![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ যে আজকে ধর্মীয় উগ্রবাদের মুখোমুখি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুই যুগের বেশি সময় ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যুব সমাজের একাংশ ক্রমেই জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সংখ্যায় এখনও অত্যন্ত স্বল্প হলেও তাদের সংখ্যা যে ধীরে ধীরে বাড়ছে তা আমরা প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতায় অথবা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাচ্ছি। প্রাথমিক বছরগুলোতে জঙ্গি বলতে আমরা সাধারণত পল্লী অঞ্চলে গড়ে ওঠা অশিক্ষিত বা মাদ্রাসায় পড়া স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তানকেই দেখতে পেতাম। বস্তুত বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যখন প্রথমে জেএমবি, হুজি ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনের অভ্যুদয় ঘটে, তাদের নেতৃত্বে কিংবা কর্মী বাহিনীতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত শহুরে বিত্তশালীর সন্তান ছিল না বললেই চলে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের যে নতুন রূপ আমরা দেখতে পেয়েছি, সেখানে জঙ্গিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত মানের এক ব্যাপক উল্লম্ফন আমরা লক্ষ্য করেছি।
ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের যে নবউত্থান আমরা দেখেছি, তার চালিকাশক্তি ও কর্মী বাহিনী উভয় ক্ষেত্রেই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তরুণীরাও জড়িয়ে পড়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে যে জঙ্গি সংগঠনটি ব্লগার হত্যার পেছনে জড়িত ছিল, তাদের আদর্শিক পুরুষ ছিলেন কট্টর মৌলবাদী ধর্মীয় আদর্শের প্রচারক। অথচ তার ভাষণে উদ্বুদ্ধ এবিটি সদস্যের অধিকাংশই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। ইতিমধ্যে হিযবুত তাহ্রীর নামক একটি শহরকেন্দ্রিক সংগঠন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করছে। যদিও হিযবুত তাহ্রীর রক্তাক্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এখনও জড়িয়ে পড়েনি; কিন্তু অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতো তারাও মনে করে যে, শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বজুড়ে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
এ বছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছিল। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশিদের ওপর নৃশংস আক্রমণ চলছিল। দেশে-বিদেশে এর ফলে যথেষ্ট আতঙ্কের সৃষ্টি হলেও আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সেই সঙ্গে খোদ সরকারও এগুলোকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে এড়িয়ে যাচ্ছিল। এমনই এক সময়, ১ জুলাই ২০১৬-তে গুলশান হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গিদের চরম নৃশংস কর্মকাণ্ড আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। ইতিমধ্যে ঘটনার হোতা নব্য জেএমবি নামে পরিচিত এই সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী ধরা পড়েছে এবং অনেকে এখনও আত্মগোপনে আছে। নব্য জেএমবির আদর্শের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক স্টেটের আদর্শগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নব্য জেএমবির সবাই স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে সমাজ ও পরিবার থেকে 'হিজরত' করেছে। তাদের অনেকে আইএসের পতাকাতলে জিহাদের ঘোষণা দিয়েছে। কিছুসংখ্যক তরুণ-তরুণী জিহাদে যোগদানের জন্য ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইএসের অধিকৃত অঞ্চলে পেঁৗছে গেছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে।
আমরা দীর্ঘদিন থেকে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি ও বিস্তার সম্বন্ধে যেসব ধারণা পোষণ করে আসছিলাম ১ জুলাই ও তার পরবর্তী ঘটনাবলি সেসব ধারণার মূলে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। আমরা দেখেছি, অধিকাংশ জঙ্গির কোনো রাজনৈতিক অতীত ছিল না। অত্যন্ত স্বাভাবিক, অনেক ক্ষেত্রে অতি নিরীহ সুবোধ বালক অতিদ্রুত জঙ্গি মতাদর্শে দীক্ষিত হয়ে গেছে। অধিকাংশ জঙ্গির সঙ্গে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি, বরঞ্চ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ পরিবারে গড়ে ওঠা সন্তানও উগ্র ধর্মীয় ভাবাদর্শে দীক্ষিত হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছে। জঙ্গিবাদের উৎসের সন্ধানে যে সরলীকরণ প্রচেষ্টা হয়েছিল, তা ভ্রান্ত ধারণা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
জঙ্গিবাদ যে ক্রমেই সমাজের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। দেশ ও জাতিকে এই ভ্রান্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলপত্র প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। একদিকে যেমন যারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তাদের আইনের আশ্রয়ে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, একইভাবে জঙ্গিবাদের আদর্শে প্রণোদিত ব্যক্তিবর্গ বা জনগোষ্ঠীকে এই ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের মূল সমাজ ব্যবস্থায় পুনর্ভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াকে 'ডিরেডিকেলাইজেশন' বলা হয়, যা আমরা বিমৌলবাদকরণ বলতে পারি। এই কাজটি অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল; কিন্তু জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ ধরনের কর্মপন্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আমি বিশেষ করে আলোচনা করব সেসব জঙ্গির ব্যাপারে, যারা ইতিমধ্যে কারাগারে বিচারাধীন আছে অথবা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকার অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ভোগ করছে।
আমাদের চিরাচরিত কারা ব্যবস্থাপনায় এসব জঙ্গি যদি দীর্ঘমেয়াদে কারাভ্যন্তরে অবস্থান করে, তখন তারা অন্য সাধারণ বন্দিদের জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করার সুযোগ পেয়ে যাবে। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট মেয়াদের কারাভোগের পর তারা যখন মুক্ত সমাজে ফিরে আসবে, তখন তারা আরও অধিক উৎসাহে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে। জঙ্গিবাদ একটা ধর্মীয় মতাদর্শ এবং জঙ্গিরা প্রবলভাবে এই মতাদর্শে বিশ্বাস করে। তাই এই আদর্শ থেকে কাউকে বের করে আনা সহজ নয়। তা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া জঙ্গিবাদের আদর্শ থেকে জঙ্গিদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি একসময় জঙ্গিবাদের প্রবক্তা ছিল, ওই ব্যক্তিই এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। অবশ্য রাষ্ট্রই যদি ধর্মীয় উগ্রবাদকে সমর্থন দেয়, সেক্ষেত্রে জঙ্গিরা নিজ দেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হলেও বিদেশে, বিশেষত অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে। যেমনটি ঘটেছে সৌদি আরবের ক্ষেত্রে। সেখানে রাজধানী রিয়াদের সনি্নকটে পাঁচতারা হোটেলের সুবিধা সংবলিত 'জঙ্গি পুনর্বাসন কেন্দ্র' স্থাপন করা সত্ত্বেও অনেক পুনর্বাসিত জঙ্গি কিছুদিনের মধ্যে ভিন দেশে গিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে প্রেরিত সৌদি জঙ্গিদের অনেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশোধন হওয়া সত্ত্বেও কিছুদিন পরেই আবার আইএস বা আইসিস বা আল কায়দায় যোগ দিয়েছে।
সৌদি আরবে ওয়াহাবি মতবাদ ইসলামের একমাত্র মতবাদ হিসেবে স্বীকৃত। অন্য সব মতবাদ ধর্মীয়-ভ্রান্তি হিসেবে আখ্যায়িত। সে কারণেই শত শত সৌদি নাগরিক ইরাক, আফগানিস্তান বা সিরিয়ায় ইসলামকে রক্ষা করার জন্য রক্তাক্ত জিহাদে জড়িয়ে পড়েছে। সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা বিভিন্ন ধর্ম-গোত্র-মতবাদের সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। জঙ্গিবাদ যে এ দেশ ও জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে, তার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, মৃত জঙ্গিদের লাশ পর্যন্ত তাদের আপন পরিবার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। প্রত্যাখ্যানের এমন কঠিন নজির আর কী হতে পারে? যাই হোক, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি, যেসব জঙ্গি জেলে আটক আছে, তাদের অনতিবিলম্বে বিশেষ কারাগারে স্থানান্তরিত করতে হবে। কারাগারে তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জঙ্গিবাদের ধারণা যে ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্রান্ত সেটা তাদের মনোজগতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি তথা বিশ্বসভায় বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে তাদের সম্যক জ্ঞানদান করতে হবে। এসব বন্দি যেন সমাজে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সে জন্য তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি দক্ষতা প্রদান করতে হবে। সমাজে ফিরে এলে প্রাক্তন জঙ্গি যেন সামাজিক বৈষম্যের স্বীকার না হয়, সেদিকে পরিবার ও সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে সচেতন করে তুলতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিমৌলবাদকরণের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত যুব সমাজকেও মূলধারায় ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। আজকের বিপথগামী যুবক-যুবতী আগামীকালের জাতীয় অগ্রযাত্রায় সংযুক্ত হবে, আমরা এমন প্রত্যাশাই করছি।
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭
রায়হান চৌঃ বলেছেন: ভাই জংগি বলতে কি বুঝাইতে চাইছেন বা কাদের কে জংগি বলছেন ? যারা কুরআন হাদিস পড়ে তাদের বা ঐ সব মুসলিম যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে কুরআন পড়ে, সৎ পথে চলে তাদের ?
ভাই আপনাকে বলছি,
বি- ধর্মী যারা আছে তারা আপনার মতোই বলে, আরো আছে, মুসলিম হয়ে ও যাদের ঘরে অবৈধ আয় মানে ঘুষের টাকা, চুরি চামারির টাকা, মানুষ ঠকানোর টাকা, নারীর দালালির টাকা, ব্যেশ্যা পাড়ার টাকায় যাদের ঘর ভরপুর তারা ও দেখবেন আপনার মতো ই বলে
আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে অকারেন্স গুলো ঘটানো হয়েছে -আপনার মতে তো সব হুজুরেরা করেছে ভালো বলেছেন
সেটা আপনার মতামত । কিন্তু আমি বলি এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত গুলো অকারেন্স ঘটানো হয়েছে তা আপনাদের মতো ভারতীয় দালাল যারা আমার দেশে খেয়ে / পরে ভারতীয় "র" এর এজেন্ট হয়ে কাজ করছে তারা করেছে
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৮
পিলিয়ার বলেছেন: ভাই বিষয় টা খুব ই সিম্পল । এটা এহুদি - ক্রিস্তান- নাসার দের প্ল্যান । " ইসলামের টুপি পড়াইয়া ইসলাম কে বরবাদ করা"