে বর্তমান বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস, মানুষের অর্জনগুলো, মানুষ হিসেবে তাদের মেধা-মননের বিকাশ ঘটানোর উপায়গুলো কী, কীভাবে তারাও বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, জ্ঞানের উদ্ভাবক, সৃষ্টির রহস্যের উন্মোচনে অবদান রাখতে পারবে সেই চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর ধারে-কাছেও আমাদের শিশু, কিশোর এবং তরুণদের নেওয়া হচ্ছে না। ফলে আমাদের বেশিরভাগ শিশু যখন কৈশোরে প্রবেশ করে তখন তাদের গোটা প্রকৃতি, সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে কোনো কৌতূহলী ধারণাই তৈরি হয় না, তারা সবকিছুকেই ইতিহাসবিবর্জিত এবং অতীতবিবর্জিত এমনকি ভবিষ্যৎবিহীনভাবেই বিশ্বাস করতে শেখে। আমাদের কিশোরদের আমরা প্রশ্ন করতে, ভাবতে এবং জানতে উৎসাহী করি না। এরা যখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে তখন তাদের সম্মুখে জিপিএ-৫ পাওয়াই মূল লক্ষ্য থাকে, জ্ঞানার্জনে নিজেদের মেধা-মননকে সমৃদ্ধ করার ধারণাই থাকে অনুপস্থিত। ফলে এখনকার তথাকথিত মেধাবী শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন কোনো স্পষ্ট ধারণা রাখে না, সে ধরনের বইপুস্তক পাঠের অভ্যাস তাদের গড়ে ওঠে না। নিজেদের জানা, শেখা ও বোঝার পরিস্থিতিটাকে ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও বিশ্ববাস্তবতার নানা অগ্রসর চিন্তা ও বিতর্কে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ না করে এরা বাহ্যিক রমরমা, চাকচিক্য, ভোগবিলাস, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করে ফেলে। এতে অনেকেই আটকে থাকে, অনেকে নানা বিভ্রান্তিতে পা বাড়ায়, কোনো বিজ্ঞানসম্মত উত্তর তাদের জানা নেই, নানা অন্ধ বিশ্বাসে অন্যদের মতো নিজেরাও চলে বা ব্যতিক্রমী কিছু ঘটাতে চায়। ছোটকাল থেকে যে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা বা দীক্ষা নিয়ে বড় হয়ে ওঠে সে এই পথে চরমভাবাপন্ন হতেও কোনো দ্বিধা করে না। সেখান থেকেই উঠতি তরুণদের একটি অংশ জঙ্গিবাদের হাতে ধরা দেয়। কেননা তার কাছে কোনো কিছুরই কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক ও বিশ্ববাস্তবতায় বোঝার মতো জ্ঞান নেই, সে রকম কোনো পাঠচক্র তাদের নেই, মানবজীবন সম্পর্কে তাদের আধুনিক কোনো ধারণাই নেই। এখনো আমাদের বেশ বড় সংখ্যক শিশু-কিশোর ও তরুণ দারিদ্র্যের কারণে শারীরিক ও মানসিক অপুষ্টিতে বেড়ে উঠছে, অন্য একটি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল অংশ শারীরিকভাবে পুষ্ট হলেও মানসিক বৈকল্য অতিক্রম করার মতো শিক্ষা ও দীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ তরুণই প্রকৃত মানবসম্পদ ও সৃজনশীল মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারছে না। এর ফলে দেশ ও জাতি বঞ্চিত হচ্ছে মেধা, মনন ও প্রগতিশীলতার বেড়ে ওঠা শিশু, কিশোর ও তরুণের প্রাপ্তি থেকে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের এমন অপচয়কে রোধ করা, সন্তানদের প্রকৃত সৃজনশীল আধুনিক মানুষরূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং গড়ে ওঠার পথ ও মতের অভিজ্ঞতাটিই বোধহয় আমাদের খুব একটা জানা নেই। দ্রুত সেই পথেই আমাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠা ও গড়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই আমার, আপনার আপন সন্তানদের নিয়ে ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সবাই আমরা সফল হব।
লেখক: অধ্যাপক, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
©somewhere in net ltd.