নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তানের কূটনৈতিক পরাজয়

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল ভুট্টোর জন্য রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক উভয় দিকেরই পরাজয়। ১৯৭১ সালে ভুট্টো ক্রমাগত নিজের পায়ে কুঠার মারছিলেন, নেশার ঘোরে ভুট্টো তা টের পাননি। ভুট্টো বলছিলেন, ‘দরকার হলে আমি এই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হব।’ এ কথা বলে তিনি পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত করে ফেলেন, কারণ এক দেশে দুই প্রধানমন্ত্রী থাকে না। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি আর ভুট্টো হচ্ছেন পাকিস্তানের কবর রচনাকারী। ভুট্টো চালাক হলে পাকিস্তান রক্ষার বল বঙ্গবন্ধুর কোর্টে ঠেলে দিতে পারতেন।
ভুট্টো ড. কিসিঞ্জারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন। ভেবেছিলেন, এতে প্রতিশোধ নেয়া হলো, তারও জয় হলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভুট্টো খুব উল্লসিত হয়েছিলেন। ভুট্টো ভাবেননি, তার পরিণতি এতটা খারাপ হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ভুট্টো-ইয়াহিয়া শলাপরামর্শ করে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিলেন, সেই সেনাবাহিনীই ভুট্টোকে ‘বেজন্মা’ বলে নির্দয়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। তার গোটা পরিবার হত্যার শিকার। ভুট্টো-ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালে জামায়াতের মতো ফ্যাসিবাদী ও মৌলবাদী সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালিদের বিরুদ্ধে, সেই মৌলবাদীরা তার কন্যা বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করে। পাকিস্তান এখনো পর্যন্ত হঠকারিতার হাত থেকে, মোল্লাতন্ত্র আর সেনাতন্ত্র থেকে রেহাই পায়নি।
যে তালেবানের জন্ম দিয়েছে পাকিস্তান, সেই তালেবান পাকিস্তানের জন্য বুমেরাং হয়েছে। পাকিস্তান সরকারকে আমেরিকা বাধ্য করেছে তালেবান নির্মূল করতে। এই অজুহাতে আমেরিকা পাকিস্তানের অস্তিত্বের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ওয়াজিরিস্তানে আমেরিকা মনের খুশিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে প্রদেশটিকে বিপন্ন-বিধ্বস্ত করেছে। লাদেনকে আমেরিকা যেভাবে পাকিস্তান থেকে পাকড়াও করেছে, তাতে প্রমাণিত হয় দেশটির সার্বভৌমত্ব বলতে কিছু নেই, আমেরিকার করদরাজ্য।
পাকিস্তান বরাবর ক‚টনীতিতে দুর্বল। পাকিস্তানের শাসকদের মধ্যে সব সময় কাজ করেছে ইসলামের বড়াই, সেরা সেনাবাহিনীর অহমিকা আর ভারতের বিরুদ্ধে অন্তঃসারশূন্য প্রতিহিংসা। পাকিস্তান নিজের মঙ্গল কামনা করেনি অতটা, যতটা ভারতের অমঙ্গল কামনা করেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তান বারবার ভারতে সন্ত্রাসী দল পাঠিয়েছে। পাকিস্তানে জয়শ-ই-মহম্মদ ও লস্কর তৈয়বা নামের সাংঘাতিক জঙ্গি সংগঠন আছে। এদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান লালন করে। পাকিস্তানের দর্শনই জঙ্গি দর্শন। পাকিস্তানের আইএসআই এক ধরনের জঙ্গি গোয়েন্দা সংস্থা। এই সংস্থার মূল দায়িত্ব হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের ক্ষতির নীলনকশা প্রণয়ন করা। পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা ভারতের মুম্বাই হোটেলে বোমা মেরে বহু মানুষ হতাহত করেছে, পাঠান কোটে হামলা চালিয়ে ৭ জন ভারতীয় সেনা হত্যা করেছে, সর্বশেষ কাশ্মিরের উরিতে জয়শ-ই-মহম্মদ হামলা চালিয়ে ১৮ জন ভারতীয় সেনা হত্যা করেছে। এতে পাকিস্তানের স্টেট সাপোর্ট ছিল। ভারতের ধৈর্যের দেয়াল ভেঙে পড়াই স্বাভাবিক। ভারত ‘সার্জিকেল স্ট্রাইক’ নামের এক কুশলী হামলা চালিয়ে ক‚টনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। পাকিস্তানের উসকানিমূলক আচরণের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে। দাঁতভাঙা জবাবটা বাংলাদেশের কাছ থেকেও পেয়েছে পাকিস্তান। বারবার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে পাকিস্তান। তার কড়া জবাব পেয়েছে।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের পাশে সবসময় বাংলাদেশ থাকবে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান’।
দুজন মার্কিন পার্লামেন্টারিয়ান কঠোর ভাষায় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলেছে। তারা মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা দিতে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্লায়েন রাষ্ট্র পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী ঘোষণা দেয়নি।
পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তা হলো না ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ঘন ঘন নাক গলানোর কারণে। এতে পাকিস্তান ক‚টনৈতিকভাবে পরাজয়ের শেষ ধাপে নেমেছে। ভারতের মাথা অতটা গরম নয় যে তারা হুট করে একটা যুদ্ধ বাধিয়ে দেবে। ভারত জানে চীন আছে পাকিস্তানের পাশে আর আছে আণবিক বোমা। যদিও পাকিস্তানের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, ভারতে পরমাণু হামলা চালানো পাকিস্তানের পক্ষে আত্মহত্যার শামিল হবে। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান নিসার এক টেলিভিশন টকশোতে বলেন, ভারতের সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধে জড়ালে পাকিস্তান পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে। ভারতকে পরমাণু হামলার হুমকি দেয়া এখনই বন্ধ করা উচিত। বারবার ভারতকে খুঁচিয়ে আমরা তাকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছি। অকারণেই আমরা তা করছি। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি তীব্র নিন্দা করে এ সময় নিসার আরো বলেন, আমাদের পাকিস্তানে একদল অশিক্ষিত মানুষ রয়েছেন তারা জানেনই না যে পরমাণু বোমা মানে কী? নিসারের মতে, ভারতে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের বাস। পাকিস্তানের জনসংখ্যা মাত্র ১৮ কোটি। ভারত পাকিস্তানে পরমাণু বোমার আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানের জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণ মুছে দিতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তান তার চারগুণ আক্রমণ ভারতের ওপর চালালেও ভারতীয় জনসংখ্যাকে মুছে ফেলতে পারবে না। কোটি কোটি মানুষ ভারতে রয়ে যাবেন। দেশ পরিচালনার জন্য কিন্তু পাকিস্তানে একজনও অবশিষ্ট থাকবে না। পাকিস্তান শেষ হয়ে যাবে। নিসারের ভাষায়, আমাদের পাকিস্তানে বিরাটসংখ্যক উম্মদ রয়েছে, যারা নিজেদের মানুষের ধ্বংসের কথা ভেবে উল্লসিত হয়।
তবুও ভারত মাথা গরম করেনি। অহমিকায় ভোগেনি। ক‚টনৈতিক যুদ্ধকেই গুরুত্ব দিয়েছে তারা। মূলত ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান সার্ক সম্মেলন করতে পারল না। ওদিকে আফগানিস্তান সার্ক বর্জনেরই আহ্বান জানিয়েছে জোটভুক্ত দেশগুলোকে। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও আফগানিস্তান এক সুরে পাকিস্তানকে বয়কট করেছে। এতে পাকিস্তান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলেই চিহ্নিত হলো।
গত ১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হলো ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলন। এর সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত, রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পাক-ভারত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন পাকিস্তানকে কোণঠাসা করবে। এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর বলে অভিহিত করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের নাম না নিয়ে মোদি বলেছেন, এক প্রতিবেশী দেশ জঙ্গিবাদের আস্তানা। সেখান থেকেই জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ। সন্ত্রাসবাদই দেশটির প্রিয় সন্তান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে তার ভাষণে ব্রিকস-বিমসটেক দুই জোটকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলার আহ্বান জানান।
ভারত চেষ্টা করবে ব্রিকস-বিমসটেক জোটকে চাঙ্গা করে সার্কের বিকল্প জোট হিসেবে দাঁড় করতে কিন্তু এক্ষেত্রে চীন ভারতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। সত্যিকার অর্থে পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে অন্তত ভারত-বাংলাদেশ আর কোনো জোট করতে পারবে না। দুদেশই পাকিস্তানের চিরশত্রু। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে ভারত কোনো অস্বস্তি প্রকাশ করেনি। বরং বলেছে, এতে ভারতের ঈর্ষা করার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকাকে, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই স্পষ্ট। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং তা অব্যাহত রাখতে চাই।’ তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদে মদদদাতাদের খুঁজে বের করুন।’ এই যে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই সন্ত্রাস মোকাবেলার গুরুত্ব দিচ্ছে, এটাও ক‚টনৈতিক কৌশল হিসেবে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.