![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিগত ২২ ও ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী, বহু ঐতিহ্যের অধিকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে। সম্মেলনটি ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরা, জাঁকজমকতায় পূর্ণ এবং সীমাহীন জলুসে চোখ ধাঁধানো। ঢাকাবাসীরা ব্যাপকভাবে এই সম্মেলন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং স্বাভাবিক কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ওই অসংখ্য নেতাকর্মী-সমর্থকরা যারা সদলবলে বাস-ট্রাক ভাড়া করে এসে ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন তারাও সম্মেলনের সাফল্যে শরিক হলেন।
শুধু তারাই বা হবেন কেন_ সমগ্র বিশ্বের নানা দেশ, মহাদেশ, উপমহাদেশের অন্তত ১১টি দেশ থেকে ৫০ জনেরও অধিক আমন্ত্রিত অতিথি, দেশের নানা রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিশাল এবং ঐতিহ্যবাহী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যোগ দিয়েছিলেন তারাও তাদের প্রদত্ত শুভেচ্ছা ভাষণে সম্মেলনটির সাফল্যই শুধু কামনা করেননি_ দলটির নেতৃত্বের, মূলত দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য সমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা করেছেন ওই বিশাল জমায়েত সফলভাবে সংগঠিত করার জন্যও।
বহু সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী এই দলটির জাতীয় সম্মেলন অবশ্যই দলের সব নেতাকর্মী ও সমর্থকের কাছে সর্বাধিক বড় একটি সাংগঠনিক উৎসব। তদুপরি দলটি আজ দীর্ঘ আট বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। সুতরাং এগুলো মিলিয়ে ভাবলে সম্মেলনের বহিরঙ্গ প্রকৃতই জাঁকজমকপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও আনন্দ-মুখরিতভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কোনো দুর্ঘটনা বিশৃঙ্খলার খবর দুদিনব্যাপী এই বৃহৎ জাতীয় সম্মেলনের অন্ততপক্ষে আমার চোখে পড়েনি। পত্রপত্রিকায় এতদসংক্রান্ত তেমন কোনো খবর আমার চোখে পড়েনি।
৫০ হাজার ডেলিগেট কাউন্সিলরের জন্য দুদিনের খাবার বরাদ্দ ছিল এমন খবরও টেলিভিশনের কোনো চ্যানেলে দেখেছি। কিন্তু কোথাও দেখিনি তাই নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো হইচই বা তার বিলিবণ্টন নিয়ে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবর।
কিন্তু এই আনন্দ-মুখরতার পরিবেশ যারা রচনা করলেন সেই নেতৃত্ব, শুভ বার্তা হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেও নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের পত্রপত্রিকা এমনও লিখতে শুরু করেছিল যে কার্যত বেগম খালেদা জিয়াই হবেন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথি। বিএনপির পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন এমন সুস্পষ্ট আভাস দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনার পথে কোনো অগ্রগতি সাধিত হতে পারল না বিএনপি চেয়ারপারসন শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সম্মেলনে যোগ দান না করায়। সম্ভবত কোনো নেপথ্য শক্তির ইঙ্গিতে তিনি এমন করেছেন। তবে ইঙ্গিতটি অশুভ এবং সবার জন্যই অমঙ্গলকর।
যা হোক একটি মধ্যবিত্ত প্রভাবিত এবং দেশের অন্যতম প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই ছিল অনেক। বিশেষ করে অগ্রসরমান, বৈষম্যপূর্ণ, শ্রেণিবিভক্ত দেশটির নানামুখী সমস্যার ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার-ধর্মবিশ্বাস ও দারিদ্র্য অশিক্ষার নানা রূপে জর্জরিত মানুষের আকাঙ্ক্ষাও ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিপুল। এ কথা আরও সত্য এ কারণে যে এই দলটির নেতৃত্বেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল এবং জনগণের কাছে দলটির কমিটমেন্টও প্রচুর।
কিন্তু সম্ভবত যেহেতু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মেলনের যে ঐতিহ্য তা কালে এটা স্পষ্টতই প্রতিভাত হয়ে ওঠে যে দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যবিধ নানামুখী বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ বা তাদের পর্যবেক্ষণপত্র কাউন্সিলর/ডেলিগেটদের কাছে আলোচনার জন্য পেশ করা বা জানার জন্যও বিতরণ করা হয় না। তেমন কোনো রেওয়াজও আমাদের দেশে আজও সৃষ্টি হয়নি_ তাই আওয়ামী লীগের সদ্য-সমাপ্ত সম্মেলনে ও সেই ঐতিহ্য রেওয়াজেরও ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাহলে সম্মেলনের কর্মসূচিতে কী কী থাকার কথা?
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যা যা থাকার কথা তা সবই ছিল এবং সেগুলো সাফল্যের সঙ্গেই সমাপ্ত হয়েছে যেমন জাতীয় সংগীতের সুর সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন, বেলুন ওড়ানো, পায়রা অবমুক্তি প্রভৃতির মাধ্যমে সভাপতি কর্তৃক সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা।
অতঃপর সবাই মঞ্চে আরোহণ করে সব অতিথি ও আগত ডেলিগেট কাউন্সিলরদের স্বাগত ভাষণ। অতঃপর দেশি-বিদেশি অতিথিদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা ভাষণ। সর্বশেষ সভাপতির ভাষণ। অতঃপর দেশি-বিদেশি অতিথিদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা ভাষণ। সর্বশেষ সভাপতির ভাষণ।
এই পর্বের মাধ্যমে ২৮ অক্টোবর ২০১৬ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের কর্মসূচির সব সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কাউন্সিল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো।
এই ক্ষেত্রে অন্য কিছু প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে নেয়া যায়। এই দিন যা নেহাতই হওয়ার কথা তাহলো সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ ও তা অনুমোদন, সংবিধান সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব পেশ ও তা অনুমোদন, প্রতিনিধিদের আলোচনা বা নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, পরিশেষে সাংগঠনিকভাবে অতীতের কার্যক্রম ও তার পর্যালোচনা করে আগামী দিনের কর্মসূচি পেশ ও অনুমোদন এবং সর্বশেষ নতুন নেতৃত্ব কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন। এগুলো অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সময় তো ছিল মাত্র একদিন। আওয়ামী লীগের মতো ক্ষমতাসীন, বৃহৎ দলের জাতীয় সম্মেলন কখনো দুদিনে যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারে না_ প্রয়োজন ছিল আরও অন্তত পুরা দুটি দিনের।
যা হোক, সে প্র্রশ্ন সেখানে ওঠেনি। সম্মেলনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই যে বিষয়টি আওয়ামী লীগের সব স্তরে আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাহলো নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন। বাদবাকি অপরাপর বিষয়গুলো কারও কাছেই গুরুত্ব পেয়েছে_ এমনটি দূরদেশ থেকে যতটা দেখেছি বা বুঝেছি তাতে তা আদৌ মনে হয়নি। মিডিয়াগুলোয় তাই প্রাধান্য পেয়েছিল নেতৃত্বে কে আসছেন, কোথায় কোথায় পরিবর্তন সাধিত হতে চলেছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অনুমানভিত্তিক নানামুখী খবর।
সর্বাধিক আলোচিত পদটি ছিল সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকদের। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে হঠাৎ করেই উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের নাম। কিন্তু পত্রপত্রিকায় যা অনুমিত হতে থাকে তাতে বেশি গুরুত্ব পায় ধীরস্থির, প্রাজ্ঞ, মিতবাক ও সৎ জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামটি। যদিও তিনি পর পর দুটি টার্ম সাধারণ সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না কর্মীদের ও তৃণমূলের সংগঠনগুলোর বা শাখাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না, এমন একটি অভিযোগ অবশ্য তার বিরুদ্ধে শোনা যেত আগে থেকেই। তবুও অনেকের মতো আমারও ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা ও সততা বিবেচনায় সৈয়দ আশরাফুলকেই আরও একটি টার্ম ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত করে রাখা হবে।
নির্বাচন অবশ্য হয়নি। কোনোদিনই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরা কোনো পদে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পাননি। এবারও তাই হলো। নেত্রীর আশীর্বাদে পদগুলোর বণ্টন হয় এবং এবার ওই পদে রদবদল করে তরুণ এবং কর্মঠ ওবায়দুল কাদেরকেই সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আশা করা যায়, তৃণমূলকে তিনি উজ্জীবিত করতে পারবেন।
যুগ্ম সম্পাদক পদে তাজউদ্দীন তনয় অবশ্যই আসছেন এমন গুজবও বিস্তর ছিল। সর্বাধিক আলোচিত ছিলেন জয়। ওই একই পদে। কিন্তু দুজনকেই আনা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে কোন বিবেচনায় তা এখনো জানা যায়নি। তবে শুনেছি জয়ের রাজনীতিতে আশার ইচ্ছে নেই।
ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছে। কমিটিতে অনেক নতুন মুখ এসেছে। সম্মেলনের পর্যালোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে এটুকু বলা যায়, জাতীয় সম্মেলনটির বহিরঙ্গ অত্যন্ত সফল ও জাঁকজমকপূর্ণ-চাকচিক্যময় হয়েছে। কিন্তু আসেনি জনজীবনের সমস্যার কথা_ জঙ্গি উদ্ভব, জামায়াত নিষিদ্ধকরণ, বাহাত্তর সংবিধানের পুনরুজ্জীবন, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত বিষয়, নারী নির্যাতন সংখ্যালঘু নির্যাতন, আইনের শাসন প্রভৃতি জ্বলন্ত ইস্যুগুলো।
কিন্তু আবহ গড়ে তোলা হয়েছিল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার উপযুক্ত কর্মকর্তা ও নেতৃত্ব নির্বাচন ও প্রস্তুতি গ্রহণ। কর্মীরা বাকিসব সরকারের হাতে/নেত্রীর হাতে রেখে ওই একটি চিন্তাকে ধারণ করেই বাড়ি ফিরলেন। অনুষ্ঠিত হলো একটি নির্বাচনমুখী জাতীয় সম্মেলন। তার পরও নেতৃত্বকে অভিনন্দন সব দায়িত্ব সামলে তারা তৎপর হবেন_ এই প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.