![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামীতে আরও দৃঢ় হবে। উপরন্তু ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেলেই চলে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৯০ ভোট। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি পেয়েছেন ২১৮ ভোট। ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, নির্বাচনে জিতলে মেক্সিকো থেকে অভিবাসী আসা ঠেকানোর জন্য সীমান্তে দেয়াল তুলবেন। প্রয়োজনে মেক্সিকোতে অভিযানও চালাতে পারেন। ঘোষণা করেন, মুসলমানরা জাতীয় দুশমন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার দেশের সব মসজিদ বন্ধ করে মুসলমানদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে দিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম কাজ হবে হিলারিকে জেলে পাঠানো। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী ছিলেন। বলেছিলেন, না জিতলে তিনি নির্বাচন মেনে নেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জীবিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন দেননি। অথচ আগামী চার বছর বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই বেছে নিল মার্কিন জনগণ। কেবল হোয়াইট হাউস নয়, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের দুই করেই নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। নিম্নক হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ আগেই তাদের হাতে ছিল, নতুন করে সিনেটও তাদের দখলে যাচ্ছে।
দুই
আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে। অবশ্য আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে উচ্ছ্বসিত। বিশেষত মার্কিন মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা হিলারিকে জেতাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছিল হিলারি কিনটন আগাম জয় পেয়ে যাবেন, অথচ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া ট্রাম্প এখন জয়ী ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কেউ-কেউ লিখেছেন, ‘ট্রাম্প জিতুক-হারুক সেটা পরের কথা, ট্রাম্পের এত সাপোর্টার আছে সেটা দেখেই তো আমি অবাক।’ এই অবাক করা ঘটনায় বাংলাদেশ আনন্দিত ও খুশি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় ট্রাম্প তার নানা মন্তব্যের কারণে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। বিশেষ করে অভিবাসী, মুসলিম ও নারীদের নিয়ে মন্তব্যের জের ধরে তাকে তীব্র তোপের মুখেই পড়তে হয়। তখন হিলারিও জরিপে এগিয়ে ছিলেন। যদিও ইমেইল কেলেঙ্কারি ও এফবিআইর তদন্তের বিষয়টি নিয়ে হিলারি শিবিরে কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছিল। হিলারি আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে সিরিয়া ও লিবিয়াকে ধ্বংস করা হয়েছে। যার ফল এখন আমরা চোখে দেখছি। বিশ্বকে করা হয় অনিরাপদ।
প্রার্থিতা পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পর্যন্ত তিনি অনেকেই শত্রু করে তুলেছিলেন। সেই ট্রাম্পই বিজয় ভাষণে এসে যেন অন্য মানুষে রূপান্তরিত হলেন। নির্বাচন জয়ের মুহূর্তকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। যিনি এতদিন বিভক্তির সূত্রগুলো সামনে এনেছেন, সেই তিনিই যুক্তরাষ্ট্রকে এক সুতোয় বাধার অঙ্গীকার করেন। বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত আরও স্মরণীয় হয়ে উঠবে যদি সবাই মিলে একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে পারি। তবেই দেশ মহান হবে। প্রচারণাকালে অভিবাসীদের নিয়ে ভয়াবহ সব মন্তব্য করলেও বিজয় ভাষণে তিনি অভিবাসীদের মহান মানুষ বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প জানান, হিলারি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অভিনন্দিত করেছেন বিজয়ী হওয়ার জন্য। নিজেও হিলারির প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। তিনি দেশের অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন মন্তব্য করে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। তিনি আশ্বাস দেন তার সরকার জনগণের সেবা করবে। তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে আমাদের দেশের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করব। আমি আমাদের দেশকে ভালোভাবে জেনেছি। এখানে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। প্রতিটি আমেরিকানের সমতা রয়েছে তার সম্ভাবনাকে বোঝার। ট্রাম্প জাতীয় নবায়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করারও অঙ্গীকার করেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, আমি বিশ্বসম্প্রদায়কে বলতে চাই, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলেও সবার সঙ্গে ভালোভাবে থাকব।
তিন
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন ইউরোপ ও এশিয়ায় মিত্র দরকার আমেরিকার। এ জন্য রাশিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা। অন্যদিকে আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই নানা বিষয়ে বিজড়িত। একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে সময় লাগলেও, সঙ্গে-সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পরিণত হয়েছে গভীর এবং এটি সাহায্যনির্ভর সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শুভসূচনা করেছেন ৯ নভেম্বর। বাংলাদেশ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেতা ও বহুত্ববাদের মূল্যবোধকে সঙ্গে করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যমআয়ের দেশ হতে চায়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত এবং সামনের দিনগুলোতে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার খবরে বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎণিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আমেরিকার ডলার আর মেক্সিকোর পেসোর দাম কমে গেছে, দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারেও। নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে তার গৃহীত নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের আশা ছিল হিলারি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি পড়ায় ভোট শেষে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্য, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সখ্যসহ নানা কারণে ভোট পাবেন না ধারণা করা হলেও ট্রাম্পই হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও সেই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতিতেও তিনি শেষ পর্যন্ত বিশ^শান্তির পক্ষেই কাজ করবেন বলে আমাদের ধারণা। কারণ তিনি বিশ^ জঙ্গিবাদের বিপক্ষে কথা বলেছেন। আইএসকে পরাজিত করতে সিরিয়ার মাটিতে কয়েক হাজার স্থলসেনা পাঠানোর প্রস্তাব রয়েছে তার। তিনি বলেছিলেন ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ করতে সবসময়ই আমেরিকার স্বার্থকে সবার ওপরে রাখতে হবে।
চার
নির্বাচনের আগে উন্নত ও নতুন আমেরিকা গড়তে ট্রাম্পকে ভোট করার অনুরোধ ছিল। ছিল শক্তিশালী আমেরিকা দেখার প্রত্যয়। জয়ী হয়ে ট্রাম্প বলেছেন, বিভেদের ত ভুলে আমাদের আবার এক হতে হবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট।... আমি এ জন্য এসেছি যেন আমরা একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই আমেরিকাকে গ্রেট করার জন্য কাজ করব। ধনকুবের থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া এ রাজনীতিক বলেন, আমি ব্যবসা করে সারা বিশ্বের জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন দেশের জন্য কিছু করতে চাই। ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়া ট্রাম্প দলের সবচেয়ে বড় দাতা ও তহবিল সংগ্রাহকে পরিণত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি অনুসারী আছে। আসলে ট্রাম্প দেখিয়েছেন রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতে হয় কীভাবে। কীভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়। তার কাছ থেকে আমরা রাজনীতির জটিল বাস্তবতা ও নানা সংকটের ত্বরিত সমাধানের উপায় আবিষ্কার করতে পারি। তিনি বাংলাদেশের একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই গণ্য হবেন এই প্রত্যাশা আমাদের। ট্রাম্পের আমলেই বাংলাদেশ-আমেরিকা অর্থনৈতিক দিক থেকেও পারস্পরিক বন্ধু রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
©somewhere in net ltd.