নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্প্রীতির বাংলাদেশ

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭

অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মানুষ হত্যা ও নারী ধর্ষণ মুখ্য ঘটনা ছিল। কিন্তু কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাতের পরিস্থিতি ও হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের সাজার হাত থেকে রক্ষার জন্য স্বাধীনতার শত্রুরা অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। রামু উপজেলার বৌদ্ধ পাড়ার উত্তম বড়ুয়া উপলক্ষ মাত্র। কারণ একই অভিযোগে আরেক দল দুষ্কৃতকারী ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের লাখেরা এলাকায় হিন্দুদের একটি মন্দির ও চারটি বৌদ্ধ উপসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পূর্ণিমা উপলক্ষে সেখানে বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার একটি বৌদ্ধ বিহারেও একইদিন সন্ধ্যায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে রামুর বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় এ হামলা হয়েছে বেশি। বর্তমান সরকারের গত আমলে (২০০৯ থেকে ২০১৩) খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সংঘটিত হয় রাঙ্গামাটি জেলা শহরের সরকারি কলেজে। ঘটনাটি ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে; হাঙ্গামায় দুই পক্ষের শ’খানেক আহত হয়। ২০১০ সালে রাঙ্গামাটির ৩৬ নম্বর ইউনিয়ন সাজেকে বাঙালি-পাহাড়ি সংঘাতে নিহত হয়েছিল বেশ কয়েকজন। তোলপাড় সৃষ্টি করা সেই ঘটনার পিছনেও মৌলবাদীদের ইন্ধন ছিল। ২০১১ সালে খাগড়াছড়ির বড়পিলাকে বাঙালি-পাহাড়িদের মধ্যে যে সংঘাত হয় তাতেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অর্থাত্ নিশ্চিতভাবে বলা চলে পরিকল্পিতভাবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। কেউ কেউ বিষয়টিকে ইসলাম বিরোধী চলচ্চিত্রের প্রতিবাদের সঙ্গে এক করে পর্যবেক্ষণ করছেন। মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। এখনো নয়াদিগন্ত, ইনকিলাবের মতো সংবাদপত্র সংবাদ পরিবেশনায় পার্বত্য এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মপ্রচারকে আক্রমণ করে বৌদ্ধদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের দাঙ্গা সৃষ্টির উস্কানি দিচ্ছে। মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রচারণায় ধ্বংসযজ্ঞ চলানোর প্রচেষ্টা রয়েছে এখনো। তবে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছেন; তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সকল ধর্মের মানুষ। সত্যিই ‘ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা’ আমাদের মতো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক ঘটনা। দেখা যাচ্ছে মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে; গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংবাদপত্রের ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও উপেক্ষিত হয়েছে। অথচ বর্তমান সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে একমাত্র মিডিয়াই জনগণের পক্ষে কথা বলছে; আর সেই কথা যদি হয় সম্প্রীতি, শান্তি ও মঙ্গলের পক্ষে তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তবুদ্ধির পরিপোষকতায় নিবেদিত থাকুক মিডিয়া- এ প্রত্যাশা আমাদের।
তবে সুখের বিষয় (নাসিরনগর ও অন্যান্য ঘটনায়) শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনার পর পরই অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সরকার বরদাশত করবে না বলেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েও দিয়েছেন। তবে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি বলা হয় ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে’ এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাহলে বলতে পারি তৃণমূল প্রশাসন জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অর্থাত্ প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হওয়ার আগে এবং মন্ত্রীদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে কৃতিত্ব নিতে পারত পুলিশবাহিনীসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা। ‘সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই’ বলা হচ্ছে বার বার। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হতে হবে দল-মত নির্বিশেষ মানুষের দ্বারা; তাহলে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু আর আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির যা কিছু প্রাণিত সম্পদ তার জন্য দরদ ঢেলে আকাঙ্ক্ষার মেঘ হয়ে ঝরে পড়া আমার বাংলাদেশ। অথচ দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পাল্টে যায় তার রূপ। এখনো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের উস্কানি থেমে নেই।
যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে কোনোটির সঙ্গেই ধর্ম নয়, রাজনীতি জড়িত। কোনো ঘটনারই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। কেবল রাজনৈতিক কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জঙ্গি রাষ্ট্র বলা হয়েছিল একে। যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা ধর্ম সম্পর্কে কম জানেন তারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেন। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক। আর সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে আমাদের সকল ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, জানতে হবে। সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে এ দেশের সকল মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.